Ajker Patrika

ওয়াশিংটনে গুলি: আহত ন্যাশনাল গার্ড সারাহ বেকস্ট্রম মারা গেছেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ১৫
ন্যাশনাল গার্ড সদস্য সারাহ বেকস্ট্রম। ছবি: সংগৃহীত
ন্যাশনাল গার্ড সদস্য সারাহ বেকস্ট্রম। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে স্থানীয় সময় গত বুধবারের (২৬ নভেম্বর) গুলি-কাণ্ডে গুরুতর আহত ন্যাশনাল গার্ডের সদস্য সারাহ বেকস্ট্রম অবশেষে জীবনযুদ্ধে হার মানলেন। আজ শুক্রবার তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

২০ বছর বয়সী বেকস্ট্রম ছিলেন ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া ন্যাশনাল গার্ডের সদস্য। হোয়াইট হাউসের নিকটবর্তী এলাকায় তাঁকে এবং অপর এক গার্ড সদস্যকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছিল।

ঘটনার পর প্রথম লাইভ মন্তব্যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, ‘ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার সারাহ বেকস্ট্রম, যার কথা আমরা বলছি, অত্যন্ত সম্মানিত, তরুণ, অসাধারণ একজন মানুষ...তিনি কিছুক্ষণ আগে প্রয়াত হয়েছেন। তিনি আর আমাদের মাঝে নেই।’

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অপরাধ দমনের বিশেষ মিশনের অংশ হিসেবে ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া ন্যাশনাল গার্ডের শত শত সেনাকে ওয়াশিংটনে মোতায়েন করা হয়েছিল। বেকস্ট্রম এই থ্যাংকসগিভিং ছুটির সময়ে ডিসিতে কাজ করার জন্য স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসেছিলেন বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি।

ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার সামারসভিলের বাসিন্দা সারাহ বেকস্ট্রম সামরিক পরিষেবা শুরু করেন ২০২৩ সালের ৬ জুন। তিনি ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া আর্মি ন্যাশনাল গার্ডের ৮৬৩তম মিলিটারি পুলিশ কোম্পানিতে নিযুক্ত ছিলেন।

বেকস্ট্রমের সাবেক প্রেমিক অ্যাডাম কার তাঁকে ‘স্নেহময় এবং কোমল হৃদয়ের’ মানুষ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি আরও জানান, বেকস্ট্রম মিলিটারি পুলিশে কাজ করতেন এবং তাঁর স্বপ্ন ছিল এফবিআইতে ক্যারিয়ার গড়ার। প্রকৃতি, রোড ট্রিপ এবং পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে তিনি ভালোবাসতেন। যদিও শুরুতে ওয়াশিংটনে আসতে তাঁর কিছুটা অনীহা ছিল, পরে এখানকার জাদুঘর এবং স্মৃতিস্তম্ভ ঘুরে দেখা উপভোগ করতে শুরু করেন।

এই হামলায় আহত অপর ভুক্তভোগী, ২৪ বছর বয়সী ইউএস এয়ার ফোর্স স্টাফ সার্জেন্ট অ্যান্ড্রু উলফ এখনো হাসপাতালে সংকটাপন্ন। দুই সদস্যকেই খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়েছিল।

এই হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ২৯ বছর বয়সী আফগানিস্তানের নাগরিক রহমানুল্লাহ লাকানওয়ালকে গ্রেপ্তার করেছে। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগে লাকানওয়াল আফগানিস্তানের কান্দাহারে সিআইএর একটি বাহিনীতে কাজ করতেন।

উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চলতি বছরের শুরুতে ওয়াশিংটনে আইন শৃঙ্খলা জোরদার করতে এবং অপরাধ দমনে ন্যাশনাল গার্ড ট্রুপস মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই গুলিকাণ্ড সেই নিরাপত্তা উদ্বেগকে নতুন করে উসকে দিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পশ্চিমবঙ্গে ২০ বছর আগে মেলায় নিখোঁজ, বাংলাদেশে রাস্তায় ভিক্ষা করতেন রাধিকা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ১৪: ০০
পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গাসাগর মেলায় নিখোঁজ হন রাধিকা। ছবি: সংগৃহীত
পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গাসাগর মেলায় নিখোঁজ হন রাধিকা। ছবি: সংগৃহীত

প্রায় দুই দশক আগে পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গাসাগর মেলা থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া মধ্যপ্রদেশের এক বৃদ্ধাকে বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া গেছে। পশ্চিমবঙ্গ রেডিও ক্লাবের (ডব্লিউবিআরসি) অপেশাদার হ্যাম রেডিও অপারেটরদের বিস্তৃত নেটওয়ার্কের মাধ্যমেই এই অসম্ভব সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে তাঁকে ভারতে ফিরিয়ে এনে পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলনের জোরদার প্রচেষ্টা চলছে।

ডব্লিউবিআরসির সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাসের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে এই রেডিও ক্লাবের পরিচিতদের মাধ্যমে ৭০ বছর বয়সী ওই নারীর সন্ধান মিলেছে। রাধিকা নামে ওই বৃদ্ধা রাস্তার ভিক্ষা করছিলেন। তাঁর স্বামীর নাম জিজ্ঞেস করলে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি। কেবল একটি শব্দই তিনি বারবার উচ্চারণ করছিলেন—‘সাগর’।

এই সূত্র ধরে ডব্লিউবিআরসি প্রথমে সাগরদ্বীপ অঞ্চলে খোঁজ শুরু করে। কিন্তু সেখানে কোনো তথ্য না পাওয়ায় তারা অনুসন্ধানের পরিধি বাড়িয়ে দেয়। এরপর তারা ভারতে ‘সাগর’ নামের অন্যান্য স্থানগুলোতে খোঁজ নিতে শুরু করলে জানতে পারে, মধ্যপ্রদেশের সাগর জেলার খাজরা গ্রামের এক নারী তীর্থযাত্রার সময় গঙ্গাসাগর থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন।

নাগ বিশ্বাস বলেন, রাধিকা তীর্থযাত্রীদের একটি দলের সঙ্গে গঙ্গাসাগরে গিয়েছিলেন। কোনোভাবে তিনি সেই দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান এবং ভুলবশত বাংলাদেশের তীর্থযাত্রীদের আরেকটি দলের সঙ্গে যোগ দেন। সেই সময়ে বাংলাদেশের তীর্থযাত্রীরা ট্রলারে করে সাগরদ্বীপে আসতেন। রাধিকা সম্ভবত সেই ট্রলারগুলোর কোনো একটিতে উঠে বাংলাদেশে পৌঁছে যান। সেখানে অসহায় অবস্থায় তিনি ভিক্ষাবৃত্তিকেই অবলম্বন করেন।

নিখোঁজ হওয়ার সময় রাধিকার স্বামী বলীরাম এবং তিন ছেলে ছিল। দুঃখের বিষয় হলো, তাঁর স্বামী এবং এক ছেলে (পূরণ) ইতিমধ্যে মারা গেছেন। বাকি দুই ছেলে রাজেশ ও গণেশ বর্তমানে দিল্লিতে কাজ করেন।

রাধিকা এত বছর রাস্তায় ভিক্ষুকের বেশে থাকার কারণে অপরিষ্কার ও বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে যাওয়ায় শুরুতে আগের চেহারার সঙ্গে বর্তমান চেহারার কোনো মিল পাওয়া যাচ্ছিল না।

অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা রাধিকাকে একটি পারলারে পাঠিয়ে পরিষ্কার করাই এবং নতুন পোশাক দিই। এরপর যখন আমরা তাঁর নতুন ছবি ছেলে রাজেশকে পাঠাই, তখন তিনি তৎক্ষণাৎ মাকে চিনতে পারেন।’

এই ঘটনায় ছেলে রাজেশ, তাঁর ভাই এবং খাজরা গ্রামের বাসিন্দারা অবাক ও আনন্দিত। রাধিকার ছেলে রাজেশ আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘আমার মা তীর্থযাত্রায় গিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর ফিরে আসা আমার জন্য তীর্থযাত্রার চেয়ে কোনো অংশে কম হবে না। আমি তাঁর মধ্যে ঈশ্বরকে দেখব।’

ডব্লিউবিআরসি গঙ্গাসাগর মেলা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছে এবং তারা সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। বাংলাদেশের হাইকমিশন এবং ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয়কেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। উভয় পক্ষই দ্রুত সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, রাধিকা শিগগির তাঁর পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তৃতীয় বিশ্ব থেকে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধ করবে যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্পের ঘোষণা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ১২: ২৭
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার বলেছেন, তাঁর প্রশাসন সব ‘তৃতীয় বিশ্বের দেশ’ থেকে অভিবাসন ‘স্থায়ীভাবে স্থগিত’ করার পরিকল্পনা করেছে। তাঁর দাবি, এতে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার হওয়ার সময় পাবে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ট্রাম্প কোনো নির্দিষ্ট দেশ বা দেশগুলোর নাম উল্লেখ করেননি। এমনকি ‘তৃতীয় বিশ্বের দেশ’ এবং ‘স্থায়ীভাবে স্থগিত’ করা বলতে ঠিক কী বোঝাচ্ছেন—সে বিষয়েও কিছু বলেননি। ট্রাম্প জানান, এই পরিকল্পনার আওতায় সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সময় অনুমোদিত মামলাগুলোও থাকবে।

ট্রাম্প তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘আমি সব তৃতীয় বিশ্বের দেশ থেকে অভিবাসন স্থায়ীভাবে স্থগিত করব, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবস্থা পুরোপুরি পুনরুদ্ধারের সুযোগ পায়। বাইডেনের আমলে হওয়া অবৈধ লক্ষাধিক অনুমোদন বাতিল করব। স্লিপি জো বাইডেনের অটোপেন দিয়ে সই করা অনুমোদনও এর বাইরে নয়। আর যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের নেট সম্পদ নয়, তাঁদের সবাইকে সরিয়ে দেব।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি ‘নাগরিক নয়’ এমন যে কারও জন্য সব ফেডারেল সুবিধা ও ভর্তুকি বন্ধ করে দেবেন। তিনি ‘যাঁরা দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি নষ্ট করে’ এমন অভিবাসীদের নাগরিকত্ব বাতিল করার কথাও বলেন। আর যেকোনো বিদেশিকে, যাকে সরকারি বোঝা, নিরাপত্তা ঝুঁকি বা ‘পাশ্চাত্য সভ্যতার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ’ বলে মনে হবে, তাঁদের বহিষ্কার করা হবে বলেও হুমকি দেন তিনি।

আফগানিস্তান থেকে যাওয়া এক অভিবাসীর গুলিতে মার্কিন ন্যাশনাল গার্ডের ২ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনার পর ট্রাম্প এই মন্তব্য করলেন। ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউসের কাছে গুলিতে এরই মধ্যে একজন নিহত হয়েছেন। অপরজন চিকিৎসাধীন।

এর আগে মার্কিন স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, ট্রাম্প বাইডেন প্রশাসনের সময়ে অনুমোদিত আশ্রয় আবেদন ও ১৯টি দেশের নাগরিকদের দেওয়া গ্রিন কার্ড পুনরায় পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছেন।

রয়টার্সের দেখা এক সরকারি নথিতে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত বন্দুকধারীকে চলতি বছরই ট্রাম্পের প্রশাসন আশ্রয় দিয়েছিল। মার্কিন সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিস বুধবার জানায়, আফগান নাগরিকদের সংশ্লিষ্ট সব অভিবাসন আবেদন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। ট্রাম্প বলেন, ‘এই লক্ষ্যগুলো অর্জন করা হবে অবৈধ ও অস্থিতিশীল জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমানোর উদ্দেশ্যে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হংকংয়ে আবাসিক কমপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ডে নিহত বেড়ে ৯৪

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ৫১
হংকংয়ের এক আবাসিক ভবন কমপ্লেক্সে ভয়াবহ আগুনে বিপুল প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ছবি: এএফপি
হংকংয়ের এক আবাসিক ভবন কমপ্লেক্সে ভয়াবহ আগুনে বিপুল প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ছবি: এএফপি

হংকংয়ের আবাসিক ভবন কমপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৪ জনে। হংকংয়ের অগ্নিনির্বাপণ বিভাগ জানিয়েছে, শহরটিতে আট দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর আজ শুক্রবারের মধ্যেই অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান শেষ করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভয়াবহ এই আগুনে এক বিশাল অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স পুড়ে গেছে। এই দুর্ঘটনায় এখনো নিখোঁজ অনেকে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, দমকলকর্মীরা ইতিমধ্যে আগুনের বেশির ভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণে এনেছেন। আগুনে ধ্বংস হয়ে যায় তাই পো জেলার উত্তরাংশে অবস্থিত ওয়াং ফুক কোর্ট আবাসিক কমপ্লেক্সটি। আটটি টাওয়ার নিয়ে গঠিত ওই আবাসনে ৪ হাজার ৬০০-এর বেশি মানুষ থাকত। ভবনটিতে সংস্কারকাজ চলছিল এবং আগুন লাগার সময় এটি বাঁশের মাচা আর সবুজ জালের আচ্ছাদনে ঢাকা ছিল। সেখান থেকেই বুধবার দুপুরে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

পুলিশ জানিয়েছে, জানালা বন্ধ করে রাখা দাহ্য ফোম বোর্ডসহ অনিরাপদ নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগে তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মৃত্যুর কারণ ঘটানোর অভিযোগে তদন্ত চলছে। শুক্রবার সকালেও দমকলকর্মীরা ধোঁয়া ওঠা ভবনটিতে কাজ করছিলেন।

হংকংয়ের ডেপুটি ফায়ার সার্ভিসেস ডিরেক্টর ডেরেক চ্যান বলেন, ‘সাতটি ভবনের সবগুলো ইউনিটে জোরপূর্বক প্রবেশের চেষ্টা চলছে, যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় আর কোনো হতাহতের ঘটনা আছে কি না।’ তিনি জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে নিখোঁজের সংখ্যা ছিল ২৭৯। তবে সেই সংখ্যা ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে হালনাগাদ হয়নি। চ্যান জানান, ফায়ার ডিপার্টমেন্টে করা ২৫টি জরুরি উদ্ধার কল এখনো সমাধান হয়নি, যার মধ্যে সাম্প্রতিক কয়েকটি কলকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

উদ্ধারকর্মীদের তীব্র তাপ, ঘন ধোঁয়া, ধসে পড়া বাঁশের মাচা ও ধ্বংসস্তূপ ভেদ করে ওপরের তলাগুলোতে আটকে পড়া মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য লড়াই করতে হয়েছে। বৃহস্পতিবার এক মর্মাহত মা, হাতে মেয়ের গ্র্যাজুয়েশন ছবি নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রের বাইরে মেয়েকে খুঁজছিলেন। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আটটি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৯০০ বাসিন্দা অবস্থান করছিলেন। ওই মা বলেন, ‘সে আর তার বাবা এখনো বের হয়নি। ওরা আমাদের ভবন বাঁচানোর মতো পানি পায়নি।’

চ্যান বলেন, সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে কমপ্লেক্সের দুটি টাওয়ারে। তবে কয়েকটি ভবনে জীবিত বাসিন্দাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি।

শুক্রবার সকালে হসপিটাল অথরিটি জানায়, মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৪। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক, তাঁরা গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। হংকংয়ে প্রায় ৩ লাখ ৬৮ হাজার অভিবাসী গৃহকর্মী আছেন, যাঁদের বেশির ভাগই নিম্ন আয়ের এশীয় দেশ থেকে আসা নারী। তাঁরা সাধারণত নিয়োগকারীর সঙ্গে থাকেন।

১৯৪৮ সালে একটি গুদামে আগুনে ১৭৬ জন মারা যাওয়ার পর থেকে এটাই হংকংয়ের সবচেয়ে প্রাণঘাতী অগ্নিকাণ্ড। ঘটনাটি ২০১৭ সালের লন্ডনের গ্রেনফেল টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডের কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছে, যেখানে ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ওই দুর্ঘটনার জন্য দাহ্য বহিরাবরণ এবং নির্মাণ ও সরকারি তদারকির ব্যর্থতাকে দায়ী করা হয়েছিল।

হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী জন লি ঘোষণা করেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের সহায়তায় সরকার ৩০ কোটি হংকং ডলারের (৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) একটি তহবিল গঠন করবে। পাশাপাশি চীনের বড় বড় তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোও অনুদান ঘোষণা করেছে।

বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর একটি হংকং। উঁচু উঁচু আবাসিক ভবনে ভরা এই শহরে আকাশচুম্বী বাড়িভাড়া দীর্ঘদিন ধরে জন-অসন্তোষের উৎস। এই ট্র্যাজেডি রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ কঠোর করার সরকারি প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষের প্রতি ক্ষোভ বাড়াতে পারে। হংকং সরকার ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা দ্রুত পরিস্থিতির গুরুত্ব তুলে ধরে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ঘটনাটি আধা স্বশাসিত অঞ্চলের ওপর বেইজিংয়ের নিয়ন্ত্রণের এক সম্ভাব্য পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইউরোপ আক্রমণ করবে না রাশিয়া, লিখিত গ্যারান্টি দিতে প্রস্তুত: পুতিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সেন্ট পিটার্সবার্গের আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামে পুতিন। ছবি: সংগৃহীত
সেন্ট পিটার্সবার্গের আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামে পুতিন। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, তাঁর দেশ ইউরোপের কোনো দেশে আর আক্রমণ করবে না বলে লিখিত নিশ্চয়তা দিতেও প্রস্তুত। রাশিয়া ইউরোপ আক্রমণ করবে—এমন অভিযোগকে তিনি ‘মিথ্যা’ এবং ‘পুরোপুরি অর্থহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেকে রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট কলেকটিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশনের (সিএসটিও) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়ে পুতিন বলেন, ইউরোপে রুশ বাহিনীর হামলার পরিকল্পনার দাবি ‘হাস্যকর।’ তিনি বলেন, ‘সত্য হলো, আমরা কখনোই এমন ইচ্ছা পোষণ করিনি। কিন্তু যদি তারা আমাদের মুখ থেকে শুনতে চায়, তা হলে আমরা লিখিত নথি দেব। এতে কোনো আপত্তি নেই।’

ইউক্রেন আক্রমণের আগে বারবার অস্বীকার করার পরও ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন চালায়। সেই স্মৃতি থেকে ইউরোপীয় নেতারা পুতিনের এই নতুন আশ্বাস নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে পুতিন যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি খসড়া শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তাঁর মতে, এই পরিকল্পনা ‘আগামী দিনের চুক্তির ভিত্তি’ হতে পারে। তিনি বলেন, রাশিয়া ‘গুরুত্বপূর্ণ’ আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। তবে প্রয়োজন হলে যুদ্ধ চালিয়েও আরও এলাকা দখল করতে প্রস্তুত রয়েছে মস্কো।

পুতিন আবারও বলেন, যুদ্ধ থামাতে হলে সবচেয়ে মৌলিক শর্ত হলো দনবাসের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনাদের সম্পূর্ণ সরে যাওয়া, এমনকি যেসব এলাকায় বর্তমানে রুশ বাহিনী নেই, সেখান থেকেও। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘ইউক্রেনীয় সেনারা যে সব ভূখণ্ডে রয়েছে, সেখান থেকে তাদের সরে যেতে হবে। তবেই যুদ্ধ থামবে। যদি তারা না সরে, তবে আমরা সামরিক উপায়ে সেই লক্ষ্য অর্জন করব।’ ইউক্রেন বলছে, এমন সরে যাওয়া মানে কিয়েভের দিকে রাশিয়ার পথ পুরোপুরি খুলে দেওয়া।

পুতিন আরও ইঙ্গিত দেন যে, তিনি কিয়েভের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি। তবে আবারও দাবি তুলেছেন যে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সরকার আর বৈধ নয়। তাই তাদের সঙ্গে কোনো চুক্তি ‘আইনগতভাবে অসম্ভব।’ পুতিন অভিযোগ করেন, জেলেনস্কির মেয়াদ ২০২৪ সালের মে মাসে শেষ হওয়ার পর নির্বাচন না হওয়ায় কিয়েভ ‘শাসন করার অধিকার হারিয়েছে।’ তাঁর ভাষায়, “ইউক্রেনের নেতৃত্ব ভয় পেয়েছিল প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে, আর সেই ভুলের ফলেই প্রেসিডেন্টের বৈধতা হারিয়েছে।’

কিয়েভ বলেছে, যুদ্ধকালীন জরুরি আইনের কারণে নির্বাচন করা সম্ভব ছিল না। এ ছাড়া ইউক্রেনের সংসদ ফেব্রুয়ারিতে জেলেনস্কির বৈধতা বজায় রাখার পক্ষে বিপুল ভোটে প্রস্তাব পাস করেছে।

পুতিন দাবি করেন, যেহেতু জেলেনস্কির সরকার তাঁর দৃষ্টিতে ‘অবৈধ’, তাই ভবিষ্যৎ যে কোনো শান্তিচুক্তি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে হবে এবং একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রাশিয়ার দখল করা এলাকা স্বীকৃতি দিতে হবে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের প্রধান সহকারী আন্দ্রে ইয়ারমাক বৃহস্পতিবার আবারও জানান, জেলেনস্কি কোনোভাবেই ভূখণ্ড ছাড়তে রাজি নন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দ্য আটলান্টিক ম্যাগাজিনকে বলেন, ‘জেলেনস্কি যত দিন প্রেসিডেন্ট, তত দিন কেউ ভাববে না যে আমরা ভূখণ্ড দিয়ে দেব।’

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের জন্য ২৮ দফার একটি শান্তি প্রস্তাব প্রকাশ করে, যা রাশিয়ার জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক বলে সমালোচিত হয়। এতে ইউক্রেনকে বড় ধরনের ছাড় দিতে বলা হয়, যেমন ভূখণ্ড হারানো মেনে নেওয়া এবং ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা পরিত্যাগ করা। পরে ইউক্রেনের অনুরোধে পরিকল্পনার কিছু অংশ পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানান ইউক্রেনের প্রথম উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেরহি কিসলিতসা। বাতিল করা হয়েছে সেনা সদস্য সংখ্যা ৬ লাখে সীমিত রাখার প্রস্তাব এবং যুদ্ধাপরাধের সাধারণ ক্ষমা।

বৃহস্পতিবার জেলেনস্কি জানান, জেনেভায় পূর্ববর্তী আলোচনায় যে সূত্র নিয়ে কথা হয়েছে, তা চূড়ান্ত করতে ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিরা যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আগামী সপ্তাহেও অতিরিক্ত বৈঠক হবে, তবে বিস্তারিত জানাননি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল, যার মধ্যে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ, আগামী সপ্তাহে মস্কোতে যাওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে ইউক্রেন ও ইউরোপের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনা হবে।

পুতিন বলেন, মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে রাশিয়া তার নিজের ‘মূল ইস্যু’ উত্থাপন করবে। বিশেষত শান্তি পরিকল্পনার সেই অংশে, যেখানে বলা হয়েছে যে ওয়াশিংটন কেবলমাত্র ক্রিমিয়া ও ইউক্রেনের কয়েকটি অঞ্চলে রাশিয়ার বাস্তব নিয়ন্ত্রণকে স্বীকৃতি দিতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমাদের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা ঠিক এ বিষয়টিকেই কেন্দ্র করে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত