Ajker Patrika

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

এবারও ধনী-গরিবের লড়াই

জাহীদ রেজা নূর, নিউইয়র্ক থেকে
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৯: ৪২
এবারও ধনী-গরিবের লড়াই

আর মাত্র এক দিন পরই মার্কিন দেশে নির্বাচন। আগাম ভোট যাঁরা দিয়েছেন, তাঁরা এখন ঝাড়া হাত-পা। কিন্তু যাঁরা আগাম ভোট দেননি, ভোটের দিন তাঁদের ভোটদানের পরই কেবল বোঝা যাবে কে হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। একটি ভোট না দেওয়া মানে প্রতিপক্ষকে জয়ের দিকে আরেকটু এগিয়ে দেওয়া। যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী বাঙালিরা একসময় মূলত ডেমোক্র্যাটদেরই বেশি ভোট দিত। এখন দিন পাল্টেছে। রিপাবলিকানদের সমর্থক বাঙালিদেরও দেখা মিলছে। তবে অনেকেই বলছেন, ডেমোক্র্যাট আর রিপাবলিকানদের মধ্যে খুব বড় কোনো পার্থক্য নেই। রিপাবলিকানরা অনেক বেশি ধনীবান্ধব। বিশেষ করে ট্রাম্প তো ধনীদের জন্য বিশেষ কর সুবিধা দেবেন বলে ঘোষণা করে বসে আছেন। সে তুলনায় ডেমোক্র্যাটরা ক্ষমতায় এলে গরিব মানুষের কিছুটা সুবিধা হয় বলে মনে করে থাকেন অনেকে। কিন্তু সেটা জনজীবনে কতটা প্রভাব ফেলে, তা প্রশ্নসাপেক্ষ।

এবার নানা কারণে দ্রব্যমূল্য যেভাবে বেড়েছে, তাতে ডেমোক্র্যাটদের ব্যাপারে নাখোশ হতে পারত খেটে খাওয়া মানুষ। বাইডেনের ওপর ভরসাও কমে যাচ্ছিল তাদের। প্রার্থী পাল্টে কমলা হ্যারিসকে সামনে এনে ডেমোক্র্যাটরা লড়াইয়ে ভালোভাবেই ফিরে এসেছে। সে সময় জরিপগুলোয় দেখা যাচ্ছিল কমলার বিজয়ের পাল্লা ভারী হচ্ছে। কিন্তু ভোটের ঠিক আগের সময়টিতে জরিপগুলোয় দেখা গেল প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে পঞ্চাশ-পঞ্চাশ হয়ে গেছে। ডেমোক্র্যাট শিবিরে আবার মেঘ এসে ভর করল তখন। কিন্তু ডেমোক্র্যাটদের হাতে ট্রাম্পকার্ড তুলে দিলেন স্বয়ং ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকেরাই। কীভাবে তা ঘটল, সে কথাও জগৎ জেনে গেছে এত দিনে।

এই নিউইয়র্কের বিখ্যাত ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনেই ঘটেছিল সেই অঘটন। হ্যাঁ, সেই ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনের কথাই বলছি, যেখানে ১৯৭১ সালের ১ আগস্ট বসেছিল ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর আসর। রবিশঙ্কর ও জর্জ হ্যারিসন তাঁদের সাংগীতিক যুগলবন্দীর মাধ্যমে পৃথিবীবাসীর সঙ্গে পরিচয় ঘটিয়েছিলেন বাংলাদেশের। ২৭ অক্টোবর সেখানে ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী সভা। সে সভায় পুয়ের্তোরিকা নিয়ে অকথা বলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিপদ ডেকে এনেছেন একজন কৌতুকাভিনেতা, টনি হিঞ্চক্লিফ যাঁর নাম।

নির্বাচনের মাত্র কয়েক দিন আগে যখন সমানে সমানে চলছিল কমলা আর ট্রাম্পের প্রচারাভিযান, তখন টনির এই বেরসিক মন্তব্য আবার চাঙা করে দিয়েছে কমলার শিবির। টনি পুয়ের্তোরিকোকে ভাসমান জঞ্জালের দ্বীপ বা ভাসমান বর্জ্যে ভরা দ্বীপ বলে উল্লেখ করেছেন। পুয়ের্তোরিকো যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি দ্বীপ। সেই দ্বীপকে নিয়ে এ রকম মন্তব্য করায় স্বভাবতই চটেছে দেশের মানুষ। অশালীন মন্তব্যের পরপরই পুয়ের্তোরিকো থেকে আসা তিনজন শক্তিশালী মার্কিন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জেনিফার লোপেজ, ব্যাড বানি ও রিকি মার্টিন কমলার পক্ষে তাঁদের সমর্থন জানান। প্রকাশ্যেই অনেক ডেমোক্র্যাট সদস্য এবং রিপাবলিকান সদস্য এই ঘটনার সমালোচনা করেছেন। এই ঘটনা নির্বাচনে একটি নিয়ামক ঘটনা হয়ে উঠতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।

আটলান্টা থেকে সাত দিনের জন্য নিউইয়র্কে এসেছে এক বাঙালি পরিবার। প্রায় ৩০ বছর এ দেশেই তাঁদের বসবাস। কিন্তু এবারই প্রথম পৃথিবীর রাজধানী নামে খ্যাত নিউইয়র্কে এসেছেন তাঁরা। একটি এয়ারবিএনবি ভাড়া করেছেন। নির্বাচনের পরদিন তাঁরা আটলান্টায় ফিরবেন। পরিবারের কর্তা জানালেন, আটলান্টায় তাঁরা আগাম ভোট দিয়ে এসেছেন। ভোটটা এবার দিতেই হতো। নিজের পছন্দের প্রার্থীকে প্রেসিডেন্ট পদে দেখতে চাইলে ভোটকেন্দ্রে যেতে হবে। আগাম ভোট জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সেটাই কাজে লাগিয়েছে তিন সদস্যের এই পরিবার। অনেকেই বলছেন, এবারের নির্বাচনী লড়াইটা হবে দেখার মতো। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার জন্য এবার অনেক বেশি ভোটার ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেন বলে মনে করছেন বুদ্ধিজীবী মহল। ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে বহু মার্কিনের রয়েছে অনীহা। সেই অনীহা কাটিয়ে ওঠার জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন প্রার্থীরা।

কমলা হ্যারিসের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছেন রিপাবলিকান সমর্থকদের একটি গুরুত্বপূর্ণ দল। জর্জ বুশের শাসনকালে ডিক চেনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট। তাঁরই মেয়ে লিজ চেনি সরাসরি সমর্থন করছেন কমলাকে। তিনি বলেছেন, ‘সংবিধানে বিশ্বাসী একজন রক্ষণশীল হিসেবে আমি গভীরভাবে চিন্তা করে বলছি, ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারেন, তাই আমি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নয়, কমলা হ্যারিসকে ভোট দেব। লিজের বাবা ডিক চেনিও ঘোষণা করেছেন, তাঁর ভোটটিও পাবেন কমলা হ্যারিস। তিনি বলেছেন আরও ভয়ংকর কথা, ‘আমাদের দেশের ২৪৮ বছরের ইতিহাসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো দেশের জন্য এত বড় হুমকি টেনে আনা ব্যক্তি আর কখনো আসেনি। গত নির্বাচনে সে মিথ্যা কথা বলে নির্বাচনের ফলাফল চুরি করতে চেয়েছিল, কিন্তু ভোটাররা তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাকে বিশ্বাস করে আবার ক্ষমতায় যেতে দেওয়া যায় না।’

রিপাবলিকান সদস্য কিনজিঞ্জারও ট্রাম্পের ওপর থেকে তাঁর সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। স্টেফেনি গ্রিশাম ছিলেন বিগত ট্রাম্প জামানায় হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি, ফার্স্ট লেডি মেলানিয়ার চিফ অব স্টাফ। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ট্রাম্পের প্ররোচনায় ক্যাপিটল আক্রমণ করায় তিনি ট্রাম্পের প্রতি তাঁর সমর্থন প্রত্যাহার করে নেন। এবার তিনি বলছেন, ‘আমি আমার দলের চেয়ে দেশকে বেশি ভালোবাসি। কমলা হ্যারিস সত্য কথা বলেন। তিনি আমেরিকান জনগণকে সম্মান করেন। আমার ভোটটি তিনিই পাবেন। এই তালিকায় আরও আছেন অলিভার ট্রয়ি, অ্যান্থনি স্কারামুচ্চি, জেফ ডানকান, আলবের্তো গঞ্জালেস, উইলিয়াম ওয়েবস্টার, জন নেগ্রোপন্তে, জেফ ফ্লেক, ক্যাসেডি হাচিনসনসহ অসংখ্য রিপাবলিকান। আর এই তালিকায় যখন আর্নল্ড শোয়ার্জনেগারকে দেখা যায়, তখন বোঝা যায় ট্রাম্পের দলের লোকজনের অনেকেই তাঁদের দলের প্রার্থীর ওপর ভরসা রাখতে পারছেন না।

এত সব ঘটনা কমলা হ্যারিসের পক্ষেই যায়। কিন্তু মার্কিন নির্বাচনে টাকার খেলার ভয়ংকর শক্তি আছে। বিশেষ করে ধনী এবং শেতাঙ্গদের হাতেই রয়েছে ক্ষমতা। মিডিয়ার সিংহভাগও তাদের দখলে। এ সময় মিডিয়ার প্রভাবের কথা কে না জানে! ধনীরা যদি তাদের মতো করে দাবার ঘুঁটি চালতে চায়, তাহলে বাধা দেওয়ার মতো যথেষ্ট অস্ত্র ডেমোক্র্যাটদের আছে কি না, সেটাও প্রশ্ন। নির্বাচিত হওয়ার আগেই ‘দেখে নেব’ বলে যে হুংকার ছেড়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, তার পেছনের শক্তিকে মূল্য দিতে হবে। সে শক্তি যদি অশুভ শক্তি হয়, তাহলে তা যেন বেড়ে উঠতে না পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। আর শুভ শক্তির সমর্থনে যদি ক্ষমতার মসনদ তিনি পেয়ে যান, তাহলে তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকতে পারে না। গণতন্ত্রের ক্যারিশমা তো সেখানেই।

আর মাত্র এক দিন পরই খোলাসা হয়ে যাবে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মোড়ল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কে হচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জমকালো দোতলা বাড়িতে দূতাবাস, সামনে সারি সারি কূটনৈতিক গাড়ি—৭ বছর পর জানা গেল ভুয়া

অবশেষে রাজি ভারত, ‘জিতেছে বাংলাদেশ’

বেনজীরের এক ফ্ল্যাটেই ১৯ ফ্রিজ, আরও বিপুল ব্যবহার সামগ্রী উঠছে নিলামে

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাকে শুভেচ্ছা জানাতে বিমানবন্দরে পলাতক আসামি

বাংলাদেশ ব্যাংকে নারীদের শর্ট স্লিভ ড্রেস ও লেগিংস নিষেধ, পরতে হবে ‘শালীন’ পোশাক-হিজাব

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত