Ajker Patrika

রাশিয়ার চেয়ে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় কঠিন ইউক্রেন, ক্রিমিয়া ছাড়তে হবে কিয়েভকে: যুক্তরাষ্ট্র

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১: ৪৫
ট্রাম্প মনে করেন পুতিনের চেয়ে আলোচনার শর্ত নির্ধারণে জেলেনস্কিই বেশি কঠোর মনোভাবের। ছবি: সংগৃহীত
ট্রাম্প মনে করেন পুতিনের চেয়ে আলোচনার শর্ত নির্ধারণে জেলেনস্কিই বেশি কঠোর মনোভাবের। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বিরুদ্ধে শান্তি আলোচনা ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগ এনেছেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ বলে স্বীকৃতি দেবেন না, বলার পর ট্রাম্প এই অভিযোগ তোলেন। যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে এটি অনেকটাই স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে, দেশটি ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবেই মানতে প্রস্তুত।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প দাবি করেন, যুদ্ধ শেষ করার চুক্তি ‘খুব কাছাকাছি’ ছিল সবাই। কিন্তু জেলেনস্কির যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত মানতে রাজি না হওয়া সংঘাতকেই কেবল ‘দীর্ঘায়িত’ করবে।

এর আগে, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই যুদ্ধবিরতি বর্তমানে রাশিয়া ও ইউক্রেন ‘যেসব এলাকার নিয়ন্ত্রণ করছে সেখানে আছে সেখানেই স্থির করবে।’ তবে ইউক্রেন দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে, তারা ক্রিমিয়া ছাড়বে না। ২০১৪ সালে রাশিয়া উপদ্বীপটি দখল করে নেয়।

ভ্যান্স বলেন, এই চুক্তির মানে হলো—ইউক্রেন ও রাশিয়াকে ‘তাদের বর্তমান নিয়ন্ত্রণে থাকা কিছু এলাকা ছেড়ে দিতে হবে।’ ট্রাম্প প্রশাসন এখনো অবশ্য প্রকাশ্যে জানায়নি যে, ভৌগোলিকভাবে কী ধরনের ছাড় দিতে হবে।

হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকেরা ট্রাম্পের কাছে জানতে চান, তাঁর প্রশাসন কি ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ভাবছে? উত্তরে ট্রাম্প বলেন, তিনি শুধু যুদ্ধ শেষ দেখতে চান। তিনি বলেন, ‘আমার কোনো পছন্দ নেই। আমি কোনো পছন্দও রাখতে চাই না। আমি একটি চুক্তি সম্পন্ন হওয়া দেখতে চাই।’

ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার অবৈধ দখলদারত্বকে স্বীকৃতি দেওয়া জেলেনস্কির জন্য রাজনৈতিকভাবে অসম্ভব। এটি যুদ্ধের পরবর্তী আন্তর্জাতিক নীতিরও পরিপন্থী। এই নীতি অনুযায়ী, শক্তি প্রয়োগ করে সীমান্ত পরিবর্তন করা উচিত নয়। তিনি বারবার ক্রিমিয়া উপদ্বীপের ওপর ইউক্রেনের দাবি ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, ‘এখানে আলোচনার কিছু নেই। এটি আমাদের সংবিধানের পরিপন্থী।’

গত রাতে ইউক্রেন কয়েকটি অঞ্চলে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার খবর দিয়েছে। রাজধানী কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিৎসকো বলেন, ২ জন নিহত ও ৫৪ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে শিশু ও এক অন্তঃসত্ত্বা নারীও রয়েছেন। ড্রোনের ধ্বংসাবশেষের কারণে কয়েকটি স্থানে আগুন লেগেছে। একটি আবাসিক ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে বেশ কয়েকজন আটকা পড়েছে।

উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় খারকিভ শহরেও বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। এর আগে, পূর্ব ইউক্রেনের মারহানেৎস শহরে রাশিয়ার ড্রোন হামলায় একটি শ্রমিকবাহী বাসে ৯ জন নিহত ও কয়েক ডজন আহত হয়।

ট্রাম্প ও জেলেনস্কির এই পাল্টাপাল্টি মন্তব্য তাঁদের প্রায়শই তিক্ত সম্পর্কের সর্বশেষ অধ্যায়। গতকাল বুধবার ওভাল অফিসে ট্রাম্প বলেন, ইউক্রেনের চেয়ে রাশিয়ার সঙ্গে বোঝাপড়া করা তাঁর জন্য সহজ ছিল। ট্রাম্প বলেন, ‘আমার মনে হয় রাশিয়া প্রস্তুত।’ তিনি বিশ্বাস করেন, যুক্তরাষ্ট্র ক্রেমলিনের সঙ্গে চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছেছে। কিন্তু ইউক্রেনের সঙ্গে তা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, জেলেনস্কির সঙ্গে বোঝাপড়া করা সহজ হবে। এখন পর্যন্ত এটি কঠিনই মনে হচ্ছে।’

এদিকে, গতকাল বুধবার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স সতর্ক করে বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যদি চুক্তিতে না পৌঁছায়, তবে যুক্তরাষ্ট্র তাদের মধ্যস্থতার ভূমিকা থেকে ‘সরে আসবে’। গত সপ্তাহে ট্রাম্প ও তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও একই ধরনের মন্তব্য করেছিলেন।

যুদ্ধ শেষ করার কূটনীতির গতি বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা মস্কোতে আলোচনায় মনোযোগ দিতে লন্ডন বৈঠক থেকে সরে এসেছেন। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের মধ্যে লন্ডন আলোচনা যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ছিল। রুবিও ও বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ সরে যাওয়ায় এই বৈঠকের গুরুত্ব কমে যায়।

এর পরিবর্তে ট্রাম্পের ইউক্রেন বিষয়ক দূত জেনারেল কিথ কেলগ লন্ডন আলোচনায় অংশ নেন। আর উইটকফ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে চতুর্থবারের মতো বৈঠক করতে রাশিয়া যাবেন। ব্রিটিশ কূটনীতিকরা বলেন, রুবিও ও উইটকফ কেন লন্ডন আলোচনা থেকে সরে এসেছেন, তা তাঁদের কাছে পুরোপুরি স্পষ্ট নয়।

আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর থেকে উভয় পক্ষে লক্ষাধিক মানুষ নিহত বা আহত হয়েছে। প্রায় ৭০ লাখ ইউক্রেনীয় বর্তমানে বিশ্বজুড়ে শরণার্থী হিসেবে তালিকাভুক্ত।

এই সংঘাত এক দশকেরও বেশি আগে, ২০১৪ সালে শুরু হয়েছিল। সে সময় ইউক্রেনের রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ক্ষমতাচ্যুত হন। এরপর রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করে নেয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মধুচন্দ্রিমায় স্বামী নিহত, কফিন জড়িয়ে হিমাশি

বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক সাফিনুলের পরিবারের ৫৬ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ দিতে ব্যর্থ দুদক: আইনজীবী

এটা ছোটখাটো অপহরণ: চবির ৫ শিক্ষার্থীকে নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

তৃতীয় শ্রেণিতেও বৃত্তি দেওয়া হবে: প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসচিব

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত