Ajker Patrika

গাজায় বেসামরিকদের হত্যার নিন্দা করায় হামাস সমর্থক হয়ে গেছি: ইসরায়েলি শিক্ষক

আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১৪: ২৮
গাজায় বেসামরিকদের হত্যার নিন্দা করায় হামাস সমর্থক হয়ে গেছি: ইসরায়েলি শিক্ষক

ইসরায়েলের ইতিহাস ও পৌরনীতির শিক্ষক মিয়ার বারুচিন গাজায় চলমান গণহত্যার বিরুদ্ধে সামাজিক প্ল্যাটফর্মে পোস্ট দিয়েছিলেন। নিরীহ বেসামরিক গাজাবাসীর নির্বিচার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ এবং ইসরায়েলি প্রতিরক্ষাবাহিনীর সমালোচনা করাই কাল হয়েছিল তাঁর। শুরুতে চাকরি হারানো, তারপর রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে জেলে যেতে হয় তাঁকে। রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার বারুচিন সম্প্রতি অবজারভারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘ইসরায়েলে এখন বিরোধী মতকে দমন করা হচ্ছে। বেসামরিক নিরপরাধদের লক্ষ্যবস্তু বানানোর বিরোধিতা করায় আমি হামাস সমর্থক হয়ে গেছি।’

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। সেদিনই গাজায় বোমা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। তার পরদিন সামাজিক প্ল্যাটফর্মে ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলার প্রতিবাদ করেন বারুচিন। গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরুর প্রথম দিকেই নিহত এক পরিবারের ছবি পোস্ট করে বারুচিন লেখেন, ‘নৃশংস সব ছবি আসছে। পুরো পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে—এমন সব খবর। আমি সাধারণত ফেসবুকে এ ধরনের ছবি আপলোড করি না। কিন্তু দেখুন, প্রতিশোধের নামে আমরা কী করছি! যদি কেউ মনে করেন, গতকাল যা ঘটেছে তার কারণে এটা ন্যায়সংগত, তবে তাদের নিজেদের আনফ্রেন্ড করা উচিত। উন্মাদের মতো এসব কাজ বন্ধ করার জন্য আমি সবাইকে যথাসাধ্য চেষ্টা করতে বলছি। এখনই এটা বন্ধ করো। পরে নয়, এখনই!!!’

এই পোস্টের ১০ দিনের মাথায়ই শিক্ষকতার চাকরি হারান বারুচিন। এক মাসের মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করেন উচ্চ নিরাপত্তার কারাগারে। রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গত নভেম্বরের শুরুতে জেরুজালেমের কুখ্যাত রাশিয়ান কম্পাউন্ড কারাগারে শুরু হয় ইতিহাস ও পৌরনীতির শিক্ষক মিয়ার বারুচিনের নির্জন হাজতবাস। কারাগারে আটক রেখে তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগের তদন্ত করা হয়।

বারুচিন জানতেন, তাঁর মতামত কিছুটা বিতর্কিত বটে। তিন বছর আগেও অনেকটা একই ধরনের সমালোচনা করে তেলআবিবে শিক্ষকতার চাকরি হারিয়েছিলেন তিনি। তবে এবার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপরীত। এবার তাঁকে জেলেও যেতে হয়েছে। কিন্তু মতামত প্রকাশ করাকে অত্যন্ত জরুরি বলেই ভেবেছেন এই শিক্ষক। মিয়ার বারুচিন বলেন, ‘অধিকাংশ ইসরায়েলিই ফিলিস্তিন সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না। তারা ভাবে, ফিলিস্তিনের সবাই সন্ত্রাসী। তাদের কোনো নাম নেই, পরিচয় নেই, পরিবার নেই, ঘর নেই, আশা নেই। আমি কেবল আমার পোস্টে এটাই বলতে চেয়েছিলাম যে, ফিলিস্তিনিরাও মানুষ।’

ইসরায়েলের সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও অধিকারকর্মীরা বলেছেন, গাজার যুদ্ধ সম্পর্কে ভিন্নমতকে প্রশ্রয় দেওয়া হয় না ইসরায়েলে। এমনকি তিন মাস ধরে হামলা চালিয়ে যে ২৩ হাজারের বেশি বেসামরিক হত্যা করা হলো, তারও প্রতিবাদ করা যাবে না। আর প্রতিবাদ করলে তার পরিণতিই হবে বারুচিনের মতো। এই শিক্ষকের মতে, সবাইকে একটি বার্তা দেওয়ার জন্যই তাঁকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে ইসরায়েল সরকার। আর সেই বার্তা হলো, ইসরায়েলি নীতির বিরুদ্ধে কোনো সমালোচনা বা প্রতিবাদের ইঙ্গিতও করা যাবে না।

কারাগারে তার সঙ্গে কিছুই নিতে দেওয়া হয়নি। বই পড়তে দেওয়া হয়নি, টেলিভিশন দেখারও সুযোগ ছিল না। মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য শারীরিক ব্যায়াম করতেন তখন। জিজ্ঞাসাবাদে তাকে বলা হয়, বারুচিনের পোস্টগুলো অনেকটা ‘প্রোটোকলস অব দ্য এলডারস অব জায়নসের’ (বিখ্যাত ইহুদিবিদ্বেষী গ্রন্থ) মতো। এর প্রত্যুত্তরে বারুচিন প্রশ্নকর্তাকে বলেন, ‘আমি একজন ইতিহাসের শিক্ষক। আপনি কি কখনো বইগুলো পড়েছেন?’ প্রশ্নকর্তারা তখন চুপ করে ছিলেন।

চাকরি হারিয়ে সঞ্চিত অর্থ দিয়ে জীবন চালাচ্ছেন বারুচিন। সেটাও শেষ হওয়ার পথে। তাঁর বিরুদ্ধে চলমান মামলায় জয়ী হলেও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ থেকে পরিত্রাণ পাবেন কি না, জানেন না। বারুচিন বলেন, ‘গল্পটার ব্যাপ্তি আমার ব্যক্তিগত জীবনের চেয়েও বড়।’ কারাগারের অভিজ্ঞতা তার মানসিক সুস্থতাকে ধসিয়ে দেয়নি বলেও জানান বারুচিন। তাঁর মতে, গাজাবাসী এখন তাঁর চেয়েও অনেক বেশি সংকটে আছে।

অবজারভারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারটির আগে সামাজিক প্ল্যাটফর্মে বারুচিনের সর্বশেষ পোস্ট ছিল একটি সমাধিফলকের ছবি। সমাধিফলকটিকে দেখতে লাগছিল ভাঙাচোরা আসবাবের মতো। সমাধিলিপিতে লেখা ছিল, পরিচয় না জানা এক শহীদ, সবুজ জ্যাকেট এবং প্রশিক্ষক।

বারুচিন বলেন, ‘এই এক ছবিতেই আছে পুরো গল্প। ইসরায়েলের মূলধারার গণমাধ্যম এই ছবি প্রচার করে না। তারা এই ছবি পায় না এবং এই ছবি পেতেও চায় না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

লুটপাটে শেষ ৫ কোটির প্রকল্প

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল, বেশির ভাগই ভারতীয়, আছে বাংলাদেশিও

বৃদ্ধের চার বিয়ে, থানায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার জেরার মুখে হাসির রোল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত