রোজার নিয়তের গুরুত্ব ও বিধান

মুফতি আবু দারদা
Thumbnail image

আরবি নিয়ত শব্দের অর্থ সংকল্প করা, মনস্থির করা, ইচ্ছা করা, সিদ্ধান্ত নেওয়া ইত্যাদি। নিয়ত মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছা ও সিদ্ধান্তের সঙ্গে সম্পর্কিত। ইসলামে নিয়তের গুরুত্ব অপরিসীম। হাদিসে আছে, ‘প্রত্যেক আমল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।’ (বুখারি, হাদিস: ১)

এ হাদিসের মর্ম হলো, নিয়ত শুদ্ধ হলে আমলের সওয়াব মিলবে; আর অশুদ্ধ হলে মিলবে না। তাই মুমিনের প্রতিটি ইবাদত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের সংকল্পের মাধ্যমে শুরু করা জরুরি। মুসলিম স্কলারদের মতে, রমজানের রোজার ক্ষেত্রে নিয়ত করা আবশ্যক। 

রোজার নিয়ত করার অর্থ হলো, সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকার দৃঢ় সংকল্প করা। মনে মনে রোজা রাখার সিদ্ধান্ত নিলেই নিয়ত হয়ে যাবে। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় যে, সে আগামীকাল রোজা রাখবে, তার নিয়ত হয়ে গেছে।’ (আল-ইখতিয়ারাত, পৃ.১৯১) তবে মৌখিকভাবে নিয়ত করা জরুরি না হলেও বলাটা উত্তম। (ফাতাওয়াতে শামি: ৩ / ৩৪৫) কারণ, তাতে মনস্থির হয় এবং অন্তর প্রশান্ত হয়। আর রোজার মৌখিক নিয়ত যেকোনো ভাষায়-ই হতে পারে। একান্ত আরবি ভাষায় হওয়া জরুরি নয় (জাওয়াহিরুল ফিকহ: ১ / ৩৭৮), বরং যারা আরবি বোঝে না, তাদের জন্য আরবিতে নিয়ত না করাই কর্তব্য। কারণ, নিয়ত পড়া জরুরি নয়, নিয়ত করাই জরুরি। 

রমজানের রোজার নিয়ত রাতে কিংবা ফজরের আগে করতে হয়। উম্মুল মুমিনিন হাফসা (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের আগে রোজা রাখার নিয়ত করবে না, তার রোজা (পূর্ণাঙ্গ) হবে না।’ (আবু দাউদ: ১ / ৩৩৩) অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ফজরের আগে রোজার নিয়ত পাকাপোক্ত করেনি, তার রোজা হয়নি।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৭৩০) তবে কেউ সাহরি খেতে জাগলে এবং রোজা রাখার মানসে সাহরি গ্রহণ করলে সেটিকেই রোজার নিয়ত হিসেবে ধরে নেওয়া হবে। 

একান্তই ফজরের আগে রোজার নিয়ত করতে না পারলে এবং রোজা রাখার উদ্দেশ্যে সাহরিও খেতে না পারলে সূর্য ঢলার প্রায় এক ঘণ্টা আগে নিয়ত করাও জায়েজ। সালামা ইবনুল আকওয়া (রা.) বলেন, (আশুরার রোজা যখন ফরজ ছিল তখন) মহানবী (সা.) আসলাম গোত্রের একজন ব্যক্তিকে ঘোষণা করতে বললেন, ‘যে সকাল থেকে কিছু খায়নি, সে বাকি দিন রোজা রাখবে। আর যে খেয়েছে, সেও বাকি দিন রোজা রাখবে। কারণ, আজ আশুরা দিবস।’ (বুখারি, হাদিস: ২০০৭) 

প্রত্যেক রোজার জন্য পৃথক নিয়ত করা জরুরি। প্রথম রোজায় পুরো মাসের নিয়ত করা যথেষ্ট নয়। (ফাতাওয়ায়ে রহিমিয়া: ২ / ১৫) আর যে ব্যক্তি পুরো রমজানই রোজা রাখা বা না রাখার কিছুই নিয়ত করেনি, তাহলে সে কাজা করে নেবে। (তাতারখানিয়া: ২ / ২৭১) 

অনেক স্কলারের মতে, নিয়ত ছাড়া রোজা শুদ্ধ হয় না। তাই রোজার নিয়তের ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। 

লেখক: ইসলামবিষয়ক গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত