Ajker Patrika

তাঁর শপথের আগে জিম্মিদের মুক্তি না দিলে হামাসকে দেখে নেবেন ট্রাম্প

অনলাইন ডেস্ক    
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০: ৫৬
Thumbnail image
২০১৭ থেকে ২০২১ সালে—প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ইসরায়েলের শক্তিশালী সমর্থক ছিলেন। ছবি: এএফপি

আগামী ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে জিম্মিদের মুক্তি না দিলে পরিণতি হবে ভয়াবহ। এভাবেই হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ বন্ধে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের নমুনা দেখিয়েছেন ট্রাম্প।

গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর আগেই একটি অস্ত্রবিরতি অর্জনের চেষ্টা চালানো উচিত।

নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে বাইডেন প্রশাসনের পরোক্ষ সমালোচনা করে ট্রাম্প বলেন, জিম্মিদের বিষয়ে শুধুই আলোচনা, কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই। এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধ বন্ধ করতে বাইডেন প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে।

তিনি আরও লেখেন, ‘আমার এই পোস্ট একটি সতর্কবার্তা হিসেবে গণ্য হোক। আগামী ২০ জানুয়ারি যেদিন আমি গর্বের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করব, তার আগে যদি জিম্মিরা মুক্তি না পায়, তবে মধ্যপ্রাচ্য ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ এবং ধ্বংসাত্মক।’

ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘দায়ীদের ওপর এমন আঘাত আসবে, যা আমেরিকার দীর্ঘ ও গৌরবময় ইতিহাসে আর কেউ কখনো দেখেনি। এখনই জিম্মিদের মুক্তি দিন!’

তবে এ আঘাত কী ধরনের হতে পারে বা এতে মার্কিন সামরিক বাহিনী জড়িত হবে কি না—এমন কোনো ইঙ্গিত ট্রাম্পের এই হুঁশিয়ারি পোস্টে নেই। তা ছাড়া, ট্রাম্প পোস্টে শুধু হামাসের হাতে জিম্মিদের কথা বলেছেন, ইসরায়েলি অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত ফিলিস্তিনিদের কথা বলেননি।

ট্রাম্পের পোস্টে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ লিখেছেন, ‘নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট, আপনাকে ধন্যবাদ। আমরা সবাই প্রার্থনা করছি, আমাদের ভাই-বোনদের বাড়ি ফিরে আসার মুহূর্তটি দেখার অপেক্ষা করছি!’

কয়েক মাস ধরেই যুদ্ধবিরতির আলোচনা চলছে। তবে এ আলোচনা বারবার ব্যর্থ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং হামাস নেতাদের বিরুদ্ধে। হামাস বারবার প্রস্তাব দিয়েছে, যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা করা হলে এর বিনিময়ে তাঁরা জিম্মিদের মুক্তি দেবেন। অন্যদিকে ইসরায়েলি সরকারের জোর হুমকি, হামাস পুরোপুরি পরাজিত না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে।

একই সময়ে, গাজায় ‘কাজ শেষ করতে’ ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন নেতানিয়াহুর দীর্ঘদিনের পছন্দের মার্কিন নেতা ট্রাম্প। ট্রাম্পের ট্রুথ সোশ্যালের পোস্ট থেকে ধারণা করা হচ্ছে, দ্বিতীয় মেয়াদে তাঁর মধ্যপ্রাচ্য নীতি ধীরে ধীরে গুছিয়ে নিচ্ছেন তিনি। নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি বলেছিলেন, মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষত গাজায় শান্তি আনবেন তিনি। তবে সেটা কীভাবে, এ বিষয়ে খুব বেশি তথ্য দেননি। তাঁর ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ প্রশাসন বিদেশে সংঘাতে মার্কিন সামরিক বাহিনী, সম্পদ বা অর্থের ব্যয় বরাবরই এড়িয়ে চলেছে।

তবে ২০১৭ থেকে ২০২১ সালে—তাঁর প্রথম মেয়াদেও ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ইসরায়েলের প্রধান সমর্থক ছিলেন। তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর করেছিলেন, যার পূর্ব অংশ অবৈধভাবে দখলকৃত, যা দীর্ঘদিন ধরে একটি ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে বিবেচিত। এমনকি সিরিয়ার দখলকৃত গোলান মালভূমিতে ইসরায়েলি সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন তিনি।

এ ছাড়া ইসরায়েল এবং আরব দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে একাধিক চুক্তি করেছিলেন এবং ইসরায়েলের অবৈধ বসতি স্থাপনের দ্রুত সম্প্রসারণের অনুমতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প।

দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প তাঁর প্রশাসনে ইসরায়েলপন্থি কর্মকর্তাদের মনোনয়নে জোর দিয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেছেন ইসরায়েলের কট্টর সমর্থক মার্কো রুবিওকে। ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত হিসেবে মাইক হাকাবির নাম প্রস্তাব করেছেন, যিনি দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতির একজন কট্টর সমর্থক এবং পশ্চিম তীরকে বাইবেলে দেওয়া নামে ‘জুডিয়া ও সামারিয়া’ হিসেবে অভিহিত করেন।

গত সপ্তাহে অ্যাক্সিওস নিউজ সাইটকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পের মিত্র সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেন, নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জিম্মিদের মুক্তির ব্যাপারে আগের চেয়েও বেশি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং একটি বন্দিবিনিময় চুক্তিসহ একটি অস্ত্রবিরতিকে সমর্থন করেন। তিনি এটি এখনই কার্যকর দেখতে চান।

এই মন্তব্যটি আসে এমন এক সময়ে যখন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ঘোষণা করেন, লেবাননে ইসরায়েল–হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে। সে সময় বাইডেন আরও ঘোষণা করেন, গাজায় যুদ্ধ বন্ধে দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার অগ্রগতি আনবেন তিনি।

এর আগে রোববার হামাসের কর্মকর্তারা জানান, যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা পুনরায় শুরু হয়েছে। ইসরায়েলি কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন, নেতানিয়াহু এ বিষয়ে আলোচনা করবেন। তবে, বারবার যুদ্ধবিরতি প্রচেষ্টায় আশার কথা শোনালেও কার্যকরভাবে কোনো যুদ্ধবিরতি আনতে সক্ষম হয়নি হোয়াইট হাউস।

ইসরায়েলি তথ্য অনুযায়ী, গাজায় এখনো ১০১ জন জিম্মি রয়েছেন। তবে গতকাল সোমবার হামাস জানায়, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ৩৩ জন জিম্মি নিহত হয়েছেন।

অন্যদিকে ২০২৩ সালে ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর শুরু এ সংঘাতে এখন পর্যন্ত গাজায় কমপক্ষে ৪৪ হাজার ৪৬৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত