Ajker Patrika

ডা. শাহাদাত স্বাস্থ্য ক্যাডারে প্রথম

আনিসুল ইসলাম নাঈম
আপডেট : ১০ আগস্ট ২০২৩, ১০: ৫০
Thumbnail image

ডা. মো. শাহাদাত হোসাইন সরকারের জন্ম গোমতীর তীরে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার বারুর গ্রামে। তিনি কলেজশিক্ষক বাবা-মায়ের বড় সন্তান। পড়াশোনার হাতেখড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরে। সেখানকার ইবনে তাইমিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ময়মনসিংহ মেডিকেলে কলেজে ভর্তি হন। ক্যাডার হওয়ার স্বপ্নে ফাইনাল প্রফ দিয়ে রেজাল্টের আগে ৪১তম বিসিএস ক্যাডারে আবেদন করেন। পরে স্বাস্থ্য ক্যাডারে প্রথম হন। তাঁর প্রথম হওয়ার গল্প ও নতুনদের জন্য পরামর্শ তুলে ধরা হলো।

প্রথম যখন রেজাল্ট দেখি তখন মনে হচ্ছিল, কোনো স্বপ্ন দেখছিলাম কি না। পরে নিজেকে যখন চিমটি কেটে দেখলাম, না, এটাই আমি। আনন্দে তখন চিৎকার দিয়ে উঠি! আল্লাহর কাছে অনেক অনেক শুকরিয়া জানাই। পাশাপাশি বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন ও কাছের লোকদের রেজাল্টের খবর জানাই।

স্বপ্ন দেখার শুরু
ছোটবেলা থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল ইঞ্জিনিয়ার হব। সেই স্বপ্ন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ভর্তি হই। কিন্তু দাদার আকস্মিক মৃত্যুর কারণে মেডিকেলে পড়ার ইচ্ছা হয়। ভর্তি হই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে। এ ছাড়া ছোটবেলা থেকেই মা-বাবা বড় হয়ে ডাক্তার হওয়ার উৎসাহ দিতেন। বড় ভাইদের দেখে বিসিএস দেওয়ার প্রতি একটা ঝোঁক চলে আসে। সেই থেকে বিসিএসের স্বপ্ন দেখি, প্রস্তুতি শুরু করি।

যেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি
মেডিকেলে পড়ার সময় ক্যাম্পাসের বড় ভাইদের বই নিয়ে মাঝেমধ্যে দেখতাম। তা ছাড়া ছোটবেলা থেকেই আমার পত্রিকা পড়া ও টিভিতে খবর দেখার অভ্যাস ছিল। লাইব্রেরিতে বিসিএসের বই যেগুলো আকারে ছোট ও সুন্দর কভার, সেগুলো কিনে পৃষ্ঠা উল্টিয়ে দেখতাম। পাশাপাশি বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র, মেডিসিন ক্লাব—এসব লাইব্রেরি থেকে গল্পের বই পড়ার অভ্যাস ছিল। তা ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়াতে বিভিন্ন বিসিএস রিলেটেড পেজে মাঝে মাঝে চোখ বোলাতাম। এসবই ছিল পড়াশোনার পাশাপাশি একটা ভিত্তি গড়ার হাতিয়ার। ফাইনাল প্রফ দিয়ে রেজাল্ট বের হওয়ার আগে ৪১তম বিসিএসের আবেদন করি ও পড়া শুরু করি। এক সেট বই কিনে পড়তে থাকি ও মডেল টেস্ট পরীক্ষা দিতে থাকি। কোচিংয়ের পরীক্ষায় খারাপ হলে তা সমাধান করে নিতাম। তারপর লিখিত পরীক্ষা, যা প্রধান ভূমিকা রাখে ক্যাডার হতে। প্রিলিমিনারি দিয়েই লিখিত পরীক্ষার জন্য পড়াশোনা শুরু করি, সিলেবাস ও পরীক্ষা পদ্ধতি বোঝার চেষ্টা করি। লিখিত পরীক্ষায় প্রচুর লিখতে হয়, পাঁচ দিনে ৯০০ নম্বর। শুরু থেকেই অনুবাদ, রচনা, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিকে জোর দিই। প্রতিদিন কিছু না কিছু পড়তাম। অনুবাদ, গণিত, মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান, রচনা ও মেডিকেল সায়েন্স নিয়মিত অভ্যাসে রাখতাম। নিয়মিত পরীক্ষা অনুশীলনই আমাকে লিখিত পরীক্ষায় ভালো করতে সাহায্য করেছে। ভাইভা পরীক্ষার আগে আমি চারদিকের খবর, নিজ এলাকা, মেডিকেল, সাম্প্রতিকসহ আমার ক্যাডার সম্পর্কিত বিষয়ে পড়া শুরু করি। মোটামুটি গুছিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি মক ভাইভা আমাকে কনফিডেন্স বাড়াতে সাহায্য করে।

বাধা জয়
জেনারেল বিসিএসের প্রধান প্রতিবন্ধকতা হলো এর দীর্ঘসূত্রতা। কারণ, ২০১৯ সালে ফাইনাল প্রফ দিয়ে ৪১তম বিসিএসে আবেদন করা বিসিএসের রেজাল্ট দেয় ২০২৩ সালে। এই দীর্ঘ পথে প্রায় সবাইকেই অর্থনৈতিক কষ্ট ও বেকারত্বের সমস্যায় পড়তে হয়। সঙ্গে নিজের কর্মস্থল পরিচয়হীনতা। আমার পারিপার্শ্বিকতা অনেক সাপোর্টিভ এবং কোনো পিছুটান না থাকা সত্ত্বেও মাঝেমধ্যে মনে হতো, ঠিক পথে আছি তো? এ সময় সিনিয়র ও বন্ধুরা পাশে ছিল বলেই পথটুকু মসৃণ হয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার
অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। সবকিছুরই প্রতিক্রিয়া বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। ফেসবুক, ইউটিউবে আজকাল অনেক ভালো ভালো ক্লাস ও টপিক ডিসকাশন পাওয়া যায়। কেউ যদি কোনো টপিক বুঝতে, পরীক্ষার সমাধান পেতে এবং  নিজেকে যাচাই করতে চান, তাহলে সবকিছুই পাবেন হাতের মুঠোয়। দরকার শুধু নিজের ইচ্ছার। আমি সোশ্যাল মিডিয়াতে বিভিন্ন বিসিএস রিলেটেড পেজে লাইক দিয়ে রাখতাম। মাঝে মাঝে এসব পেজে চোখ বোলাতাম। কারণ, এখানে আপডেট সব তথ্য পাওয়া যেত। প্রস্তুতিতে কোথাও কিছু আটকালে ইউটিউবে ওই টপিক লিখে সার্চ দিলেই, অনেক ক্লাস চলে আসত। কয়েকটা দেখে নিলে সমস্যা সমাধান হয়ে যেত।

নতুনদের জন্য পরামর্শ
নতুনরা পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিত পত্রিকা পড়া ও টিভিতে খবর দেখবেন। সবচেয়ে ভালো হয় যদি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের বিষয়গুলো টিউশনি করাতে পারেন। বাংলা ও ইংরেজি কালজয়ী গল্প, উপন্যাস, নাটক পড়ে ও দেখে রাখলে অনেকটাই এগিয়ে থাকবে। প্রিলিমিনারি প্রস্তুতির ক্ষেত্রে সিলেবাস অনুযায়ী নিজের সবল ও দুর্বল পয়েন্ট ভাগ করে নেবেন। দুর্বল অংশ একটা রুটিন করে পড়েন আর পরীক্ষা দিন। পরীক্ষায় যা ভুল হয়, সেটা যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয়। প্রয়োজনে কম পড়বেন, তবে বেশি রিভিশন দেবেন। পাশাপাশি ওই টপিকের কনসেপ্ট ক্লিয়ার করে পড়বেন। ভুলেও কোনো টপিক বাদ দেবেন না, হোক তা অল্প পড়েন। রিটেনের প্রার্থীরা প্রচুর মডেল টেস্ট দিন এবং প্রশ্ন সমাধান করুন। পরীক্ষায় মানচিত্র ও ছবি, চার্ট দিলে ভালো নম্বর পাওয়া যায়। বিভিন্ন রকমের চার্ট রয়েছে। খাতায় এক স্টাইলে বারবার সব উত্তর না লিখে ভিন্নভাবে লিখতে হবে। পাই চার্ট, বার ডায়াগ্রাম, টেবিল, হিস্ট্রোগ্রাম ও পিক্টোগ্রাম ব্যবহার করা যেতে পারে। সঙ্গে ডেটার সোর্স দিলে ভালো নম্বর পাওয়া যায়। এতে লেখায় বৈচিত্র্য আসে। সবচেয়ে প্রয়োজনীয় হলো, সময় ব্যবস্থাপনা। অল্প লিখুন, তবে সব প্রশ্ন লিখে শেষ করুন। ভাইভার জন্য সাম্প্রতিক অনেক তথ্য লাগে। পাশাপাশি নিজ এলাকা, কর্মক্ষেত্র, কাজের পরিধি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমস্যা জেনে নিতে হবে।

অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত