Ajker Patrika

ভারতের সঙ্গে সমঝোতার জন্য আন্তর্জাতিক ‘হস্তক্ষেপ’ চায় পাকিস্তান

অনলাইন ডেস্ক
গতকাল ৭ জুন যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষ করে আজ রোববার লন্ডনে পৌঁছেছে পাকিস্তানের প্রতিনিধিদল। ছবি: এক্স
গতকাল ৭ জুন যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষ করে আজ রোববার লন্ডনে পৌঁছেছে পাকিস্তানের প্রতিনিধিদল। ছবি: এক্স

ভারতের সঙ্গে সমঝোতার জন্য বৈশ্বিক শক্তিগুলোর ‘হস্তক্ষেপ’ চেয়েছে পাকিস্তান। রোববার (৮ জুন) পাকিস্তানের একটি উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক দল লন্ডনে পৌঁছেছে। সেখানে ভারতের সঙ্গে চলমান ইস্যুতে, বিশেষত—সিন্ধু পানি চুক্তি ও সীমান্তে উত্তেজনা নিরসনে প্রতিনিধিদলটি তাদের অবস্থান তুলে ধরবে।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর আগে চলতি মাসের শুরুতে পাকিস্তানের কিছু কূটনৈতিক যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েছিলেন। এই সফরের উদ্দেশ্য ছিল ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাত নিয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা এবং নয়াদিল্লির ক্রমবর্ধমান লবিংয়ের মোকাবিলা করা। সেই সফরের অংশ হিসেবেই দলটি আজ রোববার লন্ডন পৌঁছেছে এবং এরপর ব্রাসেলসেও যাবে।

পাকিস্তানের এই প্রতিনিধিদলে রয়েছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি, হিনা রাব্বানি খার ও খুররম দস্তগির; সিনেটর শেরি রেহমান, মুসাদিক মালিক, ফয়সাল সুবজওয়ারি এবং বুশরা আনজুম বাট। এ ছাড়া রয়েছেন সাবেক পররাষ্ট্রসচিব জলিল আব্বাস জিলানি ও তেহমিনা জানজুয়া।

যুক্তরাজ্যে পৌঁছানোর পর জিও নিউজকে খুররম দস্তগির বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হয়েছে। আমাদের লক্ষ্যও ছিল এটাই। যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝানো যে ভারতের সঙ্গে চলমান উত্তেজনায় তাদের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। আমরা আমাদের এই উদ্দেশ্য সফল করেছি।’

পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সাবেক এই সদস্য আরও বলেন, ‘আমাদের মন্ত্রীরাও এই অবস্থান তুলে ধরেছেন, যদি ভারত আবার আলোচনায় না আসে, তাহলে সিন্ধু পানি চুক্তি নিয়ে ভারতের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের কারণে উপমহাদেশে একটি যুদ্ধ অনিবার্য। সিন্ধু পানিচুক্তি নিয়ে যে সমস্যা, তা এখন আমাদের জন্য জীবন-মরণ পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে।’

কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তান সিনেটর ফয়সাল সুবজওয়ারিও জিও নিউজকে বলেন, ‘আমরা বৈশ্বিক শক্তিগুলোর মাধ্যমে ভারতকে জানাতে চাই, পারমাণবিক শক্তিধর দুটি প্রতিবেশী দেশ এমন বিপজ্জনক পরিবেশে এগিয়ে যেতে পারে না। এটি কেবল এই অঞ্চলের জন্যই নয়, বিশ্বের শান্তির জন্যও ক্ষতিকারক।’

যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত শেরি রেহমান বৈঠকগুলোকে ‘খুবই ইতিবাচক’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘তাঁরা আমাদের কথা শুনেছেন ও ভারতের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের কারণে কী কী ঝুঁকি তৈরি হয়েছে তা বুঝতে পেরেছেন। তাঁরা সবাই এই বিষয়েও একমত হয়েছেন যে পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা ভুল।’ তিনি ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরকে ‘গাজার পর খোলা আকাশের নিচে বিশ্বের বৃহত্তম কারাগার’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

পিপিপি নেতা শেরি রেহমান নয়াদিল্লি কর্তৃক বিভিন্ন দেশে পাঠানো প্রতিনিধিদলের প্রসঙ্গে বলেন, ‘ভারতীয়রা যা খুশি করুক, তাদের জন্য শুভকামনা। পাকিস্তান সম্পর্কে খারাপ কথা বলা ছাড়া তাদের আর কী মিশন হতে পারে? তবে আমরা ভারতের সম্পর্কে খারাপ কথা বলতে যুক্তরাষ্ট্রে যাইনি, বরং পাকিস্তানের গল্প বলতে গিয়েছিলাম।’

সিনেটর বুশরা আনজুম বাট জানান, পেহেলগাম হামলার জেরে ভারত একতরফাভাবে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করেছে। এ নিয়ে পাকিস্তানের উদ্বেগের বিষয়ে নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটন উভয় স্থানেই ‘চমৎকার’ সাড়া পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, ‘যদি এখন সিন্ধু পানি চুক্তি উপেক্ষা করা হয়, তবে ভবিষ্যতে কোনো চুক্তিই টিকে থাকবে না।’

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জলিল আব্বাস জিলানি বলেন, ‘আমাদের বার্তা ছিল, ভারত পাকিস্তানের মতো একটি শান্তিকামী দেশে আগ্রাসন চালিয়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় বৈশ্বিক শক্তিগুলোকে হস্তক্ষেপ করতেই হবে।’ তিনি দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলোর শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য ইসলামাবাদের আকাঙ্ক্ষা পুনর্ব্যক্ত করেন।

এর আগে ৪ জুন, বিলাওয়ালের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি নিউইয়র্কে তাদের দুই দিনের সফর শেষ করে। সেখানে তারা জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নির্বাচিত ও স্থায়ী সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এরপর তারা ওয়াশিংটনে বেশ কয়েকজন মার্কিন কংগ্রেস সদস্যের সঙ্গে দেখা করেন—যার মধ্যে হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির চেয়ারম্যানও ছিলেন। পাশাপাশি থিংক ট্যাংকগুলোর সঙ্গেও বৈঠক করেন।

আরেকটি প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী সৈয়দ তারিক ফাতেমির নেতৃত্বে ২ থেকে ৪ জুন পর্যন্ত মস্কো সফর করে। তারা রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ও প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের একজন সিনিয়র উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে।

অন্যদিকে, ভারতও সাতজন সর্বদলীয় প্রতিনিধি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সফর করছে। এর পাশাপাশি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, যাতে দেশের সন্ত্রাসবাদবিরোধী অবস্থান তুলে ধরা যায় এবং ‘ভারতের জাতীয় ঐক্য’ তুলে ধরা যায়। ৫ জুন, ভারতীয় প্রতিনিধিদলটি মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভান্সের সঙ্গে দেখা করে।

ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে রয়েছেন কংগ্রেস সংসদ সদস্য শশী থারুর এবং এর সদস্য হিসেবে রয়েছেন শম্ভবী চৌধুরী (লোক জনশক্তি পার্টি), সরফরাজ আহমেদ (ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা), জি এম হারিশ বালায়োগী (তেলুগু দেশম পার্টি), শশাঙ্ক মনি ত্রিপাঠি, তেজস্বী সূর্য এবং ভুবনেশ্বর কলিতা (সবাই বিজেপি থেকে), মল্লিকার্জুন দেবদা (শিবসেনা), যুক্তরাষ্ট্রে সাবেক ভারতীয় রাষ্ট্রদূত তরণজিৎ সিং সান্ধু এবং শিবসেনা সংসদ সদস্য মিলিন্দ দেওরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত