Ajker Patrika

ইরানে সেনাদের গুলিতে বাবা-মাসহ ৩ বছরের শিশুকন্যা নিহত, ক্ষোভে ফুঁসছে জনতা

অনলাইন ডেস্ক
নিহত বাবা-মায়ের কোলে রাহা। ছবি: ইরান ইন্টারন্যাশনাল
নিহত বাবা-মায়ের কোলে রাহা। ছবি: ইরান ইন্টারন্যাশনাল

ইরানের খোমেইন শহরে একটি সামরিক ঘাঁটির নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে একই পরিবারের চারজন নিহত হওয়ার ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র জনরোষ তৈরি হয়েছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছে রাহা শেইখি নামে মাত্র তিন বছর বয়সী এক শিশু। এই ঘটনায় দেশটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভের ঝড় বইছে।

ইরান ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ‘সন্দেহজনক’ দুটি গাড়িতে গুলি চালালে মর্মান্তিক ওই ঘটনাটি ঘটে। স্থানীয় গভর্নর পরে নিশ্চিত করেন—নিহতরা হলেন মোহাম্মদ হোসেইন শেইখি, তাঁর স্ত্রী মাহবুবে শেইখি, তাঁদের শিশু কন্যা রাহা এবং পরিবারের এক আত্মীয়া ফারজানে হেইদারী। অভিযোগ উঠেছে, হেইদারীর সন্তানও গুলিবিদ্ধ হয়ে এখন কোমায় আছে।

খোমেইন শহরের পাবলিক প্রসিকিউটর ইব্রাহিম গামিজি জানিয়েছেন, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আটক করা হয়েছে এবং বিচারিক তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে হামলাকারীরা কোন নিরাপত্তা বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত তা সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়নি। তবে সামাজিক মাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, গুলিবর্ষণকারীরা ছিলেন আধাসামরিক বাহিনী বাসিজ-এর সদস্য এবং ঘটনাটি একটি চেকপয়েন্টে ঘটেছে।

শিশু রাহার মৃত্যু যেন আরেক কিয়ান

শিশু রাহার ছবি ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে। অনেকেই তার মৃত্যুকে ২০২২ সালে খুজিস্তানে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ৯ বছর বয়সী কিয়ান পিরফালাকের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হিসেবে দেখছেন। সেই সময় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলাকালে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে কিয়ান নিহত হয়।

নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী নারগিস মোহাম্মদী এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এই শিশু তার মায়ের কোলে থাকা অবস্থায় গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে গেছে। সামরিক অস্ত্রে একটি পরিবারের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেওয়া হলো।’ তিনি উল্লেখ করেন—এই ধরনের সহিংসতা এখন ইরানে একটি চলমান চিত্র। যুদ্ধ নেই, তবু গুলির বৃষ্টি হচ্ছে।

নির্বাসিত ইরানি রাজপুত্র রেজা পাহলভি এক্স-এ লিখেছেন, ‘খোমেনির জন্মভূমি খোমেইন শহরে আইআরজিসি ও বাসিজ বাহিনী এক পরিবারের সবাইকে, এমনকি শিশু রাহাকেও হত্যা করেছে। এটি ইরান সরকারের অপরাধপ্রবণ ও নিপীড়ক চরিত্র তুলে ধরে।’

চেকপয়েন্টেই বারবার মৃত্যু

এই ঘটনাটি এমন এক সময় ঘটল, যখন ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের সংঘাতের পর ইরান অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা জোরদার করেছে। রাজপথে চেকপয়েন্টের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। ফলে এসব স্থানে সহিংস ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। গত ২ জুলাই হামেদান শহরের কাছে মেহেদি আবাঈ ও আলিরেজা কারবাসি নামে পাহাড় ভ্রমণে যাওয়া দুই তরুণ নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হন। তাঁদের জানাজায় স্লোগান ওঠে—‘যে আমার ভাইকে মেরেছে, আমি তাকে মারবই।’

এই ধরনের নিহতের ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তদন্তের কোন দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। বরং নিহতদের পরিবারকে নানা রকম চাপ ও ভয়ভীতির মধ্যে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এর আগেও বহুবার নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে সাধারণ মানুষ নিহত হওয়ার পর বিচার না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কিয়ান পিরফালাকের হত্যার ঘটনায় প্রথমে এক ভিন্নমতাবলম্বীকে দায়ী করে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তবে কিয়ানের মা বারবার দাবি করেছেন, সরকারি বাহিনীই গুলি চালিয়েছিল।

এই সব ঘটনার পুনরাবৃত্তি এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি ইরানের সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনী ও সরকারের প্রতি গভীর অবিশ্বাস সৃষ্টি করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত