Ajker Patrika

আরব বিশ্বে রোজা পালনে অনীহা বাড়ছে

আপডেট : ১৮ মার্চ ২০২৫, ১৭: ৫৯
আরব বিশ্বে রোজা পালনে অনীহা বাড়ছে

আরব বিশ্বের দেশগুলোতে রোজা পালনে এখন আর আগের মতো কড়াকড়ি দেখা যায় না। সেখানকার সংস্কৃতিতে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। এ ছাড়া দেশগুলোতে রোজা পালনের নিয়মনীতিতে নেই তেমন কঠোরতা। রমজান মাসে রোজার নিয়মনীতি বেশ শিথিল করেছে দেশগুলোর সরকার। 

ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জর্ডানের রাজধানী আম্মানের বারগুলোতে রোজার মাসে সন্ধ্যা নামতেই অবাধে চলে মদের আড্ডা। বারগুলোতে মানুষ হুইস্কিতে মেতে থাকে। রোজার মাসে ইরানের রাজধানী তেহরানের ব্যস্ত রাস্তায় মানুষ নির্দ্বিধায় সিগারেট ফোঁকে। মরক্কোর মারাকেচ শহরে অবলীলায় অশ্লীল শব্দ ছুড়ে দিচ্ছে কেউ। রমজানে যেখানে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাদ্য, পানীয় এবং যৌনতা থেকে বিরত থাকার কথা, সেখানে এসব শহরে তেমন তোয়াক্কা নেই। 

রমজান মাসে এখন নারীরা ছোট পোশাক পরে ঘুরে বেড়ালেও কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয় না। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের কিছু বাসিন্দা রামাদানকে উপহাস করে ‘হারামাদান’ বলেন। আরবি ‘হারাম’ শব্দের অর্থ নিষিদ্ধ। 

মধ্যপ্রাচ্যের বেশির ভাগ দেশে এখনো রমজান মাসে রোজার নিয়ম লঙ্ঘন অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে জরিমানার হার খুবই কমে গেছে, অন্তত গাড়ি পার্কিংয়ের জরিমানার চেয়ে কম। জর্ডানে রোজার নিয়ম ভঙ্গকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি ২৫ দিনার (৩৫ ডলার)। ওমানে জরিমানা ৩ ডলার। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কর্তৃপক্ষ না দেখার ভান করে। 

ইরাকের নাজাফ শহরের এক আইনজীবী বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে খুব ভয় পায়। নেতিবাচক আলোচনা হবে এই ভয়েই আর এসব নিয়ম লঙ্ঘনকে তেমন একটা গুরুত্ব দেয় না তারা।’ 

ইরাকের এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘দেখা যায়, রমজানে বিচারক বারবার ধূমপানের বিরতি নেওয়ার কারণে বিচার কাজে ব্যাঘাত ঘটে।’ 

এখন রমজান মাসে তেহরান থেকে তিউনিস পর্যন্ত অনেক ক্যাফে খোলা থাকে। অনেক সময় ক্রেতারা দোকানের দরজায় কড়া নাড়ার পর দোকান খোলা হয়। মিসরে একসময় রমজানের নিয়ম লঙ্ঘনকারীদের জেলে পাঠানো হতো, সেখানে এখন কোনো দোকান মালিক দরজা খুলতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়। সম্প্রতি এক কপটিক খ্রিষ্টান নারীকে খাবার দিতে অস্বীকার করার অভিযোগের ভিত্তিতে সেই ফাস্ট-ফুডের দোকান বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রমজান মাসে উন্মুক্ত স্থানে খাবার ও পানীয় বিক্রি করার অনুমতি দিতে বিশেষ লাইসেন্সের ব্যবস্থা করেছে জর্ডান সরকার। তবে বেশ উচ্চমূল্যে খাবার বিক্রি হয়। যদিও এখনো দেশটিতে রোজা উপেক্ষা করে প্রকাশ্যে কেউ খাবার খেলে জেলে পাঠানোর বিধান রয়েছে। প্রথমদিকে ক্যাফেগুলোর প্রবেশদ্বারের বাইরে পর্দা ঝোলানোর রীতি থাকলেও এখন ধীরে ধীরে সেটিও উঠে যাচ্ছে। কোনো বিদেশি পর্যটক প্রথম গেলে আম্মানে রমজানের কোনো চিহ্নই খুঁজে পাবেন না। 

আরব বিশ্বের দেশগুলোতে এমন পরিবর্তনের পেছনে বেশ কিছু সম্ভাব্য কারণ তুলে ধরেছে দ্য ইকোনমিস্ট। দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, ইসলামিক স্টেট (আইএস) এবং অন্যান্য উগ্র জিহাদি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে এ ধরনের শৈথিল্য প্রদর্শন করছেন সাধারণ মানুষ। এ ছাড়া সারা বিশ্বে ইসলামিপন্থী উগ্রবাদীদের উত্থানের কারণে মুসলিমদের মধ্যে এক ধরনের আত্মসমালোচনার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। এ কারণে বিশেষ করে তরুণ আরবদের মধ্যে ধর্ম পালনে অনীহা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। 

অমুসলিম পর্যটকদের কথা ভেবেও আইন প্রয়োগে শিথিলতা এনেছে সরকারগুলো। যেখানে মধ্যপ্রাচ্যের সরকারগুলো তেলভিত্তিক অর্থনীতির বাইরে বিনিয়োগে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছে। পাশাপাশি ফুড ডেলিভারি অ্যাপের সহজলভ্যতাও সাধারণ মানুষের ভ্রুকুটি এড়িয়ে রোজা না রাখার সহায়ক হয়ে উঠেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত