Ajker Patrika

দুর্ধর্ষ উপায়ে ট্রেন ছিনতাইয়ের ভিডিও প্রকাশ করল বেলুচ বিদ্রোহীরা

আপডেট : ১২ মার্চ ২০২৫, ১৯: ১৬
ছবিটি ভিডিও থেকে নেওয়া
ছবিটি ভিডিও থেকে নেওয়া

পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিম বেলুচিস্তানে রেলপথে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ট্রেনে হামলা চালিয়েছিল বিদ্রোহীরা। এই হামলার দায় স্বীকার করা বালুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) ট্রেন ছিনতাইয়ের দৃশ্য সংবলিত একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য মতে, ট্রেনটিকে একটি টানেলের প্রবেশপথে আটকে দিয়ে বিদ্রোহীরা এটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। এতে ৪৫০ জনের বেশি যাত্রী ছিলেন। তবে কতজন এখনো জিম্মি আছেন—তা নিশ্চিত করা যায়নি। পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনী ট্রেন যাত্রীদের উদ্ধারে সর্বাত্মক অভিযান চালাচ্ছে।

এদিকে বিএলএ-এর প্রকাশ করা ১ মিনিট ২৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, টানেলে প্রবেশের আগে ট্রেনটির অগ্রভাগে একটি বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ভারী অস্ত্র নিয়ে বিদ্রোহীরা এ সময় আশপাশের পাহাড়ে অবস্থান করছিল। আরও দেখা যায়, ট্রেনের যাত্রীরা পাহাড়ের পটভূমিতে মাটিতে বসে আছেন। আর বিদ্রোহীরা অস্ত্র হাতে তাদের পাহারা দিচ্ছে।

দুই দিনের অভিযানে পাকিস্তানি বাহিনী এখন পর্যন্ত ১৯০ জন জিম্মিকে মুক্ত করতে পেরেছে। মুক্তি হওয়া যাত্রীরা জানিয়েছেন, নিরাপদ স্থানে পৌঁছাতে তাদের দীর্ঘ পথ হাঁটতে হয়েছে। মায়ের সঙ্গে ওই ট্রেনে ভ্রমণ করছিলেন মুহাম্মদ বিলাল। সংবাদ সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন, ‘আমাদের কিভাবে পালাতে হয়েছে, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। এটা ছিল ভয়াবহ।’

এই হামলার দায় সঙ্গে সঙ্গেই স্বীকার করেছে বালুচ লিবারেশন আর্মি। তারা দাবি করেছে, বন্দী সদস্যদের মুক্তির বিনিময়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বন্দিবিনিময় চায়।

পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে দরিদ্র বেলুচিস্তানে বিদ্রোহীদের দমনে লড়াই করছে। তবে ২০২১ সালে তালেবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে দেশটির পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলে সহিংসতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে।

বিএলএ অভিযোগ করে আসছে, ওই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ বাইরের লোকেরা শোষণ করছে। তাই তারা পাকিস্তানের অন্যান্য অঞ্চল থেকে আগত ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে হামলা বাড়িয়েছে।

গত বছরেও বিদ্রোহীরা একযোগে রাতভর হামলা চালিয়েছিল। সে সময় তারা একটি প্রধান মহাসড়কের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল এবং অন্য জাতিগোষ্ঠীর যাত্রীদের হত্যা করে দেশজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল।

পাঞ্জাবি ও সিন্ধি শ্রমিকদের পাশাপাশি নিরাপত্তা বাহিনী এবং বিদেশি অবকাঠামো প্রকল্পগুলোকেও তারা নিয়মিতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যুদ্ধবিরতিতে ‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ হামাস ফেরত দিল ১৫ জিম্মির মরদেহ, বাকি ১৩

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ৫৯
আরও দুই ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ ফেরত দিয়েছে হামাস। ছবি: সংগৃহীত
আরও দুই ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ ফেরত দিয়েছে হামাস। ছবি: সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস গতকাল মঙ্গলবার রাতে রেডক্রসের মাধ্যমে দুটি কফিন ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করেছে। এই দুটি কফিনে কিব্বুত্জ নীর ওজের বাসিন্দা আড়ি জালমান জালমানোভিচ (৮৫) এবং তামির আদারের (৩৮) মরদেহ ছিল। এই মরদেহ দুটি ফেরত দেওয়ার পর হামাস জানিয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে চরম প্রতিকূলতার মধ্যেও। এ নিয়ে মোট ১৫টি মরদেহ ফেরত দেওয়া হলো। এখনো বাকি আরও ১৩ জনের মরদেহ।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলের খবরে বলা হয়েছে, এই দুই মরদেহ রেডক্রস দক্ষিণ গাজা অঞ্চলে হামাসের কাছ থেকে গ্রহণ করে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে। সেনারা কফিনগুলো পরিদর্শন করার পর তা ইসরায়েলের পতাকায় ঢেকে সংক্ষিপ্ত একটি অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয়, যার নেতৃত্ব দেন ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রধান ধর্মযাজক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এয়াল ক্রিম।

এরপর কফিনগুলো গাজা থেকে তেল আবিবের আবু কাবির ফরেনসিক ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয় শনাক্তকরণ এবং মৃত্যুর কারণ নির্ধারণের জন্য। কয়েক ঘণ্টা পরে দেহের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর সেনা প্রতিনিধি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। গত মঙ্গলবার হামাসের সামরিক শাখা ঘোষণা করেছিল যে তারা আরও দুই বন্দীর দেহ ফিরিয়ে দেবে। তারা জানিয়েছিল, মরদেহগুলো ‘আজ উপত্যকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে’ এবং তাদের পরিচয় প্রকাশ করেনি।

এদিকে তুর্কি ও কাতারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে হামাস জানিয়েছে, ইসরায়েল শান্তিচুক্তি মেনে চলছে না এবং রাফাহ সীমান্ত পোর্ট খোলার বিষয়ে এড়িয়ে চলছে। গতকাল মঙ্গলবার হামাসের দেওয়া এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়েছে। হামাস জানিয়েছে, ‘রাফাহ সীমান্ত বন্ধ রাখা হচ্ছে, সেখান দিয়ে অসুস্থ ও আহতদের যাতায়াতের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না এবং গাজার মধ্যে মানবিক সহায়তা প্রবেশের বাধা দেওয়া হচ্ছে। এটি শান্তিচুক্তির লঙ্ঘন।’

একই সঙ্গে হামাস আরও জানিয়েছে, এখনো তারা ‘শান্তিচুক্তি মেনে চলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’। এর আগেও হামাস কারিগরি অক্ষমতা দেখিয়ে মরদেহ যথাসময়ে ফেরত দেওয়ার বিষয়ে অপারগতা প্রকাশ করে জানায়, তারা মরদেহ ফেরত দিতে ‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’। কিন্তু বিষয়টিকে অজুহাত হিসেবে নিয়ে ইসরায়েল ক্রমাগত যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেই যাচ্ছে।

এমনকি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত সোমবার গর্ব করে জানিয়েছেন, তাঁর দেশের সেনাবাহিনী গত রোববার গাজা উপত্যকায় ১৫৩ টন বোমা বর্ষণ করেছে, যা কার্যত যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের স্বীকারোক্তি। ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেটের শীতকালীন অধিবেশনের উদ্বোধনী ভাষণে নেতানিয়াহু বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির সময় আমাদের দুই সৈনিক শহীদ হয়েছে…আমরা তাদের ওপর ১৫৩ টন বোমা বর্ষণ করেছি এবং গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে ডজনখানেক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ট্রাম্পের ২৫০ মিলিয়ন ডলারের বলরুম তৈরিতে অর্থ জোগাচ্ছে কারা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ৫৯
ট্রাম্পের শখের বলরুম নির্মাণে হোয়াইট হাউসের একাংশ ভাঙা হচ্ছে। ছবি: এএফপি
ট্রাম্পের শখের বলরুম নির্মাণে হোয়াইট হাউসের একাংশ ভাঙা হচ্ছে। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে নতুন এক বিশাল বলরুম নির্মাণ করছেন। এই বলরুম তৈরিতে খরচ হবে প্রায় ২৫ কোটি ডলার। তবে এই বিপুল অর্থের বড় অংশ আসছে গোপন দাতা ও কোম্পানির কাছ থেকে, যাদের পরিচয় এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

স্থানীয় সময় গত সোমবার হোয়াইট হাউসের ইস্ট উইংয়ে ৯০ হাজার বর্গফুট আয়তনের এই বিলাসবহুল বলরুমের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি নিজে এর একটি বড় অংশের অর্থ দেবেন। তবে বেশ কিছু ‘অজ্ঞাত’ দাতা অনুদান দিতে রাজি হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এই অনুদানের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের আইন ও নৈতিকতা বিশেষজ্ঞরা। সাবেক হোয়াইট হাউস নীতিনৈতিকতা আইনজীবী রিচার্ড পেইন্টার বলেছেন, ‘এটা নৈতিকতার দিক থেকে খুব বিপজ্জনক। হোয়াইট হাউসে প্রবেশাধিকার বিক্রি করে অর্থ তোলা হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠান সরকারের কাছ থেকে কিছু না কিছু সুবিধা পাওয়ার আশাতেই অনুদান দিচ্ছে।’

১৫ অক্টোবর হোয়াইট হাউসে সম্ভাব্য দাতাদের জন্য এক নৈশভোজের আয়োজন করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বড় বড় মার্কিন কোম্পানির প্রধানেরা—ব্ল্যাকস্টোন, ওপেনএআই, মাইক্রোসফট, আমাজন, গুগল, প্যালান্টির, লকহিড মার্টিন ও কয়েনবেসের কর্মকর্তারা। ছিলেন নিউইয়র্ক জেটস ফুটবল দলের মালিক উডি জনসন এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মালিক গ্লেজার পরিবারও।

সিবিএস নিউজের হাতে পাওয়া এক নথিতে দেখা গেছে, অনুদানদাতাদের ‘বিশেষ স্বীকৃতি’ দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। এমনকি তাদের নাম বলরুমের ভেতরের দেয়ালে খোদাই করে রাখার বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে।

এখন পর্যন্ত শুধু একটি কোম্পানির নাম প্রকাশ পেয়েছে—ইউটিউব। আদালতের নথি অনুযায়ী, ট্রাম্পের সঙ্গে মামলার নিষ্পত্তির অংশ হিসেবে ইউটিউব দিচ্ছে ২ কোটি ২০ লাখ ডলার। ২০২১ সালে ক্যাপিটল হামলার পর ট্রাম্পের ইউটিউব অ্যাকাউন্ট স্থগিত করা হয়েছিল, সেই মামলা নিষ্পত্তির অংশ এটি।

বাকি দাতাদের নাম ও অনুদানের পরিমাণ এখনো প্রকাশ করা হয়নি। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, সব অনুদান পরিচালনা করবে ‘ট্রাস্ট ফর দ্য ন্যাশনাল মল’ নামের একটি অলাভজনক সংস্থা। তারা হোয়াইট হাউস ও ন্যাশনাল পার্কের উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ সংগ্রহ করে।

হোয়াইট হাউসের দাবি, এতে কোনো অনিয়ম নেই এবং ভবিষ্যতের প্রশাসনও এই বলরুম ব্যবহার করতে পারবে। ফলে করদাতাদের এক পয়সাও খরচ হবে না। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এটি এক ধরনের ‘পে-টু-প্লে’ ব্যবস্থা; অর্থাৎ অনুদানের বিনিময়ে রাজনৈতিক প্রভাব বা সুবিধা নেওয়ার পথ খুলে দেওয়া।

রিচার্ড পেইন্টার বলেন, ‘আগে জায়গা কম থাকায় সবাইকে আমন্ত্রণ দেওয়া যেত না, সেটা ভালো ছিল। কিন্তু এখন এই বিশাল বলরুম রাজনৈতিক তহবিল সংগ্রহের বড় ক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখানে সরাসরি কোনো ঘুষ বা চুক্তির প্রমাণ দেওয়া যাবে না, তবে ট্রাম্প প্রশাসন সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে।’

অন্যদিকে সাবেক হোয়াইট হাউস শেফ মার্টিন মঞ্জিয়েলো বলছেন, ‘এই বিনিয়োগ শেষ পর্যন্ত খরচ বাঁচাবে। আগে বড় অনুষ্ঠানের জন্য বাইরে তাঁবু বসাতে হতো, যার খরচ এক মিলিয়ন ডলারের বেশি পড়ত।’

নতুন বলরুমটি হবে একসঙ্গে প্রায় এক হাজার মানুষের আসন সংবলিত, যা আগে পরিকল্পনা ছিল ৬৫০ জনের জন্য। ট্রাম্পের মতে, এটি শুধু বিলাসিতা নয়, বরং রাষ্ট্রীয় নৈশভোজ ও আন্তর্জাতিক আয়োজনে প্রয়োজনীয় একটি সংযোজন। এখনো প্রশ্ন রয়ে গেছে—এই কোটি কোটি ডলারের অনুদান আসছে কার কাছ থেকে, আর এর বিনিময়ে তারা কী পেতে চায়?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সিঙ্গাপুরে ফিলিস্তিনপন্থী মিছিল করে গ্রেপ্তার, বেকসুর খালাস পেলেন ভাইরাল ৩ তরুণী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ৩৪
(বাঁ থেকে) সিতি আমিরাহ মোহাম্মদ আসরোরি, কোকিলা আন্নামালাই এবং মোসাম্মদ সাবিকুন নাহার। ছবি: কোকিলা আন্নামালাই
(বাঁ থেকে) সিতি আমিরাহ মোহাম্মদ আসরোরি, কোকিলা আন্নামালাই এবং মোসাম্মদ সাবিকুন নাহার। ছবি: কোকিলা আন্নামালাই

ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্রেসিডেন্টের কার্যালয় পর্যন্ত পদযাত্রার আয়োজন করেছিলেন তিন তরুণী। তবে বেআইনি তৎপরতার অভিযোগে তাঁদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার তিনজনকেই বেকসুর খালাস দিয়েছেন সিঙ্গাপুরের একটি আদালত। ‘অবৈধ মিছিল’ আয়োজনের জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। বিচারক রায়ে বলেছেন, তাঁদের কর্মকাণ্ড অভিযোগের সম্পূর্ণ ধারা পূরণ করেনি।

সামাজিক সংগঠক মোসাম্মদ সাবিকুন নাহার, কনটেন্ট ক্রিয়েটর সিতি আমিরাহ মোহাম্মদ আসরোরি এবং কোকিলা আন্নামালাই—এই তিনজনের বিরুদ্ধে গত ফেব্রুয়ারিতে ইস্তানার (প্রেসিডেন্টের কার্যালয়) আশপাশে পুলিশের অনুমতি ছাড়া একটি পদযাত্রা আয়োজনের অভিযোগ আনা হয়েছিল। সেই পদযাত্রায় প্রায় ৭০ জন মানুষ অংশ নেন এবং তাঁরা ফিলিস্তিনি প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে তরমুজের মতো রং করা ছাতা বহন করেন।

আদালত রায়ে বলেছেন, যদিও নারীরা পদযাত্রাটি আয়োজন করেছিলেন, তবে তাঁরা ‘জানতেন না’ যে ইস্তানার চারপাশের রাস্তাটি একটি সংরক্ষিত এলাকা। বিচারক উল্লেখ করেন, তাঁরা একটি সাধারণ ফুটপাত ব্যবহার করেছিলেন এবং সেখানে কোনো নিষেধাজ্ঞার চিহ্ন ছিল না। বিচারক মন্তব্য করেন, ‘প্রমাণ থেকে স্পষ্ট, তাঁরা তিনজনই আইন ভাঙা থেকে নিজেদের বিরত রাখার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছিলেন।’

দোষী সাব্যস্ত হলে এই তিন তরুণীর প্রত্যেকের ১০ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার পর্যন্ত জরিমানা বা ছয় মাসের কারাদণ্ড হতে পারত।

আদালতের রায়ে মুক্তি পাওয়ার পর সমর্থকদের সঙ্গে তিন তরুণী। ছবি: কোকিলা আন্নামালাই
আদালতের রায়ে মুক্তি পাওয়ার পর সমর্থকদের সঙ্গে তিন তরুণী। ছবি: কোকিলা আন্নামালাই

খালাস পাওয়ার পর অধিকারকর্মী কোকিলা আন্নামালাই বিবিসিকে জানিয়েছেন, এই অপ্রত্যাশিত রায় সিঙ্গাপুরের অধিকারকর্মীদের মধ্যে ‘নতুন শক্তি এবং আশা’ জাগিয়ে তুলবে। তিনি বলেন, তাঁরা সাজার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত ছিলেন এবং খালাস পাওয়াটা ‘আশ্চর্যজনক’। তিনি আরও যোগ করেন, ‘প্রথমত, আমাদের অভিযুক্তই করা উচিত ছিল না।’

এ মামলাটি সিঙ্গাপুরে ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। আদালতে শুনানিতে ফিলিস্তিনি পতাকার রঙে পোশাক পরে এবং কেফিয়াহ স্কার্ফ পরে এই তিন তরুণীর উপস্থিতি অনলাইন জগতে ভাইরাল হয়েছিল।

সিঙ্গাপুরে জনসমাবেশের বিষয়ে কঠোর নিয়ম রয়েছে এবং কোনো কারণ প্রচারের জন্য পুলিশি অনুমতি বাধ্যতামূলক। কর্তৃপক্ষ কার্যকরভাবে ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ-সম্পর্কিত সব জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে। কারণ, তাদের মতে, এই ধরনের ঘটনা ‘জনশৃঙ্খলার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে’।

যদিও সরকার দাবি করে, এই নিয়মগুলো দেশে শান্তি ও ঐক্য বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয়। সমালোচকেরা মনে করেন, এগুলো বাক্‌স্বাধীনতা দমন করারই কৌশল।

এদিকে সিঙ্গাপুরের প্রসিকিউটরিয়াল অফিস জানিয়েছে, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে। পুলিশ ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ-সম্পর্কিত অন্যান্য অফলাইন এবং অনলাইন ইভেন্ট নিয়েও তদন্ত শুরু করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দীর্ঘ বিরতির পর একাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল কিমের কোরিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ৪১
কয়েক মাসের বিরতির পর আবারও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া। ছবি: সংগৃহীত
কয়েক মাসের বিরতির পর আবারও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া। ছবি: সংগৃহীত

উত্তর কোরিয়া তাদের পূর্ব উপকূলের জলসীমায় একাধিক স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে বলে জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনী। বিগত কয়েক মাসের মধ্যে এটাই উত্তর কোরিয়ার প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ। আজ বুধবার সকালে এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ছোড়া হয়। খবর আল জাজিরার।

এই ক্ষেপণাস্ত্র এমন এক সময়ে ছোড়া হলো, যার এক সপ্তাহ পরই দক্ষিণ কোরিয়ার গিয়োংজু শহরে শুরু হতে যাচ্ছে এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) সম্মেলন। সেখানে যোগ দেবেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ বিশ্বের শীর্ষ নেতারা।

দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর বরাতে রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইয়োনহাপ জানিয়েছে, ‘আমরা কয়েকটি বস্তু শনাক্ত করেছি, যা স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বলে ধারণা করা হচ্ছে। এগুলো পূর্ব সাগর (জাপান সাগর নামেও পরিচিত) অভিমুখে নিক্ষেপ করা হয়।’ সিউলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার (২১৭ মাইল) পথ অতিক্রম করেছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ বাহিনী কমান্ড এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘অতিরিক্ত নিক্ষেপের সম্ভাবনা মাথায় রেখে আমরা নজরদারি বাড়িয়েছি এবং যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করছি। সেনাবাহিনী প্রস্তুত রয়েছে।’

ইয়োনহাপের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সর্বশেষ উত্তর কোরিয়া ৮ ও ২২ মে স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল। অর্থাৎ এটাই দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা। তিনি গত জুনে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বিশেষজ্ঞরা আগেই সতর্ক করেছিলেন, এপেক সম্মেলনের আগে বা চলাকালীন সময় উত্তর কোরিয়া উসকানিমূলক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাতে পারে, যাতে নিজেদের পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের প্রচেষ্টা জোরদার করা যায়।

এর আগে চলতি মাসের শুরুতে পিয়ংইয়ংয়ে অনুষ্ঠিত বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন দেশটির নতুন দূরপাল্লার ‘হোয়াসং-২০’ আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করেন। একে উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র বলা হচ্ছে। ওই কুচকাওয়াজে চীন, রাশিয়া ও অন্যান্য দেশের উচ্চপর্যায়ের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।

দেশটির শাসক ওয়ার্কার্স পার্টির ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এই প্যারেডে কিম জং-উনের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক কূটনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি এবং পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম উন্নত অস্ত্র তৈরির ধারাবাহিক প্রচেষ্টা স্পষ্ট হয়। পিয়ংইয়ং বহুদিন ধরে তথাকথিত আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অস্ত্র উন্নয়ন চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার সম্ভাব্য হামলা ঠেকাতে এসব অস্ত্র তৈরি জরুরি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে কিম জং-উনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। সম্প্রতি তিনি জানিয়েছেন, চলতি বছর আবারও কিমের সঙ্গে দেখা করার আশা করছেন। অন্যদিকে উত্তর কোরিয়া জানিয়েছে, কিম জং-উন ভবিষ্যতে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে আগ্রহী, তবে শর্ত হলো পিয়ংইয়ং কখনোই তাদের পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগ করবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত