ড. মো. শাহজাহান কবীর
হিজরতের পর মহানবী (সা.) মদিনায় বসবাসরত সব গোত্রের মধ্যে সুশাসন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেন, যা ইতিহাসে ‘মদিনা সনদ’ নামে পরিচিত। মদিনা সনদে মোট ৬১টি ধারা ও উপধারা ছিল। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ধারা এখানে তুলে ধরা হলো—
» সনদে স্বাক্ষরকারী গোত্রগুলো রাষ্ট্রের অধীনে একটি সাধারণ জাতি গঠন করবে।
» হজরত মুহাম্মদ (সা.) রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান থাকবেন।
» কোনো গোত্র গোপনে কুরাইশদের সঙ্গে কোনো ধরনের চুক্তি করতে পারবে না। মদিনা বা মদিনাবাসীর বিরুদ্ধে কুরাইশদের কোনো ধরনের সহযোগিতা করতে পারবে না।
» মুসলিম, খ্রিষ্টান, ইহুদি, পৌত্তলিক ও অন্যান্য সম্প্রদায় ধর্মীয় ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবে। কেউ কারও ধর্মীয় কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।
» মদিনায় যেকোনো বহিরাক্রমণ রাষ্ট্রের জন্য বিপদ বলে গণ্য করতে হবে এবং সেই আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য সব সম্প্রদায়কে একজোট হয়ে অগ্রসর হতে হবে।
» রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষার ব্যবস্থা থাকবে।
» অসহায় ও দুর্বলকে সব সময় সাহায্য ও রক্ষা করতে হবে।
» সব ধরনের রক্তক্ষয়, হত্যা ও বলাৎকার নিষিদ্ধ করতে হবে এবং মদিনাকে পবিত্র নগরী বলে ঘোষণা করা হবে।
» একটি সম্প্রদায়ের কোনো সদস্য ব্যক্তিগত অপরাধ করলে তা ব্যক্তিগত অপরাধ হিসেবেই বিবেচিত হবে। তার জন্য পুরো সম্প্রদায়কে দায়ী করা যাবে না।
» মুসলমান, ইহুদি ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকজন পরস্পর বন্ধুসুলভ আচরণ করবে।
» রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিষ্পত্তির অধিকার থাকবে রাষ্ট্রপ্রধানের এবং তিনি হবেন প্রধান বিচারপতি।
» মহানবী (সা.)-এর অনুমতি ছাড়া মদিনাবাসী কারও বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারবে না।
» মুসলমানদের কেউ যদি অন্যায় কিংবা বিশ্বাসঘাতকতা করে, তবে সবাই মিলে তার বিরুদ্ধে যথোচিত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। নিজ সন্তান বা আত্মীয় হলেও এ ব্যাপারে তাকে ক্ষমা করা যাবে না।
মদিনা সনদ মদিনার সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও নাগরিক জীবনে বিরাট পরিবর্তন আনে। প্রথমত, এই সনদ মদিনায় রাজনৈতিক ঐক্য স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দ্বিতীয়ত, আল্লাহর রাসুলের দেওয়া নতুন সংবিধান অনুযায়ী এটি গৃহযুদ্ধ ও অনৈক্যের স্থলে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে। তৃতীয়ত, জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে মদিনার সব নাগরিককে এই সনদ সমান অধিকার দেয়। চতুর্থত, এটি মদিনার মুসলমান ও অমুসলমানদের মধ্যে সম্প্রীতি গড়ে তোলে এবং মুহাজিরদের মদিনায় বসবাস ও জীবিকা উপার্জনের ব্যবস্থা করে। পঞ্চমত, মদিনায় ইসলামের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ক্ষমতা বাড়ায়, যা নিয়মতান্ত্রিক ইসলামি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করে।
মদিনা সনদ মহানবী (সা.)-এর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, কূটনৈতিক দূরদর্শিতা ও অসাধারণ প্রতিভার পরিচয় বহন করে। তাঁর প্রণীত এই সনদে বহুজাতিক রাষ্ট্রের ধারণা, মানবাধিকার সুরক্ষা, আইনের শাসন, ধর্মীয় স্বাধীনতা, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও সহাবস্থানের বার্তা পাওয়া যায়। এই সনদ উদারতার ভিত্তিতে বৃহত্তর জাতি গঠনের পথ উন্মুক্ত করে, যা বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
মদিনা সনদ গোষ্ঠীগত চুক্তি হয়েও সর্বজনীনতা লাভ করেছে। এই চুক্তি উগ্র সাম্প্রদায়িকতা, গোত্রীয় দম্ভ, ধর্মবিদ্বেষ, অঞ্চলপ্রীতিসহ মানবতার অন্তরায় সব ধরনের প্রয়াস বন্ধ করে দেয় এবং নাগরিকদের ন্যায্য অধিকার সংরক্ষণ ও তাদের দায়িত্ব-কর্তব্যের বিবরণ দেয়। এই দলিল পর্যালোচনা করলে মহানবী (সা.)-এর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়।
মদিনা সনদ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা হিংসা-বিদ্বেষ, নৈরাজ্য, সংঘাত ও যুদ্ধবিগ্রহ বন্ধ করে যুদ্ধবাজ গোত্রগুলোর মধ্যে গড়ে তোলে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও ভালোবাসার বন্ধন। তাতে জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবার সমান অধিকার নিশ্চিত হয়। মদিনায় বসবাসরত সব জাতি-গোত্র এ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল, যার পরিপ্রেক্ষিতে মদিনায় একটি বহুজাতিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়। মদিনা সনদ সবার কাছে দারুণ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। এই সনদ সম্প্রীতি, সহাবস্থান ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার মাধ্যমে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার আদর্শ পথনির্দেশ।
লেখক: বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
হিজরতের পর মহানবী (সা.) মদিনায় বসবাসরত সব গোত্রের মধ্যে সুশাসন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেন, যা ইতিহাসে ‘মদিনা সনদ’ নামে পরিচিত। মদিনা সনদে মোট ৬১টি ধারা ও উপধারা ছিল। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ধারা এখানে তুলে ধরা হলো—
» সনদে স্বাক্ষরকারী গোত্রগুলো রাষ্ট্রের অধীনে একটি সাধারণ জাতি গঠন করবে।
» হজরত মুহাম্মদ (সা.) রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান থাকবেন।
» কোনো গোত্র গোপনে কুরাইশদের সঙ্গে কোনো ধরনের চুক্তি করতে পারবে না। মদিনা বা মদিনাবাসীর বিরুদ্ধে কুরাইশদের কোনো ধরনের সহযোগিতা করতে পারবে না।
» মুসলিম, খ্রিষ্টান, ইহুদি, পৌত্তলিক ও অন্যান্য সম্প্রদায় ধর্মীয় ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবে। কেউ কারও ধর্মীয় কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।
» মদিনায় যেকোনো বহিরাক্রমণ রাষ্ট্রের জন্য বিপদ বলে গণ্য করতে হবে এবং সেই আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য সব সম্প্রদায়কে একজোট হয়ে অগ্রসর হতে হবে।
» রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষার ব্যবস্থা থাকবে।
» অসহায় ও দুর্বলকে সব সময় সাহায্য ও রক্ষা করতে হবে।
» সব ধরনের রক্তক্ষয়, হত্যা ও বলাৎকার নিষিদ্ধ করতে হবে এবং মদিনাকে পবিত্র নগরী বলে ঘোষণা করা হবে।
» একটি সম্প্রদায়ের কোনো সদস্য ব্যক্তিগত অপরাধ করলে তা ব্যক্তিগত অপরাধ হিসেবেই বিবেচিত হবে। তার জন্য পুরো সম্প্রদায়কে দায়ী করা যাবে না।
» মুসলমান, ইহুদি ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকজন পরস্পর বন্ধুসুলভ আচরণ করবে।
» রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিষ্পত্তির অধিকার থাকবে রাষ্ট্রপ্রধানের এবং তিনি হবেন প্রধান বিচারপতি।
» মহানবী (সা.)-এর অনুমতি ছাড়া মদিনাবাসী কারও বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারবে না।
» মুসলমানদের কেউ যদি অন্যায় কিংবা বিশ্বাসঘাতকতা করে, তবে সবাই মিলে তার বিরুদ্ধে যথোচিত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। নিজ সন্তান বা আত্মীয় হলেও এ ব্যাপারে তাকে ক্ষমা করা যাবে না।
মদিনা সনদ মদিনার সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও নাগরিক জীবনে বিরাট পরিবর্তন আনে। প্রথমত, এই সনদ মদিনায় রাজনৈতিক ঐক্য স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দ্বিতীয়ত, আল্লাহর রাসুলের দেওয়া নতুন সংবিধান অনুযায়ী এটি গৃহযুদ্ধ ও অনৈক্যের স্থলে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে। তৃতীয়ত, জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে মদিনার সব নাগরিককে এই সনদ সমান অধিকার দেয়। চতুর্থত, এটি মদিনার মুসলমান ও অমুসলমানদের মধ্যে সম্প্রীতি গড়ে তোলে এবং মুহাজিরদের মদিনায় বসবাস ও জীবিকা উপার্জনের ব্যবস্থা করে। পঞ্চমত, মদিনায় ইসলামের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ক্ষমতা বাড়ায়, যা নিয়মতান্ত্রিক ইসলামি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করে।
মদিনা সনদ মহানবী (সা.)-এর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, কূটনৈতিক দূরদর্শিতা ও অসাধারণ প্রতিভার পরিচয় বহন করে। তাঁর প্রণীত এই সনদে বহুজাতিক রাষ্ট্রের ধারণা, মানবাধিকার সুরক্ষা, আইনের শাসন, ধর্মীয় স্বাধীনতা, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও সহাবস্থানের বার্তা পাওয়া যায়। এই সনদ উদারতার ভিত্তিতে বৃহত্তর জাতি গঠনের পথ উন্মুক্ত করে, যা বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
মদিনা সনদ গোষ্ঠীগত চুক্তি হয়েও সর্বজনীনতা লাভ করেছে। এই চুক্তি উগ্র সাম্প্রদায়িকতা, গোত্রীয় দম্ভ, ধর্মবিদ্বেষ, অঞ্চলপ্রীতিসহ মানবতার অন্তরায় সব ধরনের প্রয়াস বন্ধ করে দেয় এবং নাগরিকদের ন্যায্য অধিকার সংরক্ষণ ও তাদের দায়িত্ব-কর্তব্যের বিবরণ দেয়। এই দলিল পর্যালোচনা করলে মহানবী (সা.)-এর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়।
মদিনা সনদ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা হিংসা-বিদ্বেষ, নৈরাজ্য, সংঘাত ও যুদ্ধবিগ্রহ বন্ধ করে যুদ্ধবাজ গোত্রগুলোর মধ্যে গড়ে তোলে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও ভালোবাসার বন্ধন। তাতে জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবার সমান অধিকার নিশ্চিত হয়। মদিনায় বসবাসরত সব জাতি-গোত্র এ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল, যার পরিপ্রেক্ষিতে মদিনায় একটি বহুজাতিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়। মদিনা সনদ সবার কাছে দারুণ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। এই সনদ সম্প্রীতি, সহাবস্থান ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার মাধ্যমে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার আদর্শ পথনির্দেশ।
লেখক: বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
অগ্নিকাণ্ড মানবজীবনে একটি অপ্রত্যাশিত ও ভয়ংকর দুর্যোগ, যা মুহূর্তেই জান ও মালের অপূরণীয় ক্ষতিসাধন করে। এমন চরম বিপদের মুহূর্তে একজন মুমিনের কর্তব্য হলো, আগুন নেভানোর পার্থিব চেষ্টার পাশাপাশি আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল করা।
৭ ঘণ্টা আগেনামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।
১৩ ঘণ্টা আগেপবিত্র কোরআনের অন্যতম ছোট ও তাৎপর্যপূর্ণ সুরা হলো সুরা ইখলাস। মাত্র চার আয়াতবিশিষ্ট এই সুরাটির অন্তর্নিহিত ফজিলত ও গুরুত্ব অপরিসীম। ইসলামি শিক্ষার আলোকে এই সুরার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার একত্ববাদ (তাওহিদ), অদ্বিতীয়তা ও অনন্য মহিমা সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
১ দিন আগেআল্লাহর পথে মানুষকে আহ্বানের পথ বড়ই বন্ধুর। এ পথে বিপদ-আপদের কমতি নেই। আল্লাহর একান্ত অনুগ্রহ না থাকলে এ পথে টিকে থাকা মুশকিল। আল্লাহর পথে আহ্বানকারী বা দায়ির কাজ হলো মানুষকে প্রবৃত্তির দাসত্ব, বর্ণবৈষম্য ও ঐতিহ্য-আভিজাত্য থেকে মুক্ত হওয়া এবং আল্লাহর আনুগত্যে নিজেকে সঁপে দেওয়ার আহ্বান জানানো।
১ দিন আগে