Ajker Patrika

মুক্তির তালিকা থেকে ফের বাদ মারওয়ান বারঘৌতি, তাঁকে নিয়ে কেন ভয় ইসরায়েলের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ৫৬
২২ বছরের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী মারওয়ান বারঘৌতি এখনো ফিলিস্তিনিদের কাছে গ্রহণযোগ্য নেতা। ছবি: এএফপি
২২ বছরের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী মারওয়ান বারঘৌতি এখনো ফিলিস্তিনিদের কাছে গ্রহণযোগ্য নেতা। ছবি: এএফপি

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা মারওয়ান বারঘৌতিকে এবারও মুক্তি দিতে চায় না ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাবিত চুক্তির আওতায় হামাস মারওয়ান বারঘৌতিসহ প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দীর মুক্তির তালিকা দিয়েছিল। বিনিময়ে হামাস ২০ জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে। কিন্তু বারঘৌতির একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় তালিকা থেকে বারঘৌতির নাম কেটে দিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রটি লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আইকে জানিয়েছে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় শেষ মুহূর্তে একতরফাভাবে বারঘৌতির নাম বন্দিবিনিময় তালিকা থেকে বাদ দেওয়ায় গাজা শান্তিচুক্তির বাস্তবায়ন ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

বিভিন্ন জরিপ অনুসারে, সর্বাধিক জনপ্রিয় ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মারওয়ান বারঘৌতি। হামাস ৪৮ জন ইসরায়েলি জিম্মির বিনিময়ে সর্বোচ্চ প্রভাবশালী ফিলিস্তিনি যেসব ব্যক্তির নাম দিয়েছিল, তার মধ্যে বারঘৌতির নাম প্রথম দিকেই ছিল। বারঘৌতি ও তাঁর পরিবারের এক ঘনিষ্ঠ সূত্র মিডল ইস্ট আইকে জানিয়েছে, গত রাতে মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফসহ মধ্যস্থতাকারীরা এমন একটি বন্দী তালিকায় সম্মতি জানিয়েছিলেন, যেটিতে বারঘৌতির নামও ছিল।

তবে বৃহস্পতিবার এক ইসরায়েলি মুখপাত্র সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে বারঘৌতি এই বন্দিবিনিময়ের অংশ হবেন না।

সূত্র বলছে, তাঁর নাম সম্ভবত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় একতরফাভাবে তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে।

মিডল ইস্ট আইয়ের তথ্য অনুযায়ী, আহমেদ সাদাত (পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনের নেতা), হাসান সালামা (হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা) ও আবদুল্লাহ বারঘৌতির নামও তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে জটিলতা দেখা দিয়েছে। মধ্যস্থতাকারীরা এখন এই নামগুলো ফের তালিকায় যুক্ত করার জন্য চাপ দিচ্ছেন।

বারঘৌতির মুক্তি ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গভিরের জন্য এক ‘রেড কার্ড’ বা বিপজ্জনক ইস্যু হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। যদি বেন গভির তাঁর এমপিদের নেতানিয়াহুর জোট সরকার থেকে প্রত্যাহার করেন, তাহলে সরকারই বিপদে পড়বে।

তবে বারঘৌতির মুক্তির জন্য মধ্যপ্রাচ্যে কূটনৈতিক পদক্ষেপ জোরদার হয়েছে। মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে, বারঘৌতির স্ত্রী মিসরের রাজধানী কায়রোতে অবস্থান করছেন। তিনি মধ্যস্থতাকারীদের কাছে প্রস্তাব করেছেন, যাতে তাঁর স্বামীর নাম বিনিময় তালিকায় রাখা হয়।

আল জাজিরাকে হামাসের এক কর্মকর্তা বলেন, মধ্যস্থতাকারীরা বন্দীদের তালিকা নিয়ে সমঝোতায় আসার চেষ্টা করছে। ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলোর সঙ্গে একটি জাতীয় সংলাপ হবে, যাতে তাদের অবস্থান সমন্বয় করা যায়।

চুক্তি অনুযায়ী ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যরাতে হওয়া আলোচনার ভিত্তিতে ইসরায়েলি বন্দীদের মুক্তির বিনিময়ে প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দীকে ছেড়ে দেওয়া হবে। এর মধ্যে আনুমানিক ১ হাজার ৭০০ জন গাজা থেকে আটক হয়ে বিনা বিচারে জেলবন্দী থাকা পুরুষ, নারী ও শিশু।

বারঘৌতি ২০০৪ সাল থেকে কারাবন্দী। অক্টোবর ২০২৩-এ গাজায় ব্যাপক হামলা শুরুর পর থেকে তাঁকে একা একটি কক্ষে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তিনি ফাতাহর শীর্ষস্থানীয় নেতা। ২০০০-২০০৫ সালের দ্বিতীয় ইন্তিফাদায় তাঁর নেতৃত্বের কারণে তাঁকে ইসরায়েল লক্ষ্যবস্তু করে।

একাধিক জনমত জরিপ ইঙ্গিত দেয়, মারওয়ান বারঘৌতি (বর্তমানে প্রায় ৬৬ বছর বয়স) যদি নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন, তবে তিনি খুব সহজে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন।

এর আগে গত জানুয়ারিতে মিডল ইস্ট আই প্রতিবেদন করেছিল, মিসর ও কাতার হামাসের সঙ্গে সমন্বয় করে বারঘৌতির মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য সম্ভাব্য সব মাধ্যম ব্যবহার করছে। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামিদ আল থানি এবং মিসরের গোয়েন্দাপ্রধান মেজর জেনারেল হাসান মাহমুদ রাশাদ ব্যক্তিগতভাবে তাঁর মুক্তির পক্ষে মধ্যস্থতা করেছেন বলে সূত্রগুলো জানায়।

তবে একই সময়ে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (মাহমুদ আব্বাস নেতৃত্বাধীন পিএ) কিছু শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা বারঘৌতির নাম বন্দিবিনিময় তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করার দাবি জানিয়েছিলেন। তাঁদের উদ্বেগ, যদি তিনি মুক্তি পান, তাহলে তা মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বকে সংকটে ফেলতে পারে।

পশ্চিম তীরে জন্ম ও বেড়ে ওঠা বারঘৌতি ১৫ বছর বয়সে ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বাধীন ফাতাহ গোষ্ঠীতে সক্রিয় হন। দ্বিতীয় ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদা তথা বিদ্রোহের সময় তিনি জনপ্রিয় নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পাঁচ ইসরায়েলিকে হত্যার পরিকল্পনার অভিযোগ আনা হয়। তিনি সব সময় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ২০০২ সাল থেকে তিনি ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী।

তবু যখন ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনা হয়, তখন ফিলিস্তিনিরা প্রায় ২৫ বছর ধরে বন্দী একজন ব্যক্তির নামই বারবার উচ্চারণ করে আসছে। পশ্চিম তীরভিত্তিক ‘প্যালেস্টিনিয়ান সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চের’ সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, ৫০ শতাংশ ফিলিস্তিনি বারঘৌতিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে চায়। আর ২০০৫ সাল থেকে এই পদে থাকা মাহমুদ আব্বাসের সমর্থন অনেক কম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘জুলাই যোদ্ধাকে’ জুলাই ফাউন্ডেশনে পাইপ দিয়ে মারধর, ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ভারতের হারে বাংলাদেশের বিদায়, হামজার হতাশা

এবার দলগুলো পেল চূড়ান্ত জুলাই সনদ ও স্বাক্ষরের আমন্ত্রণপত্র

সেনা কর্মকর্তাদের জন্য ‘সাবজেল’ ঘোষণার যৌক্তিকতা কী, টিআইবির প্রশ্ন

ভাবিকে হত্যার ১০ বছর পরে ভাতিজিকে পিটিয়ে হত্যা করলেন হাবিল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত