Ajker Patrika

মাস্ক আর ট্রাম্পের দ্বন্দ্বে ‘অ্যাপস্টেইন ফাইলস’ কেন আলোচনায়

অনলাইন ডেস্ক
জেফরি অ্যাপস্টেইনের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
জেফরি অ্যাপস্টেইনের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

চাঞ্চল্যকর এক অভিযোগে অ্যাপস্টেইন ফাইলসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম থাকার কথা বলেছেন টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ মাস্ক লিখেছেন, ‘এবার সময় এসেছে বড় বিস্ফোরণের—অ্যাপস্টেইন ফাইলসে ট্রাম্পও আছেন।’ এই মন্তব্য তাঁদের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

মাস্কের এই অভিযোগের পরপরই ট্রাম্প কড়া প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি মাস্কের বক্তব্যকে ‘ভিত্তিহীন’ এবং ‘উন্মাদনার বহিঃপ্রকাশ’ হিসেবে আখ্যা দেন। ট্রাম্প বলেন, ‘মাস্ক নিজের মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন। এ ধরনের দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা।’

ট্রাম্প ও ইলন মাস্কের সম্পর্ক একসময় বেশ ঘনিষ্ঠ ছিল। মাস্ক ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে অর্থায়ন করেছিলেন এবং ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি’ নামে একটি বিতর্কিত সরকারি বিভাগ পরিচালনা করছিলেন। তবে সম্প্রতি তিনি ট্রাম্প প্রশাসন থেকে সরে দাঁড়ান এবং প্রশাসনের একটি নতুন বিল সম্পর্কে কটাক্ষ করে বলেন—এটি একটি জঘন্য বিল যা আমেরিকান নাগরিকদের জন্য অসহনীয় ঋণের বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।

অ্যাপস্টেইন ফাইলস কী?

জেফরি অ্যাপস্টেইন ছিলেন একজন প্রভাবশালী মার্কিন ফাইন্যান্সিয়াল উদ্যোক্তা। ২০০০-এর দশকে তিনি অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত হন। তবে প্রথম দফায় মাত্র ১৩ মাস জেল খেটে মুক্তি পান। ২০১৯ সালে নতুন করে যৌন পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন এবং নিউইয়র্কের একটি কারাগারে আত্মহত্যা করেন। মার্কিন বিচার বিভাগ পরে জানায়, তাঁর মৃত্যু ছিল নজরদারির ঘাটতি, অবহেলা এবং জেল কর্মীদের ব্যর্থতার ফল।

অ্যাপস্টেইনের মৃত্যুর পর একাধিক মামলার সূত্রে এবং তথ্য অধিকার আইনের মাধ্যমে হাজার হাজার পৃষ্ঠা নথি জনসমক্ষে আসে। এসব নথিতে মার্কিন ও বিদেশি রাজনীতিক, ব্যবসায়ী এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের নাম উঠে আসে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এ সংক্রান্ত সর্বশেষ নথিপত্র প্রকাশিত হয়।

ফাইলগুলোতে ডোনাল্ড ট্রাম্প, সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, ব্রিটিশ প্রিন্স অ্যান্ড্রু, ম্যাজিশিয়ান ডেভিড কপারফিল্ড এবং এক ভুক্তভোগীর বয়ানে মাইকেল জ্যাকসনের নামও আসে। তবে কারও বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ প্রমাণ হয়নি। এক ভুক্তভোগী জানান, তিনি ট্রাম্পের অ্যাটলান্টিক সিটি ক্যাসিনোতে অ্যাপস্টেইনের সঙ্গে ছিলেন, তবে ট্রাম্পের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ বা অনৈতিক আচরণের তথ্য পাওয়া যায়নি।

ট্রাম্প ও অ্যাপস্টেইনের সম্পর্ক

ট্রাম্প ও অ্যাপস্টেইনের বন্ধুত্ব ১৯৮০-এর দশকে শুরু হয়। তাঁরা নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন অভিজাত অনুষ্ঠানে একসঙ্গে যেতেন। ২০০২ সালে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘সে (অ্যাপস্টেইন) দারুণ এক ব্যক্তি এবং সুন্দরী নারীদের প্রতি তার ঝোঁক আছে, বিশেষত যারা অপেক্ষাকৃত তরুণী।’ তবে ২০০৪ সালের পর একটি রিয়েল এস্টেট চুক্তিতে মতবিরোধের কারণে তাঁদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

মৃত্যুর আগে অ্যাপস্টেইন ট্রাম্পকে ‘ভয়ংকর মানুষ’ ও ‘মূলত অশিক্ষিত’ বলে অভিহিত করেন। আর ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি অ্যাপস্টেইনের কোনো অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, বরং তদন্তে সহায়তা করেছিলেন।

২০১৪ সালে ইলন মাস্ককেও অ্যাপস্টেইনের সহযোগী ঘিসলেন ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে একটি পার্টিতে ছবিতে দেখা গিয়েছিল। ঘিসলেন ম্যাক্সওয়েল ২০২২ সালে যৌন পাচারে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ২০ বছরের কারাদণ্ড পান। তাঁর আপিল ২০২৪ সালে খারিজ হয়।

এই মুহূর্তে মাস্ক ও ট্রাম্পের মধ্যে সম্পর্কে ব্যাপক ফাটল দেখা দিয়েছে। মাস্কের এই অভিযোগ ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচার ও জনসমর্থনের ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ৪ বিচারকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিল যুক্তরাষ্ট্র

প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণার পর যা বলল ইইউ

আপনাদের সঙ্গে হাত মেলাব না, বিস্ফোরক তামিম

কাগজে-কলমে মেয়র হওয়ায় দায়িত্ব পালন করলাম: জাতীয় ঈদগাহ পরিদর্শন শেষে ইশরাক

এপ্রিলে নির্বাচন ঘোষণায় বিএনপি ও জাতির প্রত্যাশা পূরণ হয়নি: সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত