Ajker Patrika

সব জিম্মিকে মুক্তির প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও যুদ্ধবিরতি চায় না ইসরায়েল: হামাস

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৯ জুলাই ২০২৫, ১১: ২৭
হামাসের আল-ক্বাসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু উবায়দা। ছবি: হামাস
হামাসের আল-ক্বাসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু উবায়দা। ছবি: হামাস

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের সশস্ত্র শাখা ইজ্জুদ্দিন আল-ক্বাসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র বলেছেন, গাজায় আটক সব জিম্মিকে মুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হলেও ইসরায়েল সেটি প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, চুক্তি না হলে হামাস দীর্ঘ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। গতকাল শুক্রবার প্রচারিত এক রেকর্ড করা ভিডিওতে এই অবস্থান জানান মুখপাত্র আবু উবাইদা।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, প্রায় ২০ মিনিটের ভিডিও বার্তায় আল ক্বাসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু উবাইদা বলেন, হামাস কয়েক মাসে একটি ‘সমন্বিত চুক্তির’ প্রস্তাব দিয়েছিল। এতে সব জিম্মিকে একসঙ্গে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তাঁর কট্টর ডানপন্থী মন্ত্রীরা সেটি প্রত্যাখ্যান করেছেন।

আবু উবাইদা বলেন, ‘আমাদের কাছে এখন পরিষ্কার, অপরাধী নেতানিয়াহু সরকার আসলে জিম্মিদের ব্যাপারে আন্তরিক নয়। কারণ, তারা মূলত সৈনিক।’ তিনি আরও বলেন, হামাস এমন একটি চুক্তির পক্ষে, যেখানে যুদ্ধের ইতি টানা হবে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজা থেকে সরে যাবে এবং অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের জন্য মানবিক সহায়তা প্রবেশের নিশ্চয়তা থাকবে।

আল-ক্বাসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র জানান, কাতারে চলমান পরোক্ষ আলোচনায় ইসরায়েল যদি পিছিয়ে যায়, তাহলে হামাস আর আংশিক কোনো চুক্তিতে ফিরবে না। এমনকি বর্তমানে আলোচনার টেবিলে থাকা ৬০ দিনের একটি প্রস্তাবও বাতিল হতে পারে, যার আওতায় ১০ জন জিম্মির মুক্তির কথা রয়েছে। বর্তমানে গাজায় হামাসের হাতে ৫০ জন জিম্মি আছে, যাদের মধ্যে প্রায় ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে গতকাল শুক্রবার হোয়াইট হাউসে কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে নৈশভোজে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, খুব শিগগিরই গাজা থেকে আরও ১০ বন্দি মুক্তি পাবে। তিনি বলেন, ‘আমরা বেশির ভাগ জিম্মিকে ইতিমধ্যে ফিরিয়ে এনেছি। আরও ১০ জন শিগগিরই মুক্তি পাবে বলে আশা করছি এবং আমরা চাই বিষয়টি দ্রুত শেষ হোক।’ তবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ট্রাম্প দাবি করে আসছেন, যুদ্ধবিরতি এবং বন্দিমুক্তির চুক্তি আসন্ন, কিন্তু এখনো তেমন কিছু বাস্তবায়িত হয়নি। এ বছরের মার্চের পর এই প্রথম প্রকাশিত ভিডিও বার্তায় আবু উবাইদা আরও বলেন, হামাস যোদ্ধারা ‘একটি দীর্ঘ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত’ এবং তারা গাজাজুড়ে ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে যেতে চায়।

এ সময় তিনি আরব ও মুসলিম বিশ্বের নেতাদেরও সমালোচনা করে বলেন, ‘ইসরায়েলের এই গণহত্যার সামনে আপনাদের নীরবতা বিশ্বাসঘাতকতা। আপনারা নিরপরাধ হাজারো মানুষের রক্তপাতের জন্য দায়ী।’

কাতারের রাজধানী দোহায় চলমান আলোচনায় এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি হয়নি। কারণ, ইসরায়েল গাজায় সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখার পাশাপাশি আরও সম্প্রসারণের পরিকল্পনায় অটল। এর মধ্যে মোরাগ করিডর ও মাজেন ওজ করিডর উল্লেখযোগ্য।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে ৫৮ হাজার ৬৬৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে আরও ১ লাখ ৩৯ হাজার ৯৭৪ জন। শুধু চলতি বছরের মার্চে যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইসরায়েল হামলা শুরুর পর থেকে নিহত হয়েছে অন্তত ৭ হাজার ৮৪৩ জন এবং আহত হয়েছে ২৭ হাজার ৯৯৩ জন।

মন্ত্রণালয় জানায়, বর্তমানে গাজার যে কয়টা হাসপাতাল আংশিকভাবে টিকে আছে, সেগুলোর জরুরি বিভাগে অভাবনীয়সংখ্যক মানুষ আসছে চরম অপুষ্টি, দুর্বলতা ও ক্লান্তি নিয়ে। তাদের মধ্যে শিশুও রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত