Ajker Patrika

সিরিয়ায় ব্যাপক হুমকির মুখে রুশ ঘাঁটি, দামেস্কে ইরানি দূতাবাসে হামলা

অনলাইন ডেস্ক
সিরিয়ার তারতুস বন্দর। ছবি: সংগৃহীত
সিরিয়ার তারতুস বন্দর। ছবি: সংগৃহীত

সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের আক্রমণের মুখে পতন হয়েছে বাশার আল-আসাদ সরকারের। শক্ত ও কার্যকর কোনো প্রশাসন না থাকায় দেশটি এখন এক ধরনের অনিশ্চিয়তা ও অস্থিরতার মধ্যে আছে। এই অবস্থায় রাজধানী দামেস্কে ইরানের দূতাবাসে হামলার ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া, বাশার আল-আসাদের আরেক মিত্র দেশ রাশিয়ার সেনাঘাঁটিও হুমকির মুখে পড়েছে।

ইরানি গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, দামেস্কে ইরানের দূতাবাসে হামলা হয়েছে। সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম আল আরাবিয়া শেয়ার করা একটি ভিডিওতে দূতাবাস ভবনের বাইরের ভাঙচুরের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এমনকি ভাবনের জানালাগুলো ভাঙা এবং ঘরের ভেতরে কাগজপত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে এমন দৃশ্যও দেখা গেছে।

ফুটেজে আরও দেখা গেছে, ভবনের গায়ে ইরানের প্রয়াত কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলাইমানি এবং হিজবুল্লাহর প্রয়াত নেতা হাসান নাসরুল্লাহর ছবি সম্বলিত বড় একটি ব্যানার জনতা ছিঁড়ে ফেলছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স প্রকাশিত নিচের ছবিতে ভবনের সামনের অংশ দেখা যাচ্ছে, যেখানে ওই দুজনের ছবিটি স্পষ্টতই ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে।

এদিকে, সিরিয়ায় আল-আসাদ সরকারের পতনের কারণে দেশটিতে অবস্থিত দুটি গুরুত্বপূর্ণ রুশ সামরিক স্থাপনা এবং মধ্যপ্রাচ্যে মস্কোর উপস্থিতি মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে বলে রুশ যুদ্ধবিষয়ক ব্লগারেরা সতর্ক করেছেন। বিদ্রোহীদের অগ্রগতি মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব এবং এই অঞ্চলে ভূমধ্যসাগর ও আফ্রিকা জুড়ে শক্তি প্রদর্শনের সক্ষমতাকে দুর্বল করে দিয়েছে।

পাশাপাশি, এটি প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য একটি বিব্রতকর ধাক্কা হিসেবে কাজ করতে পারে, যিনি সিরিয়ায় রাশিয়ার হস্তক্ষেপকে নিজ দেশের বাইরে প্রভাব বিস্তারের এবং পশ্চিমাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার একটি উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করে থাকেন। তবে রুশ যুদ্ধবিষয়ক ব্লগারেরা বলেছেন, সবচেয়ে তাৎক্ষণিক হুমকি হলো—সিরিয়ার লাতাকিয়া প্রদেশে রাশিয়ার হেমেইমিম বিমানঘাঁটি এবং উপকূলীয় তারতুস নৌঘাঁটির ভবিষ্যৎ।

তারতুসের ঘাঁটি ভূমধ্যসাগরে রাশিয়ার একমাত্র মেরামত ও সরবরাহকেন্দ্র এবং মস্কো সিরিয়াকে আফ্রিকায় সামরিক ঠিকাদারদের যাতায়াতের একটি কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। প্রভাবশালী রুশ যুদ্ধবিষয়ক ব্লগার ‘রাইবার’—যিনি রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘনিষ্ঠ—বলেছেন, মস্কোর বাহিনী একটি গুরুতর হুমকির সম্মুখীন।

রাইবার বলেন, ‘বাস্তবে আমাদের বুঝতে হবে যে, বিদ্রোহীরা থামবে না। তারা রুশ ফেডারেশনের (সিরিয়ায়) প্রতিনিধিদের সর্বোচ্চ পরাজয় এবং সর্বোচ্চ খ্যাতিগত ও শারীরিক ক্ষতি করার চেষ্টা করবে, বিশেষ করে আমাদের সামরিক ঘাঁটিগুলো ধ্বংস করতে চেষ্টা করতে পারে তারা।’

রাশিয়ার যুদ্ধবিষয়ক আরেক ব্লগার ‘ফাইটারবম্বার’ বলেছেন, সিরিয়ায় মস্কোর বাহিনী মারাত্মকভাবে অরক্ষিত এবং হেমেইমিম বিমানঘাঁটি হারানো মানে বিমান হামলা চালানোর সক্ষমতা হারানো। তিনি বলেন, ‘হেমেইমিম বিমানঘাঁটি কোনো বহুতল শিল্প প্রকল্প নয়। এটি একটি মাঠ, যার ওপরে খুব সামান্য উঁচু স্থাপনা রয়েছে। ফলে শত্রুর আর্টিলারি বা ড্রোনের রেঞ্জে এলে এই ঘাঁটি কার্যক্ষমতা হারাতে পারে।’

দামেস্কে ইরানি দূতাবাস। ছবিটি কয়েক মাস আগে তোলা। ছবি: এএফপি
দামেস্কে ইরানি দূতাবাস। ছবিটি কয়েক মাস আগে তোলা। ছবি: এএফপি

ফাইটার বোম্বার আরও বলেন, ‘তারতুসের নৌঘাঁটির পরিস্থিতিও প্রায় একই রকম। অবশ্যই এটি দীর্ঘ সময় ধরে প্রতিরক্ষার মাধ্যমে ধরে রাখা যেতে পারে, যদি সঠিক লোক এবং সরঞ্জাম থাকে।’ তিনি আরও সতর্ক করেন, প্রয়োজন হলে রাশিয়ার সামরিক সরঞ্জাম পুরোপুরি সরিয়ে নেওয়াও সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, ‘তাই, সিরিয়ায় আমাদের বাহিনীর প্রধান কাজ হলো শত্রুকে লাতাকিয়া দখল করতে বাধা দেওয়া, এমনকি যদি আমাদের সাময়িকভাবে বাকি অঞ্চল ছেড়ে দিতে হয়।’

যুদ্ধবিষয়ক ব্লগার ‘স্টারশে এডি’ বলেন, সিরিয়ায় অবস্থান তৈরি করতে রাশিয়া অনেক মূল্য দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘সেখানে দশ বছর, কয়েক শ মৃত রুশ সেনা, কয়েক শ কোটি রুবল ব্যয় এবং হাজার হাজার টন গোলাবারুদ—এগুলোর ক্ষতিপূরণ অবশ্যই কোনো না কোনোভাবে পাওয়া উচিত।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমান ব্যর্থতা এবং ব্যবহৃত সম্পদগুলোর ক্ষতিপূরণের একমাত্র উপায় হলো লাতাকিয়া ও তারতুস অঞ্চল ধরে রাখা।’

ইউক্রেনে যুদ্ধ করা সাবেক রুশ সেনা ইগর গিরকিন বলেছেন, ‘সিরিয়ায় আমাদের অবস্থান সবসময়ই সরবরাহ ও শক্তিবৃদ্ধির দিক থেকে অরক্ষিত ছিল। এখন শত্রুরা স্বাভাবিকভাবেই আমাদের দুর্বলতাকে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যখন আমরা ইউক্রেন ফ্রন্টে ব্যস্ত। আমরা অতিরিক্ত চাপে আছি। সিরিয়ায় আমাদের মিত্রের পরাজয় আমাদেরও পরাজয়।’

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত