Ajker Patrika

সংসার-সন্তান সামলে ইংরেজি বিষয়ে কলেজ শিক্ষক নিবন্ধনে শীর্ষে খাদিজা

জেলি খাতুন
আপডেট : ১৬ জুলাই ২০২৫, ০৯: ৪২
খাদিজা আক্তার। ছবি: সংগৃহীত
খাদিজা আক্তার। ছবি: সংগৃহীত

‘এটাই ছিল আমার জীবনের প্রথম নিবন্ধন পরীক্ষা এবং প্রথমবারেই সফলতা। টার্গেট ঠিক থাকলে একবারেই সফল হওয়া যায়।’ —কথাগুলো বলছিলেন ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় ইংরেজি বিষয়ে কলেজ পর্যায়ে জাতীয়ভাবে প্রথম হওয়া কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী খাদিজা আক্তার।

জীবনের নানা সংকট, দারিদ্র্য আর পারিবারিক দুঃখ-বেদনার মাঝেও তিনি দেখিয়েছেন, একাগ্রতা আর পরিশ্রমের মাধ্যমে কীভাবে গন্তব্যে পৌঁছানো যায়। খাদিজা আক্তারের সফলতার পেছনের গল্প শুনে লিখেছেন জেলি খাতুন

খাদিজার শৈশব কেটেছে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের শিবরাম (খামার) গ্রামে। বাবা কৃষি ও ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তবে বর্তমানে অসুস্থ। পাঁচ বছর আগে মা মারা যান। পারিবারিক টানাপোড়েনের মধ্যেও শিক্ষার প্রতি অটল থেকেছেন খাদিজা। ২০১২ সালে এসএসসি ও ২০১৪ সালে এইচএসসি পাস করেন বিজ্ঞান বিভাগ থেকে যথাক্রমে ৪.৭৫ ও ৫ জিপিএ নিয়ে। স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার, কিন্তু পারিবারিক কারণে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হয়নি। পরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন।

কোচিং ছাড়াই সাফল্য

নিবন্ধনের শুরুটা ছিল একেবারেই নিজের চেষ্টায়। কোচিং না করেই প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতিতে মমিনুর রহমান নামে এক বড় ভাইয়ের অনুপ্রেরণা ও নির্দেশনা পান। তাঁর অনলাইনের কোর্সেই নিয়মিত অংশ নেন খাদিজা। তিনি বলেন, ‘ভাইয়া বলেছিলেন যদি কোর্সের প্রতিটি নির্দেশনা অনুসরণ করি, তাহলে প্রথম হওয়া সম্ভব। আমি সেই কথাই বিশ্বাস করেছি।’

মায়ের স্বপ্নে মেয়ের সাফল্য

খাদিজার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ছিলেন তাঁর মা। তাঁর মা বলতেন, ‘জীবনে ভালো কিছু করো।’ সেই বাক্যই ছিল খাদিজার এগিয়ে চলার শক্তি। আজ যখন তিনি জাতীয়ভাবে প্রথম, মায়ের অভাবটাই যেন সবচেয়ে বড় কষ্ট। খাদিজা বলেন, ‘মা থাকলে খুব খুশি হতেন। ফল জানার পর আমি কেঁদেছিলাম মায়ের কথা ভেবে।’

সংসার সামলে পড়াশোনা

সংসার, সন্তান, কাজ—সব সামলে নিয়মিত পড়াশোনা করেছেন খাদিজা। তিনি বলেন, ‘আমি যখনই সময় পেতাম, তখনই পড়তাম। পড়া জমিয়ে রাখতাম না। প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন পড়তাম।’ রান্না বা ঘরের কাজ করার সময় মনের মধ্যে পড়ার বিষয়গুলো ঘুরে ঘুরে ভাবতেন।

পড়াশোনায় কৌশল ও আত্মবিশ্বাস

প্রথমবারের পরীক্ষাতেই সফলতা অর্জন করার পেছনে খাদিজার বড় ভূমিকা ছিল পড়াশোনার কৌশল ও আত্মবিশ্বাস। একাডেমিক পড়াশোনার ভিত্তি ভালো থাকায় বিষয়গুলো সহজ মনে হয়েছে তাঁর। হ্যান্ডনোট, পুরোনো বই এবং অনলাইন রিসোর্স একত্র করে সাজিয়েছেন পড়ার প্রস্তুতি।

নতুনদের জন্য পরামর্শ

নতুনদের উদ্দেশে খাদিজা বলেন, ‘স্বপ্ন দেখতে হবে, কিন্তু স্বপ্ন বাস্তবায়নে চেষ্টাও থাকতে হবে। নিয়মিত পড়াশোনা, প্রচুর লেখা ও সঠিক দিকনির্দেশনা অনুসরণ করলে সফলতা আসবেই।’ প্রিলিমিনারির পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করা উচিত আগে থেকেই।

শুধু শিক্ষক হওয়া নয়, খাদিজা হতে চান একজন আদর্শ শিক্ষক। তাঁর ভাষায়, ‘আমি চাই শিক্ষার্থীদের শুধু বইয়ের পড়া নয়, সামাজিক ও নৈতিক শিক্ষা দিতে; তারা যেন সৃজনশীল ও সচেতন মানুষ হয়ে গড়ে ওঠে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত