Ajker Patrika

দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে মহানবী (সা.)-এর নির্দেশনা

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৫: ৪২
Thumbnail image

পৃথিবীতে আমরা কেউ-ই চাপমুক্ত নই; দুশ্চিন্তা সবারই থাকে। তবে এটি অস্বাভাবিক মাত্রায় হলে তা মানসিক রোগে রূপ নেয়, যা অনেকগুলো শারীরিক রোগেরও কারণ। দুশ্চিন্তার কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়; উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, নিদ্রাহীনতাসহ অনেক জটিল রোগ দেখা দেয়। তাই প্রতিটি মানুষের দুশ্চিন্তা থেকে বের হয়ে আসা উচিত। চিন্তামুক্ত থাকার জন্য কোরআন-হাদিসে বেশ কিছু আমলের কথা এসেছে। এর কয়েকটি সংক্ষেপে আলোচনা করছি। 

তাকদিরে বিশ্বাস: তাকদিরের ওপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখুন। তাকদিরে বিশ্বাসী ব্যক্তিকে দুশ্চিন্তা কাবু করতে পারে না। তাকদিরের সারমর্ম উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের ক্লেশ দিলে তিনি ছাড়া তা মোচনকারী আর কেউ নেই। আর আল্লাহ যদি তোমার মঙ্গল চান, তাহলে তাঁর অনুগ্রহ রদ করার কেউ নেই।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত: ১০৭) 

পরকালে পুরস্কারপ্রাপ্তির আশা: দুনিয়ার বিপদ-আপদের বিনিময়ে পরকালে মিলবে আল্লাহর অনুগ্রহ। পরকালের বিভীষিকার সামনে দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট কিছুই নয়। তাই সেদিকটা কল্পনা করে দুঃখ-কষ্টে ধৈর্য ধরুন। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, ‘যেদিন তারা তা প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন তাদের মনে হবে, যেন তারা পৃথিবীতে মাত্র এক সন্ধ্যা অথবা এক প্রভাত অবস্থান করেছে।’ (সুরা নাজিয়াত, আয়াত: ৪৬) 

দুঃখী মানুষের কথা ভাবা: আপনার চেয়ে বেশি বিপদগ্রস্ত মানুষের কথা ভাবুন। হাদিসে এসেছে, এক সাহাবি রাসুলের কাছে দুঃখ-কষ্টের অভিযোগ করেন। তখন মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের জানা উচিত, তোমাদের আগের মোমিন লোকদের এই অবস্থা ছিল যে, একজন মানুষকে ধরে আনা হতো এবং গর্ত খুঁড়ে তাকে পুঁতে রাখা হতো। তারপর তার মাথার ওপর করাত চালিয়ে তাকে দুই-খণ্ড করে দেওয়া হতো এবং মাংসের নিচে হাড় পর্যন্ত লোহার চিরুনি চালিয়ে শাস্তি দেওয়া হতো। কিন্তু এই কঠোর পরীক্ষা তাকে তার ইসলাম থেকে ফেরাতে পারত না।’ (সহিহ্ বুখারি, হাদিস: ৩৬১৬) 

আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা: আল্লাহর ব্যাপারে সুধারণা পোষণ করুন। তার ওপর ভরসা রাখুন। তিনি নিশ্চয়ই দুশ্চিন্তা থেকে আপনাকে মুক্তি দেবেন—এই বিশ্বাস অন্তরে লালন করুন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক, আয়াত: ৩) 

নফল নামাজ পড়া: দুশ্চিন্তা দূর করার নিয়তে নফল নামাজ পড়ুন। হাদিসে এসেছে, মহানবী (সা.) যখন দুশ্চিন্তায় পড়তেন, নামাজে মগ্ন হতেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাও...।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৩) 

আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা: বেশি বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তিগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১৫২০) 

দরুদ পাঠ: মহানবী (সা.)-এর প্রতি অধিক হারে দরুদ পাঠ করুন। দীর্ঘ এক হাদিসে এসেছে, উবাই ইবনে কাব (রা.) দরুদ পড়া প্রসঙ্গে নবীজিকে বললেন, ‘আমি আমার সবটুকু সময়ে আপনার প্রতি দরুদ পড়ব।’ তখন মহানবী (সা.) বলেন, ‘তাহলে তা তোমার চিন্তামুক্তির জন্য যথেষ্ট হবে এবং তোমার গুনাহ মাফ করা হবে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২৪৫৭) 

সুনির্দিষ্ট দোয়া পাঠ: দুশ্চিন্তা ও মানসিক অস্থিরতা থেকে মুক্তির জন্য রাসুল (সা.)-এর শেখানো দোয়াগুলো বেশি বেশি পড়ুন। দোয়া ইউনুস পড়ুন—‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন’; অর্থ: ‘আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, আপনি পবিত্র; আমি নিশ্চয়ই পাপীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম।’ এই দোয়া পড়লে আল্লাহ বিপদ-আপদ দূর করে দেন। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩৫০৫) 

পেরেশানির সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি বিশেষ দোয়া পড়তেন। দোয়াটি হলো ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আউযু বিকা মিনাল আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়া আউজু বিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউজু বিকা মিন দালায়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, নিশ্চয়ই আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষের দমন-পীড়ন থেকে।’ (সহিহ্‌ বুখারি, হাদিস: ২৮৯৩) 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত