Ajker Patrika

২০২৪-এ হাঙরের আক্রমণ অনেক কমে যাওয়ার কারণ খুঁজছেন বিজ্ঞানীরা

আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩: ২৬
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

২০২৪ সালে হাঙরের আক্রমণের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। মঙ্গলবার প্রকাশিত নতুন পরিসংখ্যান অনুসারে, বছরটিতে বিশ্বে হাঙরের মোট ৪৭টি আক্রমণ নথিভুক্ত হয়েছে। এ হিসাবে আগের বছরের তুলনায় গত বছর অন্তত ২২টি আক্রমণ কম হয়েছে। আর গত ১০ বছরের গড়ে ৭০টির আক্রমণের তুলনায় পরিসংখ্যানটি অনেক নিচে।

মঙ্গলবার সিএনএন জানিয়েছে, ২০২৪ সালে কোনো প্ররোচনা ছাড়াই সবচেয়ে বেশি হাঙরের হামলা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে মোট ২৮টি হামলার ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে হাওয়াইয়ের ওয়াহুর উত্তর-পশ্চিম উপকূলে একটি প্রাণঘাতী হামলার ঘটনাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে ২০২৩ সালের তুলনায় এই সংখ্যা প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কম।

ফ্লোরিডা মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রি পরিচালিত ‘আন্তর্জাতিক হাঙর আক্রমণ নথি’ বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানীদের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে হাঙরের হামলা পর্যবেক্ষণ করে। শুধু অপ্ররোচিত হামলার ঘটনাগুলোকেই এই ডেটাবেইসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় মোট ১৪টি হামলা রেকর্ড করা হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় সর্বাধিক। এর মধ্যে ৮টি হামলা হয়েছে ভলুসিয়া কাউন্টিতে, যা ফ্লোরিডার পূর্ব উপকূলের ডেটোনা বিচের অংশ।

ফ্লোরিডা প্রোগ্রাম ফর শার্ক রিসার্চের পরিচালক গ্যাভিন নেলর বলেছেন, ‘আমরা হাঙরের স্বাভাবিক আচরণের প্যাটার্ন বিশ্লেষণ করতে আগ্রহী। যাতে বুঝতে পারি, কেন মানুষ মাঝে মাঝে এদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। প্রাণীর স্বাভাবিক আচরণ পরিবর্তন করতে পারে এমন যেকোনো কারণ আমাদের গবেষণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’

ফ্লোরিডা মিউজিয়ামের মতে, ফ্লোরিডায় বেশির ভাগ আক্রমণের জন্য দায়ী ব্ল্যাকটিপ হাঙর। এই প্রজাতির হাঙর উত্তর-পূর্ব ফ্লোরিডা উপকূল বরাবর প্রজনন করে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এরা অল্পবয়সী মানুষের সঙ্গে তাদের স্বাভাবিক শিকার—যেমন মাছ, স্টিংরে ও অন্যান্য হাঙরের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না।

গবেষক নেলর বলেছেন, ‘মানুষ সাধারণত বড় ঢেউয়ের স্থানগুলোতে সার্ফিং করে, যেখানে পানি থাকে ঘোলা। এই ঘোলা পানি হাঙরের দৃষ্টিশক্তিও কমায়। ফলে ভুল করে তারা মানুষকে শিকার হিসেবে ভাবতে পারে।’

আন্তর্জাতিক হাঙর আক্রমণ নথির তথ্য ব্যবস্থাপক জো মিগুয়েজ মত দিয়েছেন, ২০২৪ সালে হাঙর আক্রমণের সংখ্যা কমার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। এগুলোর মধ্যে সমুদ্রের স্রোতের পরিবর্তন, নির্দিষ্ট এলাকায় পানিতে মানুষের সংখ্যা কমে যাওয়া এবং সার্ফিংয়ের জনপ্রিয়তায় পরিবর্তন উল্লেখযোগ্য।

তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ মেয়াদি তথ্য পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, কামড়ের সংখ্যা কিছু বছর বেড়ে যায়, আবার কিছু বছর কমে যায়; যা একটি স্বাভাবিক চক্রের মতো। তাই এই বছরের কমার জন্য কোনো নির্দিষ্ট কারণকে চিহ্নিত করা সম্ভব নয়।’

২০২৪ সালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হাঙরের আক্রমণ হয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানে নয়টি অপ্ররোচিত হামলার ঘটনা ঘটেছে, তবে কোনো প্রাণহানি ঘটেনি।

এদিকে ওই বছরটিতে আটলান্টিক মহাসাগরের ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ ও পশ্চিম সাহারার উপকূলের মধ্যবর্তী অঞ্চলে প্রথমবারের মতো একটি হাঙর আক্রমণের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে, যা বিশ্বজুড়ে মোট চারটি প্রাণঘাতী হামলার একটি। ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জের কাছে এক জার্মান নারীকে হাঙর আক্রমণ করলে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন এবং পরে মারা যান।

শার্ক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নিল হ্যামারশ্লাগ বলেছেন, ‘হাঙর সাধারণত মানুষকে টার্গেট করে না। বেশির ভাগ হামলাই ভুল শনাক্তকরণের কারণে ঘটে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগের তুলনায় এখন বেশি মানুষ সাগরে সময় কাটাচ্ছে, ফলে কামড়ের সংখ্যা বাড়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে সংখ্যা কমে যাওয়া প্রমাণ করে যে মানুষ হাঙরের স্বাভাবিক শিকার নয়।’

ম্যাসাচুসেটস মেরিন ফিশারিজ বিভাগের সিনিয়র বিজ্ঞানী গ্রেগ স্কোমাল মনে করেন, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং জনসাধারণের আচরণ পরিবর্তনের ফলে হাঙরের হামলার সংখ্যা কমে থাকতে পারে। কেপ কড এলাকায় ২০১৮ সালের পর থেকে কোনো হামলা ঘটেনি।

তিনি বলেন, ‘শ্বেত হাঙরের শিকারস্থল সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা গভীর পানিতে বা একা সাঁতার কাটতে কম যাচ্ছেন।’

আন্তর্জাতিক হাঙর আক্রমণ নথি অনুসারে, একজন মানুষের হাঙরের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। তবে ঝুঁকি এড়াতে সাঁতার কাটার আগে চকচকে গয়না খুলে ফেলা, মাছ ধরার এলাকাগুলো এড়িয়ে চলা, বন্ধুদের সঙ্গে সাঁতার কাটা, উপকূলের কাছাকাছি থাকা এবং অতিরিক্ত জলকেলি না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

আন্তর্জাতিক এই নথি ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকে গবেষকেরা ১৫ শতক থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ৬ হাজার ৮০০টি হামলার ঘটনা বিশ্লেষণ করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত