মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক কোটা পদ্ধতির পক্ষে দলিল দিতে গিয়ে দাবি করেছেন, পবিত্র কোরআনের সুরা আনফালে উল্লেখ আছে, বিজয়ী বাহিনী দেশের সম্পদ, চাকরি, অর্থ ও ভূখণ্ডের ৮০ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ পাবে, বাকি ২০ শতাংশ থাকবে দুস্থ-এতিমদের জন্য। পবিত্র কোরআনে কি আসলেই এমন কথা বলা হয়েছে? বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
মহি উদ্দিন, নেত্রকোনা
অধ্যাপক সাহেব বিষয়টি ভুলভাবে উপস্থাপন করেছেন। সুরা আনফালের গনিমত তথা যুদ্ধলব্ধ সম্পদ বণ্টন সম্পর্কিত আয়াতকে তিনি কোটা পদ্ধতির জন্য প্রয়োগ করেছেন, যা সঠিক নয়। নিচে কারণ ব্যাখ্যা করা হলো—
গনিমতের আয়াত
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর জেনে রাখো, কোনো বস্তুসামগ্রীর মধ্য থেকে যা কিছু তোমরা গনিমত হিসেবে পাবে, তার এক-পঞ্চমাংশ হলো আল্লাহর জন্য, রাসুলের জন্য, তাঁর নিকট আত্মীয়স্বজনের জন্য এবং এতিম-অসহায় ও মুসাফিরদের জন্য; যদি তোমাদের বিশ্বাস থাকে আল্লাহর ওপর এবং সে বিষয়ের ওপর, যা আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছি...।’ (সুরা আনফাল: ৪১)
গনিমতের সংজ্ঞা
গনিমত হলো সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে শত্রুবাহিনী থেকে অধিকার করা বস্তুগত সম্পদ, যেমন—টাকাপয়সা, স্বর্ণরৌপ্য, গবাদিপশু, খাবার, যুদ্ধের সরঞ্জাম, ভূমি ইত্যাদি। সুতরাং, কোনো সম্পদ গনিমত সাব্যস্ত হওয়ার জন্য শর্ত হলো, প্রথমত তা বস্তুগত সম্পদ হতে হবে। দ্বিতীয়ত, তা সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে অধিকার করতে হবে। চুক্তির ভিত্তিতে কোনো অঞ্চল বিজিত হলে ওই অঞ্চলের সম্পদ গনিমত হিসেবে সাব্যস্ত হবে না।
গনিমত বণ্টনের নিয়ম
প্রথমে সম্পূর্ণ গনিমতকে পাঁচ ভাগ করবে। তারপর এক-পঞ্চমাংশকে আবার পাঁচ ভাগ করে তা থেকে এক ভাগ সাধারণ নাগরিকের কল্যাণমূলক কাজের জন্য রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হবে, দ্বিতীয় ভাগ রাসুল (সা.)-এর সেই সব নিকটাত্মীয়কে দেওয়া হবে, যাদের জাকাত দেওয়া যায় না। তৃতীয় ভাগ এতিমদের, চতুর্থ ভাগ সাধারণ গরিব-মিসকিনদের এবং পঞ্চম ভাগটি মুসাফিরদের জন্য। বাকি চার-পঞ্চমাংশ বিজয়ী যোদ্ধাদের মধ্যে যুদ্ধক্ষেত্রে ভূমিকা অনুপাতে ভাগ করে দেওয়া হবে। অবশ্য বিজিত অঞ্চলের জমির ক্ষেত্রে তা বণ্টন না করে সেখানকার অধিবাসীদের মধ্যে তা বণ্টন করে দিয়ে তাদের করের আওতায় আনার নজিরও আছে।
উপসংহার
ওপরের আলোচনা থেকে বোঝা যায়, সুরা আনফালের ওই আয়াতে গনিমত শব্দ থেকে শুধু যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বস্তুগত সম্পদকেই বোঝানো হয়েছে। এটি সরকারি চাকরিতে প্রাধান্য ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বা কোটা পদ্ধতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তবে যোদ্ধাদের বিশেষ মর্যাদা ইসলামে স্বীকৃত। কায়েস থেকে বর্ণিত, বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবিদের জন্য (বাৎসরিক) ৫ হাজার (দিরহাম) করে ভাতা নির্ধারিত ছিল। ওমর (রা.) বলেছেন, ‘অবশ্যই আমি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবিদের পরবর্তীদের চেয়ে অধিক মর্যাদা প্রদান করব।’ (বুখারি: ৪০২২) তবে একান্ত অক্ষম না হলে নিছক যোদ্ধাদের বংশধর হওয়ার কারণে প্রজন্মের পর প্রজন্ম রাষ্ট্রীয় সুবিধা পাওয়ার নজির ইসলামের ইতিহাসে পাওয়া যায় না।
সূত্র: সুরা আনফাল: ৪১; বুখারি: ২৯৫৭,৪০২২; ফাতহুল বারি: ৬ / ২৫৯; মাউসুআতুল ফিকহিল ইসলামি, পৃ. ৪৯৮-৪৯৯।
উত্তর দিয়েছেন: শিক্ষক ও ফতোয়া গবেষক
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক কোটা পদ্ধতির পক্ষে দলিল দিতে গিয়ে দাবি করেছেন, পবিত্র কোরআনের সুরা আনফালে উল্লেখ আছে, বিজয়ী বাহিনী দেশের সম্পদ, চাকরি, অর্থ ও ভূখণ্ডের ৮০ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ পাবে, বাকি ২০ শতাংশ থাকবে দুস্থ-এতিমদের জন্য। পবিত্র কোরআনে কি আসলেই এমন কথা বলা হয়েছে? বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
মহি উদ্দিন, নেত্রকোনা
অধ্যাপক সাহেব বিষয়টি ভুলভাবে উপস্থাপন করেছেন। সুরা আনফালের গনিমত তথা যুদ্ধলব্ধ সম্পদ বণ্টন সম্পর্কিত আয়াতকে তিনি কোটা পদ্ধতির জন্য প্রয়োগ করেছেন, যা সঠিক নয়। নিচে কারণ ব্যাখ্যা করা হলো—
গনিমতের আয়াত
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর জেনে রাখো, কোনো বস্তুসামগ্রীর মধ্য থেকে যা কিছু তোমরা গনিমত হিসেবে পাবে, তার এক-পঞ্চমাংশ হলো আল্লাহর জন্য, রাসুলের জন্য, তাঁর নিকট আত্মীয়স্বজনের জন্য এবং এতিম-অসহায় ও মুসাফিরদের জন্য; যদি তোমাদের বিশ্বাস থাকে আল্লাহর ওপর এবং সে বিষয়ের ওপর, যা আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছি...।’ (সুরা আনফাল: ৪১)
গনিমতের সংজ্ঞা
গনিমত হলো সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে শত্রুবাহিনী থেকে অধিকার করা বস্তুগত সম্পদ, যেমন—টাকাপয়সা, স্বর্ণরৌপ্য, গবাদিপশু, খাবার, যুদ্ধের সরঞ্জাম, ভূমি ইত্যাদি। সুতরাং, কোনো সম্পদ গনিমত সাব্যস্ত হওয়ার জন্য শর্ত হলো, প্রথমত তা বস্তুগত সম্পদ হতে হবে। দ্বিতীয়ত, তা সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে অধিকার করতে হবে। চুক্তির ভিত্তিতে কোনো অঞ্চল বিজিত হলে ওই অঞ্চলের সম্পদ গনিমত হিসেবে সাব্যস্ত হবে না।
গনিমত বণ্টনের নিয়ম
প্রথমে সম্পূর্ণ গনিমতকে পাঁচ ভাগ করবে। তারপর এক-পঞ্চমাংশকে আবার পাঁচ ভাগ করে তা থেকে এক ভাগ সাধারণ নাগরিকের কল্যাণমূলক কাজের জন্য রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হবে, দ্বিতীয় ভাগ রাসুল (সা.)-এর সেই সব নিকটাত্মীয়কে দেওয়া হবে, যাদের জাকাত দেওয়া যায় না। তৃতীয় ভাগ এতিমদের, চতুর্থ ভাগ সাধারণ গরিব-মিসকিনদের এবং পঞ্চম ভাগটি মুসাফিরদের জন্য। বাকি চার-পঞ্চমাংশ বিজয়ী যোদ্ধাদের মধ্যে যুদ্ধক্ষেত্রে ভূমিকা অনুপাতে ভাগ করে দেওয়া হবে। অবশ্য বিজিত অঞ্চলের জমির ক্ষেত্রে তা বণ্টন না করে সেখানকার অধিবাসীদের মধ্যে তা বণ্টন করে দিয়ে তাদের করের আওতায় আনার নজিরও আছে।
উপসংহার
ওপরের আলোচনা থেকে বোঝা যায়, সুরা আনফালের ওই আয়াতে গনিমত শব্দ থেকে শুধু যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বস্তুগত সম্পদকেই বোঝানো হয়েছে। এটি সরকারি চাকরিতে প্রাধান্য ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বা কোটা পদ্ধতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তবে যোদ্ধাদের বিশেষ মর্যাদা ইসলামে স্বীকৃত। কায়েস থেকে বর্ণিত, বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবিদের জন্য (বাৎসরিক) ৫ হাজার (দিরহাম) করে ভাতা নির্ধারিত ছিল। ওমর (রা.) বলেছেন, ‘অবশ্যই আমি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবিদের পরবর্তীদের চেয়ে অধিক মর্যাদা প্রদান করব।’ (বুখারি: ৪০২২) তবে একান্ত অক্ষম না হলে নিছক যোদ্ধাদের বংশধর হওয়ার কারণে প্রজন্মের পর প্রজন্ম রাষ্ট্রীয় সুবিধা পাওয়ার নজির ইসলামের ইতিহাসে পাওয়া যায় না।
সূত্র: সুরা আনফাল: ৪১; বুখারি: ২৯৫৭,৪০২২; ফাতহুল বারি: ৬ / ২৫৯; মাউসুআতুল ফিকহিল ইসলামি, পৃ. ৪৯৮-৪৯৯।
উত্তর দিয়েছেন: শিক্ষক ও ফতোয়া গবেষক
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নতুন কাপড় কেনা ও তা পরিধান করা একটি সাধারণ ঘটনা। কেউ ঈদের জন্য কেনে, কেউ বিয়ে-সাদির জন্য, কেউ বা নিজের প্রয়োজনে। নতুন কাপড় কিনে পরিধান করার সময় দোয়া পড়লে আল্লাহর বিশেষ রহমত পাওয়া যায়।
৫ ঘণ্টা আগেসপ্তাহের দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন হচ্ছে শ্রেষ্ঠতম ও সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ দিন। এই দিনটি মুসলমানদের জন্য একটি সাপ্তাহিক ঈদের মতো, যা আত্মশুদ্ধি, ইবাদত এবং কল্যাণ অর্জনের বিশেষ সুযোগ এনে দেয়। এই বরকতময় দিনে কী কী করণীয় তা জানা এবং তা মেনে চলা একজন মুমিনের দায়িত্ব।
১ দিন আগেমানুষের জীবনে সবচেয়ে কষ্টকর মুহূর্তগুলোর একটি হলো আপনজন হারানোর বেদনা। এমন শোকের সময় মানুষ থাকে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত, দুর্বল ও অনেকটা একা। ঠিক তখনই সে আশায় থাকে কারও সহানুভূতির, সান্ত্বনার কিংবা একটু অনুভব করার মতো মানবিক উপস্থিতির। এই বিপদ ও কষ্টের সময়টিতে...
১ দিন আগেহিজরি সনের দ্বিতীয় মাস সফর। জাহিলি যুগে এই মাসকে অশুভ, বিপৎসংকুল ও অলক্ষুনে মাস হিসেবে বিবেচনা করা হতো। মানুষ মনে করত, এ মাসে শুভ কিছু হয় না—বিয়ে করলে বিচ্ছেদ হয়, ব্যবসা করলে লোকসান হয়, রোগবালাই বাড়ে। এমনকি সফরকে বলা হতো ‘আস-সাফারুল মুসাফফার’, অর্থাৎ বিবর্ণ সফর মাস। কারণ তখন খরা ও খাদ্যসংকট দেখা...
১ দিন আগে