Ajker Patrika

নারীদের সঙ্গে নবীজির আচরণ

মুফতি খালিদ কাসেমি
নারীদের সঙ্গে নবীজির আচরণ

জাহেলি যুগে নারীরা ছিল লাঞ্ছিত, অপমানিত। সমাজে তাদের কোনো অধিকার স্বীকার করা হতো না। তাদের মনে করা হতো বোঝাস্বরূপ। মহানবী (সা.) নারীদের অধিকার নিশ্চিত করেছেন। উম্মতকে তিনি নারীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহারের উপদেশ দিয়েছেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমরা নারীদের প্রতি কল্যাণের উপদেশ গ্রহণ করো।’ (মুসলিম)

নারীদের শিক্ষার প্রতি নবীজি (সা.) গুরুত্ব দিতেন। সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে তাদের শিক্ষা দিতেন। হাদিসে বর্ণিত আছে, এক নারী নবীজি (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আপনার হাদিস তো কেবল পুরুষেরা শুনতে পান। সুতরাং আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য এক দিন নির্ধারণ করে দিন, যেদিন আমরা আপনার কাছে আসব। আল্লাহ আপনাকে যা কিছু শিক্ষা দিয়েছেন, তা থেকে আপনি আমাদের শিক্ষা দেবেন।’ নবীজি (সা.) বললেন, ‘তোমরা অমুক অমুক দিন অমুক অমুক স্থানে সমবেত হবে।’ তারপর তাঁরা সমবেত হলেন এবং নবী (সা.) তাঁদের কাছে এলেন এবং আল্লাহ তাঁকে যা কিছু শিক্ষা দিয়েছেন, তা থেকে তাঁদের শিক্ষা দিলেন।’ (বুখারি)

মহানবী (সা.) কোনো নারীকে ভুল করতে দেখলে নম্র ভাষায় সংশোধন করে দিতেন। হাদিসে বর্ণিত আছে, নবী (সা.) এক নারীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যিনি কবরের পাশে কাঁদছিলেন। নবীজি (সা.) বললেন, ‘তুমি আল্লাহকে ভয় করো এবং সবর করো।’ ওই নারী বললেন, ‘আমার কাছ থেকে চলে যান। আপনার ওপর তো আমার মতো বিপদ আসেনি।’ তিনি নবীজি (সা.)-কে চিনতে পারেননি। পরে তাঁকে বলা হলো, তিনি তো নবীজি (সা.)। তখন তিনি নবীজির দরবারে হাজির হলেন। সেখানে কোনো পাহারাদার পেলেন না। তিনি আরজ করলেন, ‘আমি আপনাকে চিনতে পারিনি।’ নবীজি (সা.) বললেন, ‘সবর তো বিপদের প্রথম অবস্থাতেই হয়।’ (বুখারি)

লেখক: ইসলামবিষয়ক গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের সাত দিন আগেই কেন্দ্রে সেনা চায় বিএনপি

পিরোজপুর-২ আসন: বিএনপিতে প্রতিযোগিতা, মাঠে একা সাঈদীর ছেলে

সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ: স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঘাড়ে ১ শতাংশ স্বাক্ষরের বোঝা থাকছেই

আজকের রাশিফল: তরকারিতে লবণ বেশি হলেই তুলকালাম বাধাবেন না

প্রতিবেশীদের ছাড়াই পরাশক্তি হওয়ার উচ্চাভিলাষ ভারতের, পারবে কি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পবিত্রতা: শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে মুক্তির পথ

ইসলাম ডেস্ক 
মুসলিম। ছবি: সংগৃহীত
মুসলিম। ছবি: সংগৃহীত

আরবি শব্দ তহারাত-এর আভিধানিক অর্থ পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা। আর শরয়ি দৃষ্টিতে তহারাত হলো বিশেষ পদ্ধতিতে অপবিত্রতা থেকে শুদ্ধ হওয়া।

মানবজীবনের প্রতিটি পর্যায়—জাগতিক হোক বা পরলৌকিক, পবিত্রতা এক অনন্য গুরুত্ব বহন করে। শাহ ওলিউল্লাহ দেহলভি (রহ.) তাঁর অমর গ্রন্থ ‘হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ’ (১ / ৫৪)-তে চারটি সৌভাগ্যের স্বভাবের কথা বলেছেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো পবিত্রতা অর্জনের অভ্যাস।

পবিত্রতা মানুষকে করে তোলে ফেরেশতার অনুরূপ। তার হৃদয় হয়ে ওঠে নির্মল। আত্মা হয় প্রেরণার আধার। অন্যদিকে, অপবিত্রতা মানুষকে ঠেলে দেয় শয়তানের কুমন্ত্রণার দরজায়।

যে ব্যক্তি সর্বদা পবিত্রতায় যত্নবান, তার অন্তরে জন্ম নেয় আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার যোগ্যতা। সে দেখে সততা ও আলোয় ভরা স্বপ্ন। তার চরিত্রে ফুটে ওঠে অভূতপূর্ব আত্মিক সৌন্দর্য।

পবিত্রতা শুধু শরীরের পরিচ্ছন্নতা নয়, এটি আত্মার পরিশুদ্ধতার প্রতীক। এটি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পবিত্রতা রক্ষা করার একটি মহৎ উপায়। তাই পবিত্রতার মাধ্যমে নিজেকে শুদ্ধ ও পরিপূর্ণ রাখা প্রতিটি মুসলিমের নৈতিক দায়িত্ব এবং সফল জীবনের মূল চাবিকাঠি।

লেখক: মুফতি আবু রায়হান আল মাহমুদ, প্রিন্সিপাল, গাঙ্গাটিয়া দারুল কুরআন মাদ্রাসা বাখরাবাদ, কুমিল্লা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের সাত দিন আগেই কেন্দ্রে সেনা চায় বিএনপি

পিরোজপুর-২ আসন: বিএনপিতে প্রতিযোগিতা, মাঠে একা সাঈদীর ছেলে

সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ: স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঘাড়ে ১ শতাংশ স্বাক্ষরের বোঝা থাকছেই

আজকের রাশিফল: তরকারিতে লবণ বেশি হলেই তুলকালাম বাধাবেন না

প্রতিবেশীদের ছাড়াই পরাশক্তি হওয়ার উচ্চাভিলাষ ভারতের, পারবে কি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জমাদিউল আউয়ালের প্রথম জুমা: আত্মশুদ্ধি ও নতুন সূচনার বার্তা

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ইসলামি বর্ষপঞ্জির পঞ্চম মাস হলো জমাদিউল আউয়াল। আর এই মাসের প্রথম জুমা (শুক্রবার) মুসলমানদের জন্য বিশেষ তাৎপর্যময় একটি দিন। ইসলাম ধর্মে জুমা বা শুক্রবার এমনিতেই বরকতময় দিন হিসেবে স্বীকৃত। তাই যখন এই পবিত্র জুমা নতুন একটি মাসের সূচনায় আসে, তখন তা আত্মসমালোচনা, তওবা ও নতুন করে ইমানকে নবায়নের এক মহামুহূর্ত তৈরি করে।

জমাদিউল আউয়াল মাস হিজরি বর্ষপঞ্জির মধ্যবর্তী এক শান্ত সময়। ইসলামি ইতিহাসে এই মাসে বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে—বিশেষত নবী করিম (সা.)-এর সাহাবিদের কিছু যুদ্ধ এবং ইসলামি সমাজের পুনর্গঠনের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। এটি এমন এক মাস, যা আমাদের আল্লাহর পথে অবিচল থাকার, আত্মবিশ্বাস ও ধৈর্য ধারণের শিক্ষা দেয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন যারা তাঁর পথে দৃঢ় থাকে।’ (সুরা সাফ: ৪)

জুমা শ্রেষ্ঠতম দিন

নবী করিম (সা.) বলেন, ‘সূর্য উদিত হয়, এমন দিনগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম দিন হলো শুক্রবার। এই দিনেই আদম সৃষ্টি হয়েছেন, এই দিনেই জান্নাতে প্রবেশ করেছেন এবং এই দিনেই জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে। কিয়ামতও এই দিনেই সংঘটিত হবে।’ (সহিহ্ মুসলিম: ৮৫৪)

জুমার দিন মুসলমানদের জন্য বিশেষ ইবাদতের দিন। এদিনে গোসল করা, সুন্দর পোশাক পরা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা ও সালাত আদায় করা—এসব আমল অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।

আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন, ‘হে মুমিনগণ, যখন জুমার দিনে নামাজের আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ছুটে যাও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে।’ (সুরা জুমুআ: ৯)

এই জুমা ও পুরো মাসে কিছু আমল করলে আল্লাহর রহমত ও বরকত পাওয়ার আশা করা যায়:

১. আত্মশুদ্ধি ও তওবা: অতীতের ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।

২. সুরা কাহফ তিলাওয়াত: নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শুক্রবারে সুরা কাহফ তিলাওয়াত করে, আল্লাহ তাআলা তাকে এক শুক্রবার থেকে পরের শুক্রবার পর্যন্ত নুর দান করেন।’ (মুস্তাদরাকে হাকেম: ৩৩৯২)

৩. দরুদ শরিফ বেশি পরিমাণে পড়া: নবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা আমার প্রতি বেশি দরুদ পাঠ করো—কারণ, তোমাদের দরুদ আমাকে পৌঁছে দেওয়া হয়।’ (সুনান আবু দাউদ: ১৫৩১)

৪. দরিদ্র ও অভাবীদের সহায়তা: মাসের শুরুতে দান-সদকা করলে পুরো মাসে বরকত আসে।

৫. দোয়া কবুলের সময়: শুক্রবারে আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়টি বিশেষ দোয়া কবুলের সময়।

এই জুমা হোক জীবনের নতুন দিকনির্দেশনা

জমাদিউল আউয়ালের প্রথম জুমা কেবল একটি তারিখ নয়; এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবন ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু নেক আমল চিরস্থায়ী। নতুন মাসের শুরু যেন নতুন প্রেরণা হয়ে আসে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের পরিবর্তন করে।’ (সুরা রাদ: ১১)। তাই আসুন, এই পবিত্র জুমায় নিজেদের পরিবর্তনের প্রতিজ্ঞা করি—নামাজে মনোযোগ দিই, কোরআন পাঠে নিয়মিত হই, মনের গ্লানি দূর করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে জীবন উৎসর্গ করি।

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের সাত দিন আগেই কেন্দ্রে সেনা চায় বিএনপি

পিরোজপুর-২ আসন: বিএনপিতে প্রতিযোগিতা, মাঠে একা সাঈদীর ছেলে

সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ: স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঘাড়ে ১ শতাংশ স্বাক্ষরের বোঝা থাকছেই

আজকের রাশিফল: তরকারিতে লবণ বেশি হলেই তুলকালাম বাধাবেন না

প্রতিবেশীদের ছাড়াই পরাশক্তি হওয়ার উচ্চাভিলাষ ভারতের, পারবে কি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ধর্ষণ মানবতার বিরুদ্ধে এক ঘৃণ্য যুদ্ধ

কাউসার লাবীব
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

মানবসমাজে ধর্ষণ একটি জঘন্য, ঘৃণিত ও ভয়াবহ অপরাধ। ধর্ষণ যেভাবে নারীর শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক নিরাপত্তাকে বিপন্ন করে, তেমনি সমাজের শান্তিশৃঙ্খলা ও নৈতিক কাঠামো ভেঙে দেয়। ইসলাম, একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা হিসেবে নারী জাতিকে সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সম্মান দিয়েছে এবং নারীর সম্মানহানি বা ইভ টিজিংকে সম্পূর্ণরূপে হারাম ঘোষণা করেছে। ধর্ষণকে ইসলামে ব্যভিচারের (জিনা) চেয়েও ভয়ংকর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। এই ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি প্রতিরোধে ইসলাম ব্যক্তিগত আত্মশুদ্ধি থেকে শুরু করে সামাজিক প্রতিরোধ এবং অপরাধীর জন্য কঠোর শাস্তির সমন্বিত ব্যবস্থা দিয়েছে।

ধর্ষণ বা ব্যভিচার এক দিনে সংঘটিত হয় না; বরং এটি ধাপে ধাপে অশ্লীলতার পথ ধরে আসে। তাই ইসলাম অপরাধের উৎসমুখেই লাগাম টেনে ধরার জন্য নারী-পুরুষ উভয়কে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে।

  • দৃষ্টির সংযম ও যৌনাঙ্গের হেফাজত: যৌন কামনার জন্ম মূলত দেখা থেকে। তাই ইসলাম সর্বপ্রথম নারী-পুরুষ উভয়কেই দৃষ্টিকে অবনমিত রাখতে নির্দেশ দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মুমিনদের বলুন—তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। ... ইমানদার নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে।’ (সুরা নুর: ৩০-৩১)

কঠোরভাবে পর্দার বিধান ও অবাধ মেলামেশা বন্ধ: পর্দার বিধান নারী-পুরুষের মধ্যে দূরত্ব ও নিরাপদ সম্পর্ক বজায় রাখে। নারীদের তাদের রূপ-সৌন্দর্য স্বামী ও মাহরাম (যাদের সঙ্গে বিয়ে বৈধ নয়) ব্যতীত অন্য কারও সামনে প্রকাশ না করতে এবং বাইরে যাওয়ার সময় শালীন পোশাক পরিধান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

  • নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নির্জন স্থানে কোনো নারী-পুরুষ একত্র হলে তাদের মধ্যে তৃতীয়জন হয় শয়তান।’ (জামে তিরমিজি)। তাই নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা বন্ধের নির্দেশনা দেয় ইসলাম। এ ছাড়া অশ্লীল যৌন উত্তেজক গান, চলচ্চিত্র, নাটক বা পর্নোগ্রাফি দেখা বা প্রচার করাকে ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ এগুলো ব্যভিচারের দিকে মানুষকে আকর্ষিত করে।

  • উপযুক্ত বয়সে বিয়ে ও নৈতিক শিক্ষা: শারীরিক ও চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষায় ইসলাম যুবক-যুবতীদের উপযুক্ত বয়সে বিয়ে করার প্রতি উৎসাহিত করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে যুব সম্প্রদায়, তোমাদের মাঝে যারা বিয়ে করতে সক্ষম, তারা যেন বিয়ে করে নেয়। কারণ বিয়ে দৃষ্টি অবনত রাখতে এবং গুপ্তাঙ্গের পবিত্রতা রক্ষা করতে অধিক সহায়ক...।’ (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)

এ ছাড়া, পরিবার ও শিক্ষাব্যবস্থায় তাকওয়াভিত্তিক (খোদাভীতি) নৈতিক শিক্ষা দেওয়া অপরিহার্য, যা আত্মশুদ্ধি ও অপরাধ থেকে দূরে থাকতে সহায়ক।

ধর্ষকের কঠোরতম শাস্তির নিশ্চয়তা

ইসলামে ব্যভিচার, বলপ্রয়োগ এবং সম্ভ্রম লুণ্ঠনের সমন্বয়ে গঠিত একটি মারাত্মক অপরাধ হলো ধর্ষণ। তাই ধর্ষকের শাস্তি অত্যন্ত কঠোর এবং তাতে কোনো প্রকার দয়া-মায়া প্রদর্শনের সুযোগ নেই।

  • ধর্ষকের শাস্তি: ইসলামি শরিয়তে ধর্ষণের অপরাধে ধর্ষকের ওপর ব্যভিচারের শাস্তি প্রয়োগ করা হয়। সে অনুযায়ী, বিবাহিত ধর্ষকের শাস্তি প্রকাশ্যে রজম বা পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড। অবিবাহিত ধর্ষকের শাস্তি প্রকাশ্যে ১০০ বেত্রাঘাত।
  • আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ব্যভিচারিণী নারী ও ব্যভিচারী পুরুষ; তাদের প্রত্যেককে ১০০ করে বেত্রাঘাত করো। আল্লাহর বিধান কার্যকরে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয়...।’ (সুরা নুর: ২)
  • ইমাম মালেক (রহ.)-সহ কিছু ফকিহ মনে করেন, সমাজে ধর্ষণ মহামারির আকার ধারণ করলে এটি কেবল ব্যভিচার নয়, এটি ‘মুহারাবা’ (পৃথিবীতে অনাচার সৃষ্টি, লুণ্ঠন ও নিরাপত্তা বিঘ্নিতকরণ) অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। সে ক্ষেত্রে ধর্ষককে নিম্নলিখিত শাস্তির যেকোনো একটি দেওয়া যেতে পারে: হত্যা, শূলে চড়ানো, বিপরীত দিক থেকে হাত-পা কেটে দেওয়া অথবা দেশ থেকে নির্বাসিত করা। এই কঠোর শাস্তি সমাজ থেকে ধর্ষণ সমূলে নির্মূলের জন্য জরুরি।
  • ধর্ষিতার ক্ষেত্রে বিধান: ধর্ষণের শিকার নারী মজলুম বা নির্যাতিত হওয়ায় তার ওপর কোরআন-হাদিসে বর্ণিত কোনো শাস্তি কার্যকর হবে না। কারণ ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার ওপর বল প্রয়োগ করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার উম্মতের ভুলবশত করা অপরাধ, ভুলে যাওয়া কাজ ও বলপ্রয়োগকৃত বিষয় ক্ষমা করে দিয়েছেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ২০৪৫)
  • প্রতিরোধের অধিকার: ধর্ষিত নারীকে সম্ভব হলে তা প্রতিরোধ করতে হবে। যদি প্রতিরোধ করতে গিয়ে ধর্ষককে হত্যা করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাতেও ইসলাম সায় দিয়েছে। এ ছাড়া প্রতিরোধ করতে গিয়ে ওই অবলা নারী যদি মারা যায়, তাহলে তিনি শহীদের মর্যাদা লাভ করবে। অর্থাৎ, সম্ভ্রম রক্ষা করতে গিয়ে কেউ নিহত হলে, সে শহীদ।
  • মোটকথা, নারীর মর্যাদা রক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে ইসলাম। সে জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা, নৈতিক শিক্ষাদান ও পরিবারের পরিচর্যা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা ও কঠোর শাস্তি পর্যন্ত সমন্বিত ব্যবস্থা অপরিহার্য। অপর দিকে ধর্ষিতাকে রক্ষা, সহায়তা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সমাজের কর্তব্য। যদি ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র মিলে ইসলামি নীতিমালা ও যথাযথ ন্যায়বিচার কার্যকর করে, প্রতিরোধমূলক চেষ্টা জোরদার হয় এবং অপরাধীর কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হয়, তাহলে নারীর নিরাপত্তা ও মর্যাদা পুনর্মূল্যায়ন হবে। এ ঘৃণ্য সামাজিক ব্যাধি নির্মূল হবে চিরতরে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের সাত দিন আগেই কেন্দ্রে সেনা চায় বিএনপি

পিরোজপুর-২ আসন: বিএনপিতে প্রতিযোগিতা, মাঠে একা সাঈদীর ছেলে

সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ: স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঘাড়ে ১ শতাংশ স্বাক্ষরের বোঝা থাকছেই

আজকের রাশিফল: তরকারিতে লবণ বেশি হলেই তুলকালাম বাধাবেন না

প্রতিবেশীদের ছাড়াই পরাশক্তি হওয়ার উচ্চাভিলাষ ভারতের, পারবে কি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জমাদিউল আউয়াল: সময়ের পরিবর্তনে ইবাদতের প্রেরণা

মুফতি এনায়েতুল্লাহ ফাহাদ
জমাদিউল আউয়াল: সময়ের পরিবর্তনে ইবাদতের প্রেরণা

আমাদের মাঝে এসে হাজির হয়েছে ‘জমাদিউল আউয়াল’—এটি আরবি বর্ষপঞ্জি বা হিজরি সনের পঞ্চম মাস। আরবি এই মাসের বাংলা অর্থ নানাভাবে হতে পারে, তবে এ ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক বিশ্লেষণ এভাবে করা যায়, জুমাদা শব্দের অর্থ—স্থির, অবিচল, দৃঢ়, শীতল। আর আউয়াল মানে প্রথম। তথা প্রথম জুমাদা বা প্রথম শীত। মূলত এই মাসটিতে আরবে ঠান্ডা নেমে আসত—প্রচণ্ড শীতে কিংবা প্রবল শৈত্যপ্রবাহে সবকিছু প্রায় জমে স্থির হয়ে যায়। তাই এ মাসের নাম জমাদিউল আউয়াল বা শীতকালের প্রথম মাস।

আসন্ন ‘শীতকাল’ বাংলা বছরের ছয়টি ঋতুর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঋতু। এটি প্রকৃতির মাঝে এক শীতল ও মনোরম রূপ নিয়ে আসে, যা মানুষের ইবাদত-বন্দেগিতে এক বিশেষ প্রভাব ফেলে। আসলে শীত ও গ্রীষ্ম সবই আল্লাহপ্রদত্ত প্রকৃতির অবদান। এর প্রতিটিতে রয়েছে কুদরতের নিদর্শন ও নিগূঢ় রহস্য। কোরআন করিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যেহেতু কুরাইশদের অনুরাগ রয়েছে! তাদের আগ্রহ আছে শীত ও গ্রীষ্মে ভ্রমণের। অতএব তাদের ইবাদত করা উচিত এই (কাবা) গৃহের রবের। যিনি তাদের ক্ষুধায় অন্ন দান করেন এবং শঙ্কায় নিরাপত্তা দান করেন।’ (সুরা কুরাইশ: ১-৪)

জুমাদাল উলা মাস—নতুন ঋতু হিসেবেও মুমিনের কাছে এর গুরুত্ব অপরিসীম। মুসলিমরা নতুন বছর ও মাসের চাঁদ দেখে আনন্দিত হয়, পাশাপাশি নতুন ঋতু পেয়েও তাদের মন হয় পুলকিত। কারণ প্রত্যেক মানুষ দুনিয়ায় আগমন করেছে নির্দিষ্ট কিছু সময় নিয়ে। নির্দিষ্ট সময়ের পর কোনো প্রাণী বা সৃষ্টির বেঁচে থাকার সুযোগ নেই। তাই তো প্রতিটি মুমিনের কাছে প্রতি মুহূর্তের দাম সোনার চেয়েও দামি। সময়-কাল-মুহূর্তের আগমন হলেই মুমিন দোয়া পড়বে। সাহাবি তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবীজি (সা.) যখন নতুন চাঁদ বা আবহ পরিবর্তন লক্ষ করতেন, তখন এই দোয়া পড়তেন—‘আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ইমানি ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলাম, রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহ।’ (সুনানে দারিমি: ১৭২৫)

প্রসঙ্গত, রমজান ও মহররমের মতো গুরুত্বপূর্ণ দিবস আর ফজিলতের কথা এই মাসে না থাকলেও রাসুল (সা.)-এর প্রতি মাসের নির্দিষ্ট একটি আমলের কথা হাদিসে এসেছে—তিনি প্রতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজা রাখতেন। (সহিহ বুখারি: ১৯৭৫)। এ জন্যই আমাদের উচিত যেসব দিনের ও যেসব মাসের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও ফজিলত কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, সেসব দিনে ও মাসে ইবাদত করা। আর যেসব দিন ও মাসের বিশেষ ফজিলত ও বৈশিষ্ট্য কোরআন ও হাদিসে উল্লেখ করা হয়নি, সেসব দিন ও মাসে বেশি করে নেক আমল করা। ফলে আখিরাতের ময়দানে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে যাওয়া যাবে ইনশা আল্লাহ।

আমরা পরিবেশ, পরিস্থিতি ও সময় বিবেচনা করলে দেখতে পাব জমাদিউল আউয়াল মাস ইবাদতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নফল রোজা, নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, দরুদ শরিফ, জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল, দোয়া-কালাম, দান-সদকাহ খয়রাত, ওমরাহ, হজ ইত্যাদির মাধ্যমে এই মাসকে সার্থক ও সাফল্যময় করা যায়। সুতরাং আমাদের উচিত এই মাস ইবাদত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করা।

লেখক: মুহাদ্দিস ও খতিব

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভোটের সাত দিন আগেই কেন্দ্রে সেনা চায় বিএনপি

পিরোজপুর-২ আসন: বিএনপিতে প্রতিযোগিতা, মাঠে একা সাঈদীর ছেলে

সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ: স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঘাড়ে ১ শতাংশ স্বাক্ষরের বোঝা থাকছেই

আজকের রাশিফল: তরকারিতে লবণ বেশি হলেই তুলকালাম বাধাবেন না

প্রতিবেশীদের ছাড়াই পরাশক্তি হওয়ার উচ্চাভিলাষ ভারতের, পারবে কি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত