Ajker Patrika

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন /অভাব, ক্ষুধা ও হতাশায় অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে গাজাবাসী

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৮ মে ২০২৫, ১৪: ১৪
গাজায় একটি ত্রাণকেন্দ্রে ক্ষুধার্ত মানুষদের ভিড়। ছবি: আনাদোলু
গাজায় একটি ত্রাণকেন্দ্রে ক্ষুধার্ত মানুষদের ভিড়। ছবি: আনাদোলু

যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় চলছে ব্যাপক লুটপাট ও চুরি। অভাবের তাড়নায় খাবার জোগাড় করতে মরিয়া ফিলিস্তিনিরা। আর এর সুযোগ নিচ্ছে অপরাধী চক্রগুলো। ভেঙে পড়েছে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি। সাহায্যকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সশস্ত্র লোকজন হামলা চালাচ্ছে মানবিক সহায়তার গুদামগুলোতে। অবশিষ্ট খাদ্য মজুত নিয়েও চলছে গোলাগুলি। সোলার চার্জার, ব্যাটারি, ফোন, রান্নার পাত্রের মতো অতি প্রয়োজনীয় জিনিসও চুরি হচ্ছে।

সাহায্যকর্মীরা বলছেন, ইসরায়েলের টানা দুই মাসের অবরোধে গাজা এখন চরম সংকটের মুখে। অনেক পরিবার দিনে এক বেলা খেয়ে থাকছে। পচা ময়দা বিক্রি হচ্ছে স্বাভাবিক দামের ৩০-৪০ গুণ বেশিতে। কাঠ বা বাতিল প্লাস্টিক ছাড়া অন্য কোনো জ্বালানি নেই।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিন ১০ লাখ মানুষকে খাবার সরবরাহ করা কমিউনিটি কিচেনগুলো প্রয়োজনীয় রসদের অভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সাহায্য সংস্থাগুলো বলছে, তাদের হাতে থাকা সব খাদ্য বিতরণ হয়ে গেছে। গত মাসে রুটি সরবরাহকারী কয়েক ডজন বেকারি বন্ধ হয়ে গেছে।

গাজার এক মানবিক সহায়তা কর্মকর্তা বলেছেন, ‘যখন দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হবে, তখন অনেক দেরি হয়ে যাবে। অপরাধ বাড়ছে, কারণ ২০ লাখেরও বেশি মরিয়া, ট্রমাটাইজড (শোকে-ক্ষোভে হতবাক) মানুষ এখানে গাদাগাদি করে বসবাস করছে, কার্যত কোনো পুলিশি ব্যবস্থা নেই।’

গাজা শহর এই অপরাধের ঢেউয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে অন্য এলাকায়ও কিছু ঘটনা ঘটেছে। গত সপ্তাহে সশস্ত্র লোকজনের একটি দল গাজা সিটির দুই-তিনটি বেকারিতে হানা দেয় আটার খোঁজে। কিছু না পেয়ে তারা একটি স্যুপের কিচেন লুটপাট করে নিয়ে যায়। অন্য এক ঘটনায়, চোরেরা একটি কমিউনিটি কিচেনের শেষ মজুতের পাশাপাশি রান্নার সব হাঁড়ি-পাতিলও নিয়ে যায়। তৃতীয় এক চুরির ঘটনায়, একটি এনজিওর বিতরণকেন্দ্রের কর্মীদের লুটপাটের সময় ছুরির মুখে জিম্মি করা হয়।

অন্যদিকে, জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্মসংস্থান সংস্থা (ইউএনআরডাব্লিউএ) জানিয়েছে, হাজার হাজার ফিলিস্তিনি গাজা সিটিতে তাদের ফিল্ড অফিসে ঢুকে ওষুধপত্র নিয়ে গেছে জোর করে। এর ফলে, গত বুধবার অফিস থেকে কর্মীদের সরিয়ে নিতে হয়েছে। ইউএনআরডব্লিউএর জ্যেষ্ঠ জরুরি কর্মকর্তা লুইস ওয়াটারিজ এই লুটপাটকে ‘অসহনীয় ও দীর্ঘস্থায়ী বঞ্চনার সরাসরি ফল’ বলে অভিহিত করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি সশস্ত্র চোর ও নিরাপত্তারক্ষীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। গাজা সিটির ২৫ বছর বয়সী আইনজীবী আনাস রাফাত বলেছেন, পাশের একটি মানবিক সাহায্য সংস্থার গুদামে সশস্ত্র দল হামলা চালালে তিনিও তাঁর পরিবারের সদস্যরা জেগে ওঠেন। তিনি বলেন, ‘অলৌকিকভাবে আমার পরিবারের কেউ আহত হয়নি। আমরা দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে গুলির মধ্যে মেঝেতে শুয়ে ছিলাম।’

২৭ বছর বয়সী গাদির রজব বলেছেন, তিনি অন্য একটি এনজিওর গুদামে চোরদের হামলা চালাতে দেখেছেন। তিনি বলেন, ‘যখন আমরা গুলির শব্দ শুনি, তখন জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখি চারদিক থেকে লোকজন ছুটে এসে জায়গাটিতে ঢুকে পড়ছে খাবার ও পানির খোঁজে। অন্যরা আহত হওয়ার ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল।’

রজব বলেন, ‘এক নারী তাঁর ছেলের খোঁজ করছিলেন। তিনি যখন জানতে পারেন যে, তাঁর ছেলের কাঁধে গুলি লেগেছে, তখন তিনি রাস্তায় দৌড়াচ্ছিলেন...চিৎকার করছিলেন “আমার ছেলে, আমার ছেলে!” তিনি সাহায্য ভিক্ষা করলেও কেউ মনোযোগ দেয়নি, লোকেরা চুরি করতে ব্যস্ত ছিল। ক্ষুধা তাদের অন্ধ করে দিয়েছিল।’

প্রতিবেশীদের মধ্যে সহিংস ঝগড়া ও পারিবারিক সহিংসতা বৃদ্ধির ব্যাপক খবর পাওয়া গেছে। ছোটখাটো চুরি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ৪৬ বছর বয়সী মারি আল রাদেয়া সম্প্রতি উত্তর শহর বাইত লাহিয়া থেকে গাজা সিটিতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি এবং তাঁর ৯ সন্তান একটি তাঁবুতে থাকেন। তিনি বলেন, ‘কোনো নিরাপত্তা নেই। রাতে আমরা একেবারেই ঘুমাই না। আমরা পালা করে ঘুমাই, একজনকে জাগিয়ে রাখি ব্যাপক চুরি ও লুটপাট থেকে রক্ষা করার জন্য।’

রাদেয়া বলেন, ‘আমাদের এলাকার বেশির ভাগ তাঁবুতে চুরি হয়েছে। কে চোর ছিল তা জানার চেষ্টাও আমরা করিনি। কারণ সেখানে কোনো পুলিশ বা নিরাপত্তা উপস্থিতি নেই।’ রাদেয়া আরও বলেন, ‘ক্ষুধার্ত মানুষ বা দোকানের নিরাপত্তাকর্মী ও লুটেরাদের মধ্যে প্রায়শই সংঘর্ষ হয়। খাদ্য মজুতের কেন্দ্রগুলোতে হামলার সময়ও অনেক সংঘাত শুরু হয়। আমরা যেখানে নাইলনের তাঁবুতে থাকি, যা গুলির হাত থেকে কোনো সুরক্ষা দেয় না, সেখানে প্রায়শই গুলি এসে পড়ে।’

জানুয়ারি থেকে মার্চের মাঝামাঝি যুদ্ধবিরতির সময় হামাস গাজার রাস্তায় পুলিশ মোতায়েন করেছিল। কিন্তু ইসরায়েলি বিমান হামলায় তাদের লক্ষ্যবস্তু করার পর তাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। হামাস পরিচালিত গাজার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত শনিবার জানিয়েছে, গত দুই দিনে লুটপাটের ঘটনায় তাদের নিরাপত্তা বাহিনী ছয় সন্দেহভাজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে এবং ১৩ জনকে পায়ে গুলি করে শাস্তি দিয়েছে। মন্ত্রণালয় শুক্রবার থেকে গাজা সিটির কয়েকটি প্রধান রাস্তায় কারফিউ জারি করেছে।

গত বছরের শেষ দিকে গাজায় লুটপাট চরমে পৌঁছেছিল। সে সময় ইসরায়েলের প্রবেশপথ দিয়ে আসার সময় সাহায্যের গাড়িবহরগুলো পদ্ধতিগতভাবে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এক ঘটনায় শতাধিক ট্রাক ছিনতাই ও লুটপাট করা হয়েছিল।

ইসরায়েল অভিযোগ করেছে, হামাস সামরিক অভিযানে অর্থায়নের জন্য সাহায্য চুরি ও তা কালোবাজারে পুনরায় বিক্রি করছে। সংগঠনটি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সাহায্য কর্মকর্তারা বলেছেন, জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া স্বল্পস্থায়ী যুদ্ধবিরতির সময় সামান্য মানবিক সহায়তাও হাতছাড়া হয়নি।

সোমবার ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলেছেন, আগামী সপ্তাহগুলোতে ‘ব্যাপক’ অভিযানের অংশ হিসেবে সাহায্য সরবরাহের একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তারা অবরোধ তুলে নেবে। এই পরিকল্পনায় গাজার দক্ষিণে বেশ কয়েকটি বিতরণকেন্দ্র থাকবে, যা বেসরকারি ঠিকাদারদের দ্বারা পরিচালিত হবে এবং ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী পাহারা দেবে। জাতিসংঘ এবং অন্য মানবিক কর্মকর্তারা এই পরিকল্পনাকে অকার্যকর, বিপজ্জনক ও আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে সম্ভাব্য অবৈধ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আস্থায় বাজিমাত ইসলামী ব্যাংক

ভাগনের বিয়েতে ১ কেজি সোনা, ৪ বস্তা টাকা, ২১০ বিঘা জমি, পেট্রলপাম্প উপহার দিল মাড়োয়ারি পরিবার

‘ফের ধর্ষণচেষ্টার ক্ষোভে’ বাবাকে খুন, ৯৯৯-এ কল দিয়ে আটকের অনুরোধ মেয়ের

পাকিস্তানে হামলার ব্রিফিংয়ে নেতৃত্ব দিয়ে প্রশংসা কুড়ালেন ২ নারী কর্মকর্তা

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে লাভবান চীন, নাজুক অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত