Ajker Patrika

‘গাজার মানুষ না মৃত না জীবিত, তারা আসলে হাঁটাচলা করা কঙ্কাল’

অনলাইন ডেস্ক
গাজায় প্রতি পাঁচ শিশুর মধ্যে একজন অপুষ্টিতে ভুগছে। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
গাজায় প্রতি পাঁচ শিশুর মধ্যে একজন অপুষ্টিতে ভুগছে। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) জানিয়েছে, গাজায় প্রতি পাঁচ শিশুর মধ্যে একজন অপুষ্টিতে ভুগছে এবং এই সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। সংস্থাটির কমিশনার-জেনারেল ফিলিপ ল্যাজারিনি বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তাঁর সহকর্মীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘গাজার মানুষ না মৃত না জীবিত, তারা আসলে হাঁটাচলা করা কঙ্কাল।’

১০০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ও মানবাধিকারকর্মী গোষ্ঠী গাজায় দুর্ভিক্ষের বিষয়ে সতর্ক করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ সরবরাহ প্রবেশে বাধা দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছে। তারা এর ফলে শিশুদের মধ্যে সৃষ্ট অপুষ্টির জন্য হামাসকে দায়ী করছে। তবে জাতিসংঘ সতর্ক করে দিয়েছে, গাজায় সাহায্যের পরিমাণ ‘খুবই সামান্য’ এবং এই অঞ্চলে খাবারের সংকট ‘আগে কখনো এত ভয়াবহ ছিল না’।

ল্যাজারিনি বৃহস্পতিবার তাঁর বিবৃতিতে বলেছেন, ‘প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১০০ জনের বেশি মানুষ, যাদের অধিকাংশই শিশু, অনাহারে মারা গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সাহায্যকারী দলগুলো যে শিশুদের দেখছে, তাদের বেশির ভাগই দুর্বল, শীর্ণকায় এবং জরুরি চিকিৎসা না পেলে তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেশি।’ তিনি ইসরায়েলের কাছে ‘মানবিক অংশীদারদের গাজায় অবাধ ও নিরবচ্ছিন্ন মানবিক সহায়তা আনার অনুমতি’ দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান।

এর আগে বুধবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, গাজার একটি বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠী ‘অনাহারে ভুগছে’। ডব্লিউএইচওর প্রধান তেদরোস আধানম গেব্রেয়াসুস বলেন, ‘আমি জানি না, আপনারা এটাকে অনাহার ছাড়া আর কী বলবেন—আর এটা মানবসৃষ্ট।’

গাজার উত্তরাঞ্চলে ৪০ বছর বয়সী হানা আলমাধুন বিবিসিকে জানান, স্থানীয় বাজারগুলোতে প্রায়ই খাবার ও অন্যান্য সামগ্রী পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, ‘যদি কিছু পাওয়া যায়ও, তাহলে তার দাম এত বেশি যে সাধারণ মানুষের পক্ষে তা কেনা অসম্ভব। আটা এখানে অনেক দামি এবং সংগ্রহ করা কঠিন। মানুষ আটা কেনার জন্য সোনা ও ব্যক্তিগত জিনিসপত্র বিক্রি করছে।’

তিন সন্তানের মা হানা আরও বলেন, ‘প্রতিটি নতুন দিন একটি নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে। মানুষ দিনের শুরু থেকে খাবারের সন্ধানে বের হয়। আমি নিজের চোখে দেখেছি, উচ্ছিষ্ট খাবারের সন্ধানে শিশুরা আবর্জনা ঘাঁটছে।’

বুধবার গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের পরিদর্শনে গিয়ে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হেরজোগ বলেন, তাঁর দেশ ‘আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী’ মানবিক সহায়তা প্রদান করছে। কিন্তু গাজার একজন সাহায্যকর্মী তাহানি শেহাদা বলেন, মানুষ ‘শুধু টিকে থাকার চেষ্টা করছে। রান্না করা বা গোসল করার মতো সাধারণ বিষয়গুলোও এখন বিলাসবহুল হয়ে উঠেছে। আমার আট মাসের একটি শিশু আছে। সে জানে না তাজা ফলের স্বাদ কেমন।’

গত মার্চ মাসের শুরুতে দুই মাসের যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েল গাজায় সাহায্য সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। প্রায় দুই মাস পর অবরোধ আংশিকভাবে শিথিল করা হলেও খাদ্য, জ্বালানি এবং ওষুধের সংকট বেড়ে যায়। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ) দ্বারা পরিচালিত একটি নতুন সাহায্যব্যবস্থা চালু করে ইসরায়েল।

জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের তথ্য অনুসারে, গত দুই মাসে ত্রাণ সহায়তা নিতে গিয়ে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর গুলিতে ১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। তাদের মতে, এদের মধ্যে অন্তত ৭৬৬ জন জিএইচএফের চারটি বিতরণকেন্দ্রের আশপাশে নিহত হয়েছে, যা মার্কিন বেসরকারি নিরাপত্তা ঠিকাদারদের দ্বারা পরিচালিত এবং ইসরায়েলি সামরিক জোনের ভেতরে অবস্থিত। আরও ২৮৮ জন জাতিসংঘ এবং অন্যান্য সাহায্য সংস্থার কনভয়ের কাছে নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

তবে ইসরায়েল ত্রাণ সহায়তার স্থানগুলোতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য হামাসকে দায়ী করেছে। তারা বলেছে, তাদের সৈন্যরা কেবল সতর্কতামূলক গুলি চালায় এবং তারা ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে না। এদিকে জিএইচএফ দাবি করেছে, জাতিসংঘ গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘মিথ্যা’ পরিসংখ্যান ব্যবহার করছে।

গাজার একটি হাসপাতালে আশ্রয় নেওয়া ১৯ বছর বয়সী বিধবা নাজাহ আশঙ্কা করছেন, ত্রাণ সহায়তা বিতরণকেন্দ্রে গেলে তিনি ‘গুলিবিদ্ধ হতে পারেন’। নাজাহ বিবিসিকে বলেন, ‘আমি আশা করি তারা আমাদের জন্য কিছু খাবার ও পানীয় আনবে। আমরা খাওয়াদাওয়া ছাড়া ক্ষুধায় মারা যাচ্ছি। আমরা তাঁবুতে থাকি। আমরা শেষ হয়ে গেছি।’

যুক্তরাজ্যের একটি দাতব্য সংস্থার সঙ্গে গাজায় কর্মরত চিকিৎসক আসিল বলেন, ‘গাজা সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি নয়, বরং তারা ইতিমধ্যেই তা ভোগ করছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী দুবার ত্রাণ সহায়তা কেন্দ্রে গিয়েছিলেন। শেষবার গিয়ে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। এরপর সেটিই শেষ। যদি আমাদের ক্ষুধায় মরতে হয়, তাহলে তা-ই হোক। তবু তাদের সাহায্যের জন্য যাব না। তাদের সাহায্যের পথই মৃত্যুর পথ।’

গাজার একজন বিক্রেতা আবু আলা। তিনি ও তাঁর শিশুরা ‘প্রতি রাতে ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে যায়।’ আবু আলা বলেন, ‘আমরা জীবিত নই। আমরা মৃত। আমরা সারা বিশ্বের কাছে আমাদের বাঁচানোর জন্য আবেদন জানাচ্ছি।’

আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ওয়ালা ফাথি তাঁর তৃতীয় সন্তানের জন্ম দিতে চলেছেন। দেইর আল-বালাহ থেকে তিনি বিবিসিকে বলেন, গাজার মানুষেরা ‘এমন এক বিপর্যয় এবং দুর্ভিক্ষের অভিজ্ঞতা লাভ করছে, যা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমার শিশুটি আমার গর্ভেই থাকুক। এই কঠিন পরিস্থিতিতে আমাকে যেন তাকে জন্ম দিতে না হয়।’

অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক জগৎপতি বর্মা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ওসি হয়েও আমার কম দামি ফোন, দামি ফোন নিয়ে ঘুরলে ছিনতাই তো হবেই’, ভুক্তভোগীকে মোহাম্মদপুরের ওসি

মোহাম্মদপুর থানায় ভুক্তভোগীকে হেনস্তা: চার পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার, ৩ ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার

এনসিপির পদযাত্রা উপলক্ষে ‘স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত’, প্রধান শিক্ষকের দুই রকম বক্তব্য

হিন্দু মন্দির নিয়ে কেন সংঘাতে জড়াল বৌদ্ধ-অধ্যুষিত থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মহড়া শুরু, চলবে ৩০ জুলাই পর্যন্ত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত