Ajker Patrika

শুল্ক নিয়ে গৃহদাহ, ট্রাম্পের বাণিজ্য পরামর্শককে ‘নির্বোধ’ বললেন মাস্ক

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৫: ০০
ইলন মাস্ক, ডোনাল্ড ট্রাম্প ও পিটার নাভারো। ছবি: সংগৃহীত
ইলন মাস্ক, ডোনাল্ড ট্রাম্প ও পিটার নাভারো। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন ইলন মাস্ক। বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক এ নিয়ে কড়া মন্তব্য করেছেন। এ ঘটনার পর শুল্কনীতি নিয়ে ট্রাম্প শিবিরে গৃহদাহের ইঙ্গিত পাচ্ছেন অনেকে। যদিও আজ বুধবার থেকেই পাল্টা শুল্ক কার্যকর শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইলন মাস্ক গতকাল মঙ্গলবার ট্রাম্পের বাণিজ্যবিষয়ক প্রধান পরামর্শক পিটার নাভারোকে সরাসরি ‘নির্বোধ’ ও ‘অকাট মূর্খ’ বলে আক্রমণ করেন। নাভারো সম্প্রতি এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে মাস্ককে ‘গাড়ি সংযোজনকারী’ আখ্যা দেন। তিনি বলেন, মাস্ক যা কিছু করেন, সবই তাঁর ‘নিজস্ব স্বার্থ রক্ষার’ জন্য। পরে কড়া ভাষায় এর প্রতিক্রিয়া জানান মাস্ক।

দীর্ঘদিন ধরে বাড়তি শুল্ক আরোপের বিরোধী ইলন মাস্ক। যদিও তিনি ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় বিপুল অর্থ (২৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি) দিয়েছেন এবং প্রেসিডেন্টের তথাকথিত ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সির’ (ডোজ) দায়িত্ব পেয়েছেন।

ইলন মাস্ক অবশ্য বেশ কিছুদিন ধরে হোয়াইট হাউসের বাণিজ্যনীতি নিয়ে তাঁর অসন্তোষের কথা নানাভাবে প্রকাশ করে আসছিলেন।

সম্প্রতি ইতালির ডানপন্থী উপপ্রধানমন্ত্রী মাত্তেও সালভিনি আয়োজিত এক সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দিয়ে ইলন মাস্ক আশা প্রকাশ করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ ‘কার্যকরভাবে একটি মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল’ তৈরি করে শূন্য শুল্কের পরিস্থিতিতে পৌঁছাবে।

এ ছাড়া মাস্ক তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে একটি ভিডিও শেয়ার করেন, যেখানে মুক্ত বাজার অর্থনীতির প্রবক্তা মিল্টন ফ্রিডম্যান একটি পেনসিল তৈরিতে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপকরণ ও শ্রমবণ্টনের উদাহরণ দিয়ে বিশ্বায়িত অর্থনীতির সুফল তুলে ধরেন।

গত সোমবার মাস্কের ভাই কিম্বাল এক্সে এক পোস্টে ট্রাম্পের শুল্ককে ‘আমেরিকান ভোক্তাদের ওপর একটি কাঠামোগত, স্থায়ী কর’ বলে অভিহিত করেন। তিনি আরও যোগ করেন, ‘ভোগের ওপর কর মানে কম ভোগ। যার মানে কম চাকরি।’ কিম্বাল টেসলা ও স্পেসএক্সের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য।

গত সপ্তাহে বিভিন্ন অঞ্চল ও দেশের পণ্যে ব্যাপক শুল্ক ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এর আগে থেকেই অবশ্য ট্রাম্প প্রশাসনে ইলন মাস্কের প্রভাব কমতে শুরু করেছিল। তাঁর রাজনৈতিক প্রভাব দ্রুত কমে আসছে। সম্প্রতি উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্বাচনে মাস্কের পছন্দের প্রার্থী বিপুল ব্যবধানে পরাজিত হন।

হোয়াইট হাউস গত সপ্তাহে নিশ্চিত করে, সরকারে ইলন মাস্কের ভূমিকা, ডোজের কাজ শেষ হলেই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সমাপ্ত হতে পারে। এই বিভাগের কার্যক্রম ২০২৬ সাল পর্যন্ত চলার কথা। ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইলন মাস্ক সম্ভবত খুব শিগগির ‘পুরো সময় তাঁর ব্যবসায় মনোযোগ দেবেন’।

এদিকে, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে মাস্কের কিছু ব্যবসায়িক উদ্যোগ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যযুদ্ধ এবং সরকারের মধ্যে মাস্কের ব্যয় সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে নাগরিকদের ক্ষোভের কারণে চলতি বছরের শুরু থেকে টেসলার শেয়ারের দাম ৩৫ শতাংশের বেশি কমে গেছে।

গত মাসে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ারকে লেখা একটি বেনামি চিঠিতে টেসলা সতর্ক করে দেয় যে বাণিজ্যযুদ্ধ কোম্পানির ওপর প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপের কারণ হতে পারে এবং আমেরিকায় গাড়ি তৈরির খরচ বাড়তে পারে। বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারক এই কোম্পানির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার চীন। সেখানে টেসলার একটি বিশাল কারখানা রয়েছে। মাস্ক কয়েক সপ্তাহ আগেই দেশটিতে ২০ কোটি ডলারের একটি ব্যাটারি কারখানা উদ্বোধন করেছেন।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ার কারণে স্পেসএক্সের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পরিষেবা স্টারলিংকের সম্ভাব্য সম্প্রসারণও ব্যাহত হচ্ছে। অনেক দেশের সঙ্গে চুক্তি ঝুলে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে ইলন মাস্কের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল ফিন্যান্সিয়াল টাইমস। তবে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেননি। নাভারোও মার্কিনবাণিজ্য নীতিতে মাস্কের হস্তক্ষেপ নিয়ে কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি।

নীতিগত বিষয়ে ট্রাম্প শিবিরে বিরোধের বিষয়ে জানতে চাইলে হোয়াইট হাউস প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট এক বিবৃতিতে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে জানিয়েছে, ‘যা-ই হোক না কেন, আমরা ইতিহাসের সবচেয়ে স্বচ্ছ প্রশাসন। আমাদের মতবিরোধ যা আছে, তা প্রকাশ্যেই।’

তবে পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, এই ঘটনা মাস্ক এবং ট্রাম্পের মধ্যে ক্রমবর্ধমান দূরত্বের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই দূরত্ব ভবিষ্যতে মার্কিন রাজনীতি ও অর্থনীতিতে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি করতে পারে।

উল্লেখ্য, আজ বুধবার (৯ এপ্রিল) ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক কার্যকর হয়ে গেছে। ট্রাম্প চীনের প্রতিশোধমূলক শুল্কের জবাবে চীনা পণ্যে অতিরিক্ত, অর্থাৎ মোট ১০৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। এর জেরে আজ সকালে এশিয়ার শেয়ারবাজারে ব্যাপক পতন দেখা গেছে। প্রভাব পড়েছে অন্যান্য বাজারেও।

ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের আওতার বাইরে রয়েছে জ্বালানি, ওষুধ ও সেমিকন্ডাক্টরের মতো কয়েকটি খাত। তবে ভারতের এনডিটিভির সংবাদে বলা হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প শিগগিরই ওষুধ খাতে বড় ধরনের শুল্ক আরোপ করতে পারেন। যেখানে ভারতের ওষুধ রপ্তানির মূল বাজার যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারত ৮৭০ কোটি ডলারের ওষুধ রপ্তানি করেছে।

গত ২ এপ্রিল ন্যূনতম ১০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডেনাল্ড ট্রাম্প। মোট ৬০টি দেশকে তিনি ‘বড় অপরাধী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে কী হারে শুল্ক আরোপ করছে, তা নিরূপণ করে তাদের ওপর অর্ধেক হারে শুল্ক আরোপ করেন তিনি।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত