Ajker Patrika

বিসিএস ভাইভা: প্রশাসন ক্যাডারের কমন প্রশ্নোত্তর

আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২: ১৪
Thumbnail image

চলছে ৪৩তম বিসিএস ভাইভা। ভাইভায় ভালো করার জন্য গুছিয়ে প্রস্তুতির বিকল্প নেই। এ জন্য বেশি বেশি বিগত সময়ে ক্যাডারে উত্তীর্ণদের ভাইভা অভিজ্ঞতা পড়তে হবে। শতাধিক বিসিএস ক্যাডারের ভাইভা অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করে প্রশাসন ক্যাডারের কমন কিছু প্রশ্নোত্তর নিয়ে লিখেছেন, এম এম মুজাহিদ উদ্দীন

প্রশ্ন: কেন প্রশাসন ক্যাডার আপনার প্রথম পছন্দ?
উত্তর: স্যার, প্রতিটি ক্যাডার থেকেই দেশসেবা এবং মানুষের উপকার করার যথেষ্ট সুযোগ থাকে। কিন্তু আমার মনে হয় প্রশাসন সার্ভিসে সাধারণ মানুষের খুব কাছাকাছি থেকে সেবা দেওয়ার সুযোগ সবচেয়ে বেশি। যেমন একজন ইউএনও চাইলে তাঁর উপজেলার অর্থনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষা, আইনশৃঙ্খলাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে সরাসরি ভূমিকা রাখতে পারেন। সরাসরি অর্থে মানুষের বিভিন্ন সমস্যা তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে সমাধান দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন।

প্রশাসন সার্ভিসের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো ‘বৈচিত্র্য’। এই সার্ভিসের কাজের পরিধি সবচেয়ে বেশি বিস্তৃত। কেউ মাঠ প্রশাসনে ম্যাজিস্ট্রেট, এসি ল্যান্ড, ইউএনও, ডিসি হয়ে সরাসরি জনগণের সেবায় নিয়োজিত থাকতে পারেন আবার সহকারী সচিব থেকে সিনিয়র সচিব হিসেবে মন্ত্রণালয়ে, সরকারের বিভিন্ন অধিদপ্তর, পরিদপ্তরেও কাজ করতে পারেন। এ ছাড়া বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসে প্রশাসন ক্যাডারে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে বিভাগ, জেলা এবং উপজেলায় বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি, ইউএনওরা অন্য সব ক্যাডার অফিসারদের মাঝে সমন্বয় সাধন করে সরকারি নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে কার্যকরী ভূমিকা রাখেন। প্রশাসন ক্যাডার থেকে বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার সুযোগ অনেক বেশি। সরকারি অনেক স্কলারশিপ (পিএম ফেলোশিপ, জাপানের জেডিএস স্কলারশিপ...) নিয়ে প্রতিবছর অনেক অফিসার উচ্চশিক্ষার জন্য জাপান, ইউরোপ, আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশে যাচ্ছেন।

অ্যাডমিন ক্যাডারদের আরও একটি ব্যতিক্রম সুযোগ হলো ‘মোবাইল কোর্ট’। এর মাধ্যমে খাদ্যে ভেজাল নিয়ন্ত্রণ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ, মাদক নিয়ন্ত্রণ, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণসহ অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সরাসরি সমাধান ও বিচার করা যায়। সব ক্যাডার সার্ভিসের মধ্যে অ্যাডমিন ক্যাডারে প্রমোশনের সুযোগ অনেক বেশি। সহকারী কমিশনার বা সহকারী সচিব থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব পর্যন্ত হওয়া যায়।

সবশেষে এই সার্ভিসে যে সামাজিক স্বীকৃতি পাওয়া যায় তা অতুলনীয়। দিন শেষে সম্মান নিয়ে বাঁচাটাই সবচেয়ে মুখ্য। এক কথায়, এই সার্ভিসে একটি পরিপূর্ণ ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব বলেই অধিকাংশ চাকরিপ্রত্যাশীর প্রথম পছন্দ ‘প্রশাসন ক্যাডার’ ওপরের পয়েন্টগুলো ভালোভাবে বুঝে নিজের ভাষায় বলতে পারলেই একটা গোছানো উত্তর দেওয়া যাবে।

প্রশ্ন: জেলা প্রশাসকের কয়টি নাম আছে ও কী কী?
উত্তর: স্যার, জেলা প্রশাসকের তিনটি নাম আছে। ১. ডেপুটি কমিশনার, ২. ডেপুটি কালেক্টর, ৩. ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট

প্রশ্ন: জেলা প্রশাসক কীভাবে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের কাজে সমন্বয় সাধন করেন?
উত্তর: স্যার, প্রতি মাসে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নেতৃত্বে জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভা হয়। ওই সভায় জেলা পর্যায়ের সব দপ্তরের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকেন। এভাবে জেলার সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তদারকি করেন।

প্রশ্ন: ইউএনওর দায়িত্বগুলো বলেন।
উত্তর: ইউএনওর অনেকগুলো দায়িত্ব রয়েছে।

১. তিনি উপজেলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।
২. উপজেলার আইনশৃঙ্খলা কমিটির প্রধান হিসেবে কাজ করেন।
৩. উপজেলার সব প্রশাসনিক ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের তত্ত্বাবধান করেন।
৪. উপজেলার সব সরকারি অফিসের কার্যক্রমের সমন্বয় করেন।
৫. রাজস্ব বাজেট সংগ্রহ ও তত্ত্বাবধান।
৬. উপজেলা পরিষদের নীতিনির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে উপজেলা চেয়ারম্যানকে সাহায্য করেন।
৭. উপজেলার দুর্যোগকালীন ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করেন।
মূলত একটি উপজেলায় যত রকমের কার্যক্রম হয় (সরকারি বা বেসরকারি) সবকিছুর ওপর সরকারের নির্দেশনা সুষ্ঠুভাবে নিশ্চিতকরণ।

প্রশ্ন: সহকারী কমিশনার (ভূমি) কোন মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করেন? 
উত্তর: ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে। কিন্তু চাকরি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন।

প্রশ্ন: সহকারী কমিশনারদের (ভূমি) দেখভাল করেন কে?
উত্তর: জেলা প্রশাসন ও বিভাগীয় প্রশাসন।

প্রশ্ন: মাঠ প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করে কে?
উত্তর: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

প্রশ্ন: সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাজ কী? 
উত্তর: ভূমি জরিপ, রাজস্ব সংগ্রহ, মিউটেশন, হাটবাজার ব্যবস্থাপনা, খাসমহল ব্যবস্থাপনা, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা প্রভৃতি।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আমলাতন্ত্র কী ধরনের দায়িত্ব পালন করে?
উত্তর: বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে আমলাতন্ত্রের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অশেষ হলেও বিভিন্ন আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক সমস্যা নিয়ে এসব দেশের সনাতন পদ্ধতির প্রশাসন বিভিন্ন ধরনের দায়িত্ব পালন করে। আর তা হলো:
১. সামাজিক মূল্যবোধের মাধ্যমে সামাজিক সংহতি গড়ে তোলা।
২. সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা।
৩. বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি জ্ঞান কাজে লাগানোর উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা।
৪. প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে উত্তম শাসনের লক্ষ্যে উন্নত করা।
৫. প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি করা।
৬. প্রশাসন ক্ষেত্রে জনগণের সমর্থন লাভ করা।
৭. জননিরাপত্তা ও কল্যাণের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে শক্তিশালী করা।
৮. প্রশাসনের সর্বস্তর থেকে দুর্নীতি দূর করা।

প্রশ্ন: আমলাতন্ত্রের রাজনীতিকীকরণ কাকে বলে?
উত্তর: আমলাতন্ত্রের রাজনীতিকীকরণের অর্থ হচ্ছে আমলারা রাজনীতি নিরপেক্ষ না থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা আদায়ের জন্য রাজনীতিপ্রবণ হয়ে পড়ে।

প্রশ্ন: আপনি কী মনে করেন, বাংলাদেশের আমলারা সামাজিক গোষ্ঠী হিসেবে এলিট চরিত্রসম্পন্ন?
উত্তর: অবশ্যই। বাংলাদেশের আমলারা সামাজিক গোষ্ঠী হিসেবে এলিট চরিত্রসম্পন্ন। কেননা তাঁরা সমাজের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।

প্রশ্ন: আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বা লাল ফিতার দৌরাত্ম্য বলতে কী বোঝেন?
উত্তর: সরকারের রুলস অব বিজনেস অনুসারে, যেকোনো ফাইল চূড়ান্ত স্বাক্ষরের জন্য সচিবালয়ে নির্দিষ্ট কর্মকর্তার টেবিলে নির্দিষ্ট সময়ে নিষ্পত্তি না করে প্রভাব খাটিয়ে দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করলে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে যে জটিলতা দেখা দেয়, তাকে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বলে। লাল ফিতা দ্বারা এই ফাইল বন্ধ করে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি করা হয় বলে একে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য বলে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঋণের ১৩০০ কোটির এক টাকাও দেননি হলিডে ইনের মালিক

নারীদের খেলায় আর নাক গলাবে না, দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাইল ভাঙচুরকারীরা

ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় ফরিদপুরের ২ জনকে গুলি করে হত্যা

গণ–সমাবেশে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিলেন বিএনপি নেতা

হেফাজতে যুবদল নেতার মৃত্যু, সেনা ক্যাম্প কমান্ডারকে প্রত্যাহার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত