ইজাজুল হক, ঢাকা

আল্লাহ তাআলা মানুষকে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করার সব যোগ্যতা তাকে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো— কথা বলা ও মনের ভাব প্রকাশ করার সক্ষমতা। মানুষ ছাড়া অন্য কোনো সৃষ্টিকে আল্লাহ এই বিশেষ যোগ্যতা দেননি। এটি মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম কারণ। এমনকি ফেরেশতারাও নিজের মতো করে চিন্তা করে কথা বলতে এবং মনের ভাব প্রকাশ করতে পারেন না। মানুষকে কথা বলার যোগ্যতা ও ফেরেশতাদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দানের কথা পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারায় বিবৃত হয়েছে। এখানে সংক্ষেপে তা তুলে ধরা হলো।
মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি
আল্লাহ তাআলা প্রথম মানুষ হজরত আদম (আ.)-এর দেহ তৈরি করে তাতে প্রাণ দিলেন। এরপর একদল ফেরেশতাকে সালাম দেওয়ার জন্য তাঁকে পাঠালেন। তিনি সালাম দিলেন। ফেরেশতারা জবাব দিলেন। এরপর আল্লাহ ইচ্ছা করলেন, ফেরেশতাদের মানুষ সৃষ্টির কারণ জানিয়ে দেবেন। যেমনটি পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আর স্মরণ করো, যখন তোমার পালনকর্তা ফেরেশতাদের বললেন, আমি নিশ্চয়ই পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করব।’ (সুরা বাকারা: ৩০)
আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে জারির (রহ.) বলেন, ‘আমি পৃথিবীতে আমার পক্ষ থেকে প্রতিনিধি নিয়োগ করতে চাই, যে আমার সৃষ্টির মধ্যে ইনসাফের সঙ্গে আমার নির্দেশ বাস্তবায়ন করবে। সেই প্রতিনিধি হলো, আদম ও যারা আমার আনুগত্য করবে এবং আমার বান্দাদের মধ্যে ইনসাফের সঙ্গে আমার বিধান প্রতিষ্ঠায় আমার স্থলাভিষিক্ত হবে।’ (তাফসিরে তাবারি)
এরপর মানুষের প্রকৃতি-বৈশিষ্ট্য ফেরেশতাদের জানানো হলো। তাঁরা জানলেন, মানুষ পৃথিবীতে গিয়ে মারামারিতে লিপ্ত হবে। তাই তাঁরা বললেন, ‘আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যে বিশৃঙ্খলা ও রক্তপাত করবে? আমরা তো আপনার প্রশংসাসহ তাসবিহ পড়িই এবং আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করিই।’ (সুরা বাকারা: ৩০)
ফেরেশতারা বোঝাতে চাইলেন, আমাদের মতো অনুগত ও বাধ্য বান্দা থাকতে কেন বিশৃঙ্খল একটি জাতি সৃষ্টি করতে হবে। তাঁদের সেই কথার জবাবে আল্লাহ বললেন, ‘তোমরা যা জানো না, আমি তা নিশ্চিতভাবে জানি।’ (সুরা বাকারা: ৩০) অর্থাৎ, মানুষ তোমাদের মতো হবে না। তাদের আলাদা যোগ্যতা থাকবে। সেই যোগ্যতা দিয়ে তারা পৃথিবীতে আমার প্রতিনিধিত্ব করবে।
আদম (আ.)-কে কী শেখানো হয়েছিল
মহাবিশ্বের অধিপতি আল্লাহ ভালো করেই জানেন, ফেরেশতাদের তিনি পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্ব করতে সৃষ্টি করেননি। তাই তাঁদের প্রতিনিধিত্ব করার যোগ্যতা দিয়ে প্রস্তুত করেননি। তবে আদম ও তাঁর সন্তানদের পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধিত্ব করার জন্যই সৃষ্টি করেছেন। তাই তাঁদের প্রতিনিধি হওয়ার যোগ্যতা দিয়ে প্রস্তুত করেছেন।
ফলে আদম (আ.)-কে পৃথিবীর সবকিছু সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হলো। যেমন, পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর তিনি আদমকে সব নাম শিখিয়ে দিলেন।’ (সুরা বাকারা: ৩১)
এ বিষয়টি মহানবী (সা.)-এর হাদিসেও এসেছে। আনাস ইবনে মালিক (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন মুমিনদের একত্রিত করবেন। তারা বলবে, যদি আমরা আমাদের পালনকর্তার কাছে এই স্থান (হাশরের ময়দান) থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য (কারো মাধ্যমে) সুপারিশ করাই, (কেমন হয়?)। এরপর তারা আদমের কাছে এসে বলবে, হে আদম, আপনি কি মানুষের অবস্থা দেখছেন না? আল্লাহ আপনাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন, ফেরেশতাদের দিয়ে সিজদা করিয়েছেন এবং সব বস্তুর নাম শিখিয়ে দিয়েছেন, সুতরাং আপনার পালনকর্তার কাছে আমাদের এই স্থান থেকে মুক্তি দেওয়ার সুপারিশ করুন।’ (বুখারি: ৪৪৭৪; মুসলিম: ১৯৩)
এই হাদিস অনেক দীর্ঘ। এই অংশে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আপনাকে সব বস্তুর নাম শিখিয়ে দিয়েছেন।’ কোরআন ও হাদিসে এ ব্যাপারে একই কথা বলা হয়েছে। তবে আদমকে সবকিছুর নাম শেখানো সম্পর্কে কোরআন-হাদিসে বিস্তারিত কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। কী শেখানো হয়েছিল—তার বিস্তারিত বিবরণ কোথাও নেই।
তাবিই কাতাদাহর সূত্রে ইবনে কাসির ও ইবনে জারির বলেন, আল্লাহ তাআলা সবকিছুর নাম শিখিয়ে দিয়েছিলেন, যেমন এটি পাহাড়, এটি সমুদ্র, এটি এই, ওটা সেই—প্রত্যেকটি বস্তুর নাম। (তাবারি ও ইবনে কাসির) কেউ কেউ বলেছেন, ‘নামগুলো বলতে ব্যক্তিবর্গ ও জিনিসপত্রের নাম ও তাদের বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা সম্পর্কে জ্ঞান দান করেছেন। মহান আল্লাহ তা ইলহাম বা অন্তরে গেঁথে দেওয়ার মাধ্যমে তা সম্পন্ন করেন।’ (তাফসিরে আহসানুল বয়ান)
ড. সালাহ আল-খালেদি এ ব্যাপারে বলেন, ‘আল্লাহ কি আদম (আ.)–কে সবকিছুর নামের অভিধান মুখস্থ করিয়ে দিয়েছেন, না প্রয়োজনীয় নামগুলো শিখিয়ে দিয়েছেন? নাকি মুখস্থ না করিয়ে অন্য পদ্ধতিতে নামগুলো তাঁকে জানিয়ে দিয়েছেন? শেখানোর মাধ্যম কি আরবি ছিল, না অন্য ভাষা? এসব প্রশ্নের জবাবে আমাদের কাছে কোরআন-হাদিসের কোনো প্রমাণ নেই। তাই এই বিষয়ের বিস্তারিত আল্লাহর কাছে সোপর্দ করে দেওয়াই আমাদের জন্য কল্যাণকর।’ (আল-কাসাসুল কোরআনি: ১ / ১০৭)
যেভাবে আদমের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ হলো
আদম (আ.)-কে যে ফেরেশতাদের চেয়ে বেশি যোগ্যতা দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে, তা তিনি তাঁদের জানিয়ে দিতে চাইলেন। ফলে একটি পরীক্ষার আয়োজন করলেন। পরীক্ষায় আদম (আ.) উত্তীর্ণ হলেন এবং ফেরেশতারা অকৃতকার্য হলেন। ফলে ফেরেশতারা আদম (আ.)-এর শ্রেষ্ঠত্ব বুঝতে পারলেন এবং অকপটে স্বীকার করে নিলেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘এরপর সেই বস্তুগুলো ফেরেশতাদের সামনে পেশ করে বললেন, আমাকে এসবের নাম বলো—যদি তোমরা সত্যবাদী হও। তারা বলল, আপনি পবিত্র মহান, আপনি আমাদের যা শিখিয়েছেন তা ছাড়া আমাদের কোনো জ্ঞানই নেই। নিশ্চয়ই আপনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। তিনি বললেন, হে আদম, ওদেরকে এসবের নামগুলো বলে দাও। এরপর যখন সে তাদের সেসবের নাম বলে দিল, তখন তিনি বললেন, আমি কি তোমাদের বলিনি, আসমান-জমিনের অদৃশ্য বস্তু সম্পর্কে আমি অবহিত এবং তোমরা যা বলো বা গোপন রাখো, নিশ্চিতভাবে আমি তা জানি?’ (সুরা বাকারা: ৩১-৩৩)
ফেরেশতাদের কেন নামগুলো শেখালেন না?
আল্লাহ তাআলা আদম (আ.)-কে সবকিছুর নাম শেখালেন। ফেরেশতাদের শেখালেন না। এসব বস্তুর জ্ঞান আগে থেকে তাঁদের ছিলও না। এরপরও ফেরেশতাদের সেসব বস্তুর নাম জানাতে বললেন। আল্লাহ জানতেন, এসবের নাম ফেরেশতারা জানেন না। কারণ তিনি তাদের এসব শেখাননি। এরপরও তাদের পরীক্ষা করলেন। নামগুলো বলতে বললেন। কেন?
কারণ আল্লাহ ফেরেশতাদের আদমকে তাঁর প্রতিনিধি মনোনীত করার কারণ দেখাতে চেয়েছিলেন। ফলে তাঁর যোগ্যতা তাঁদের সামনে তুলে ধরলেন। এবং এর মাধ্যমে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করলেন। ফেরেশতাদের মধ্যে সৃষ্টিগতভাবে সেই যোগ্যতা দেওয়া হয়নি। ফলে ফেরেশতারাও তাঁদের অপারগতা স্বীকার করে নিলেন। ফেরেশতাদের জবাবই প্রমাণ করে, তাঁদের জ্ঞান আল্লাহ থেকেই আসে। তাঁরা মানুষের মতো জ্ঞানের অধিকারী নন। কথা বলা, চিন্তা করা ও সব বস্তু চেনার এই যোগ্যতা ফেরেশতাদের দরকার নেই। কারণ তাঁদের যেসব ইবাদতে নিয়োজিত করা হয়েছে, সেসবে এমন যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। (আল-কাসাসুল কোরআনি: ১ / ১০৮)
ভাষা ও কথা বলার যোগ্যতা
আল্লাহ তাআলা আদম (আ.)-কে জবাব দিতে বললেন। তিনি সুন্দরভাবে জবাব দিলেন। ফেরেশতাদের সামনে সব বস্তুর নাম বলে দিলেন। এ থেকে প্রমাণিত হয়, আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রতিনিধি মানুষের মধ্যে কথা বলা, মনের ভাবপ্রকাশ করা, সৃষ্টির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করার যোগ্যতা দিয়েছেন। কারণ তাঁর প্রতিনিধিত্ব করতে হলে এসবের গুরুত্ব অপরিসীম। এসব ছাড়া মানুষ কীভাবে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবে? কীভাবে পৃথিবীতে আল্লাহর আদেশ বাস্তবায়ন করবে?
তাই আল্লাহ তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে আদম (আ.) ও তাঁর সন্তানদের কথা বলা, চিন্তা করা ও মনের ভাবপ্রকাশ করার ক্ষমতা দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘পরম দয়ালু (আল্লাহ)। কোরআন শিখিয়েছেন। মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তাকে মনের ভাব প্রকাশ করতে শিখিয়েছেন।’ (সুরা রহমান: ১-৪)
আদম (আ.) কোন ভাষায় কথা বলতেন?
এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন, তিনি সুরয়ানি ভাষায় কথা বলতেন। কেউ বলেছেন, আরবি ভাষায়। কেউ বলেছেন, আসমানে থাকতে আরবি ভাষায়, পৃথিবীতে আসার পর সুরিয়ানি ভাষায়। কেউ বলেছেন, নিষিদ্ধ ফল খাওয়ার আগে আরবি ভাষায়, তওবা করার আগে সুরিয়ানি ভাষায়, তওবা করার পর আবার আরবি ভাষায়। তবে একটি হাদিসে আদম (আ.)-এর ভাষা সুরিয়ানি বলা হয়েছে। (ইসলামওয়েব, ফতোয়া নম্বর: ৩৮৫৯৯০)
আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল, নবী কয়জন? তিনি বললেন, ১ লাখ ২০ হাজার। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, তাঁদের মধ্যে রাসুল কয়জন? তিনি বললেন, ৩১৩ জন। বড় দল। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, তাঁদের মধ্যে প্রথম কে? তিনি বললেন, আদম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, তিনি কি নবী ছিলেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আল্লাহ তাঁকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন এবং প্রাণ দিয়েছেন এবং (তাঁর সঙ্গে) কথা বলেছেন। এরপর তিনি আরও বললেন, হে আবু জর, তাঁদের মধ্যে চারজন সুরিয়ানি ভাষি: আদম, শিস, ইদরিস ও নুহ। চারজন আরবি ভাষার: হুদ, শুআইব, সালিহ ও মুহাম্মদ। (সহিহ, ইবনে হিব্বান)

আল্লাহ তাআলা মানুষকে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করার সব যোগ্যতা তাকে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো— কথা বলা ও মনের ভাব প্রকাশ করার সক্ষমতা। মানুষ ছাড়া অন্য কোনো সৃষ্টিকে আল্লাহ এই বিশেষ যোগ্যতা দেননি। এটি মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম কারণ। এমনকি ফেরেশতারাও নিজের মতো করে চিন্তা করে কথা বলতে এবং মনের ভাব প্রকাশ করতে পারেন না। মানুষকে কথা বলার যোগ্যতা ও ফেরেশতাদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দানের কথা পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারায় বিবৃত হয়েছে। এখানে সংক্ষেপে তা তুলে ধরা হলো।
মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি
আল্লাহ তাআলা প্রথম মানুষ হজরত আদম (আ.)-এর দেহ তৈরি করে তাতে প্রাণ দিলেন। এরপর একদল ফেরেশতাকে সালাম দেওয়ার জন্য তাঁকে পাঠালেন। তিনি সালাম দিলেন। ফেরেশতারা জবাব দিলেন। এরপর আল্লাহ ইচ্ছা করলেন, ফেরেশতাদের মানুষ সৃষ্টির কারণ জানিয়ে দেবেন। যেমনটি পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আর স্মরণ করো, যখন তোমার পালনকর্তা ফেরেশতাদের বললেন, আমি নিশ্চয়ই পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করব।’ (সুরা বাকারা: ৩০)
আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে জারির (রহ.) বলেন, ‘আমি পৃথিবীতে আমার পক্ষ থেকে প্রতিনিধি নিয়োগ করতে চাই, যে আমার সৃষ্টির মধ্যে ইনসাফের সঙ্গে আমার নির্দেশ বাস্তবায়ন করবে। সেই প্রতিনিধি হলো, আদম ও যারা আমার আনুগত্য করবে এবং আমার বান্দাদের মধ্যে ইনসাফের সঙ্গে আমার বিধান প্রতিষ্ঠায় আমার স্থলাভিষিক্ত হবে।’ (তাফসিরে তাবারি)
এরপর মানুষের প্রকৃতি-বৈশিষ্ট্য ফেরেশতাদের জানানো হলো। তাঁরা জানলেন, মানুষ পৃথিবীতে গিয়ে মারামারিতে লিপ্ত হবে। তাই তাঁরা বললেন, ‘আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যে বিশৃঙ্খলা ও রক্তপাত করবে? আমরা তো আপনার প্রশংসাসহ তাসবিহ পড়িই এবং আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করিই।’ (সুরা বাকারা: ৩০)
ফেরেশতারা বোঝাতে চাইলেন, আমাদের মতো অনুগত ও বাধ্য বান্দা থাকতে কেন বিশৃঙ্খল একটি জাতি সৃষ্টি করতে হবে। তাঁদের সেই কথার জবাবে আল্লাহ বললেন, ‘তোমরা যা জানো না, আমি তা নিশ্চিতভাবে জানি।’ (সুরা বাকারা: ৩০) অর্থাৎ, মানুষ তোমাদের মতো হবে না। তাদের আলাদা যোগ্যতা থাকবে। সেই যোগ্যতা দিয়ে তারা পৃথিবীতে আমার প্রতিনিধিত্ব করবে।
আদম (আ.)-কে কী শেখানো হয়েছিল
মহাবিশ্বের অধিপতি আল্লাহ ভালো করেই জানেন, ফেরেশতাদের তিনি পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্ব করতে সৃষ্টি করেননি। তাই তাঁদের প্রতিনিধিত্ব করার যোগ্যতা দিয়ে প্রস্তুত করেননি। তবে আদম ও তাঁর সন্তানদের পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধিত্ব করার জন্যই সৃষ্টি করেছেন। তাই তাঁদের প্রতিনিধি হওয়ার যোগ্যতা দিয়ে প্রস্তুত করেছেন।
ফলে আদম (আ.)-কে পৃথিবীর সবকিছু সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হলো। যেমন, পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর তিনি আদমকে সব নাম শিখিয়ে দিলেন।’ (সুরা বাকারা: ৩১)
এ বিষয়টি মহানবী (সা.)-এর হাদিসেও এসেছে। আনাস ইবনে মালিক (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন মুমিনদের একত্রিত করবেন। তারা বলবে, যদি আমরা আমাদের পালনকর্তার কাছে এই স্থান (হাশরের ময়দান) থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য (কারো মাধ্যমে) সুপারিশ করাই, (কেমন হয়?)। এরপর তারা আদমের কাছে এসে বলবে, হে আদম, আপনি কি মানুষের অবস্থা দেখছেন না? আল্লাহ আপনাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন, ফেরেশতাদের দিয়ে সিজদা করিয়েছেন এবং সব বস্তুর নাম শিখিয়ে দিয়েছেন, সুতরাং আপনার পালনকর্তার কাছে আমাদের এই স্থান থেকে মুক্তি দেওয়ার সুপারিশ করুন।’ (বুখারি: ৪৪৭৪; মুসলিম: ১৯৩)
এই হাদিস অনেক দীর্ঘ। এই অংশে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আপনাকে সব বস্তুর নাম শিখিয়ে দিয়েছেন।’ কোরআন ও হাদিসে এ ব্যাপারে একই কথা বলা হয়েছে। তবে আদমকে সবকিছুর নাম শেখানো সম্পর্কে কোরআন-হাদিসে বিস্তারিত কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। কী শেখানো হয়েছিল—তার বিস্তারিত বিবরণ কোথাও নেই।
তাবিই কাতাদাহর সূত্রে ইবনে কাসির ও ইবনে জারির বলেন, আল্লাহ তাআলা সবকিছুর নাম শিখিয়ে দিয়েছিলেন, যেমন এটি পাহাড়, এটি সমুদ্র, এটি এই, ওটা সেই—প্রত্যেকটি বস্তুর নাম। (তাবারি ও ইবনে কাসির) কেউ কেউ বলেছেন, ‘নামগুলো বলতে ব্যক্তিবর্গ ও জিনিসপত্রের নাম ও তাদের বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা সম্পর্কে জ্ঞান দান করেছেন। মহান আল্লাহ তা ইলহাম বা অন্তরে গেঁথে দেওয়ার মাধ্যমে তা সম্পন্ন করেন।’ (তাফসিরে আহসানুল বয়ান)
ড. সালাহ আল-খালেদি এ ব্যাপারে বলেন, ‘আল্লাহ কি আদম (আ.)–কে সবকিছুর নামের অভিধান মুখস্থ করিয়ে দিয়েছেন, না প্রয়োজনীয় নামগুলো শিখিয়ে দিয়েছেন? নাকি মুখস্থ না করিয়ে অন্য পদ্ধতিতে নামগুলো তাঁকে জানিয়ে দিয়েছেন? শেখানোর মাধ্যম কি আরবি ছিল, না অন্য ভাষা? এসব প্রশ্নের জবাবে আমাদের কাছে কোরআন-হাদিসের কোনো প্রমাণ নেই। তাই এই বিষয়ের বিস্তারিত আল্লাহর কাছে সোপর্দ করে দেওয়াই আমাদের জন্য কল্যাণকর।’ (আল-কাসাসুল কোরআনি: ১ / ১০৭)
যেভাবে আদমের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ হলো
আদম (আ.)-কে যে ফেরেশতাদের চেয়ে বেশি যোগ্যতা দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে, তা তিনি তাঁদের জানিয়ে দিতে চাইলেন। ফলে একটি পরীক্ষার আয়োজন করলেন। পরীক্ষায় আদম (আ.) উত্তীর্ণ হলেন এবং ফেরেশতারা অকৃতকার্য হলেন। ফলে ফেরেশতারা আদম (আ.)-এর শ্রেষ্ঠত্ব বুঝতে পারলেন এবং অকপটে স্বীকার করে নিলেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘এরপর সেই বস্তুগুলো ফেরেশতাদের সামনে পেশ করে বললেন, আমাকে এসবের নাম বলো—যদি তোমরা সত্যবাদী হও। তারা বলল, আপনি পবিত্র মহান, আপনি আমাদের যা শিখিয়েছেন তা ছাড়া আমাদের কোনো জ্ঞানই নেই। নিশ্চয়ই আপনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। তিনি বললেন, হে আদম, ওদেরকে এসবের নামগুলো বলে দাও। এরপর যখন সে তাদের সেসবের নাম বলে দিল, তখন তিনি বললেন, আমি কি তোমাদের বলিনি, আসমান-জমিনের অদৃশ্য বস্তু সম্পর্কে আমি অবহিত এবং তোমরা যা বলো বা গোপন রাখো, নিশ্চিতভাবে আমি তা জানি?’ (সুরা বাকারা: ৩১-৩৩)
ফেরেশতাদের কেন নামগুলো শেখালেন না?
আল্লাহ তাআলা আদম (আ.)-কে সবকিছুর নাম শেখালেন। ফেরেশতাদের শেখালেন না। এসব বস্তুর জ্ঞান আগে থেকে তাঁদের ছিলও না। এরপরও ফেরেশতাদের সেসব বস্তুর নাম জানাতে বললেন। আল্লাহ জানতেন, এসবের নাম ফেরেশতারা জানেন না। কারণ তিনি তাদের এসব শেখাননি। এরপরও তাদের পরীক্ষা করলেন। নামগুলো বলতে বললেন। কেন?
কারণ আল্লাহ ফেরেশতাদের আদমকে তাঁর প্রতিনিধি মনোনীত করার কারণ দেখাতে চেয়েছিলেন। ফলে তাঁর যোগ্যতা তাঁদের সামনে তুলে ধরলেন। এবং এর মাধ্যমে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করলেন। ফেরেশতাদের মধ্যে সৃষ্টিগতভাবে সেই যোগ্যতা দেওয়া হয়নি। ফলে ফেরেশতারাও তাঁদের অপারগতা স্বীকার করে নিলেন। ফেরেশতাদের জবাবই প্রমাণ করে, তাঁদের জ্ঞান আল্লাহ থেকেই আসে। তাঁরা মানুষের মতো জ্ঞানের অধিকারী নন। কথা বলা, চিন্তা করা ও সব বস্তু চেনার এই যোগ্যতা ফেরেশতাদের দরকার নেই। কারণ তাঁদের যেসব ইবাদতে নিয়োজিত করা হয়েছে, সেসবে এমন যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। (আল-কাসাসুল কোরআনি: ১ / ১০৮)
ভাষা ও কথা বলার যোগ্যতা
আল্লাহ তাআলা আদম (আ.)-কে জবাব দিতে বললেন। তিনি সুন্দরভাবে জবাব দিলেন। ফেরেশতাদের সামনে সব বস্তুর নাম বলে দিলেন। এ থেকে প্রমাণিত হয়, আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রতিনিধি মানুষের মধ্যে কথা বলা, মনের ভাবপ্রকাশ করা, সৃষ্টির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করার যোগ্যতা দিয়েছেন। কারণ তাঁর প্রতিনিধিত্ব করতে হলে এসবের গুরুত্ব অপরিসীম। এসব ছাড়া মানুষ কীভাবে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবে? কীভাবে পৃথিবীতে আল্লাহর আদেশ বাস্তবায়ন করবে?
তাই আল্লাহ তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে আদম (আ.) ও তাঁর সন্তানদের কথা বলা, চিন্তা করা ও মনের ভাবপ্রকাশ করার ক্ষমতা দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘পরম দয়ালু (আল্লাহ)। কোরআন শিখিয়েছেন। মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তাকে মনের ভাব প্রকাশ করতে শিখিয়েছেন।’ (সুরা রহমান: ১-৪)
আদম (আ.) কোন ভাষায় কথা বলতেন?
এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন, তিনি সুরয়ানি ভাষায় কথা বলতেন। কেউ বলেছেন, আরবি ভাষায়। কেউ বলেছেন, আসমানে থাকতে আরবি ভাষায়, পৃথিবীতে আসার পর সুরিয়ানি ভাষায়। কেউ বলেছেন, নিষিদ্ধ ফল খাওয়ার আগে আরবি ভাষায়, তওবা করার আগে সুরিয়ানি ভাষায়, তওবা করার পর আবার আরবি ভাষায়। তবে একটি হাদিসে আদম (আ.)-এর ভাষা সুরিয়ানি বলা হয়েছে। (ইসলামওয়েব, ফতোয়া নম্বর: ৩৮৫৯৯০)
আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল, নবী কয়জন? তিনি বললেন, ১ লাখ ২০ হাজার। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, তাঁদের মধ্যে রাসুল কয়জন? তিনি বললেন, ৩১৩ জন। বড় দল। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, তাঁদের মধ্যে প্রথম কে? তিনি বললেন, আদম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, তিনি কি নবী ছিলেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আল্লাহ তাঁকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন এবং প্রাণ দিয়েছেন এবং (তাঁর সঙ্গে) কথা বলেছেন। এরপর তিনি আরও বললেন, হে আবু জর, তাঁদের মধ্যে চারজন সুরিয়ানি ভাষি: আদম, শিস, ইদরিস ও নুহ। চারজন আরবি ভাষার: হুদ, শুআইব, সালিহ ও মুহাম্মদ। (সহিহ, ইবনে হিব্বান)
ইজাজুল হক, ঢাকা

আল্লাহ তাআলা মানুষকে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করার সব যোগ্যতা তাকে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো— কথা বলা ও মনের ভাব প্রকাশ করার সক্ষমতা। মানুষ ছাড়া অন্য কোনো সৃষ্টিকে আল্লাহ এই বিশেষ যোগ্যতা দেননি। এটি মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম কারণ। এমনকি ফেরেশতারাও নিজের মতো করে চিন্তা করে কথা বলতে এবং মনের ভাব প্রকাশ করতে পারেন না। মানুষকে কথা বলার যোগ্যতা ও ফেরেশতাদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দানের কথা পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারায় বিবৃত হয়েছে। এখানে সংক্ষেপে তা তুলে ধরা হলো।
মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি
আল্লাহ তাআলা প্রথম মানুষ হজরত আদম (আ.)-এর দেহ তৈরি করে তাতে প্রাণ দিলেন। এরপর একদল ফেরেশতাকে সালাম দেওয়ার জন্য তাঁকে পাঠালেন। তিনি সালাম দিলেন। ফেরেশতারা জবাব দিলেন। এরপর আল্লাহ ইচ্ছা করলেন, ফেরেশতাদের মানুষ সৃষ্টির কারণ জানিয়ে দেবেন। যেমনটি পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আর স্মরণ করো, যখন তোমার পালনকর্তা ফেরেশতাদের বললেন, আমি নিশ্চয়ই পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করব।’ (সুরা বাকারা: ৩০)
আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে জারির (রহ.) বলেন, ‘আমি পৃথিবীতে আমার পক্ষ থেকে প্রতিনিধি নিয়োগ করতে চাই, যে আমার সৃষ্টির মধ্যে ইনসাফের সঙ্গে আমার নির্দেশ বাস্তবায়ন করবে। সেই প্রতিনিধি হলো, আদম ও যারা আমার আনুগত্য করবে এবং আমার বান্দাদের মধ্যে ইনসাফের সঙ্গে আমার বিধান প্রতিষ্ঠায় আমার স্থলাভিষিক্ত হবে।’ (তাফসিরে তাবারি)
এরপর মানুষের প্রকৃতি-বৈশিষ্ট্য ফেরেশতাদের জানানো হলো। তাঁরা জানলেন, মানুষ পৃথিবীতে গিয়ে মারামারিতে লিপ্ত হবে। তাই তাঁরা বললেন, ‘আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যে বিশৃঙ্খলা ও রক্তপাত করবে? আমরা তো আপনার প্রশংসাসহ তাসবিহ পড়িই এবং আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করিই।’ (সুরা বাকারা: ৩০)
ফেরেশতারা বোঝাতে চাইলেন, আমাদের মতো অনুগত ও বাধ্য বান্দা থাকতে কেন বিশৃঙ্খল একটি জাতি সৃষ্টি করতে হবে। তাঁদের সেই কথার জবাবে আল্লাহ বললেন, ‘তোমরা যা জানো না, আমি তা নিশ্চিতভাবে জানি।’ (সুরা বাকারা: ৩০) অর্থাৎ, মানুষ তোমাদের মতো হবে না। তাদের আলাদা যোগ্যতা থাকবে। সেই যোগ্যতা দিয়ে তারা পৃথিবীতে আমার প্রতিনিধিত্ব করবে।
আদম (আ.)-কে কী শেখানো হয়েছিল
মহাবিশ্বের অধিপতি আল্লাহ ভালো করেই জানেন, ফেরেশতাদের তিনি পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্ব করতে সৃষ্টি করেননি। তাই তাঁদের প্রতিনিধিত্ব করার যোগ্যতা দিয়ে প্রস্তুত করেননি। তবে আদম ও তাঁর সন্তানদের পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধিত্ব করার জন্যই সৃষ্টি করেছেন। তাই তাঁদের প্রতিনিধি হওয়ার যোগ্যতা দিয়ে প্রস্তুত করেছেন।
ফলে আদম (আ.)-কে পৃথিবীর সবকিছু সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হলো। যেমন, পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর তিনি আদমকে সব নাম শিখিয়ে দিলেন।’ (সুরা বাকারা: ৩১)
এ বিষয়টি মহানবী (সা.)-এর হাদিসেও এসেছে। আনাস ইবনে মালিক (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন মুমিনদের একত্রিত করবেন। তারা বলবে, যদি আমরা আমাদের পালনকর্তার কাছে এই স্থান (হাশরের ময়দান) থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য (কারো মাধ্যমে) সুপারিশ করাই, (কেমন হয়?)। এরপর তারা আদমের কাছে এসে বলবে, হে আদম, আপনি কি মানুষের অবস্থা দেখছেন না? আল্লাহ আপনাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন, ফেরেশতাদের দিয়ে সিজদা করিয়েছেন এবং সব বস্তুর নাম শিখিয়ে দিয়েছেন, সুতরাং আপনার পালনকর্তার কাছে আমাদের এই স্থান থেকে মুক্তি দেওয়ার সুপারিশ করুন।’ (বুখারি: ৪৪৭৪; মুসলিম: ১৯৩)
এই হাদিস অনেক দীর্ঘ। এই অংশে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আপনাকে সব বস্তুর নাম শিখিয়ে দিয়েছেন।’ কোরআন ও হাদিসে এ ব্যাপারে একই কথা বলা হয়েছে। তবে আদমকে সবকিছুর নাম শেখানো সম্পর্কে কোরআন-হাদিসে বিস্তারিত কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। কী শেখানো হয়েছিল—তার বিস্তারিত বিবরণ কোথাও নেই।
তাবিই কাতাদাহর সূত্রে ইবনে কাসির ও ইবনে জারির বলেন, আল্লাহ তাআলা সবকিছুর নাম শিখিয়ে দিয়েছিলেন, যেমন এটি পাহাড়, এটি সমুদ্র, এটি এই, ওটা সেই—প্রত্যেকটি বস্তুর নাম। (তাবারি ও ইবনে কাসির) কেউ কেউ বলেছেন, ‘নামগুলো বলতে ব্যক্তিবর্গ ও জিনিসপত্রের নাম ও তাদের বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা সম্পর্কে জ্ঞান দান করেছেন। মহান আল্লাহ তা ইলহাম বা অন্তরে গেঁথে দেওয়ার মাধ্যমে তা সম্পন্ন করেন।’ (তাফসিরে আহসানুল বয়ান)
ড. সালাহ আল-খালেদি এ ব্যাপারে বলেন, ‘আল্লাহ কি আদম (আ.)–কে সবকিছুর নামের অভিধান মুখস্থ করিয়ে দিয়েছেন, না প্রয়োজনীয় নামগুলো শিখিয়ে দিয়েছেন? নাকি মুখস্থ না করিয়ে অন্য পদ্ধতিতে নামগুলো তাঁকে জানিয়ে দিয়েছেন? শেখানোর মাধ্যম কি আরবি ছিল, না অন্য ভাষা? এসব প্রশ্নের জবাবে আমাদের কাছে কোরআন-হাদিসের কোনো প্রমাণ নেই। তাই এই বিষয়ের বিস্তারিত আল্লাহর কাছে সোপর্দ করে দেওয়াই আমাদের জন্য কল্যাণকর।’ (আল-কাসাসুল কোরআনি: ১ / ১০৭)
যেভাবে আদমের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ হলো
আদম (আ.)-কে যে ফেরেশতাদের চেয়ে বেশি যোগ্যতা দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে, তা তিনি তাঁদের জানিয়ে দিতে চাইলেন। ফলে একটি পরীক্ষার আয়োজন করলেন। পরীক্ষায় আদম (আ.) উত্তীর্ণ হলেন এবং ফেরেশতারা অকৃতকার্য হলেন। ফলে ফেরেশতারা আদম (আ.)-এর শ্রেষ্ঠত্ব বুঝতে পারলেন এবং অকপটে স্বীকার করে নিলেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘এরপর সেই বস্তুগুলো ফেরেশতাদের সামনে পেশ করে বললেন, আমাকে এসবের নাম বলো—যদি তোমরা সত্যবাদী হও। তারা বলল, আপনি পবিত্র মহান, আপনি আমাদের যা শিখিয়েছেন তা ছাড়া আমাদের কোনো জ্ঞানই নেই। নিশ্চয়ই আপনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। তিনি বললেন, হে আদম, ওদেরকে এসবের নামগুলো বলে দাও। এরপর যখন সে তাদের সেসবের নাম বলে দিল, তখন তিনি বললেন, আমি কি তোমাদের বলিনি, আসমান-জমিনের অদৃশ্য বস্তু সম্পর্কে আমি অবহিত এবং তোমরা যা বলো বা গোপন রাখো, নিশ্চিতভাবে আমি তা জানি?’ (সুরা বাকারা: ৩১-৩৩)
ফেরেশতাদের কেন নামগুলো শেখালেন না?
আল্লাহ তাআলা আদম (আ.)-কে সবকিছুর নাম শেখালেন। ফেরেশতাদের শেখালেন না। এসব বস্তুর জ্ঞান আগে থেকে তাঁদের ছিলও না। এরপরও ফেরেশতাদের সেসব বস্তুর নাম জানাতে বললেন। আল্লাহ জানতেন, এসবের নাম ফেরেশতারা জানেন না। কারণ তিনি তাদের এসব শেখাননি। এরপরও তাদের পরীক্ষা করলেন। নামগুলো বলতে বললেন। কেন?
কারণ আল্লাহ ফেরেশতাদের আদমকে তাঁর প্রতিনিধি মনোনীত করার কারণ দেখাতে চেয়েছিলেন। ফলে তাঁর যোগ্যতা তাঁদের সামনে তুলে ধরলেন। এবং এর মাধ্যমে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করলেন। ফেরেশতাদের মধ্যে সৃষ্টিগতভাবে সেই যোগ্যতা দেওয়া হয়নি। ফলে ফেরেশতারাও তাঁদের অপারগতা স্বীকার করে নিলেন। ফেরেশতাদের জবাবই প্রমাণ করে, তাঁদের জ্ঞান আল্লাহ থেকেই আসে। তাঁরা মানুষের মতো জ্ঞানের অধিকারী নন। কথা বলা, চিন্তা করা ও সব বস্তু চেনার এই যোগ্যতা ফেরেশতাদের দরকার নেই। কারণ তাঁদের যেসব ইবাদতে নিয়োজিত করা হয়েছে, সেসবে এমন যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। (আল-কাসাসুল কোরআনি: ১ / ১০৮)
ভাষা ও কথা বলার যোগ্যতা
আল্লাহ তাআলা আদম (আ.)-কে জবাব দিতে বললেন। তিনি সুন্দরভাবে জবাব দিলেন। ফেরেশতাদের সামনে সব বস্তুর নাম বলে দিলেন। এ থেকে প্রমাণিত হয়, আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রতিনিধি মানুষের মধ্যে কথা বলা, মনের ভাবপ্রকাশ করা, সৃষ্টির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করার যোগ্যতা দিয়েছেন। কারণ তাঁর প্রতিনিধিত্ব করতে হলে এসবের গুরুত্ব অপরিসীম। এসব ছাড়া মানুষ কীভাবে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবে? কীভাবে পৃথিবীতে আল্লাহর আদেশ বাস্তবায়ন করবে?
তাই আল্লাহ তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে আদম (আ.) ও তাঁর সন্তানদের কথা বলা, চিন্তা করা ও মনের ভাবপ্রকাশ করার ক্ষমতা দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘পরম দয়ালু (আল্লাহ)। কোরআন শিখিয়েছেন। মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তাকে মনের ভাব প্রকাশ করতে শিখিয়েছেন।’ (সুরা রহমান: ১-৪)
আদম (আ.) কোন ভাষায় কথা বলতেন?
এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন, তিনি সুরয়ানি ভাষায় কথা বলতেন। কেউ বলেছেন, আরবি ভাষায়। কেউ বলেছেন, আসমানে থাকতে আরবি ভাষায়, পৃথিবীতে আসার পর সুরিয়ানি ভাষায়। কেউ বলেছেন, নিষিদ্ধ ফল খাওয়ার আগে আরবি ভাষায়, তওবা করার আগে সুরিয়ানি ভাষায়, তওবা করার পর আবার আরবি ভাষায়। তবে একটি হাদিসে আদম (আ.)-এর ভাষা সুরিয়ানি বলা হয়েছে। (ইসলামওয়েব, ফতোয়া নম্বর: ৩৮৫৯৯০)
আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল, নবী কয়জন? তিনি বললেন, ১ লাখ ২০ হাজার। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, তাঁদের মধ্যে রাসুল কয়জন? তিনি বললেন, ৩১৩ জন। বড় দল। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, তাঁদের মধ্যে প্রথম কে? তিনি বললেন, আদম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, তিনি কি নবী ছিলেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আল্লাহ তাঁকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন এবং প্রাণ দিয়েছেন এবং (তাঁর সঙ্গে) কথা বলেছেন। এরপর তিনি আরও বললেন, হে আবু জর, তাঁদের মধ্যে চারজন সুরিয়ানি ভাষি: আদম, শিস, ইদরিস ও নুহ। চারজন আরবি ভাষার: হুদ, শুআইব, সালিহ ও মুহাম্মদ। (সহিহ, ইবনে হিব্বান)

আল্লাহ তাআলা মানুষকে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করার সব যোগ্যতা তাকে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো— কথা বলা ও মনের ভাব প্রকাশ করার সক্ষমতা। মানুষ ছাড়া অন্য কোনো সৃষ্টিকে আল্লাহ এই বিশেষ যোগ্যতা দেননি। এটি মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম কারণ। এমনকি ফেরেশতারাও নিজের মতো করে চিন্তা করে কথা বলতে এবং মনের ভাব প্রকাশ করতে পারেন না। মানুষকে কথা বলার যোগ্যতা ও ফেরেশতাদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দানের কথা পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারায় বিবৃত হয়েছে। এখানে সংক্ষেপে তা তুলে ধরা হলো।
মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি
আল্লাহ তাআলা প্রথম মানুষ হজরত আদম (আ.)-এর দেহ তৈরি করে তাতে প্রাণ দিলেন। এরপর একদল ফেরেশতাকে সালাম দেওয়ার জন্য তাঁকে পাঠালেন। তিনি সালাম দিলেন। ফেরেশতারা জবাব দিলেন। এরপর আল্লাহ ইচ্ছা করলেন, ফেরেশতাদের মানুষ সৃষ্টির কারণ জানিয়ে দেবেন। যেমনটি পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আর স্মরণ করো, যখন তোমার পালনকর্তা ফেরেশতাদের বললেন, আমি নিশ্চয়ই পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করব।’ (সুরা বাকারা: ৩০)
আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে জারির (রহ.) বলেন, ‘আমি পৃথিবীতে আমার পক্ষ থেকে প্রতিনিধি নিয়োগ করতে চাই, যে আমার সৃষ্টির মধ্যে ইনসাফের সঙ্গে আমার নির্দেশ বাস্তবায়ন করবে। সেই প্রতিনিধি হলো, আদম ও যারা আমার আনুগত্য করবে এবং আমার বান্দাদের মধ্যে ইনসাফের সঙ্গে আমার বিধান প্রতিষ্ঠায় আমার স্থলাভিষিক্ত হবে।’ (তাফসিরে তাবারি)
এরপর মানুষের প্রকৃতি-বৈশিষ্ট্য ফেরেশতাদের জানানো হলো। তাঁরা জানলেন, মানুষ পৃথিবীতে গিয়ে মারামারিতে লিপ্ত হবে। তাই তাঁরা বললেন, ‘আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যে বিশৃঙ্খলা ও রক্তপাত করবে? আমরা তো আপনার প্রশংসাসহ তাসবিহ পড়িই এবং আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করিই।’ (সুরা বাকারা: ৩০)
ফেরেশতারা বোঝাতে চাইলেন, আমাদের মতো অনুগত ও বাধ্য বান্দা থাকতে কেন বিশৃঙ্খল একটি জাতি সৃষ্টি করতে হবে। তাঁদের সেই কথার জবাবে আল্লাহ বললেন, ‘তোমরা যা জানো না, আমি তা নিশ্চিতভাবে জানি।’ (সুরা বাকারা: ৩০) অর্থাৎ, মানুষ তোমাদের মতো হবে না। তাদের আলাদা যোগ্যতা থাকবে। সেই যোগ্যতা দিয়ে তারা পৃথিবীতে আমার প্রতিনিধিত্ব করবে।
আদম (আ.)-কে কী শেখানো হয়েছিল
মহাবিশ্বের অধিপতি আল্লাহ ভালো করেই জানেন, ফেরেশতাদের তিনি পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্ব করতে সৃষ্টি করেননি। তাই তাঁদের প্রতিনিধিত্ব করার যোগ্যতা দিয়ে প্রস্তুত করেননি। তবে আদম ও তাঁর সন্তানদের পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধিত্ব করার জন্যই সৃষ্টি করেছেন। তাই তাঁদের প্রতিনিধি হওয়ার যোগ্যতা দিয়ে প্রস্তুত করেছেন।
ফলে আদম (আ.)-কে পৃথিবীর সবকিছু সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হলো। যেমন, পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর তিনি আদমকে সব নাম শিখিয়ে দিলেন।’ (সুরা বাকারা: ৩১)
এ বিষয়টি মহানবী (সা.)-এর হাদিসেও এসেছে। আনাস ইবনে মালিক (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন মুমিনদের একত্রিত করবেন। তারা বলবে, যদি আমরা আমাদের পালনকর্তার কাছে এই স্থান (হাশরের ময়দান) থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য (কারো মাধ্যমে) সুপারিশ করাই, (কেমন হয়?)। এরপর তারা আদমের কাছে এসে বলবে, হে আদম, আপনি কি মানুষের অবস্থা দেখছেন না? আল্লাহ আপনাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন, ফেরেশতাদের দিয়ে সিজদা করিয়েছেন এবং সব বস্তুর নাম শিখিয়ে দিয়েছেন, সুতরাং আপনার পালনকর্তার কাছে আমাদের এই স্থান থেকে মুক্তি দেওয়ার সুপারিশ করুন।’ (বুখারি: ৪৪৭৪; মুসলিম: ১৯৩)
এই হাদিস অনেক দীর্ঘ। এই অংশে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আপনাকে সব বস্তুর নাম শিখিয়ে দিয়েছেন।’ কোরআন ও হাদিসে এ ব্যাপারে একই কথা বলা হয়েছে। তবে আদমকে সবকিছুর নাম শেখানো সম্পর্কে কোরআন-হাদিসে বিস্তারিত কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। কী শেখানো হয়েছিল—তার বিস্তারিত বিবরণ কোথাও নেই।
তাবিই কাতাদাহর সূত্রে ইবনে কাসির ও ইবনে জারির বলেন, আল্লাহ তাআলা সবকিছুর নাম শিখিয়ে দিয়েছিলেন, যেমন এটি পাহাড়, এটি সমুদ্র, এটি এই, ওটা সেই—প্রত্যেকটি বস্তুর নাম। (তাবারি ও ইবনে কাসির) কেউ কেউ বলেছেন, ‘নামগুলো বলতে ব্যক্তিবর্গ ও জিনিসপত্রের নাম ও তাদের বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা সম্পর্কে জ্ঞান দান করেছেন। মহান আল্লাহ তা ইলহাম বা অন্তরে গেঁথে দেওয়ার মাধ্যমে তা সম্পন্ন করেন।’ (তাফসিরে আহসানুল বয়ান)
ড. সালাহ আল-খালেদি এ ব্যাপারে বলেন, ‘আল্লাহ কি আদম (আ.)–কে সবকিছুর নামের অভিধান মুখস্থ করিয়ে দিয়েছেন, না প্রয়োজনীয় নামগুলো শিখিয়ে দিয়েছেন? নাকি মুখস্থ না করিয়ে অন্য পদ্ধতিতে নামগুলো তাঁকে জানিয়ে দিয়েছেন? শেখানোর মাধ্যম কি আরবি ছিল, না অন্য ভাষা? এসব প্রশ্নের জবাবে আমাদের কাছে কোরআন-হাদিসের কোনো প্রমাণ নেই। তাই এই বিষয়ের বিস্তারিত আল্লাহর কাছে সোপর্দ করে দেওয়াই আমাদের জন্য কল্যাণকর।’ (আল-কাসাসুল কোরআনি: ১ / ১০৭)
যেভাবে আদমের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ হলো
আদম (আ.)-কে যে ফেরেশতাদের চেয়ে বেশি যোগ্যতা দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে, তা তিনি তাঁদের জানিয়ে দিতে চাইলেন। ফলে একটি পরীক্ষার আয়োজন করলেন। পরীক্ষায় আদম (আ.) উত্তীর্ণ হলেন এবং ফেরেশতারা অকৃতকার্য হলেন। ফলে ফেরেশতারা আদম (আ.)-এর শ্রেষ্ঠত্ব বুঝতে পারলেন এবং অকপটে স্বীকার করে নিলেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘এরপর সেই বস্তুগুলো ফেরেশতাদের সামনে পেশ করে বললেন, আমাকে এসবের নাম বলো—যদি তোমরা সত্যবাদী হও। তারা বলল, আপনি পবিত্র মহান, আপনি আমাদের যা শিখিয়েছেন তা ছাড়া আমাদের কোনো জ্ঞানই নেই। নিশ্চয়ই আপনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। তিনি বললেন, হে আদম, ওদেরকে এসবের নামগুলো বলে দাও। এরপর যখন সে তাদের সেসবের নাম বলে দিল, তখন তিনি বললেন, আমি কি তোমাদের বলিনি, আসমান-জমিনের অদৃশ্য বস্তু সম্পর্কে আমি অবহিত এবং তোমরা যা বলো বা গোপন রাখো, নিশ্চিতভাবে আমি তা জানি?’ (সুরা বাকারা: ৩১-৩৩)
ফেরেশতাদের কেন নামগুলো শেখালেন না?
আল্লাহ তাআলা আদম (আ.)-কে সবকিছুর নাম শেখালেন। ফেরেশতাদের শেখালেন না। এসব বস্তুর জ্ঞান আগে থেকে তাঁদের ছিলও না। এরপরও ফেরেশতাদের সেসব বস্তুর নাম জানাতে বললেন। আল্লাহ জানতেন, এসবের নাম ফেরেশতারা জানেন না। কারণ তিনি তাদের এসব শেখাননি। এরপরও তাদের পরীক্ষা করলেন। নামগুলো বলতে বললেন। কেন?
কারণ আল্লাহ ফেরেশতাদের আদমকে তাঁর প্রতিনিধি মনোনীত করার কারণ দেখাতে চেয়েছিলেন। ফলে তাঁর যোগ্যতা তাঁদের সামনে তুলে ধরলেন। এবং এর মাধ্যমে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করলেন। ফেরেশতাদের মধ্যে সৃষ্টিগতভাবে সেই যোগ্যতা দেওয়া হয়নি। ফলে ফেরেশতারাও তাঁদের অপারগতা স্বীকার করে নিলেন। ফেরেশতাদের জবাবই প্রমাণ করে, তাঁদের জ্ঞান আল্লাহ থেকেই আসে। তাঁরা মানুষের মতো জ্ঞানের অধিকারী নন। কথা বলা, চিন্তা করা ও সব বস্তু চেনার এই যোগ্যতা ফেরেশতাদের দরকার নেই। কারণ তাঁদের যেসব ইবাদতে নিয়োজিত করা হয়েছে, সেসবে এমন যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। (আল-কাসাসুল কোরআনি: ১ / ১০৮)
ভাষা ও কথা বলার যোগ্যতা
আল্লাহ তাআলা আদম (আ.)-কে জবাব দিতে বললেন। তিনি সুন্দরভাবে জবাব দিলেন। ফেরেশতাদের সামনে সব বস্তুর নাম বলে দিলেন। এ থেকে প্রমাণিত হয়, আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রতিনিধি মানুষের মধ্যে কথা বলা, মনের ভাবপ্রকাশ করা, সৃষ্টির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করার যোগ্যতা দিয়েছেন। কারণ তাঁর প্রতিনিধিত্ব করতে হলে এসবের গুরুত্ব অপরিসীম। এসব ছাড়া মানুষ কীভাবে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবে? কীভাবে পৃথিবীতে আল্লাহর আদেশ বাস্তবায়ন করবে?
তাই আল্লাহ তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে আদম (আ.) ও তাঁর সন্তানদের কথা বলা, চিন্তা করা ও মনের ভাবপ্রকাশ করার ক্ষমতা দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘পরম দয়ালু (আল্লাহ)। কোরআন শিখিয়েছেন। মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তাকে মনের ভাব প্রকাশ করতে শিখিয়েছেন।’ (সুরা রহমান: ১-৪)
আদম (আ.) কোন ভাষায় কথা বলতেন?
এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন, তিনি সুরয়ানি ভাষায় কথা বলতেন। কেউ বলেছেন, আরবি ভাষায়। কেউ বলেছেন, আসমানে থাকতে আরবি ভাষায়, পৃথিবীতে আসার পর সুরিয়ানি ভাষায়। কেউ বলেছেন, নিষিদ্ধ ফল খাওয়ার আগে আরবি ভাষায়, তওবা করার আগে সুরিয়ানি ভাষায়, তওবা করার পর আবার আরবি ভাষায়। তবে একটি হাদিসে আদম (আ.)-এর ভাষা সুরিয়ানি বলা হয়েছে। (ইসলামওয়েব, ফতোয়া নম্বর: ৩৮৫৯৯০)
আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল, নবী কয়জন? তিনি বললেন, ১ লাখ ২০ হাজার। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, তাঁদের মধ্যে রাসুল কয়জন? তিনি বললেন, ৩১৩ জন। বড় দল। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, তাঁদের মধ্যে প্রথম কে? তিনি বললেন, আদম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, তিনি কি নবী ছিলেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আল্লাহ তাঁকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন এবং প্রাণ দিয়েছেন এবং (তাঁর সঙ্গে) কথা বলেছেন। এরপর তিনি আরও বললেন, হে আবু জর, তাঁদের মধ্যে চারজন সুরিয়ানি ভাষি: আদম, শিস, ইদরিস ও নুহ। চারজন আরবি ভাষার: হুদ, শুআইব, সালিহ ও মুহাম্মদ। (সহিহ, ইবনে হিব্বান)

‘হে ইমানদারগণ, আমি কি তোমাদের এমন এক বাণিজ্যের সন্ধান বলে দেব না, যা তোমাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে রক্ষা করবে?’ এর পরের আয়াতেই আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তা এই যে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ইমান আনবে এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে লড়াই করবে—এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে!’
১ ঘণ্টা আগে
বর্তমান সময়ের শিশুরা একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম প্রযুক্তি জ্ঞান, ইংরেজি শেখা, বিভিন্ন খেলায় পারদর্শিতা অর্জন ইত্যাদি। এসব বিষয় সম্পর্কে জানার যেমন দরকার আছে, তেমনি শিশুর মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও ধর্মচর্চার শিক্ষা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
৩ ঘণ্টা আগে
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
৫ ঘণ্টা আগে
কৃপণতা মানব চরিত্রের একটি মন্দ দিক। এটি কোনো মুমিনের স্বভাব হতে পারে না। এ স্বভাব শয়তানই পছন্দ করে এবং মানুষকে কৃপণ হতে উৎসাহিত করে। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, ‘শয়তান তোমাদের দারিদ্র্যের ভয় দেখায় আর কৃপণ হতে উৎসাহ জোগায়। অন্যদিকে আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন।’
৬ ঘণ্টা আগেইসলাম ডেস্ক

মানুষের অভাব পূরণের প্রয়োজন থেকে ব্যবসার উৎপত্তি। সুপ্রাচীন কাল থেকে ব্যবসা বৈধ জীবিকা নির্বাহের এক অনন্য উপায় হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের জন্য ব্যবসা শুধু একটি পেশা নয়, গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতও বটে।
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল এবং সুদকে হারাম করেছেন (সুরা বাকারা: ২৭৫)
পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকে আজকের আধুনিক যুগ পর্যন্ত ব্যবসায়ের অসংখ্য ধরন বা শ্রেণি বিদ্যমান। কিন্তু মানুষের মধ্যে দুই ধরনের ব্যবসা থাকতে পারে:
এক. বস্তুগত ব্যবসা, যা দুনিয়াবি প্রয়োজন পূরণে একে অপরের সঙ্গে করে থাকে।
দুই. আধ্যাত্মিক ব্যবসা, যা আত্মার সন্তুষ্টির জন্য মহান আল্লাহর সঙ্গে হয়।
মহান আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় ব্যবসা করা নিঃসন্দেহে ইবাদতের একটি অংশ। তা ছাড়া মুনাফা অর্জনের অভিপ্রায়ে লাভজনক খাতে মূলধন, শ্রম ও মেধা বিনিয়োগ করা হয়। ফলস্বরূপ লাভ এবং ক্ষতির আশঙ্কা থাকে প্রায় সমান।
কিন্তু পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাআলা এমন এক ব্যবসার সুসংবাদ দিয়েছেন, যেখানে ক্ষতির কোনো আশঙ্কা নেই—আছে লাভ আর লাভ। সুরা সফফাতের ১০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ইমানদারগণ, আমি কি তোমাদের এমন এক বাণিজ্যের সন্ধান বলে দেব না, যা তোমাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে রক্ষা করবে?’ এর পরের আয়াতেই আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তা এই যে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ইমান আনবে এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে লড়াই করবে—এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে!’
অর্থাৎ কোরআনের সংশ্লিষ্ট আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাঁর সঙ্গে ব্যবসার মূলধন হিসেবে তিনটি বিষয়কে উল্লেখ করেছেন:
এক. আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ইমান আনা। আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস, মুখে স্বীকার এবং তদনুযায়ী আমল এই ব্যবসার শ্রেষ্ঠ মূলধন।
দুই. দ্বীনি কাজে ধন-সম্পদ ব্যয় করা। আপাতদৃষ্টিতে দ্বীনের জন্য সম্পদ ব্যয়ের ফলে মনে হয় তা কমেছে। কিন্তু আল্লাহর সঙ্গে আর্থিক এই ব্যবসা ক্ষতিবিহীন এবং অন্তহীন, যা দুনিয়া এবং আখিরাতের সম্পদকে কয়েকগুণ বৃদ্ধি করবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে এবং সালাত কায়েম করে এবং আল্লাহ যে রিজিক দিয়েছেন, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে; যা কখনো ধ্বংস হবে না।’ (সুরা ফাতির: ২৯)
তিন. জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ। জিহাদ নিয়ে বর্তমান সমাজে ভ্রান্ত ধারণা বিদ্যমান। কিন্তু জিহাদ বলতে কেবল যুদ্ধকেই বোঝানো হয় না। বরং এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যেকোনো প্রচেষ্টা। যেমন, নিজের ধন-সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় দান এবং দ্বীনের জন্য নিজের জীবন কিংবা নিজের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু উৎসর্গ করা অথবা দ্বীনকে রক্ষা করার অন্য যেকোনো প্রচেষ্টা জিহাদের অংশ।
যেকোনো ব্যবসায় ক্রেতা অপরিহার্য। তবে বান্দা এবং রবে এই ব্যবসায় ক্রেতা যিনি, তিনি হলেন মহান আল্লাহ। তিনি কী কিনে নিচ্ছেন এবং বিনিময়ে আমরা কী লাভ করছি, তা সুরা তওবার ১১১ নম্বর আয়াতে বলেন, ‘অবশ্যই আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মুমিনদের নিকট থেকে তাদের জান ও মালকে জান্নাতের বিনিময়ে।’
মহান রবের সঙ্গে ব্যবসার লাভ এবং উপকারিতা সম্পর্কে সুরা সফফাতের ১২ নম্বর আয়াতে তিনি আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নহর প্রবাহিত এবং স্থায়ী জান্নাতের উত্তম বাসগৃহে। এটাই মহাসাফল্য।’
ব্যবসায়ের চিরাচরিত ঝুঁকি থাকলেও খোদার সঙ্গে লেনদেনে কোনো প্রকার ঝুঁকি নেই। নিশ্চিত লাভের আশায় মুমিনগণ আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টি করতে নিভৃতে ইবাদত করে। ওয়াল্লাহি মুমিনদের জন্য এর থেকে বড় ব্যবসা একটিও নেই।
লেখক: শারমিন আক্তার, শিক্ষার্থী, গুরুদয়াল সরকারি কলেজ, কিশোরগঞ্জ।

মানুষের অভাব পূরণের প্রয়োজন থেকে ব্যবসার উৎপত্তি। সুপ্রাচীন কাল থেকে ব্যবসা বৈধ জীবিকা নির্বাহের এক অনন্য উপায় হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের জন্য ব্যবসা শুধু একটি পেশা নয়, গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতও বটে।
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল এবং সুদকে হারাম করেছেন (সুরা বাকারা: ২৭৫)
পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকে আজকের আধুনিক যুগ পর্যন্ত ব্যবসায়ের অসংখ্য ধরন বা শ্রেণি বিদ্যমান। কিন্তু মানুষের মধ্যে দুই ধরনের ব্যবসা থাকতে পারে:
এক. বস্তুগত ব্যবসা, যা দুনিয়াবি প্রয়োজন পূরণে একে অপরের সঙ্গে করে থাকে।
দুই. আধ্যাত্মিক ব্যবসা, যা আত্মার সন্তুষ্টির জন্য মহান আল্লাহর সঙ্গে হয়।
মহান আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় ব্যবসা করা নিঃসন্দেহে ইবাদতের একটি অংশ। তা ছাড়া মুনাফা অর্জনের অভিপ্রায়ে লাভজনক খাতে মূলধন, শ্রম ও মেধা বিনিয়োগ করা হয়। ফলস্বরূপ লাভ এবং ক্ষতির আশঙ্কা থাকে প্রায় সমান।
কিন্তু পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাআলা এমন এক ব্যবসার সুসংবাদ দিয়েছেন, যেখানে ক্ষতির কোনো আশঙ্কা নেই—আছে লাভ আর লাভ। সুরা সফফাতের ১০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ইমানদারগণ, আমি কি তোমাদের এমন এক বাণিজ্যের সন্ধান বলে দেব না, যা তোমাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে রক্ষা করবে?’ এর পরের আয়াতেই আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তা এই যে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ইমান আনবে এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে লড়াই করবে—এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে!’
অর্থাৎ কোরআনের সংশ্লিষ্ট আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাঁর সঙ্গে ব্যবসার মূলধন হিসেবে তিনটি বিষয়কে উল্লেখ করেছেন:
এক. আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ইমান আনা। আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস, মুখে স্বীকার এবং তদনুযায়ী আমল এই ব্যবসার শ্রেষ্ঠ মূলধন।
দুই. দ্বীনি কাজে ধন-সম্পদ ব্যয় করা। আপাতদৃষ্টিতে দ্বীনের জন্য সম্পদ ব্যয়ের ফলে মনে হয় তা কমেছে। কিন্তু আল্লাহর সঙ্গে আর্থিক এই ব্যবসা ক্ষতিবিহীন এবং অন্তহীন, যা দুনিয়া এবং আখিরাতের সম্পদকে কয়েকগুণ বৃদ্ধি করবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে এবং সালাত কায়েম করে এবং আল্লাহ যে রিজিক দিয়েছেন, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে; যা কখনো ধ্বংস হবে না।’ (সুরা ফাতির: ২৯)
তিন. জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ। জিহাদ নিয়ে বর্তমান সমাজে ভ্রান্ত ধারণা বিদ্যমান। কিন্তু জিহাদ বলতে কেবল যুদ্ধকেই বোঝানো হয় না। বরং এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যেকোনো প্রচেষ্টা। যেমন, নিজের ধন-সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় দান এবং দ্বীনের জন্য নিজের জীবন কিংবা নিজের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু উৎসর্গ করা অথবা দ্বীনকে রক্ষা করার অন্য যেকোনো প্রচেষ্টা জিহাদের অংশ।
যেকোনো ব্যবসায় ক্রেতা অপরিহার্য। তবে বান্দা এবং রবে এই ব্যবসায় ক্রেতা যিনি, তিনি হলেন মহান আল্লাহ। তিনি কী কিনে নিচ্ছেন এবং বিনিময়ে আমরা কী লাভ করছি, তা সুরা তওবার ১১১ নম্বর আয়াতে বলেন, ‘অবশ্যই আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মুমিনদের নিকট থেকে তাদের জান ও মালকে জান্নাতের বিনিময়ে।’
মহান রবের সঙ্গে ব্যবসার লাভ এবং উপকারিতা সম্পর্কে সুরা সফফাতের ১২ নম্বর আয়াতে তিনি আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নহর প্রবাহিত এবং স্থায়ী জান্নাতের উত্তম বাসগৃহে। এটাই মহাসাফল্য।’
ব্যবসায়ের চিরাচরিত ঝুঁকি থাকলেও খোদার সঙ্গে লেনদেনে কোনো প্রকার ঝুঁকি নেই। নিশ্চিত লাভের আশায় মুমিনগণ আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টি করতে নিভৃতে ইবাদত করে। ওয়াল্লাহি মুমিনদের জন্য এর থেকে বড় ব্যবসা একটিও নেই।
লেখক: শারমিন আক্তার, শিক্ষার্থী, গুরুদয়াল সরকারি কলেজ, কিশোরগঞ্জ।

আল্লাহ তাআলা মানুষকে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করার সব যোগ্যতা তাকে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো— কথা বলা ও মনের ভাব প্রকাশ করার সক্ষমতা। মানুষ ছাড়া অন্য কোনো সৃষ্টিকে আল্লাহ এই বিশেষ যোগ্যতা দেননি। এটি মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম কারণ।
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
বর্তমান সময়ের শিশুরা একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম প্রযুক্তি জ্ঞান, ইংরেজি শেখা, বিভিন্ন খেলায় পারদর্শিতা অর্জন ইত্যাদি। এসব বিষয় সম্পর্কে জানার যেমন দরকার আছে, তেমনি শিশুর মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও ধর্মচর্চার শিক্ষা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
৩ ঘণ্টা আগে
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
৫ ঘণ্টা আগে
কৃপণতা মানব চরিত্রের একটি মন্দ দিক। এটি কোনো মুমিনের স্বভাব হতে পারে না। এ স্বভাব শয়তানই পছন্দ করে এবং মানুষকে কৃপণ হতে উৎসাহিত করে। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, ‘শয়তান তোমাদের দারিদ্র্যের ভয় দেখায় আর কৃপণ হতে উৎসাহ জোগায়। অন্যদিকে আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন।’
৬ ঘণ্টা আগেইসলাম ডেস্ক

বর্তমান সময়ের শিশুরা একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম প্রযুক্তি জ্ঞান, ইংরেজি শেখা, বিভিন্ন খেলায় পারদর্শিতা অর্জন ইত্যাদি। এসব বিষয় সম্পর্কে জানার যেমন দরকার আছে, তেমনি শিশুর মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও ধর্মচর্চার শিক্ষা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
ইসলামিক ভাবধারায় শিশু বিকশিত হলে তার মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ, সমাজবোধ, সুষ্ঠু আচরণ, সততা, সত্যবাদিতা ও সময়নিষ্ঠতার শিক্ষালাভ করে। প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষা শিশুর মধ্যে আল্লাহভীতি সৃষ্টি করে, ফলে সে মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকে। এ জন্য প্রথমেই দরকার শিশুর পরিবারের সবার মাধ্যমে ধর্মীয় শিক্ষাদান।
শিশু সবচেয়ে বেশি সময় কাটায় তার পরিবারের সঙ্গে। এ জন্য পরিবারের সবার করণীয় শিশুর সঙ্গে ইসলামিক ভাবধারার আচরণ করা, ইসলামের ইতিহাস-ঐতিহ্য গল্পের মাধ্যমে শোনানো, আল্লাহভীতি সৃষ্টি করা, আল্লাহর ৯৯ নামের অর্থ ব্যাখ্যা করা ইত্যাদি।
এ ছাড়া পরিবারের অন্য সদস্যরা নিয়মিত নামাজ, রোজা, কোরআন পাঠ, সত্য ও সদাচরণ করলে শিশুরা তা অনুসরণ করবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শুধু পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে চরিত্র ও আচরণের মাধ্যমে ধর্মীয় মূল্যবোধ যদি শেখানো যায়, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হবে আলোকিত ও দায়িত্বশীল। শিক্ষকেরা যদি নিজেদের আচরণের মাধ্যমেও শিক্ষার্থীদের নৈতিকতার উদাহরণ দিতে পারেন, তবে সে প্রভাব অনেক গভীর হবে।
বর্তমান সময়ে বেশির ভাগ শিশু প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠেছে। ছোট থেকেই ভিডিও গেমস ও অন্যান্য কনটেন্ট দেখায় তাদের আচার-আচরণে অস্বাভাবিক পরিবর্তন আসে, যা তাদের মানসিক বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে। কিন্তু ইসলামিক ভাবধারায় শিশু বেড়ে উঠলে তার মধ্যে ইতিবাচক চিন্তাধারা জাগ্রত হয়, যা তার ভবিষ্যৎ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাহায্য করে। ধর্মীয় শিক্ষা শিশুর মস্তিষ্ক ও আত্মাকে ভারসাম্যপূর্ণ রাখে। এটি তাকে শেখায় কীভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়, কীভাবে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হয় এবং কীভাবে নিজের জীবনের উদ্দেশ্য বুঝে এগিয়ে যেতে হয়।
একটি সমাজ তখনই সুন্দর ও সুশৃঙ্খল হয়, যখন সে সমাজের শিশুরা নৈতিক গুণাবলি ও ধর্মীয় মূল্যবোধের আলোকে গড়ে ওঠে। এ শিক্ষা শুধু আখিরাতের জন্য কল্যাণকর নয়; বরং দুনিয়ার জীবনকেও শান্তিপূর্ণ করে তোলে। তাই সমাজের সব স্তরে শিশুদের মধ্যে ধর্মীয় শিক্ষার চর্চা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
লেখক: রাখি আক্তার, শিক্ষার্থী, ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা

বর্তমান সময়ের শিশুরা একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম প্রযুক্তি জ্ঞান, ইংরেজি শেখা, বিভিন্ন খেলায় পারদর্শিতা অর্জন ইত্যাদি। এসব বিষয় সম্পর্কে জানার যেমন দরকার আছে, তেমনি শিশুর মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও ধর্মচর্চার শিক্ষা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
ইসলামিক ভাবধারায় শিশু বিকশিত হলে তার মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ, সমাজবোধ, সুষ্ঠু আচরণ, সততা, সত্যবাদিতা ও সময়নিষ্ঠতার শিক্ষালাভ করে। প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষা শিশুর মধ্যে আল্লাহভীতি সৃষ্টি করে, ফলে সে মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকে। এ জন্য প্রথমেই দরকার শিশুর পরিবারের সবার মাধ্যমে ধর্মীয় শিক্ষাদান।
শিশু সবচেয়ে বেশি সময় কাটায় তার পরিবারের সঙ্গে। এ জন্য পরিবারের সবার করণীয় শিশুর সঙ্গে ইসলামিক ভাবধারার আচরণ করা, ইসলামের ইতিহাস-ঐতিহ্য গল্পের মাধ্যমে শোনানো, আল্লাহভীতি সৃষ্টি করা, আল্লাহর ৯৯ নামের অর্থ ব্যাখ্যা করা ইত্যাদি।
এ ছাড়া পরিবারের অন্য সদস্যরা নিয়মিত নামাজ, রোজা, কোরআন পাঠ, সত্য ও সদাচরণ করলে শিশুরা তা অনুসরণ করবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শুধু পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে চরিত্র ও আচরণের মাধ্যমে ধর্মীয় মূল্যবোধ যদি শেখানো যায়, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হবে আলোকিত ও দায়িত্বশীল। শিক্ষকেরা যদি নিজেদের আচরণের মাধ্যমেও শিক্ষার্থীদের নৈতিকতার উদাহরণ দিতে পারেন, তবে সে প্রভাব অনেক গভীর হবে।
বর্তমান সময়ে বেশির ভাগ শিশু প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠেছে। ছোট থেকেই ভিডিও গেমস ও অন্যান্য কনটেন্ট দেখায় তাদের আচার-আচরণে অস্বাভাবিক পরিবর্তন আসে, যা তাদের মানসিক বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে। কিন্তু ইসলামিক ভাবধারায় শিশু বেড়ে উঠলে তার মধ্যে ইতিবাচক চিন্তাধারা জাগ্রত হয়, যা তার ভবিষ্যৎ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাহায্য করে। ধর্মীয় শিক্ষা শিশুর মস্তিষ্ক ও আত্মাকে ভারসাম্যপূর্ণ রাখে। এটি তাকে শেখায় কীভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়, কীভাবে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হয় এবং কীভাবে নিজের জীবনের উদ্দেশ্য বুঝে এগিয়ে যেতে হয়।
একটি সমাজ তখনই সুন্দর ও সুশৃঙ্খল হয়, যখন সে সমাজের শিশুরা নৈতিক গুণাবলি ও ধর্মীয় মূল্যবোধের আলোকে গড়ে ওঠে। এ শিক্ষা শুধু আখিরাতের জন্য কল্যাণকর নয়; বরং দুনিয়ার জীবনকেও শান্তিপূর্ণ করে তোলে। তাই সমাজের সব স্তরে শিশুদের মধ্যে ধর্মীয় শিক্ষার চর্চা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
লেখক: রাখি আক্তার, শিক্ষার্থী, ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা

আল্লাহ তাআলা মানুষকে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করার সব যোগ্যতা তাকে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো— কথা বলা ও মনের ভাব প্রকাশ করার সক্ষমতা। মানুষ ছাড়া অন্য কোনো সৃষ্টিকে আল্লাহ এই বিশেষ যোগ্যতা দেননি। এটি মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম কারণ।
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
‘হে ইমানদারগণ, আমি কি তোমাদের এমন এক বাণিজ্যের সন্ধান বলে দেব না, যা তোমাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে রক্ষা করবে?’ এর পরের আয়াতেই আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তা এই যে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ইমান আনবে এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে লড়াই করবে—এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে!’
১ ঘণ্টা আগে
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
৫ ঘণ্টা আগে
কৃপণতা মানব চরিত্রের একটি মন্দ দিক। এটি কোনো মুমিনের স্বভাব হতে পারে না। এ স্বভাব শয়তানই পছন্দ করে এবং মানুষকে কৃপণ হতে উৎসাহিত করে। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, ‘শয়তান তোমাদের দারিদ্র্যের ভয় দেখায় আর কৃপণ হতে উৎসাহ জোগায়। অন্যদিকে আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন।’
৬ ঘণ্টা আগেইসলাম ডেস্ক

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত। প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।
আজ রোববার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫ ইংরেজি, ১০ কার্তিক ১৪৩২ বাংলা, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—
| নামাজ | ওয়াক্ত শুরু | ওয়াক্ত শেষ |
|---|---|---|
| তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময় | ০০: ০০ | ৪: ৪৪ মিনিট |
| ফজর | ০৪: ৪৫ মিনিট | ০৬: ০০ মিনিট |
| জোহর | ১১: ৪৩ মিনিট | ০৩: ৪৬ মিনিট |
| আসর | ০৩: ৪৭ মিনিট | ০৫: ২২ মিনিট |
| মাগরিব | ০৫: ২৪ মিনিট | ০৬: ৩৯ মিনিট |
| এশা | ০৬: ৪০ মিনিট | ০৪: ৪৪ মিনিট |
উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:
বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট
যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত। প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।
আজ রোববার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫ ইংরেজি, ১০ কার্তিক ১৪৩২ বাংলা, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—
| নামাজ | ওয়াক্ত শুরু | ওয়াক্ত শেষ |
|---|---|---|
| তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময় | ০০: ০০ | ৪: ৪৪ মিনিট |
| ফজর | ০৪: ৪৫ মিনিট | ০৬: ০০ মিনিট |
| জোহর | ১১: ৪৩ মিনিট | ০৩: ৪৬ মিনিট |
| আসর | ০৩: ৪৭ মিনিট | ০৫: ২২ মিনিট |
| মাগরিব | ০৫: ২৪ মিনিট | ০৬: ৩৯ মিনিট |
| এশা | ০৬: ৪০ মিনিট | ০৪: ৪৪ মিনিট |
উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:
বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট
যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

আল্লাহ তাআলা মানুষকে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করার সব যোগ্যতা তাকে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো— কথা বলা ও মনের ভাব প্রকাশ করার সক্ষমতা। মানুষ ছাড়া অন্য কোনো সৃষ্টিকে আল্লাহ এই বিশেষ যোগ্যতা দেননি। এটি মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম কারণ।
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
‘হে ইমানদারগণ, আমি কি তোমাদের এমন এক বাণিজ্যের সন্ধান বলে দেব না, যা তোমাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে রক্ষা করবে?’ এর পরের আয়াতেই আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তা এই যে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ইমান আনবে এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে লড়াই করবে—এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে!’
১ ঘণ্টা আগে
বর্তমান সময়ের শিশুরা একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম প্রযুক্তি জ্ঞান, ইংরেজি শেখা, বিভিন্ন খেলায় পারদর্শিতা অর্জন ইত্যাদি। এসব বিষয় সম্পর্কে জানার যেমন দরকার আছে, তেমনি শিশুর মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও ধর্মচর্চার শিক্ষা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
৩ ঘণ্টা আগে
কৃপণতা মানব চরিত্রের একটি মন্দ দিক। এটি কোনো মুমিনের স্বভাব হতে পারে না। এ স্বভাব শয়তানই পছন্দ করে এবং মানুষকে কৃপণ হতে উৎসাহিত করে। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, ‘শয়তান তোমাদের দারিদ্র্যের ভয় দেখায় আর কৃপণ হতে উৎসাহ জোগায়। অন্যদিকে আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন।’
৬ ঘণ্টা আগেইসলাম ডেস্ক

কৃপণতা মানব চরিত্রের একটি মন্দ দিক। এটি কোনো মুমিনের স্বভাব হতে পারে না। এ স্বভাব শয়তানই পছন্দ করে এবং মানুষকে কৃপণ হতে উৎসাহিত করে। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, ‘শয়তান তোমাদের দারিদ্র্যের ভয় দেখায় আর কৃপণ হতে উৎসাহ জোগায়। অন্যদিকে আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন।’ (সুরা বাকারা: ২৬৯)
রাসুল (সা.) কৃপণতার নিন্দা করেছেন। কৃপণতাকে মারাত্মক রোগ বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং উম্মতকে কৃপণতা থেকে সতর্ক করেছেন। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে বনু সালামা, তোমাদের নেতা কে?’ আমরা বললাম, ‘জুদ ইবনে কায়েস। অবশ্য আমরা তাকে কৃপণ বলি।’ তিনি বলেন, ‘কৃপণতার চেয়ে মারাত্মক রোগ আর কী হতে পারে?’ (আদাবুল মুফরাদ: ২৯৬)
একদিন রাসুল (সা.) ভাষণ দেন এবং বলেন, ‘তোমরা কৃপণতার ব্যাপারে সাবধান হও। কেননা তোমাদের পূর্ববর্তীরা কৃপণতার কারণে ধ্বংস হয়েছে। অর্থলোভ তাদের কৃপণতার নির্দেশ দিয়েছে, ফলে তারা কৃপণতা করেছে।’ (সুনানে আবু দাউদ: ১৬৯৮)
রাসুল (সা.) মহান আল্লাহর কাছে সর্বদা এই অভ্যাস থেকে আশ্রয় চাইতেন। তিনি বলতেন, ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে অক্ষমতা, অলসতা, ভীরুতা, কৃপণতা ও বার্ধক্য থেকে আশ্রয় চাই, আশ্রয় চাই কবরের শাস্তি থেকে এবং আশ্রয় চাই জীবন ও মরণের বিপদাপদ থেকে।’ (সুনানে আবু দাউদ: ১৫৪০)
একজন মুমিন কখনো কৃপণ হতে পারে না। যে ব্যক্তির চরিত্রে এই অভ্যাস থাকবে, সেই নিকৃষ্ট মানুষ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তির চরিত্রে কৃপণতা, ভীরুতা ও হীন মানসিকতা রয়েছে, সে খুবই নিকৃষ্ট।’ (সুনানে আবু দাউদ: ২৫১১) অন্য হাদিসে এরশাদ হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনের মধ্যে দুটি স্বভাব একত্রে জমা থাকতে পারে না—কৃপণতা ও অসদাচরণ।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ: ১৮৭২)

কৃপণতা মানব চরিত্রের একটি মন্দ দিক। এটি কোনো মুমিনের স্বভাব হতে পারে না। এ স্বভাব শয়তানই পছন্দ করে এবং মানুষকে কৃপণ হতে উৎসাহিত করে। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, ‘শয়তান তোমাদের দারিদ্র্যের ভয় দেখায় আর কৃপণ হতে উৎসাহ জোগায়। অন্যদিকে আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন।’ (সুরা বাকারা: ২৬৯)
রাসুল (সা.) কৃপণতার নিন্দা করেছেন। কৃপণতাকে মারাত্মক রোগ বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং উম্মতকে কৃপণতা থেকে সতর্ক করেছেন। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে বনু সালামা, তোমাদের নেতা কে?’ আমরা বললাম, ‘জুদ ইবনে কায়েস। অবশ্য আমরা তাকে কৃপণ বলি।’ তিনি বলেন, ‘কৃপণতার চেয়ে মারাত্মক রোগ আর কী হতে পারে?’ (আদাবুল মুফরাদ: ২৯৬)
একদিন রাসুল (সা.) ভাষণ দেন এবং বলেন, ‘তোমরা কৃপণতার ব্যাপারে সাবধান হও। কেননা তোমাদের পূর্ববর্তীরা কৃপণতার কারণে ধ্বংস হয়েছে। অর্থলোভ তাদের কৃপণতার নির্দেশ দিয়েছে, ফলে তারা কৃপণতা করেছে।’ (সুনানে আবু দাউদ: ১৬৯৮)
রাসুল (সা.) মহান আল্লাহর কাছে সর্বদা এই অভ্যাস থেকে আশ্রয় চাইতেন। তিনি বলতেন, ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে অক্ষমতা, অলসতা, ভীরুতা, কৃপণতা ও বার্ধক্য থেকে আশ্রয় চাই, আশ্রয় চাই কবরের শাস্তি থেকে এবং আশ্রয় চাই জীবন ও মরণের বিপদাপদ থেকে।’ (সুনানে আবু দাউদ: ১৫৪০)
একজন মুমিন কখনো কৃপণ হতে পারে না। যে ব্যক্তির চরিত্রে এই অভ্যাস থাকবে, সেই নিকৃষ্ট মানুষ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তির চরিত্রে কৃপণতা, ভীরুতা ও হীন মানসিকতা রয়েছে, সে খুবই নিকৃষ্ট।’ (সুনানে আবু দাউদ: ২৫১১) অন্য হাদিসে এরশাদ হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনের মধ্যে দুটি স্বভাব একত্রে জমা থাকতে পারে না—কৃপণতা ও অসদাচরণ।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ: ১৮৭২)

আল্লাহ তাআলা মানুষকে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করার সব যোগ্যতা তাকে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো— কথা বলা ও মনের ভাব প্রকাশ করার সক্ষমতা। মানুষ ছাড়া অন্য কোনো সৃষ্টিকে আল্লাহ এই বিশেষ যোগ্যতা দেননি। এটি মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম কারণ।
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
‘হে ইমানদারগণ, আমি কি তোমাদের এমন এক বাণিজ্যের সন্ধান বলে দেব না, যা তোমাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে রক্ষা করবে?’ এর পরের আয়াতেই আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তা এই যে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ইমান আনবে এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে লড়াই করবে—এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে!’
১ ঘণ্টা আগে
বর্তমান সময়ের শিশুরা একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে থাকে। এর মধ্যে অন্যতম প্রযুক্তি জ্ঞান, ইংরেজি শেখা, বিভিন্ন খেলায় পারদর্শিতা অর্জন ইত্যাদি। এসব বিষয় সম্পর্কে জানার যেমন দরকার আছে, তেমনি শিশুর মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও ধর্মচর্চার শিক্ষা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
৩ ঘণ্টা আগে
নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
৫ ঘণ্টা আগে