আবদুল আযীয কাসেমি
প্রাচীন ইরাকের বিখ্যাত শহর কুফায় জন্মগ্রহণ করেন যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফকিহ ইমাম সুফিয়ান বিন সাঈদ সাওরি (রহ.)। তাঁর সমকালীনদের মধ্যে এবং পরবর্তীতেও অনেক বড় বড় মুহাদ্দিস তাঁকে আমিরুল মোমেনিন ফিল হাদিস (হাদিস শাস্ত্রে মুমিনদের নেতা) আখ্যা দিয়েছেন। বিখ্যাত ঐতিহাসিক হাফেজ শামসুদ্দিন যাহাবি তাঁকে শাইখুল ইসলাম (প্রবীণ ইসলামি পণ্ডিত) ও সাইয়েদুল হুফফাজ (হাদিসের হাফেজদের সর্দার) খেতাবে ভূষিত করেছেন। ইমাম সুফিয়ান সাওরি নিজেই বলেন, ‘আমি কোনো কিছু মুখস্ত করার পর ভুলে গিয়েছি এমন হয়নি।’
ঐতিহাসিকদের ঐকমত্যে, সুফিয়ান সাওরি ৯৭ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেন। অতি অল্প বয়সেই তিনি পড়াশোনা শুরু করেন। পড়াশোনায় হাতেখড়ি হয় বাবার কাছে। বাবা সাইদ বিন মাসরুকও ছিলেন শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিসদের একজন। সুফিয়ান সাওরি শৈশব থেকেই তুখোড় মেধাবী ছিলেন।
ইমাম সাওরির বিখ্যাত শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন আইয়ুব সাখতিয়ানি, ইবনু আবি যিব, রাবিয়াতুর রায়, মুহাম্মদ ইবনুল মুনকাদির, আবু জুবায়ের আলমাক্কিসহ শতাধিক শিক্ষক। কারো কারো মতে তাঁর শিক্ষকের সংখ্যা ছয় শতাধিক।
সমকালীনদের দৃষ্টিতে
সুফিয়ান সাওরির সম্মানিত শিক্ষক আইয়ুব সাখতিয়ানি বলেন, ‘কুফার অধিবাসীদের মধ্যে আমার দৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তি সুফিয়ান সাওরি।’ ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন, ‘সুফিয়ান সাওরি যদি তাবেয়িনদের মধ্যে জন্মাতেন, সেখানেও তাঁর একটি বিশেষ অবস্থান থাকত।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি ইমাম আলকামা ও আসওয়াদ–এর মতো ব্যক্তি এখন জীবিত থাকতেন, তাঁরাও সুফিয়ানের প্রতি মুখাপেক্ষী হতেন।’ আলকামা ও আসওয়াদ—এ দুজন ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর শিষ্য।
বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইয়াহিয়া বিন মাইন তাফসির, হাদিস ও দুনিয়াবিমুখতা বিবেচনায় সুফিয়ান সাওরিকে সর্বাগ্রে রাখতেন। মুসান্না বিন সাব্বাহর ভাষায়, ‘তিনি ছিলেন পুরো জাতির স্বীকৃত আলেম ও আবেদ।’
কর্মজীবন
সমকালীন অন্যান্য বড় আলেমের মতো সুফিয়ান সাওরিও কোরআন–হাদিসের পঠন-পাঠনকেই নিজের কর্ম হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। অসংখ্য ছাত্র তাঁর কাছ থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। ঐতিহাসিক যাহাবি তাঁদের একটি দীর্ঘ তালিকা দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বড় ইমামরাও।
ইসলামি আইনশাস্ত্রে ছিল সাওরির অগাধ পাণ্ডিত্য। এমনকি কেউ কেউ তাঁকে আবু হানিফার চেয়েও বড় পণ্ডিত মনে করতেন। হাদিসশাস্ত্রেও ছিল তাঁর অসাধারণ দখল। আলি ইবনুল মাদিনির ভাষায়, ‘তিনি খুব কমই পঠন-পাঠনে ভুল করতেন।’ ইবনুল মাদিনি তাঁর ভুলের শুধু একটি উদাহরণ পেশ করেছিলেন। এ ছাড়া কেরাতশাস্ত্রে ছিল তাঁর চমৎকার পাণ্ডিত্য। পুরো কোরআন মাজিদ চারবার শিক্ষকদের কাছে বুঝে বুঝে পড়েছেন তিনি।
দুনিয়াবিমুখতা
দুনিয়াবিমুখতা ও পার্থিব ভোগ-বিলাসের প্রতি নিরাসক্তি সুফিয়ান সাওরির জীবনের একটি উজ্জ্বলতম অধ্যায়। এ বিষয়ে তিনি তাঁর সমকালীন প্রায় সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন। তাঁকে দেখলেই আল্লাহর কথা স্মরণ হতো। বিখ্যাত সুফি বিশর আল হাফি বলেন, ‘আমাদের কাছে সুফিয়ান এ যুগের ইমাম।’
ইমাম কাবিসা বলেন, ‘যখনই আমি সুফিয়ান সাওরির সঙ্গে কোনো মজলিসে বসেছি, মৃত্যুকে স্মরণ করেছি। আমি তাঁর চেয়ে অধিক মৃত্যু স্মরণকারী কাউকে দেখিনি।’
ইউসুফ বিন আসবাত বলেন, ‘একবার এশার নামাজের পর সুফিয়ান সাওরি আমার কাছে অজুর বদনা চাইলেন। আমি সেটা এগিয়ে দিলাম। তিনি ডান হাতে বদনা ধরে বাম হাত গালের ওপর রেখে চিন্তায় ডুবে গেলেন। তাঁকে এ অবস্থায় রেখে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। ফজরের সময় ঘুম থেকে জেগে দেখি, তিনি সে অবস্থায় রয়ে গেছেন। আমি বললাম, সুবহে সাদিক উদিত হয়ে গেছে। তখন তিনি বললেন, তুমি যখন আমার হাতে বদনা দিয়েছ, এরপর থেকে এখন পর্যন্ত আমি পরকাল বিষয়ে ভাবছিলাম।’
দুনিয়াবিমুখতায় যদিও তিনি তাঁর সময়ের শ্রেষ্ঠতম মানুষ ছিলেন, তবুও তিনি সম্পদ উপার্জনকে খারাপ চোখে দেখতেন না। তিনি বলেন, ‘আগেকার সময়ে সম্পদ উপার্জনকে ঘৃণার চোখে দেখা হতো। বর্তমান সময়ে সেটা মুমিনের জন্য ঢালস্বরূপ।’
মোটকথা সুফিয়ান সাওরি জীবনে জ্ঞান, প্রজ্ঞা, দুনিয়াবিমুখতা ও বাস্তববাদিতার মধ্যে সমন্বয় করেছিলেন। ফলে তিনি একজন আদর্শ ও ভারসাম্যপূর্ণ মানুষের উদাহরণ হয়ে থাকবেন যুগ যুগ ধরে। এসব সোনালি মানুষদের অনুকরণেই আমরা পেতে পারি দুনিয়া ও আখেরাতের সাফল্য। ১৬১ হিজরি সনে তিনি ইহজগৎ ত্যাগ করেন।
প্রাচীন ইরাকের বিখ্যাত শহর কুফায় জন্মগ্রহণ করেন যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফকিহ ইমাম সুফিয়ান বিন সাঈদ সাওরি (রহ.)। তাঁর সমকালীনদের মধ্যে এবং পরবর্তীতেও অনেক বড় বড় মুহাদ্দিস তাঁকে আমিরুল মোমেনিন ফিল হাদিস (হাদিস শাস্ত্রে মুমিনদের নেতা) আখ্যা দিয়েছেন। বিখ্যাত ঐতিহাসিক হাফেজ শামসুদ্দিন যাহাবি তাঁকে শাইখুল ইসলাম (প্রবীণ ইসলামি পণ্ডিত) ও সাইয়েদুল হুফফাজ (হাদিসের হাফেজদের সর্দার) খেতাবে ভূষিত করেছেন। ইমাম সুফিয়ান সাওরি নিজেই বলেন, ‘আমি কোনো কিছু মুখস্ত করার পর ভুলে গিয়েছি এমন হয়নি।’
ঐতিহাসিকদের ঐকমত্যে, সুফিয়ান সাওরি ৯৭ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেন। অতি অল্প বয়সেই তিনি পড়াশোনা শুরু করেন। পড়াশোনায় হাতেখড়ি হয় বাবার কাছে। বাবা সাইদ বিন মাসরুকও ছিলেন শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিসদের একজন। সুফিয়ান সাওরি শৈশব থেকেই তুখোড় মেধাবী ছিলেন।
ইমাম সাওরির বিখ্যাত শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন আইয়ুব সাখতিয়ানি, ইবনু আবি যিব, রাবিয়াতুর রায়, মুহাম্মদ ইবনুল মুনকাদির, আবু জুবায়ের আলমাক্কিসহ শতাধিক শিক্ষক। কারো কারো মতে তাঁর শিক্ষকের সংখ্যা ছয় শতাধিক।
সমকালীনদের দৃষ্টিতে
সুফিয়ান সাওরির সম্মানিত শিক্ষক আইয়ুব সাখতিয়ানি বলেন, ‘কুফার অধিবাসীদের মধ্যে আমার দৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তি সুফিয়ান সাওরি।’ ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন, ‘সুফিয়ান সাওরি যদি তাবেয়িনদের মধ্যে জন্মাতেন, সেখানেও তাঁর একটি বিশেষ অবস্থান থাকত।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি ইমাম আলকামা ও আসওয়াদ–এর মতো ব্যক্তি এখন জীবিত থাকতেন, তাঁরাও সুফিয়ানের প্রতি মুখাপেক্ষী হতেন।’ আলকামা ও আসওয়াদ—এ দুজন ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর শিষ্য।
বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইয়াহিয়া বিন মাইন তাফসির, হাদিস ও দুনিয়াবিমুখতা বিবেচনায় সুফিয়ান সাওরিকে সর্বাগ্রে রাখতেন। মুসান্না বিন সাব্বাহর ভাষায়, ‘তিনি ছিলেন পুরো জাতির স্বীকৃত আলেম ও আবেদ।’
কর্মজীবন
সমকালীন অন্যান্য বড় আলেমের মতো সুফিয়ান সাওরিও কোরআন–হাদিসের পঠন-পাঠনকেই নিজের কর্ম হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। অসংখ্য ছাত্র তাঁর কাছ থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। ঐতিহাসিক যাহাবি তাঁদের একটি দীর্ঘ তালিকা দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বড় ইমামরাও।
ইসলামি আইনশাস্ত্রে ছিল সাওরির অগাধ পাণ্ডিত্য। এমনকি কেউ কেউ তাঁকে আবু হানিফার চেয়েও বড় পণ্ডিত মনে করতেন। হাদিসশাস্ত্রেও ছিল তাঁর অসাধারণ দখল। আলি ইবনুল মাদিনির ভাষায়, ‘তিনি খুব কমই পঠন-পাঠনে ভুল করতেন।’ ইবনুল মাদিনি তাঁর ভুলের শুধু একটি উদাহরণ পেশ করেছিলেন। এ ছাড়া কেরাতশাস্ত্রে ছিল তাঁর চমৎকার পাণ্ডিত্য। পুরো কোরআন মাজিদ চারবার শিক্ষকদের কাছে বুঝে বুঝে পড়েছেন তিনি।
দুনিয়াবিমুখতা
দুনিয়াবিমুখতা ও পার্থিব ভোগ-বিলাসের প্রতি নিরাসক্তি সুফিয়ান সাওরির জীবনের একটি উজ্জ্বলতম অধ্যায়। এ বিষয়ে তিনি তাঁর সমকালীন প্রায় সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন। তাঁকে দেখলেই আল্লাহর কথা স্মরণ হতো। বিখ্যাত সুফি বিশর আল হাফি বলেন, ‘আমাদের কাছে সুফিয়ান এ যুগের ইমাম।’
ইমাম কাবিসা বলেন, ‘যখনই আমি সুফিয়ান সাওরির সঙ্গে কোনো মজলিসে বসেছি, মৃত্যুকে স্মরণ করেছি। আমি তাঁর চেয়ে অধিক মৃত্যু স্মরণকারী কাউকে দেখিনি।’
ইউসুফ বিন আসবাত বলেন, ‘একবার এশার নামাজের পর সুফিয়ান সাওরি আমার কাছে অজুর বদনা চাইলেন। আমি সেটা এগিয়ে দিলাম। তিনি ডান হাতে বদনা ধরে বাম হাত গালের ওপর রেখে চিন্তায় ডুবে গেলেন। তাঁকে এ অবস্থায় রেখে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। ফজরের সময় ঘুম থেকে জেগে দেখি, তিনি সে অবস্থায় রয়ে গেছেন। আমি বললাম, সুবহে সাদিক উদিত হয়ে গেছে। তখন তিনি বললেন, তুমি যখন আমার হাতে বদনা দিয়েছ, এরপর থেকে এখন পর্যন্ত আমি পরকাল বিষয়ে ভাবছিলাম।’
দুনিয়াবিমুখতায় যদিও তিনি তাঁর সময়ের শ্রেষ্ঠতম মানুষ ছিলেন, তবুও তিনি সম্পদ উপার্জনকে খারাপ চোখে দেখতেন না। তিনি বলেন, ‘আগেকার সময়ে সম্পদ উপার্জনকে ঘৃণার চোখে দেখা হতো। বর্তমান সময়ে সেটা মুমিনের জন্য ঢালস্বরূপ।’
মোটকথা সুফিয়ান সাওরি জীবনে জ্ঞান, প্রজ্ঞা, দুনিয়াবিমুখতা ও বাস্তববাদিতার মধ্যে সমন্বয় করেছিলেন। ফলে তিনি একজন আদর্শ ও ভারসাম্যপূর্ণ মানুষের উদাহরণ হয়ে থাকবেন যুগ যুগ ধরে। এসব সোনালি মানুষদের অনুকরণেই আমরা পেতে পারি দুনিয়া ও আখেরাতের সাফল্য। ১৬১ হিজরি সনে তিনি ইহজগৎ ত্যাগ করেন।
সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও যৌনাচার থেকে বিরত থাকার নাম রোজা। মোট ৭টি কারণে রোজা ভঙ্গ হয়। দুটি কারণ পবিত্র কোরআন থেকে প্রমাণিত, আর বাকি ৫টি হাদিস থেকে প্রমাণিত।
৫ ঘণ্টা আগেসোলায়মান (আ.)–এর পুত্র দাউদ (আ.)। পিতার মতো তিনিও নবী ছিলেন। আল্লাহ তাআলা তাঁকে নবুয়ত, জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও তাঁর পিতার রাজত্বের স্থলাভিষিক্ত করেছেন। পাশাপাশি তাঁকে এমন কিছু নিয়ামত দান করা হয়েছিল, যা অন্য কোনো নবীকে দান করা হয়নি।
৬ ঘণ্টা আগে‘সেহরি’ শব্দটি আরবি ‘সাহর’ বা ‘সুহুর’ থেকে উদ্ভূত। এর অর্থ রাতের শেষাংশ বা ভোররাত। সেহরি অর্থ শেষ রাতের বা ভোররাতের খাবার। সুবহে সাদিকের কাছাকাছি সময়ে যে আহার করা হয়, একে শরিয়তের পরিভাষায় সেহরি বলা হয়।
১৩ ঘণ্টা আগেরোজার মৌখিক নিয়ত যেকোনো ভাষায় হতে পারে। একান্ত আরবি ভাষায় হওয়া জরুরি নয়। (জাওয়াহিরুল ফিকহ: ১ / ৩৭৮)। বরং যারা আরবি বোঝে না, তাদের জন্য আরবিতে নিয়ত না করাই কর্তব্য। কারণ নিয়ত পড়া জরুরি নয়, নিয়ত করাই জরুরি।
১ দিন আগে