Ajker Patrika

সরকারকে প্রান্তিক মানুষের জীবিকার ব্যবস্থা করতে হবে

ফারুক মেহেদী
আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৮: ৩১
সরকারকে প্রান্তিক মানুষের জীবিকার ব্যবস্থা করতে হবে

আজকের পত্রিকা: অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে সরকার এখন কী করতে পারে?
ড. সেলিম জাহান: প্রথমত, জনস্বাস্থ্যের দিক বিবেচনায় সবাইকে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। দুটো টিকা দেওয়ার পর কারও কোভিড হলেও এর প্রভাবটা কম হয়। সুতরাং মানুষের জীবন বাঁচাতে হবে। দ্বিতীয়ত, স্বল্প মেয়াদে দিনমজুর, স্বল্প আয়ের মানুষ, দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষ, তাঁদের রুটি-রোজগারের ব্যবস্থাটাকে বজায় রাখতে হবে। এ জন্য সরকারি উদ্যোগ, প্রণোদনার প্রয়োজন হবে। পাশাপাশি তাঁরা যে খাতে কাজ করে, বিশেষ করে কৃষি, অপ্রাতিষ্ঠানিক বা শিল্প খাত–সেখানে প্রণোদনা দিয়ে তাঁদের জীবিকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, এই করোনাকালে এই শ্রেণির মানুষের সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে। তাঁদের কোনো সঞ্চয় নেই, তাঁরা দিনে আনেন, দিনে খান।

আজকের পত্রিকা: প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে সরকারের পদক্ষেপ কেমন হওয়া উচিত?
ড. সেলিম জাহান: মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে আমাদের প্রবৃদ্ধির হারটা বজায় রাখতে হবে। করোনায় সারা বিশ্বের প্রবৃদ্ধিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই তুলনায় আমি মনে করি, বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধির হার অনেকটাই ঠেকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এখন এ প্রবৃদ্ধির হার বজায় রাখার কৃষিকে সামনে নিয়ে আসতে হবে। সেটা করতে হবে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য। প্রবৃদ্ধির হার বজায় রাখতে যে সমস্ত জায়গায় আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়, সেদিকেও নজর দিতে হবে।

আজকের পত্রিকা: আর কোন বিষয়ে সরকারের মনোযোগ দিতে হবে?
ড. সেলিম জাহান: পোশাকশিল্পের প্রসারে বহির্বিশ্বের সঙ্গে আলোচনা চালাতে হবে। কারণ, এই করোনাকালে বহু দেশ এমন ভাবে মার খেয়েছে, তারা হয়তো পোশাকশিল্পে আর ফিরতে পারবে না। সুতরাং এই সুযোগটা নিতে হবে। বহু পদক্ষেপের পরেও বহু মানুষ এই প্রবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে আসবে না। এই জন্য প্রতিবন্ধী ও প্রান্তিক মানুষদের সামাজিক সুরক্ষা বলয়ে আনতে হবে। করোনায় জনস্বাস্থ্যের পাশাপাশি স্বল্প মেয়াদে সামাজিক সুরক্ষা ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষদের রক্ষা করতে হবে।

আজকের পত্রিকা: সহায়তা দিতে ক্ষতিগ্রস্তদের চিহ্নিত করার কাজটি কীভাবে হবে?
ড. সেলিম জাহান: ক্ষতির একটা মূল্যায়ন করতে হবে। এর মাধ্যমে আমাদের অসুবিধা ও প্রতিবন্ধকতাটা কোথায় তা জানা যাবে। এটা বিবিএস করতে পারে। তবে তাদের অনেক ধাপ পার হতে হয় বলে, তাতে অনেক সময় লেগে যাবে। তত দিনে করোনাও প্রায় শেষ হয়ে যাবে। সে জন্য দ্রুত বা ত্বরিত কতগুলো সমীক্ষা করা যেতে পারে। ত্বরিত সমীক্ষায় সরকারসহ তিনটা গোষ্ঠীকে আমরা কাজে লাগাতে পারি। সমীক্ষার ভিত্তিতে নীতিমালাটা হবে।

আজকের পত্রিকা: সরকারের পাশাপাশি সমীক্ষায় বেসরকারি খাত থাকতে পারে কি না?
ড. সেলিম জাহান: যেহেতু ত্বরিত সমীক্ষা, তাই কতগুলো গ্রুপের তাদের মূল্যায়নের ভিত্তিতে আমরা এক ধরনের সার্বিক মূল্যায়নে আসতে পারব। এ কাজে ব্র্যাকের একটা সমীক্ষা আছে। তেমনিভাবে সিপিডির একটি সমীক্ষা এবং ইউনেসকোর একটি সমীক্ষা আছে। এখন বেসরকারি সংস্থায় যারা কাজ করেছে, তাদের নিয়ে আসা দরকার। এর পাশাপাশি গণ্যমাধ্যমকে ব্যবহার করতে হবে। এই সবগুলোর সমন্বয়ে যদি একটা ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তাহলে আমি মনে করি, সর্বাঙ্গ সত্য সমীক্ষা না হলেও একটা বাস্তবচিত্র পাওয়া যাবে। 

আজকের পত্রিকা: সমীক্ষার পর এর ফলাফলের বাস্তবায়ন কীভাবে হবে?
ড. সেলিম জাহান: মূল্যায়নের ফলাফল পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। প্রণোদনা তো আগেও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দেখা গেছে যে, প্রণোদনার সুফল বড় শিল্পপতি আর পোশাকশিল্পের মালিকেরা পেয়েছেন। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তারা ঠিকমতো পাননি। এটা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। আর সংসদীয় কমিটি করে এই কোভিডকালে সাধারণ দরিদ্র মানুষকে কীভাবে ঋণ দেওয়া যায় সে বিষয়ে দলমত-নির্বিশেষে সংসদে আলোচনা করা যায়। না হলে আমরা যত কথাই বলি না কেন, সামাজিক ন্যায্যতার বিষয়টি বাস্তব রূপ পাবে না।

আজকের পত্রিকা: এরপরও কী কী চ্যালেঞ্জ থাকবে যা সরকারকে মোকাবিলা করতে হবে?
ড. সেলিম জাহান: টিকাদান কর্মসূচিকে সর্বজনীন করতে হবে। এখানে কিছু অব্যবস্থাপনা রয়েছে। সবার কাছে টিকা যাচ্ছে না। আর বাংলাদেশ যেহেতু উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে এখন অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করছে, সেহেতু বিভিন্ন দেশে আমাদের প্রতিনিধিরা, কোভিড কীভাবে প্রতিহত করতে পারি সে সম্পর্কে আলোচনা করবে। প্রতিটা দেশকে অন্য দেশের সমস্যাও দেখতে হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত