Ajker Patrika

স্বামী রাজা বা প্রেমিক রাজ নন—সোনমের ভাবনায় ছিলেন অন্য একজন

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১২ জুন ২০২৫, ২১: ০৫
ছবি: আনন্দবাজার
ছবি: আনন্দবাজার

স্বামী রাজা রঘুবংশীর হত্যাকাণ্ডে সোনমই মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন বলে সন্দেহ করছেন তদন্তকারীরা। শুধু নিজের কার্যসিদ্ধির জন্যই কথিত প্রেমিক রাজকে তিনি এই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করেছিলেন।

আজ বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গের সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার জানিয়েছে, ভারতের মেঘালয়ে চাঞ্চল্যকর মধুচন্দ্রিমা হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নতুন মোড় নিয়েছে। তদন্তকারীরা সন্দেহ করছেন, স্বামী রাজা রঘুবংশী কিংবা কথিত প্রেমিক রাজ সিংহ কুশওয়াহা নন, সোনমের সংসার পাতার পরিকল্পনা ছিল তৃতীয় কোনো ব্যক্তির সঙ্গে।

রাজার খুনের তদন্তে এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে সোনম, তাঁর কথিত প্রেমিক রাজসহ রয়েছেন তিন হত্যাকারী। টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুসারে, হত্যাকাণ্ডে সোনমকেই মূল পরিকল্পনাকারী বলে সন্দেহ করছেন তদন্তকারীরা। রাজকে তিনি শুধু ব্যবহার করেছিলেন নিজের কার্যসিদ্ধির জন্য।

তদন্তকারীদের দাবি, সোনম অন্য কারও সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। সোনমের এই পরিকল্পনার কথা টেরও পাননি রাজ।

পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সূত্রে ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, রাজার হত্যাকাণ্ডের পর সোনমকে আত্মগোপনের জন্যও সাহায্য করছিলেন রাজ। ৬ জুন উত্তর প্রদেশে সোনম যে ট্যাক্সিটি ব্যবহার করেছিলেন, সেই ট্যাক্সিচালককে টাকা দিয়েছিলেন রাজই।

তদন্তকারী দলের সন্দেহ—কোথায় গা ঢাকা দেবেন, সেটিও ঠিক করে ফেলেছিলেন সোনম। মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে তিনি একটি ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করেছিলেন বলেও দাবি করা হচ্ছে। ওই ফ্ল্যাটে সোনমের থাকার পরিকল্পনার কথা তিনি ছাড়া অন্য কেউই জানতেন না। এমনকি এই ঘটনায় গ্রেপ্তার অন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিরাও এ বিষয়ে একেবারে অন্ধকারে ছিলেন।

প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছিল, রাজ ও সোনমের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সেই প্রেমের সম্পর্কের জেরেই রাজাকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছিল। তবে এবার এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নতুন তথ্য উঠে আসতে শুরু করেছে। আসলে সোনমের সঙ্গে প্রেমের কথা শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছেন রাজের পরিবারের সদস্যরা। নিয়োগকর্তা ও কর্মীর মধ্যে যেমন সম্পর্ক হয়, রাজ ও সোনমের মধ্যেও তেমনই সম্পর্ক ছিল বলে দাবি রাজের বোনের। তিনি জানান, তাঁর দাদা কোনোভাবেই এমন কাজ করতে পারেন না। রাজকে ফাঁসানো হচ্ছে বলেই দাবি তাঁর। রাজ সোনমকে দিদি বলে ডাকতেন বলেও দাবি করেছে তাঁর পরিবার।

মাত্র কয়েক দিনের বিবাহিতজীবন ছিল সোনম ও রাজা রঘুবংশীর। এর মধ্যেই ভয়ংকর এক ষড়যন্ত্রের শিকার হন মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরের ব্যবসায়ী রাজা। স্ত্রী সোনমের সঙ্গে তিনি মেঘালয় ভ্রমণে গিয়েছিলেন হানিমুনে। তিনি জানতেন না, এ যাত্রাই তাঁর শেষ যাত্রা।

এনডিটিভির তথ্যমতে, গত ১১ মে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন রাজা ও সোনম। এরপর ২০ মে তাঁরা মেঘালয়ের উদ্দেশে রওনা দেন। সোনম ও তাঁর কথিত প্রেমিক রাজের পরিকল্পনা অনুযায়ী একই দিনে গুয়াহাটিতে পৌঁছান তিন ভাড়াটে খুনি আনন্দ কুর্মি, আকাশ রাজপুত ও বিশাল সিং চৌহান। সেখানে তাঁরা অনলাইনে একটি কুঠার অর্ডার করেন। ২৩ মে স্বামী রাজাকে ফটোশুটের কথা বলে পাহাড়ি পথে একটি নির্জন স্থানে নিয়ে যান সোনম। একপর্যায়ে সেখানে তিনি ক্লান্ত হয়ে যাওয়ার ভান করে রাজার পেছনে পড়ে যান এবং আচমকা চিৎকার করেন—‘মেরে দো’! এটাই ছিল হত্যার সংকেত।

রাজার নিখোঁজ হওয়ার খবর প্রথমে নিখোঁজ তদন্ত হিসেবে শুরু হলেও ২ জুন পূর্ব খাসি হিলসে একটি গিরিখাদ থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার হয়। এরপরই এটি একটি হত্যা মামলায় রূপ নেয়। রাজার মাথার সামনে-পেছনে দুটি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। কাছেই পাওয়া যায় রক্তমাখা একটি কুঠার।

এই ঘটনার তদন্তে ২০ সদস্যের বিশেষ টিম ‘অপারেশন হানিমুন’ গঠন করেছিল মেঘালয় পুলিশ। ৪২টি সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, কলরেকর্ড যাচাই ও নানা জেলায় অভিযান চালিয়ে তারা গ্রেপ্তার করে তিন খুনিকে। আর ৮ জুন রাতে মধ্যপ্রদেশের গাজিপুরে একটি ধাবায় অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায় সোনমকে। পরে তাঁকে উদ্ধার করে গাজিপুর মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।

সোনম দাবি করেন, তাঁকে মাদক খাইয়ে গাজিপুরে আনা হয়েছে। কিন্তু পুলিশের দাবি, তিনি নিজেই নাটক সাজিয়ে নিজেকে ‘ভিকটিম’ হিসেবে উপস্থাপন করতে চেয়েছিলেন। তদন্তে জানা যায়, তিনি খুনিদের প্রথমে ৪ লাখ, পরে ২০ লাখ টাকা দিতে চেয়েছিলেন। আর সরাসরি ঘটনাস্থলে না গেলেও পুরো ঘটনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন রাজ। পরে তাঁকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গত ২৩ মে সোনমের সঙ্গে রাজার মায়ের একটি ফোনালাপ ছিল। ফোনে শাশুড়িকে সোনম জানিয়েছিলেন, রাজার সঙ্গে তিনি জঙ্গলের মধ্যে ট্র্যাক করছেন। তবে সেখানেই সোনমের ক্লান্ত কণ্ঠ ও রাজার অনুপস্থিতি নিয়ে সন্দেহ জাগে। এই কলই পরে পুলিশের তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হিসেবে কাজ করে।

পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে সোনম ও রাজের একটি চাঞ্চল্যকর চ্যাটও। এই চ্যাটে সোনম রাজকে লিখেছেন, ‘রাজা কাছে আসছে, আমি তাকে মোটেও পছন্দ করি না...’। বিয়ের মাত্র তিন দিন পরই সোনম ও রাজ রাজাকে খুনের ষড়যন্ত্র করেন। আর খুনের জন্য বেছে নেন হানিমুন ট্রিপকেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দুই ঘণ্টা আগে একই বিমানে ভ্রমণের দাবি এক ব্যক্তির, জানালেন ভয়াবহ তথ্য

নতুন করে তাবরিজের পর ইরানের শিরাজ শহরেও ইসরায়েলের হামলা

১০ মিনিটের দেরি বাঁচিয়ে দিল ভূমিকে, অল্পের জন্য ধরতে পারেননি বিধ্বস্ত বিমানটি

নির্বাচন নিয়ে ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে যে কথা হলো

ড. ইউনূস ‘হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ পাওয়া দ্বিতীয় ব্যক্তি, প্রথম কে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত