Ajker Patrika

সৌদিতে আক্রমণ যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বলে গণ্য হবে—শিগগির এমন চুক্তির আশায় রিয়াদ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৩: ০৭
ট্রাম্পকে স্বাগত জানিয়ে প্রাসাদে নিয়ে যাচ্ছে মোহাম্মদ বিন সালমান। ছবি: এএফপি
ট্রাম্পকে স্বাগত জানিয়ে প্রাসাদে নিয়ে যাচ্ছে মোহাম্মদ বিন সালমান। ছবি: এএফপি

সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এমন এক প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে, যেখানে দেশটির ওপর আক্রমণ যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আক্রমণ বলে গণ্য হবে। এই চুক্তিটি অনেকটা গত মাসে কাতারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের করা এক চুক্তির মতো। যেখানে ঘোষিত হয়েছে, উপসাগরীয় দেশটির ওপর যেকোনো আক্রমণই আমেরিকার ‘শান্তি ও নিরাপত্তার’ জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত হবে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, সৌদি কর্তৃপক্ষ আশা করছে, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান, যিনি এমবিএস নামেও পরিচিত, আগামী মাসে হোয়াইট হাউস সফরের সময় এ চুক্তিটি চূড়ান্ত করা যাবে। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত একটি সূত্র বলছে, চুক্তিটি ‘বিশাল’ হবে এবং এতে দুই দেশের মধ্যে সামরিক ও গোয়েন্দা সহযোগিতা আরও বাড়ানো হবে।

প্রতিরক্ষা চুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প প্রশাসনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘যুবরাজের সফরের সময় কিছু স্বাক্ষর করার আলোচনা আছে, তবে বিস্তারিত এখনো চূড়ান্ত নয়।’ হোয়াইট হাউস এবং স্টেট ডিপার্টমেন্ট সম্ভাব্য চুক্তির বিস্তারিত বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে।

স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে, সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ‘আমাদের আঞ্চলিক কৌশলের শক্ত ভিত্তি।’ ওয়াশিংটন ‘এই অঞ্চলের নিরাপত্তায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সৌদি আরবের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করে সংঘাত সমাধান, আঞ্চলিক সংহতি বৃদ্ধি ও সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয় অগ্রহণযোগ্য করা চালিয়ে যাবে।’ ওয়াশিংটনে সৌদি দূতাবাস মন্তব্যের জন্য অনুরোধের কোনো জবাব দেয়নি।

যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাবেন ঠিক সেই সময়, যার কয়েক দিন আগেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি একটি নির্বাহী আদেশে ঘোষণা করেছেন যে কাতারে কোনো আক্রমণ হলে যুক্তরাষ্ট্র সব ‘আইনসংগত ও যথোপযুক্ত ব্যবস্থা—ডিপ্লোম্যাটিক, অর্থনৈতিক এবং প্রয়োজনে সামরিক’ গ্রহণ করবে।

গত মাসে ইসরায়েল দোহায় হামাসের রাজনৈতিক নেতাদের লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর ট্রাম্প এই ঘোষণা দেন। এই হামলা তেলসমৃদ্ধ উপসাগরীয় দেশগুলোতে বড় ধাক্কা দিয়েছে। কারণ, এই দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের নিরাপত্তার অভিভাবক মনে করে এলেও দেশটির আরেক ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েল উপসাগরীয় দেশগুলোর সার্বভৌমত্বের তোয়াক্কা করছে না।

দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে চাইছে সৌদি আরব। সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তারা এমন একটি চুক্তি করার চেষ্টা করছিল, যার সঙ্গে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণও যুক্ত ছিল। কিন্তু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণ এবং গাজা যুদ্ধে সংঘাত এই পরিকল্পনা ব্যাহত করেছে।

এমবিএস ইসরায়েলকে গাজায় গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত করে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, সৌদি আরব কেবল তখনই ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে যখন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এর কঠোর বিরোধিতা করছেন।

এখন আলোচনা চলছে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি স্বতন্ত্র প্রতিরক্ষা চুক্তি নিশ্চিত করা যায়, যা সরাসরি চুক্তি বা ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে হতে পারে। এই বিষয়ে থিংকট্যাংক ইউরেশিয়া গ্রুপের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকাবিষয়ক ওয়াশিংটনভিত্তিক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফিরাস মাকসাদ বলেন, ‘কাতারের সঙ্গে নির্বাহী আদেশের পর প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ে অনুরূপ অগ্রগতি আশা করা যাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারা কিছু করছে। আমি বুঝি এটা ইতিমধ্যে করা চুক্তির চেয়ে অনেক বেশি বিশাল হবে।’ মাকসাদ যোগ করেন, যুবরাজ এমবিএস যখন সৌদি আরবকে ট্রিলিয়ন ডলারের উন্নয়ন পরিকল্পনায় এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তখন ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি।’

তবে ওয়াশিংটনে আরব উপসাগরীয় রাষ্ট্র বিষয়ক সিনিয়র গবেষক হুসেইন ইবিশ মনে করেন, ট্রাম্প প্রশাসনের সৌদি আরবকে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে দেখার আগ্রহ একটি বাধা হতে পারে। তিনি বলেন, ‘এর মানে এই নয় যে আমরা পারব না। কারণ, ট্রাম্পকে কেবল সিদ্ধান্ত নিতে হবে এটা ভালো ধারণা কি না। তবে আমরা এখনো সেখানে পৌঁছাইনি।’

যুবরাজ এমবিএসের সঙ্গে ট্রাম্প ও তাঁর জামাতা জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়েছেন। তিনি ২০১৮ সালের পর এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন। সৌদি আরব ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় অস্ত্র ক্রেতাদের মধ্যে একটি। ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরের সময় হোয়াইট হাউস সৌদি আরবের সঙ্গে ১৪২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তি ঘোষণা করেছিল, যা ২০২৪ সালের রিয়াদের প্রতিরক্ষা বাজেটের দ্বিগুণ।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছিল, এটি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষা চুক্তি। এতে বিমানবাহিনী, মহাকাশ ক্ষমতা, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা, সামুদ্রিক ও সীমান্ত নিরাপত্তা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। কিন্তু সৌদি আরব, অন্যান্য উপসাগরীয় দেশের মতো গত ১৫ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি এবং নীতির ধারবাহিকতার অভাবের কারণে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে।

গত মাসে সৌদি আরব পারমাণবিক শক্তিধর পাকিস্তানের সঙ্গে ‘কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা’ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে বার্তা দিয়েছে যে দেশটি তার নিরাপত্তা জোট বৈচিত্র্যপূর্ণ করতে প্রস্তুত। মাকসাদ বলেন, ‘এটি স্পষ্ট একটি বার্তা ছিল। বোঝাপড়া রয়েছে যে এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তাকাঠামোর বিকল্প নেই, তবে কিছু ফাঁক পূরণ করা ও প্রোফাইল বৃদ্ধি করার উপায় আছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কোটা তুলে দিলে নারীদের খুঁজেও পাওয়া যাবে না: সামান্তা শারমিন

আন্দোলনের মধ্যেই ফের বাড়ল এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা

মেট্রোরেলের সময় বাড়ল: আজ থেকে নতুন সূচি, ট্রিপ বাড়ল ৭টি

৫ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতা প্রত্যাখ্যান, আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা শিক্ষকদের

প্রশিক্ষিত রন্ধনশিল্পীরা পাবেন আন্তর্জাতিক মানের সনদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত