Ajker Patrika

বিমান হামলার পর এবার লেবাননে স্থল অভিযানের প্রস্তুতি ইসরায়েলের

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image

লেবাননে গতকাল বুধবার টানা তৃতীয় দিনের মতো বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। গত সোমবার থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় নারী, শিশুসহ অন্তত ৫৯২ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে প্রায় ২ হাজার মানুষ। এ ছাড়া বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। লেবাননের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, তাঁর দেশে এখন যা হচ্ছে, সেটি কার্যত ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ। এর মধ্যেই ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম জানিয়েছে, লেবাননে সম্ভাব্য স্থল অভিযানের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে তাদের সেনাবাহিনী। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত স্থল অভিযানের জন্য প্রশিক্ষণরত সেনাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।

লেবাননের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. ফিরাস আবিয়াদ বলেছেন, গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া হামলায় নিহতদের অনেকেই নারী, শিশুসহ বেসামরিক নাগরিক। এ ছাড়া আহত হয়েছে আরও সহস্রাধিক মানুষ। তাদের চিকিৎসা দিতে হাসপাতালগুলোকে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে।

হামলার জবাবে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে তিন শতাধিক রকেট হামলা চালিয়েছে হিজবুল্লাহ। এতে ছয়জনের আহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষের মধ্যেই সংঘাত থেকে পিছিয়ে আসার আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।

বিদ্যমান পরিস্থিতির জন্য হিজবুল্লাহকে দায়ী করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, এই গোষ্ঠী লেবাননকে ‘খাদের কিনারায়’ নিয়ে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বলেছেন, একটি সর্বাত্মক সংঘাতে যাওয়ার ‘আগ্রহ কারও মধ্যেই নেই’ এবং বিদ্যমান সংকটের ‘কূটনৈতিক সমাধান এখনো সম্ভব’। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ‘লেবাননকে আরেকটি গাজায় পরিণত করা বিশ্ব মেনে নিতে পারবে না’ বলে সতর্ক করেছেন।

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের জেরে বছরখানেক ধরে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে আন্তসীমান্ত লড়াই চলছে। এতে শত শত মানুষ মারা গেছে। নিহতদের বেশির ভাগই হিজবুল্লাহ যোদ্ধা। এ ছাড়া উভয় পক্ষে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। হিজবুল্লাহ বলছে, তারা হামাসের সমর্থনে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং গাজায় যুদ্ধবিরতি না হওয়া পর্যন্ত তারা এটি থামাবে না।

লেবাননের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. ফিরাস আবিয়াদ বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তাঁর দেশে বর্তমানে যা হচ্ছে, তাকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘জরুরি বিভাগে যাদের আনা হচ্ছে, তাদের দিকে তাকালে পরিষ্কার হবে যে তারা বেসামরিক নাগরিক। ইসরায়েলিরা যে দাবি করছে, তারা (আহত মানুষেরা) সেই যোদ্ধা নয়। হামলার শিকার ব্যক্তিদের বিষয়ে আমরা জানি; কারণ, আমাদের অ্যাম্বুলেন্সগুলো তাদের হাসপাতালে নিয়ে আসছে। তারা বেসামরিক নাগরিক, যারা নিজেদের স্বাভাবিক কাজকর্ম করছিল।’

এর আগে ২০০৬ সালে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যকার যুদ্ধের সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির তুলনা করতে গিয়ে লেবাননের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নিশ্চিতভাবে আমরা আরও নিষ্ঠুর যুদ্ধ দেখতে পাচ্ছি। বিশেষ করে বেসামরিক নাগরিকদের টার্গেট করা হচ্ছে।’ জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক দপ্তরও সোমবারের হামলায় হতাহতের সংখ্যা নিয়ে সতর্ক করেছে।

হিজবুল্লাহ যেখানে অস্ত্র মজুত করেছে বলে ইসরায়েল দাবি করছে, সেখানকার কাছাকাছি ভবনগুলো খালি করার জন্য আইডিএফ লেবাননের মানুষকে ফোনে বার্তা পাঠিয়েছে। এ সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি বলেন, ‘বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এর প্রভাব ব্যাপক হবে জেনেও হামলার আগে শুধু তাদের পালাতে বলাটাই যথাযথ হতে পারে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত