Ajker Patrika

‘গাজার মানুষ না মৃত না জীবিত, তারা আসলে হাঁটাচলা করা কঙ্কাল’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গাজায় প্রতি পাঁচ শিশুর মধ্যে একজন অপুষ্টিতে ভুগছে। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
গাজায় প্রতি পাঁচ শিশুর মধ্যে একজন অপুষ্টিতে ভুগছে। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) জানিয়েছে, গাজায় প্রতি পাঁচ শিশুর মধ্যে একজন অপুষ্টিতে ভুগছে এবং এই সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। সংস্থাটির কমিশনার-জেনারেল ফিলিপ ল্যাজারিনি বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তাঁর সহকর্মীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘গাজার মানুষ না মৃত না জীবিত, তারা আসলে হাঁটাচলা করা কঙ্কাল।’

১০০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ও মানবাধিকারকর্মী গোষ্ঠী গাজায় দুর্ভিক্ষের বিষয়ে সতর্ক করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ সরবরাহ প্রবেশে বাধা দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছে। তারা এর ফলে শিশুদের মধ্যে সৃষ্ট অপুষ্টির জন্য হামাসকে দায়ী করছে। তবে জাতিসংঘ সতর্ক করে দিয়েছে, গাজায় সাহায্যের পরিমাণ ‘খুবই সামান্য’ এবং এই অঞ্চলে খাবারের সংকট ‘আগে কখনো এত ভয়াবহ ছিল না’।

ল্যাজারিনি বৃহস্পতিবার তাঁর বিবৃতিতে বলেছেন, ‘প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১০০ জনের বেশি মানুষ, যাদের অধিকাংশই শিশু, অনাহারে মারা গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সাহায্যকারী দলগুলো যে শিশুদের দেখছে, তাদের বেশির ভাগই দুর্বল, শীর্ণকায় এবং জরুরি চিকিৎসা না পেলে তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেশি।’ তিনি ইসরায়েলের কাছে ‘মানবিক অংশীদারদের গাজায় অবাধ ও নিরবচ্ছিন্ন মানবিক সহায়তা আনার অনুমতি’ দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান।

এর আগে বুধবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, গাজার একটি বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠী ‘অনাহারে ভুগছে’। ডব্লিউএইচওর প্রধান তেদরোস আধানম গেব্রেয়াসুস বলেন, ‘আমি জানি না, আপনারা এটাকে অনাহার ছাড়া আর কী বলবেন—আর এটা মানবসৃষ্ট।’

গাজার উত্তরাঞ্চলে ৪০ বছর বয়সী হানা আলমাধুন বিবিসিকে জানান, স্থানীয় বাজারগুলোতে প্রায়ই খাবার ও অন্যান্য সামগ্রী পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, ‘যদি কিছু পাওয়া যায়ও, তাহলে তার দাম এত বেশি যে সাধারণ মানুষের পক্ষে তা কেনা অসম্ভব। আটা এখানে অনেক দামি এবং সংগ্রহ করা কঠিন। মানুষ আটা কেনার জন্য সোনা ও ব্যক্তিগত জিনিসপত্র বিক্রি করছে।’

তিন সন্তানের মা হানা আরও বলেন, ‘প্রতিটি নতুন দিন একটি নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে। মানুষ দিনের শুরু থেকে খাবারের সন্ধানে বের হয়। আমি নিজের চোখে দেখেছি, উচ্ছিষ্ট খাবারের সন্ধানে শিশুরা আবর্জনা ঘাঁটছে।’

বুধবার গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের পরিদর্শনে গিয়ে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হেরজোগ বলেন, তাঁর দেশ ‘আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী’ মানবিক সহায়তা প্রদান করছে। কিন্তু গাজার একজন সাহায্যকর্মী তাহানি শেহাদা বলেন, মানুষ ‘শুধু টিকে থাকার চেষ্টা করছে। রান্না করা বা গোসল করার মতো সাধারণ বিষয়গুলোও এখন বিলাসবহুল হয়ে উঠেছে। আমার আট মাসের একটি শিশু আছে। সে জানে না তাজা ফলের স্বাদ কেমন।’

গত মার্চ মাসের শুরুতে দুই মাসের যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েল গাজায় সাহায্য সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। প্রায় দুই মাস পর অবরোধ আংশিকভাবে শিথিল করা হলেও খাদ্য, জ্বালানি এবং ওষুধের সংকট বেড়ে যায়। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ) দ্বারা পরিচালিত একটি নতুন সাহায্যব্যবস্থা চালু করে ইসরায়েল।

জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের তথ্য অনুসারে, গত দুই মাসে ত্রাণ সহায়তা নিতে গিয়ে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর গুলিতে ১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। তাদের মতে, এদের মধ্যে অন্তত ৭৬৬ জন জিএইচএফের চারটি বিতরণকেন্দ্রের আশপাশে নিহত হয়েছে, যা মার্কিন বেসরকারি নিরাপত্তা ঠিকাদারদের দ্বারা পরিচালিত এবং ইসরায়েলি সামরিক জোনের ভেতরে অবস্থিত। আরও ২৮৮ জন জাতিসংঘ এবং অন্যান্য সাহায্য সংস্থার কনভয়ের কাছে নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

তবে ইসরায়েল ত্রাণ সহায়তার স্থানগুলোতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য হামাসকে দায়ী করেছে। তারা বলেছে, তাদের সৈন্যরা কেবল সতর্কতামূলক গুলি চালায় এবং তারা ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে না। এদিকে জিএইচএফ দাবি করেছে, জাতিসংঘ গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘মিথ্যা’ পরিসংখ্যান ব্যবহার করছে।

গাজার একটি হাসপাতালে আশ্রয় নেওয়া ১৯ বছর বয়সী বিধবা নাজাহ আশঙ্কা করছেন, ত্রাণ সহায়তা বিতরণকেন্দ্রে গেলে তিনি ‘গুলিবিদ্ধ হতে পারেন’। নাজাহ বিবিসিকে বলেন, ‘আমি আশা করি তারা আমাদের জন্য কিছু খাবার ও পানীয় আনবে। আমরা খাওয়াদাওয়া ছাড়া ক্ষুধায় মারা যাচ্ছি। আমরা তাঁবুতে থাকি। আমরা শেষ হয়ে গেছি।’

যুক্তরাজ্যের একটি দাতব্য সংস্থার সঙ্গে গাজায় কর্মরত চিকিৎসক আসিল বলেন, ‘গাজা সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি নয়, বরং তারা ইতিমধ্যেই তা ভোগ করছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী দুবার ত্রাণ সহায়তা কেন্দ্রে গিয়েছিলেন। শেষবার গিয়ে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। এরপর সেটিই শেষ। যদি আমাদের ক্ষুধায় মরতে হয়, তাহলে তা-ই হোক। তবু তাদের সাহায্যের জন্য যাব না। তাদের সাহায্যের পথই মৃত্যুর পথ।’

গাজার একজন বিক্রেতা আবু আলা। তিনি ও তাঁর শিশুরা ‘প্রতি রাতে ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে যায়।’ আবু আলা বলেন, ‘আমরা জীবিত নই। আমরা মৃত। আমরা সারা বিশ্বের কাছে আমাদের বাঁচানোর জন্য আবেদন জানাচ্ছি।’

আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ওয়ালা ফাথি তাঁর তৃতীয় সন্তানের জন্ম দিতে চলেছেন। দেইর আল-বালাহ থেকে তিনি বিবিসিকে বলেন, গাজার মানুষেরা ‘এমন এক বিপর্যয় এবং দুর্ভিক্ষের অভিজ্ঞতা লাভ করছে, যা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমার শিশুটি আমার গর্ভেই থাকুক। এই কঠিন পরিস্থিতিতে আমাকে যেন তাকে জন্ম দিতে না হয়।’

অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক জগৎপতি বর্মা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সমুদ্রে কেন হঠাৎ মাদকযুদ্ধে নামলেন ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সমুদ্রে একের পর এক সন্দেহভাজন মাদকবাহী নৌকার ওপর হামলা করছে মার্কিন বাহিনী। গত এক সপ্তাহের মধ্যেই অন্তত তিনটি সন্দেহভাজন নৌকায় আঘাত করেছে তারা। এর মধ্যে একটি ক্যারিবিয়ান সাগর ও অন্তত দুটি হামলা হয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরে।

গত ২২ অক্টোবর মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের একটি এক্স পোস্টে দেখা গেছে—নীল রঙের একটি নৌকা দ্রুত গতিতে ছুটে চলেছে। পরে সেটি আঘাতপ্রাপ্ত ও বিস্ফোরিত হয়ে আগুনের গোলায় পরিণত হয়। ভিডিওতে হেগসেথ মন্তব্য করেছেন, ‘আল-কায়েদার মতোই কার্টেলগুলো আমাদের সীমান্ত ও জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। কোনো প্রশ্রয় বা ক্ষমা হবে না—শুধুই ন্যায়বিচার।’

এখন পর্যন্ত প্রশান্ত মহাসাগরের ওই দুটি হামলায় আক্রান্ত নৌকা দুটিকে যথাক্রমে ৮ নম্বর ও ৯ নম্বর হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। সর্বশেষ শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) ক্যারিবিয়ান সাগরে আরও একটি হামলার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এসব হামলায় মৃতের সংখ্যা এখন ৪৩-এ পৌঁছেছে।

তবে মার্কিন প্রশাসন এখনো জনসমক্ষে কোনো প্রমাণ দেয়নি যে, নৌকাগুলোতে যারা ছিলেন, তাঁরা আসলে কোনো মাদক কার্টেলের সদস্য ছিলেন বা নৌকাগুলো মাদক বহন করছিল। এর ফলে বিষয়টি আইনি বৈধতা ও হোয়াইট হাউসের আসল উদ্দেশ্য নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) এনপিআর-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলার আগে থেকেই মার্কিন বাহিনী ভেনেজুয়েলার উপকূলে শক্তি বাড়িয়েছে। নৌবহর ও সৈন্যদল এমনভাবে মোতায়েন করেছে যে, আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞরা এটিকে নজিরবিহীন বলছেন। এ অবস্থায় ছোট ছোট নৌকাকে লক্ষ্য করে এত সামরিক শক্তি প্রয়োগকে একটি অতিরঞ্জিত পদক্ষেপ বলে মনে করছেন তাঁরা। কিছু বিশ্লেষকের মতে, এটি ভেনেজুয়েলার নেতৃত্বকে উৎখাতের উদ্দেশ্য প্রকাশ কিংবা তাঁর বিরুদ্ধে সেনা উত্থানকে উসকে দেওয়ার কৌশলও হতে পারে।

ট্রাম্প বারবার দাবি করেছেন, আন্তর্জাতিক জলসীমায় এই ধরনের হামলা করার আইনি ক্ষমতা তাঁর প্রশাসনের আছে। এটিকে তিনি জাতীয় নিরাপত্তার অংশ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। তিনি বলছেন, এই হামলাগুলো আমেরিকানদের জীবন বাঁচাচ্ছে। কিন্তু আইনগতভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করার ক্ষমতা মার্কিন কংগ্রেসের হাতে এবং কংগ্রেস মাদক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ধরনের যুদ্ধ ঘোষণা করেনি। ডেমোক্র্যাট, এমনকি রিপাবলিকান কয়েকজন নেতাও এই হামলাগুলোকে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে সমালোচনা করেছেন। কেন্টাকি সিনেটর র‍্যান্ড পল বলেছেন, ‘প্রমাণ ছাড়াই, মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া অনৈতিক।’

এদিকে জাতিসংঘের স্বাধীন বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন—আন্তর্জাতিক জলসীমায় আইনগত ভিত্তি ছাড়া মারণাস্ত্র প্রয়োগ আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইনের লঙ্ঘন এবং নির্বিচারে হত্যার সমান হতে পারে। প্রতিবেশী কলম্বিয়াও উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে। কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট কিছু হামলায় তাঁর দেশের নাগরিক নিহত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। পরিসংখ্যান ও প্রমাণ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা এখন ক্রমেই বাড়ছে।

এই পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত কোন দিকে যাবে, তা জানতে সারা বিশ্ব এখন সমুদ্রে তাকিয়ে আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হোয়াইট হাউসে বলরুম নির্মাণে গুগল-অ্যাপল-মাইক্রোসফট অর্থ দিচ্ছে কেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
৩০ কোটি ডলার ব্যয়ে এই বলরুম তৈরি করছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
৩০ কোটি ডলার ব্যয়ে এই বলরুম তৈরি করছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ৩০ কোটি ডলারের (প্রায় ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা) একটি বিলাসবহুল বলরুম নির্মাণকাজ শুরু করেছেন। গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া এই নির্মাণকাজ হোয়াইট হাউস কমপ্লেক্সে ১৯৪৮ সালের পর সবচেয়ে বড় স্থাপত্য পরিবর্তন। এ প্রকল্পের আওতায় পূর্ব দিকের উইংটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে, যেখানে এত দিন পর্যন্ত ফার্স্ট লেডির দপ্তর ছিল এবং বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো।

তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে—এ নির্মাণকাজের ব্যয় সরকারি নয়, বরং বেসরকারি অনুদানে মেটানো হচ্ছে। এতে অংশ নিচ্ছে গুগল, অ্যামাজনসহ বড় বড় প্রযুক্তি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এ কারণে প্রশ্ন উঠেছে—এই অনুদানদাতারা কি প্রেসিডেন্টের বিশেষ প্রভাব বা সুবিধা পেতে পারেন?

ট্রাম্পের দাবি, ৮ হাজার ৩৬০ বর্গমিটার (৯০ হাজার বর্গফুট) আয়তনের এই বিশাল বলরুমে একসঙ্গে ৯৯৯ জন অতিথি জায়গা পাবেন।

আগস্টে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট জানিয়েছিলেন, প্রকল্পের খরচ প্রায় ২০ কোটি ডলার। কিন্তু ট্রাম্প এবার তা বাড়িয়ে ৩০ কোটি ডলার বলেছেন।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিলাসবহুল এ বলরুমের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে চলমান শাটডাউনে। ফলে জাতীয় রাজধানী পরিকল্পনা কমিশনের আনুষ্ঠানিক অনুমোদনও নেওয়া হয়নি—কারণ কমিশনটি তখন বন্ধ ছিল।

কে দিচ্ছে এই টাকা

গত সোমবার ট্রাম্প তাঁর সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন—‘১৫০ বছরের বেশি সময় ধরে প্রত্যেক প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউসে একটি বলরুমের স্বপ্ন দেখেছেন। আমি গর্বিত যে আমি সেই প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি আমেরিকান করদাতাদের এক পয়সা ব্যয় না করে এই বহু প্রয়োজনীয় প্রকল্পটি শুরু করতে পেরেছি।’

ট্রাম্প আরও বলেন, ‘এ বলরুম নির্মাণে অর্থায়ন করছে অনেক দেশপ্রেমিক দাতা, মহান আমেরিকান কোম্পানি এবং আমি নিজেও।’

তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা গেছে, কিছু অনুদান আইনি সমঝোতার অংশ হিসেবেও আসছে। যেমন, ২০২১ সালে ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গার পর ট্রাম্পের ইউটিউব অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়। সে ঘটনায় করা মামলার নিষ্পত্তির অংশ হিসেবে ইউটিউব ২ কোটি ২০ লাখ ডলার দেবে বলরুম নির্মাণে। ইউটিউব ও গুগল উভয়ই একই কোম্পানি অ্যালফাবেটের মালিকানাধীন।

প্রধান অনুদানদাতাদের তালিকায় কারা আছে

হোয়াইট হাউসের দেওয়া দাতাদের তালিকায় রয়েছে বেশ কিছু নামী প্রতিষ্ঠান, যাদের মধ্যে কয়েকটির বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে আইনি জটিলতা বা জরিমানা হয়েছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য—

অ্যামাজন

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি) অভিযোগ করেছিল, অ্যামাজন অনেক ব্যবহারকারীকে তাদের অনুমতি ছাড়াই প্রাইম সদস্যপদে অন্তর্ভুক্ত করেছে। মামলা নিষ্পত্তির অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার জরিমানা রাজি হয়।

অ্যাপল

আইফোন প্রস্তুতকারক কোম্পানিটি সম্প্রতি এক আদালতের রায়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আদালত বলেছেন, তারা নির্দিষ্ট কিছু অ্যাপ ক্রয়ের ওপর কমিশন নিতে পারবে না। এ রায় বাতিলের আবেদন করেছে অ্যাপল।

কয়েনবেজ

যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ। সেপ্টেম্বরের শেষে আদালত প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবসায়িক ঝুঁকি গোপন করার অভিযোগে মামলার অনুমতি দেন।

গুগল

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ গুগলের বিরুদ্ধে অনলাইন সার্চ বাজারে একচেটিয়া আধিপত্যের মামলায় জয়লাভ করেছে।

লকহিট মার্টিন

মার্কিন প্রতিরক্ষা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান প্রকল্পে অতিরিক্ত বিল দেখানোর অভিযোগে ২ কোটি ৯৭ লাখ ডলার জরিমানা দিতে রাজি হয়েছে।

মাইক্রোসফট

প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী সত্য নাদেলা, যিনি ২০২৫ অর্থবছরে রেকর্ড ৯৬ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার বেতন পেয়েছেন।

লুটনিক পরিবার

এ পরিবারের কর্তা হাওয়ার্ড লুটনিক, যিনি ট্রাম্প প্রশাসনে বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে কাজ করছেন। তাঁর কোম্পানি ক্যান্টর গেমিং বারবার ফেডারেল আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত।

উইঙ্কলভস যমজ ভাই (ক্যামেরন ও টাইলার)

তাঁরা ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ জেমিনি ও উইঙ্কলভস ক্যাপিটালের সহপ্রতিষ্ঠাতা। সম্প্রতি ইউএস সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (ইউএসএসইসি) তাদের এক অবৈধ ক্রিপ্টো ঋণ প্রকল্পের মামলা নিষ্পত্তি করেছে।

আর কারা আছে তালিকায়

অন্যান্য দাতা ও করপোরেশনের মধ্যে রয়েছে—

আলট্রিয়া গ্রুপ, বুজ অ্যালেন হ্যামিল্টন, ক্যাটারপিলার, কমকাস্ট, জে পেপে অ্যান্ড এমিলিয়া ফানজুল, হার্ড রক ইন্টারন্যাশনাল, এইচপি, মেটা প্ল্যাটফর্মস, মাইক্রন টেকনোলজি, নেক্সটএরা এনার্জি, প্যালান্টিয়ার টেকনোলজিস, রিপল, রেনল্ডস আমেরিকান, টি-মোবাইল, টিথার আমেরিকা, ইউনিয়ন প্যাসিফিক, অ্যাডেলসন ফ্যামিলি ফাউন্ডেশন, স্টেফান ই ব্রোডি, বেটি ওল্ড জনসন ফাউন্ডেশন, চার্লস অ্যান্ড মারিসা কাসকারিলা, এডওয়ার্ড অ্যান্ড শারি গ্লেজার, হ্যারল্ড হ্যাম, বেঞ্জামিন লিওন জুনিয়র, লরা অ্যান্ড আইজ্যাক পার্লমুটার ফাউন্ডেশন, স্টিফেন এ শোয়ার্জম্যান, কনস্ট্যান্টিন সকোলভ, কেলি লোফলার অ্যান্ড জেফ স্প্রেচার ও পাওলো তিরমানি।

এই অনুদান কি আইনসম্মত

যুক্তরাষ্ট্রের সাংবিধানিক আইনজীবী ব্রুস ফেইন আল-জাজিরাকে বলেন, হোয়াইট হাউসে বলরুম নির্মাণে বেসরকারি অনুদান নেওয়া অ্যান্টি ডেফিসিয়েন্সি অ্যাক্টের স্পষ্ট লঙ্ঘন। এই আইন অনুযায়ী, কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান বেসরকারি পক্ষের কাছ থেকে পণ্য বা সেবা নিতে পারে না।

ফেইন উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘ভাবুন তো—কংগ্রেস মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণে কোনো অর্থ দেবে না। তাহলে কি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইলন মাস্ক বা অন্য কোনো বিলিয়নিয়ারের টাকায় সেই দেয়াল বানাতে পারবেন? এটি সেই একই ব্যাপার।’

ফেইন আরও সতর্ক করে বলেন, ট্রাম্প পুরোপুরি লেনদেনের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। বলরুমের অনুদানদাতারা ভবিষ্যতে করছাড়, গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ কিংবা ফেডারেল অপরাধে প্রেসিডেন্টের ক্ষমা—এই সুবিধাগুলো পেতে পারেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতে এসি বাসের আগুনে নিহত বেড়ে ২০

কলকাতা প্রতিনিধি  
হায়দরাবাদ থেকে বেঙ্গালুরুগামী বাসটিতে ৪০ জন যাত্রী ছিলেন। ছবি: সংগৃহীত
হায়দরাবাদ থেকে বেঙ্গালুরুগামী বাসটিতে ৪০ জন যাত্রী ছিলেন। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের কুরনুলে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২০ জনে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় সময় আজ শুক্রবার ভোরে কুরনুল জেলার উল্লিন্দাকোন্ডা এলাকার কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। হায়দরাবাদ থেকে বেঙ্গালুরুগামী ওই বাসে ৪০ জন যাত্রী ছিলেন।

বাসটি স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে হায়দরাবাদ থেকে রওনা হয়। জাতীয় সড়ক (এনএইচ-৪৪) ধরে ভোররাত ৩টা ৩০ মিনিটের দিকে কুরনুলের কাছে পৌঁছালে সেটি একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে সঙ্গে সঙ্গে বাসটিতে আগুন ধরে যায়।

পুলিশের ধারণা, ধাক্কার পর মোটরসাইকেলটি বাসের নিচে আটকে যায় এবং সেখান থেকে স্ফুলিঙ্গ ছিটকে আগুন লাগে। দুর্ঘটনার পর বাসচালক ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেলেও পরে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, বাসটিতে আগুন লাগার পর কয়েক মিনিটের মধ্যে আগুন বাসটিকে গ্রাস করে ফেলে।

কুরনুলের পুলিশ সুপার বিক্রান্ত পাতিল বলেন, ‘ভোররাত ৩টার দিকে হায়দরাবাদ থেকে বেঙ্গালুরু যাচ্ছিল কাভেরি ট্রাভেলসের একটি ভলভো বাস। এটি একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়, যা বাসের নিচে আটকে যায়। সেখান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে আমরা ধারণা করছি।’

পুলিশ সুপার বিক্রান্ত পাতিল আরও বলেন, ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি (এফএসএল) দল ঘটনাস্থলে এসে আগুন লাগার সঠিক কারণ খতিয়ে দেখছে। বাসটি যেহেতু এসি, তাই অনেক যাত্রী জানালা ভেঙে বের হতে বাধ্য হন। যাঁরা জানালা ভাঙতে পেরেছেন, তাঁরাই বেঁচে গেছেন।

তালিকা অনুযায়ী বাসে ৪০ জন যাত্রী ছাড়াও চালক ও সহকারী ছিলেন। দুর্ঘটনার সময় অধিকাংশ যাত্রী ঘুমিয়ে ছিলেন, তাই বের হতে দেরি হয়ে যায়।

অন্ধ্র প্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী ও জনপ্রিয় অভিনেতা পবন কল্যাণ বলেছেন, ‘আমরা প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছি, বাসের তেলের ট্যাংকির কাছে মোটরসাইকেলটি আটকে যাওয়ায় বিস্ফোরণ ঘটে। এ থেকে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে।’

অন্ধ্র প্রদেশের পরিবহনমন্ত্রী রামপ্রসাদ রেড্ডি বলেন, বাসটির নথিপত্র যাচাই করা হচ্ছে। গত দুই মাসে বাসসংক্রান্ত নিয়ম ও রক্ষণাবেক্ষণ কতটা মানা হয়েছে, সেটিও পরীক্ষা করা হবে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডু নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি শোক প্রকাশ করেছেন এবং সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।

মুখ্যমন্ত্রী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘কুরনুল জেলার চিনা টেকুর গ্রামের কাছে ভয়াবহ বাস দুর্ঘটনার খবর শুনে আমি মর্মাহত। যেসব পরিবার প্রিয়জন হারিয়েছে, তাদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সরকার সর্বোচ্চ সহায়তা দেবে।’

এ মর্মান্তিক ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, লোকসভার বিরোধী দলের নেতা রাহুল গান্ধী, অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডু ও তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী এ রেভন্থ রেড্ডি গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী মোদি নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের জন্য ২ লাখ ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারের জন্য ৫০ হাজার রুপি প্রাথমিক ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চীন বিরল খনিজ রপ্তানি বন্ধের পর টনক নড়ল ট্রাম্পের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ২২: ৩০
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের অর্থনীতিবিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তারা কুয়ালালামপুরে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন। এই বৈঠকের অন্যতম লক্ষ্য হলো দুই দেশের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের উত্তেজনা প্রশমিত করা। পাশাপাশি আগামী সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের বৈঠককে সফল করা।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এবং বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী হে লিফেংয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। এই আলোচনার মূল লক্ষ্য হলো—চীনা পণ্যের ওপর ট্রাম্পের নতুন ১০০% শুল্ক আরোপ এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার হুমকির বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করা। বিরল খনিজ পদার্থ ও ম্যাগনেট রপ্তানির ওপর চীনের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ঠেকাতে ট্রাম্প নতুন এই হুমকি দেন।

এ বৈঠক আগামীকাল শনিবার শুরু হবে মালয়েশিয়ার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত আসিয়ান সম্মেলনের সাইডলাইনে। এটি বেসেন্ট, গ্রিয়ার ও হে লিফেংয়ের মধ্যে গত মে মাসের পর পঞ্চম বৈঠক। আগের বৈঠকগুলো বিভিন্ন ইউরোপীয় শহরগুলোতে হয়েছে। এবার যুক্তরাষ্ট্র ও চীনা উভয় অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল এশীয় রপ্তানিকারক মালয়েশিয়ায় স্থানান্তরিত হলো।

বিরল খনিজ যুদ্ধ

এই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু আবারও চীনের হাতে থাকা বিরল খনিজ পদার্থ ও ম্যাগনেটের বৈশ্বিক সরবরাহের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ। উচ্চপ্রযুক্তি পণ্য উৎপাদনের জন্য অপরিহার্য এসব উপাদান বেইজিং দীর্ঘদিন ধরে ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে কৌশলগত অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।

এপ্রিল মাসে ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ করেন, যা দ্রুত উভয় পক্ষেই শুল্ক তিন অঙ্কের হারে বাড়ে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় চীন যুক্তরাষ্ট্রে বিরল খনিজ পদার্থ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের ইলেকট্রিক যানবাহন, সেমিকন্ডাক্টর এবং অস্ত্র উৎপাদন হুমকির মুখে পড়েছে।

মে মাসে জেনেভায় প্রথম বৈঠকে দুই পক্ষ এই শুল্কযুদ্ধে ৯০ দিনের বিরতি দিতে সম্মত হয়। এতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫৫ শতাংশ এবং চীনে ১০ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে আনে এবং ম্যাগনেট রপ্তানি আংশিকভাবে পুনরায় শুরু হয়। পরবর্তী বৈঠকগুলো লন্ডন, স্টকহোম ও সেপ্টেম্বরে মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে টিকটকের মালিকানা যুক্তরাষ্ট্রের হাতে হস্তান্তর করার বিষয়ে একমত হয় চীন।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ কালোতালিকার নিয়ম কঠোর করলে ওই অস্থায়ী সমঝোতা ভেঙে যায়। ফলে হাজার হাজার চীনা প্রতিষ্ঠানের যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। এর জবাবে ১০ অক্টোবর চীন নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রে বৈশ্বিক বিরল খনিজ পদার্থ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়।

বেসেন্ট ও গ্রিয়ার চীনের এই পদক্ষেপকে ‘বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনের ওপর দখল নেওয়ার চেষ্টা’ বলে মন্তব্য করেন। তাঁরা জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও তাঁর মিত্ররা এই নিষেধাজ্ঞা মেনে নেবে না।

রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসন এখন সফটওয়্যারনির্ভর বহু পণ্য (ল্যাপটপ থেকে শুরু করে জেট ইঞ্জিন পর্যন্ত) চীনে রপ্তানি সীমিত করার ব্যাপারে চিন্তা করছে।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, কুয়ালালামপুরে তাদের আসল চ্যালেঞ্জ হবে আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়া, যাতে ম্যাগনেটের সরবরাহ বজায় থাকে এবং যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আর না বাড়ায়। তা না হলে আগামী বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠেয় অ্যাপেক সম্মেলনে ট্রাম্প-সি বৈঠক বাতিল হয়ে যেতে পারে।

জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইনিশিয়েটিভ ফর ইউএস-চায়না ডায়ালগ’-এর সিনিয়র ফেলো ডেনিস ওয়াইল্ডার এক ওয়েবিনারে বলেন, ‘আমি আশাবাদী, এই বৈঠকে অন্তত কিছু কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, যাতে পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখা যায়। ট্রাম্প নতুন ১০০% শুল্ক আরোপে যাবেন না, আর চীনও বিরল খনিজ পদার্থ রপ্তানিতে কিছুটা নমনীয়তা দেখাবে।’

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার টেবিলে চীনের কাছে আমেরিকান সয়াবিন পুনরায় কেনা শুরু করার দাবি জানাতে পারে। কারণ, চীন সেপ্টেম্বরে একদমই সয়াবিন কেনেনি, যা ট্রাম্পকে ভোট দেওয়া কৃষকদের জন্য অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিকর।

তবে বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এই আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের মূল অভিযোগগুলো (চীনের রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতি, অতিরিক্ত উৎপাদন সক্ষমতা এবং দেশীয় ভোগ বৃদ্ধির অভাব) আলোচনার কেন্দ্রে আসবে না।

সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের অর্থনীতি বিভাগের পরিচালক ফিলিপ লাক বলেন, ‘আমরা মূল সমস্যায় যেতে পারছি না। কারণ, আমাদের তো তাদের বলতে হচ্ছে, “সয়াবিন কেন, ঠিক না?”’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত