Ajker Patrika

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন /ইরানে হামলার অনুমতি ট্রাম্পের, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ইরানি প্রতিক্রিয়ার পর

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৯ জুন ২০২৫, ১২: ০৭
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত মঙ্গলবার রাতে হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে সামরিক কর্মকর্তাদের জানান, তিনি ইরানে হামলার পরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছেন। তবে চূড়ান্ত নির্দেশ দেওয়া থেকে তিনি বিরত রয়েছেন। তেহরান শেষ পর্যন্ত পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ঘনিষ্ঠ তিনটি সূত্র ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে এ তথ্য জানিয়েছে।

সেই গোপন সিদ্ধান্তের পর ট্রাম্প প্রকাশ্যেই জানিয়েছেন, ইরানে হামলার বিষয়টি তাঁর বিবেচনায় রয়েছে। গতকাল বুধবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমি কী করব, সেটা নিয়ে ভাবছি। তবে আমি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিই শেষ মুহূর্তে, যখন সময় শেষ হওয়ার এক সেকেন্ড বাকি থাকে।’

সূত্র জানায়, ইসরায়েলের চলমান হামলায় যুক্ত হওয়ার হুমকি দিয়ে তেহরানকে চাপের মুখে ফেলে নিজের শর্ত মানতে বাধ্য করতে চান ট্রাম্প। তবে তিনি জানিয়েছেন, হামলা না-ও করতে পারেন। হোয়াইট হাউসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, একাধিক বিকল্প এখনো টেবিলে আছে। ট্রাম্প লক্ষ রাখছেন, ইসরায়েল কীভাবে অভিযান চালায়।

গত সপ্তাহে ইসরায়েল ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো, সামরিক নেতৃত্ব ও অন্যান্য লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা শুরু করে। মঙ্গলবার তারা ইরানে অন্তত ১ হাজার ১০০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়, যার মধ্যে একটি ঘাঁটিতে আটটি হেলিকপ্টার এবং পশ্চিম ইরানে ৪০টি ক্ষেপণাস্ত্র অবকাঠামোর অংশ ছিল।

পেন্টাগনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইরানে হামলার নানা পরিকল্পনা বিবেচনায় থাকলেও এখন পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট কোনো চূড়ান্ত নির্দেশ দেননি। এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা সীমিত রয়েছে ইসরায়েলকে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন থেকে রক্ষা করার সহায়তায়।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এবং জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইন গতকাল বুধবার বিকেলে হোয়াইট হাউসে এক বৈঠকে যোগ দেন। এর আগে তাঁরা কংগ্রেসে সাক্ষ্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা।

যদিও হামলার পরিকল্পনা এগিয়ে চলেছে, তবে ট্রাম্প কূটনৈতিকভাবে সংকট সমাধান করতেই বেশি আগ্রহী—বলেছেন তাঁর ঘনিষ্ঠরা। বুধবার সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘আমি (হামলা) করতে পারি, আবার না-ও করতে পারি।’ তিনি যোগ করেন, ইরানকে শর্তহীন আত্মসমর্পণ করতেই হবে—‘পরবর্তী সপ্তাহটা খুব বড় হতে যাচ্ছে, হয়তো এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে।’

এদিকে, ইরান জানিয়েছে, সামরিক হুমকির মধ্যে তারা কোনো আলোচনা করবে না। হামলা হলে পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। জাতিসংঘে ইরানের মিশন থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইরান হুমকির মুখে কখনো আলোচনা করে না, শান্তিও মেনে নেয় না, আর সেই পুরোনো যুদ্ধবাজের (সম্ভবত ট্রাম্পকে ইঙ্গিত) সঙ্গে তো নয়ই, যে প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখার জন্য মরিয়া।’

যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য হামলার লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে একটি হচ্ছে ইরানের ফোরদো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। এটি একটি পাহাড়ের নিচে অবস্থিত এবং এতটাই সুরক্ষিত যে, কেবল অত্যন্ত শক্তিশালী বোমা দিয়েই তা ধ্বংস করা সম্ভব—এমনটাই মনে করেন সামরিক বিশ্লেষকেরা। এখনো ইসরায়েল ফোরদোতে হামলা চালায়নি।

ট্রাম্প যখন সিদ্ধান্তের পাল্লা মেপে দেখছেন, তখন যুক্তরাষ্ট্র সামরিক শক্তি বাড়াতে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে বাহিনী পাঠাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে—আকাশপথে জ্বালানি সরবরাহের ট্যাংকার বিমান, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে সক্ষম যুদ্ধজাহাজ, একটি বিমানবাহী রণতরি দল এবং উন্নত এফ-২২ যুদ্ধবিমান, যা বুধবার ব্রিটেনে অবতরণ করেছে।

হেগসেথ বুধবার বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে, কারণ ফোরদোতে হামলা হলে ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সেনাঘাঁটি ও বাহিনীর ওপর পাল্টা হামলা চালাতে পারে। সিনেটের সশস্ত্র বাহিনী কমিটিতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় হেগসেথকে জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি কি ইরানে সামরিক হামলার কথা ভাবছেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্ট পর্যায়ে হয়। আমি জনসমক্ষে এ নিয়ে আর কিছু বলতে পারি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের হাতে যা কিছু আছে, সবকিছু প্রস্তুত রাখা হচ্ছে, যেন যে কোনো পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ড্রোন হামলার মতো হুমকি মোকাবিলার জন্যও প্রস্তুত।

এদিকে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানে হামলা না চালানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে। বুধবার ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ উভয় পক্ষের যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি অনুযায়ী, দুই মন্ত্রী ইসরায়েলের সামরিক অভিযানকে সমালোচনা করেন এবং বলছেন, ‘যুদ্ধ দ্রুত বন্ধ হওয়া দরকার।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত