Ajker Patrika

বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার পক্ষে অধিকাংশ ভারতীয় চিকিৎসক

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪: ২৯
Thumbnail image
ভারতীয় হাসপাতালগুলোতে বাংলাদেশি রোগী ৬০ শতাংশেরও বেশি কমে গিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং তাঁর ভারতে চলে যাওয়ার পর থেকে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের জটিলতা বাড়তে থাকে। বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া সাময়িক বন্ধ রাখে ভারত। এরপর থেকে দেশটিতে বাংলাদেশি রোগী ও পর্যটকের সংখ্যা কমে আসতে থাকে। গত মাসে বাংলাদেশে ভারতের জাতীয় পতাকার অবমাননা এবং সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানান ভারতের কিছু চিকিৎসক। পশ্চিমবঙ্গে হাসপাতাল ও চেম্বারে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।

তবে বয়কটের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অনেক চিকিৎসকই। টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে জানা যায়, কলকাতার হাসপাতালগুলোতে বাংলাদেশ থেকে আসা রোগীর মধ্যে হিন্দু রোগীর চেয়ে মুসলিম রোগীর সংখ্যা বেশি। ধর্ম-বর্ণ বা জাতিগত কোনো কারণে ভারতে চিকিৎসা নিতে আসা বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া বন্ধ করা হবে না বলে জানিয়েছেন ভারতের চিকিৎসকেরা।

আনন্দপুরের ফর্টিস হাসপাতালের কার্ডিওথোরাসিক ও হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন কে এম মান্দানা বলেন, ‘বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা না করার প্রশ্নই ওঠে না। আমাদের সঙ্গে তাঁদের বহু বছরের সম্পর্ক। বর্তমান অস্থিরতা এ সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না। আমরা উদ্বিগ্ন, অনেক রোগী চিকিৎসা করতে আসতে পারছেন না। তাঁদের অবস্থা খারাপ থেকে আরও খারাপ হতে পারে।’

পিয়ারলেস হাসপাতালের প্রধান ক্রিটিক্যাল কেয়ার স্পেশালিস্ট অজয় সরকার বলেন, ‘বাংলাদেশে যা ঘটছে তা উদ্বেগজনক। যে কোনো বিবেকবান সরকারের উচিত তাঁর প্রতিটি নাগরিকের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা। এ বিষয়গুলো রাজনৈতিক, আমরা শপথ নিয়েছি সব রোগীকে সমানভাবে চিকিৎসা দেব।’

এএম ফার্টিলিটির বিশেষজ্ঞ কৌশিকি রায় বলেন, ‘বন্ধ্যাত্বের জন্য বাংলাদেশের অনেক নারী রোগী এখানে এসে নারী চিকিৎসককে দেখাতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। অনেকেই এখানে চিকিৎসা নিয়ে সন্তান ধারণ করেছেন। তাঁদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে সহায়তা করেছি এবং ভবিষ্যতেও করব। যে কেউ আমাদের কাছ থেকে যত্ন নিতে আসে, তাঁরা সম্প্রদায় বা দেশ নির্বিশেষে রোগী।’

এ ছাড়া গতকাল বুধবার কলকাতায় এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির চিকিৎসকদের সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (আইএমএ) পশ্চিমবঙ্গ শাখা জানায়, তারা বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া বন্ধ করবে না। রোগীদের কোনো ধরনের হয়রানি হতে দেবে না। বাংলাদেশি রোগীদের প্রতি মানবিকতা ও পেশাদারিত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে তাঁরা অঙ্গীকারবদ্ধ।

সংবাদ সম্মেলনে আইএমএর পশ্চিমবঙ্গ শাখার সদস্য চিকিৎসক এন কাঞ্জিলাল ও কৌশিক চৌধুরী বলেন, ‘চিকিৎসকদের কাছে রোগীর কোনো জাত, ধর্ম বা দেশের পরিচয় নেই। রোগীকে প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া চিকিৎসকদের নৈতিক ও পেশাগত দায়িত্ব। চিকিৎসা পরিষেবা নিতে পশ্চিমবঙ্গে আসা রোগীদের যথাযথ সেবা দেওয়া হবে। এ বিষয়ে আমরা কোনো আপস করব না।’

চিকিৎসা খাতের ওপর কোনো অস্থিরতা বা রাজনৈতিক প্রভাব পড়তে দেওয়া হবে না বলে জানায় আইএমএ পশ্চিমবঙ্গ শাখা। তাঁরা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকের পাশাপাশি চিকিৎসাসেবার উন্নয়নে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। চিকিৎসাসংক্রান্ত সহায়তা করতে বাংলাদেশি রোগীদের জন্য একটি বিশেষ হেল্পলাইন চালুর ঘোষণাও দিয়েছে আইএমএ।

অন্যদিকে, বাংলাদেশি রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসা পরিষেবায় ১০ শতাংশ ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছেন বেহালা বালানন্দ ব্রহ্মচারী হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার হাসপাতাল সুপার চিকিৎসক সুশান্ত সেনগুপ্ত ও ট্রাস্টের সম্পাদক দীপক সরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত