Ajker Patrika

রাতের মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত তাহাজ্জুদ

আমিনুল ইসলাম হুসাইনী
রাতের মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত তাহাজ্জুদ

সন্ধ্যার মুগ্ধতায় ভর করে পৃথিবীতে নেমে আসা রাত যেমন রহস্যময়, তেমনি সৌন্দর্যের আধার। সেই সৌন্দর্যের মধ্যে রুপালি আলোর পসরা সাজায় পূর্ণিমার চাঁদ। চাঁদের সেই নির্মল আলোর স্নিগ্ধতায় মোমিন বান্দার হৃদয়ে দুলে ওঠে প্রভু প্রেমের সবুজ চারা। তাই তো আল্লাহর প্রিয় বান্দারা সিজদায় লুটিয়ে পড়েন প্রভুর কুদরতি পায়।

নির্জন রাতের ইবাদত তাহাজ্জুদ। এই ইবাদত মোমিনকে এনে দেয় বিজয়ীর সম্মান। যেমন এনে দিয়েছিল বদরের মুজাহিদদের। বদরের ময়দানে সত্যের ফুল ফোটাতে মুজাহিদরা রাতের শেষ প্রহরে জেগে উঠতেন। চোখের পানি ফেলে কাঁদতেন আর আল্লাহ তাআলার কাছে গুনাহ মাফ চাইতেন। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে তা উল্লেখ করে বলেন, ‘এসব লোক অগ্নিপরীক্ষায় অটল ও অবিচল, সত্যের অনুরাগী, পরম অনুগত, আল্লাহর পথে সম্পদ উৎসর্গকারী এবং রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহর কাছে ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থী।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৭)

আফসোস! আমরা এই রাতকে ইবাদতের জায়নামাজ না বানিয়ে পাপের নিয়ামক বানিয়ে ফেলছি। রাত যত গভীর হয়, আমাদের পাপাচারও ততই বেগবান হয়। অহেতুক গল্পগুজব, পরনিন্দা বা অনৈতিক কথাবার্তায় লিপ্ত থেকে ইবাদতের সুবর্ণ সুযোগটি নষ্ট করছি। বন্ধুদের সঙ্গে অযথা রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়ে রাত পার করে দিচ্ছে। আর যারা বাইরে বেরোয় না, তারা ঘরে বসে ইন্টারনেটে সারা দুনিয়া চষে বেড়ায়। অথচ আল্লাহ তাআলা এই রাতকে ঘুম অথবা স্রষ্টাকে নিজের করে নেওয়ার মাধ্যম বানিয়েছেন। তাই তো তিনি রাতের ভাঁজে ভাঁজে এত সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃজনে এবং দিন-রাতের পরিবর্তনে সুস্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে জ্ঞানীদের জন্য। যারা দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে আল্লাহর জিকির করে এবং নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃজন নিয়ে চিন্তাভাবনা করে। (তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বীকার করতে বাধ্য হয়) হে আমার প্রতিপালক, আপনি এগুলো বৃথা সৃষ্টি করেননি। আপনি বৃথা সৃষ্টি করার দোষ থেকে পবিত্রতম।’ (সুরা আল ইমরান, আয়াত: ১৯০, ১৯১, ১৯২)

আমরা কি পারি না এই নির্জন রাতটি শুধু ঘুম কিংবা পাপাচারে নষ্ট না করে মহান আল্লাহর ইবাদতে কাটাতে? রাতের শেষ প্রহরে দু-চার রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে? এখন তো রাত যথেষ্ট বড় এবং নাতিশীতোষ্ণ। ইচ্ছে করলেই আমরা পরিমাণমতো ঘুমিয়েও তাহাজ্জুদে অভ্যস্ত হতে পারি। রাত ১০টায় ঘুমিয়ে পড়লে রাত ৪টায় সহজেই জাগা যায়। এতে ৬ ঘণ্টা ঘুমও হবে। আবার তাহাজ্জুদও পড়া যাবে। তাহাজ্জুদের ফজিলত বর্ণনাতীত। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ নামাজ কায়েম করুন; এটা আপনার জন্য এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, আপনার প্রতিপালক আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন মাকামে মাহমুদে (প্রশংসিত স্থানে)।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ৭৯)

তাহাজ্জুদ নামাজ হলো আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের সুন্নত। আল্লাহ তাআলার প্রিয় বান্দাদের অভ্যাস। আল্লাহ তাআলার সঙ্গে বান্দার গভীর সম্পর্ক স্থাপন তথা নৈকট্য ও সন্তোষ অর্জনের অন্যতম পন্থা। তাই তো রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহপ্রেমীদের প্রেমও গভীর হতে থাকে। তারা নির্জনে রাতের আঁধারে প্রভুর কুদরতি পায়ে লুটিয়ে পড়ে ক্ষমা ভিক্ষা চান নিজ নিজ অপরাধ ও অক্ষমতার।

এই প্রেমময় ইবাদতের মাধ্যমেই তারা আল্লাহর প্রিয় বান্দায় পরিণত হন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা, যারা তাদের প্রতিপালকের দরবারে সেজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত: ৬৩-৬৪)

আসুন, আমরা অহেতুক গল্প, ঘুম আর পাপাচারে রাত না কাটিয়ে ইবাদতে মশগুল হই। এটাই তো মোমিনদের বৈশিষ্ট্য। কারণ প্রেমিক ও প্রেমাস্পদের অন্তর্নিহিত গোপন কথার জন্য রাতের এই নির্জনতা থেকে অধিক উপযোগী সময় আর হয় না। তাই এমন তারাভরা রাতে রুপালি চাঁদের ইন্দ্রজালে মুগ্ধ হয়ে এই রাত এবং রাতের প্রকৃতির সৃষ্টিকর্তার দরবারে লুটিয়ে পড়ি।

লেখক: ইমাম ও খতিব, কসবা রেল স্টেশন জামে মসজিদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত