Ajker Patrika

ভারতে জেন-জিদের হাত ধরে ধর্ম ও জ্যোতিষশাস্ত্রের বাজার এখন ৭ লাখ কোটি টাকা!

এনডিটিভি
আপডেট : ০৭ জুলাই ২০২৫, ২৩: ৩৬
ভারতের জনপ্রিয় আধ্যাত্মিক গুরু ও ধর্মীয় বক্তা অনিরুদ্ধাচার্য মহারাজ ওরফে পুকি বাবা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
ভারতের জনপ্রিয় আধ্যাত্মিক গুরু ও ধর্মীয় বক্তা অনিরুদ্ধাচার্য মহারাজ ওরফে পুকি বাবা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

সম্প্রতি এক নতুন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে ভারতে। তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে জেন-জিরা ধর্ম ও জ্যোতিষশাস্ত্রের প্রতি আবারও আগ্রহী হয়ে উঠছে। একসময় যা কুসংস্কার বলে বিবেচিত হতো, তা এখন তাঁদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি ভারতে ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক অর্থনীতিকে বিশাল আকার দিচ্ছে। এই বাজার বর্তমানে প্রায় ৭ লাখ কোটি টাকার সমান।

গুরুগাঁওভিত্তিক সংখ্যাতত্ত্ব জ্যোতিষ সংস্থা নুম্রো ভানির জ্যোতিষী সিদ্ধার্থ এস কুমার এই পরিবর্তনের সরাসরি সাক্ষী। তিনি প্রতি মাসে ১০০ জনেরও বেশি ক্লায়েন্টকে পরামর্শ দেন, যাঁদের বেশির ভাগের বয়স ২৪ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। তবে তাঁর সবচেয়ে কম বয়সী ক্লায়েন্ট মাত্র আট বছর বয়সী! তিনি জানান, এই জেন-জিদের মধ্যে থেকে অনেক কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণী সম্পর্ক বা আত্মপরিচয়-সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে তাঁর কাছে আসছেন।

সিদ্ধার্থ এস কুমার একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন। ২৫ বছর বয়সী এক যুবক এসেছিলেন তাঁর কাছে। যুবক তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আমি কেন এখানে? আমার জীবনের উদ্দেশ্য কী?’ সিদ্ধার্থ বলেন, ওই ছেলে যখন দেখলেন তাঁর জন্মছকে ভ্রমণ, শিক্ষা ও দর্শনের প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে, তখন তিনি আর চোখের জল আটকাতে পারেননি। তিনি ১৪ বছর বয়সী একটি মেয়ের কথাও বলেন। ওই মেয়ের অল্প দিনের মধ্যে খুবই ঘনিষ্ঠ একটি সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছিল। সে সিদ্ধার্থের কাছে জানতে চেয়েছিল, ‘কেন সে মানুষের প্রতি এত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে?’

সম্পর্ক, কর্মজীবন বা জীবন নিয়ে বিভ্রান্তিতে থাকা মানুষের এমন গল্পগুলো একটি ক্রমবর্ধমান প্রবণতাকে তুলে ধরে—তরুণ ভারতীয়রা তাঁদের ভেতরের বিশৃঙ্খলা ও মানসিক বাধাগুলো বুঝতে আধ্যাত্মিকতার দিকে ঝুঁকছেন। প্রায়শই এটিকে বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার একটি উপায় হিসেবে ব্যবহার করছেন। আর প্রযুক্তি, এআই ও সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে এসব বিষয়ে পরামর্শ পাওয়াও সহজ হচ্ছে দিন দিন।

নুম্রো ভানির ২০২৪ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৫১ শতাংশ তরুণ ভারতীয় প্রতিদিন জ্যোতিষ শাস্ত্রীয় অন্তর্দৃষ্টি খোঁজেন। প্রায় ৮৮ শতাংশ সপ্তাহে অন্তত একবার রাশিফল পড়ে এবং ৭৫ শতাংশ তাদের হৃদয়সংক্রান্ত ব্যাপারে জ্যোতিষশাস্ত্রের ওপর নির্ভর করে।

তবে ট্র্যাডিশনাল জ্যোতিষশাস্ত্রের বাইরে এখন ডিজিটাল জ্যোতিষশাস্ত্রের জনপ্রিয়তাও বাড়ছে। অ্যাস্ট্রো টক ও অ্যাস্ট্রো ভেদের মতো এআই প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যক্তিগত রাশিফল ও ম্যাচ-মেকিংয়ের মতো পরিষেবা দিচ্ছে। অনলাইন জ্যোতিষশাস্ত্রের বাজার ২০২৫ সালের মধ্যে বার্ষিক ১৪ শতাংশ হারে ৭৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৬ হাজার ২০০ কোটি রুপি) ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। কোভিড-১৯ মহামারি এই প্রবণতাকে আরও ত্বরান্বিত করেছে—২০২১ সালেই অনলাইনে এসব বিষয়ে পরামর্শের হার ২০-২৫ শতাংশ বেড়েছে।

এমনকি ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতেও জেন-জিদের ব্যাপক অংশগ্রহণ দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি সমাপ্ত কুম্ভমেলায় ৪০ কোটিরও বেশি মানুষ অংশ নিয়েছিলেন এবং তাঁদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল তরুণ ভারতীয়। এর মাধ্যমে ভারতের আধ্যাত্মিক অর্থনীতিও বিকশিত হচ্ছে। এটি এখন কেবল মন্দির পরিদর্শনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এতে ভার্চুয়াল পূজা, অনলাইন তীর্থযাত্রা এবং জ্যোতিষশাস্ত্রীয় পরামর্শের মতো ডিজিটাল পরিষেবাও অন্তর্ভুক্ত। ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক বাজারের মূল্য ২০২৩ সালে ৫৮ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৭ লাখ কোটি টাকা) ছিল এবং এটি বার্ষিক প্রায় ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে।

সম্প্রতি সমাপ্ত কুম্ভ মেলায় ৪০ কোটিরও বেশি মানুষ অংশ নিয়েছিল, তাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল তরুণ ভারতীয়রা।
সম্প্রতি সমাপ্ত কুম্ভ মেলায় ৪০ কোটিরও বেশি মানুষ অংশ নিয়েছিল, তাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল তরুণ ভারতীয়রা।

ধর্ম ও জ্যোতিষশাস্ত্র কেন আবার জনপ্রিয় হচ্ছে?

মিলেনিয়ালরা ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতা থেকে দূরে ছিলেন। তাঁরা কর্মজীবনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে, দীর্ঘ সময় কাজ করতে ও নীরবে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবিলা করতে ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু জেনারেশন জেড বা জেন-জিরা উল্টো পথে হাঁটছেন—পুজোর ধূপকাঠি, রত্নপাথর, কৃতজ্ঞতার তালিকা, জ্যোতিষীয় রুটিন—সবই আজ তাঁদের পরিচয়ের অংশ এবং তাঁরা এটি গর্বের সঙ্গে করছেন।

এআইচালিত জ্যোতিষশাস্ত্রীয় অ্যাপ অ্যাস্ট্রো শিওর এআইয়ের প্রধান নির্বাহী ও সহপ্রতিষ্ঠাতা ভানিয়া মিশ্র বলেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই—এটি কেবল ফিরে আসছে না, এটি সম্ভবত পরবর্তী ফোমো (FOMO-Fear Of Missing Out)। মানুষ আর জিজ্ঞাসা করবে না, আপনি সপ্তাহান্তে বাইরে গিয়েছিলেন কি না। তারা জিজ্ঞাসা করবে, আপনি আপনার কর্মফল ঠিক করেছেন কি না।’

মিশ্রের মতে, মিলেনিয়ালরা একসময় উচ্চাকাঙ্ক্ষায় আধ্যাত্মিকতাকে চাপা দিয়েছিলেন। কিন্তু জেন-জি এই ইঁদুর দৌড় থেকে বেরিয়ে এসেছেন। তাঁরা নিজেদের পথ তৈরি করছেন। তাঁদের কাছে মানসিক শান্তির অগ্রাধিকার বেশি। মিলেনিয়াল ও তাঁদের বাবা-মা পারিবারিক আঘাত নিয়ে কখনো কথা বলেননি, কিন্তু জেন-জিরা এখন এসব বিষয় নিয়ে কথা বলছেন।

জেন-জিরা ধর্ম ও জ্যোতিষশাস্ত্রের প্রতি আবারও আগ্রহী হয়ে উঠছে। ছবি: সংগৃহীত
জেন-জিরা ধর্ম ও জ্যোতিষশাস্ত্রের প্রতি আবারও আগ্রহী হয়ে উঠছে। ছবি: সংগৃহীত

মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ইউভেট ডিসাও এতে একমত। তিনি বলেন, জেন-জিরা ধর্মের ক্ষমতা ও সমস্যা বোঝেন। তাঁরা এটিকে অন্ধভাবে গ্রহণ করেন না। তাঁরা তা-ই করেন, যা তাঁদের শান্তি দেয়। তাঁর মতে, এই প্রজন্ম আধুনিক বাস্তবতার সঙ্গে মানানসই করে ভারতীয় ঐতিহ্যকে গ্রহণ করছেন।

জ্যোতিষী সিদ্ধার্থ বলেন, এই প্রজন্ম ধর্মকে নতুন করে সাজাচ্ছে—ট্র্যাডিশন মাইনাস ডগমা। তাঁরা প্রাচীন বিজ্ঞানের ডিজিটাল পুনরুত্থানের নেতৃত্ব দিচ্ছে। এমনকি মিলেনিয়ালরাও এখন এই পথে ফিরতে শুরু করেছেন। এটি কেবল ভারতেই নয়, পশ্চিমা বিশ্বও বৈদিক জ্যোতিষশাস্ত্রে আসক্ত হচ্ছে।

ইনস্টাগ্রাম স্ক্রল করলে বোঝা যাবে, জ্যোতিষশাস্ত্র কতটা ট্রেন্ডি হয়ে উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন জ্যোতিষ মিম, রাশিচক্রভিত্তিক রিল, সেলিব্রিটিদের রাশিফল—সবই ভাইরাল। প্রেমানন্দ গোবিন্দ শরণ (ইনস্টাগ্রামে তাঁর পৌনে ৩ কোটি ফলোয়ার) বা অনিরুদ্ধাচার্য মহারাজ ওরফে পুকি বাবার (ইনস্টাগ্রামে ৩৬ লাখ ফলোয়ার) মতো আধ্যাত্মিক গুরুরাও নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে তাঁদের কর্মকাণ্ড শেয়ার করে এই আলোচনার অংশ হচ্ছেন। তাঁরা জেন-জি ও অন্যান্য তরুণ প্রজন্মকে ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতার প্রতি আরও আগ্রহী করে তুলছেন।

প্রেমানন্দ গোবিন্দ শরণ মহারাজের আশ্রমে বিরাট কোহলি ও আনুশকা শর্মা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
প্রেমানন্দ গোবিন্দ শরণ মহারাজের আশ্রমে বিরাট কোহলি ও আনুশকা শর্মা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।

ভানিয়া মিশ্র বলেন, ‘বিরাট কোহলি, আনুশকা শর্মা থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক তারকা দুয়া লিপাও প্রকাশ্যে জ্যোতিষশাস্ত্রে তাঁদের বিশ্বাসের কথা বলছেন। বিষয়টি আধ্যাত্মিকতাকে আবার জনপ্রিয় করে তুলছে। আর সোশ্যাল মিডিয়ায় যা আছে এবং আপনার তারকারা যা অনুসরণ করেন, তা অবশ্যই কুল, তাই না?’

সিদ্ধার্থ কুমার বলেন, আজকের তরুণেরা জ্যোতিষশাস্ত্র ও আধ্যাত্মিকতাকে তাঁদের সম্পর্ক, অর্থ, স্বাস্থ্য ও জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে গাইড করার জন্য একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। অনেকের কাছে জ্যোতিষীরাই তাঁদের প্রধান উপদেষ্টা। একসময় যা কুসংস্কার হিসেবে দেখা হতো, তা এখন জেন-জিদের সেল্ফ-কেয়ার রুটিনের অংশ। কেউ নতুন কোনো প্রকল্প শুরু করছেন চন্দ্রচক্র অনুযায়ী, কেউ আবার ঘড়ি কিনছেন জ্যোতিষ দেখে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সর্বোচ্চ গতির ট্রেনের পরীক্ষা চালাচ্ছে চীন, ঘণ্টায় পাড়ি দিতে সক্ষম ৪৫০ কিমি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
চীন বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির ট্রেনের পরীক্ষামূলক পরিচালনা শুরু করেছে। ছবি: সিনহুয়া
চীন বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির ট্রেনের পরীক্ষামূলক পরিচালনা শুরু করেছে। ছবি: সিনহুয়া

বিশ্বের দ্রুততম উচ্চগতির ট্রেন সিআর-৪৫০ এর প্রোটোটাইপের পরীক্ষামূলক পরিচালনা শুরু করেছে চীন। বেইজিংয়ের রিং রেলওয়েতে এখনো এই ট্রেনটির পরীক্ষামূলক পরিচালনা চলছে। ট্রেনটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪৫০ কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম। তবে ট্রেনের বাণিজ্যিক চলাচলের সময় এর সর্বোচ্চ গতি নির্ধারিত হবে প্রতি ঘণ্টায় ৪০০ কিলোমিটার।

চীনা সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার খবরে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর বেইজিংয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ট্রেনটিকে ট্র্যাকে নামানো হয়। এটি বর্তমানে চীনের সর্বোচ্চ গতির চলমান সিআর–৪০০ ফুজিং ট্রেনের তুলনায় অনেক বেশি দ্রুত। ফুজিং ট্রেনগুলো প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩৫০ কিলোমিটার গতিতে চলে।

china-2
china-2

ট্রেনটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিআরআরসি করপোরেশন লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াং ফেং জানিয়েছেন, সিআর–৪৫০ উচ্চগতির ট্রেন প্রযুক্তিতে এক বিশাল অগ্রগতি এনেছে। তত্ত্ব, প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি, মানদণ্ড ও পরিচালন ব্যবস্থাপনা—সব ক্ষেত্রেই নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে এই ট্রেন।

৪০০ কিলোমিটার গতির নজিরবিহীন গতি অর্জনের জন্য প্রকৌশলীরা ট্রেনটির ট্র্যাকশন পাওয়ার (ট্রেনে বিদ্যুৎ সরবরাহের সক্ষমতা), ডাইনামিক পারফরম্যান্স বা গতিশীল অবস্থায় ট্রেনটিতে যাবতীয় পরিবর্তন পরিমাপ এবং প্যান্টোগ্রাফ সিস্টেম বা বৈদ্যুতিক লাইন থেকে যে ব্যবস্থার মাধ্যমে একটি ট্রেনে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় তা উন্নত করেছেন।

ওয়াংয়ের ভাষায়, ট্রেনটিতে ব্যবহৃত হয়েছে ওয়াটার-কুলড পারমানেন্ট ম্যাগনেট ট্র্যাকশন সিস্টেম, নতুন প্রজন্মের উচ্চ-স্থিতিশীলতা বগি এবং একাধিক উদ্ভাবনী সিস্টেম। যার ফলে দীর্ঘ সময় উচ্চ গতিতে চলাচলেও এটি স্থিতিশীল থাকে। তিনি জানিয়েছেন, নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও সিআর–৪৫০ এক ধাপ এগিয়ে। এতে রয়েছে মাল্টিলেয়ার ইমারজেন্সি ব্রেক নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি এবং ৪ হাজারেরও বেশি অনবোর্ড মনিটরিং সেন্সর, যা চলমান অবস্থায় ট্রেনের গিয়ার, পুরো ট্রেন, হাই–ভোল্টেজ প্যান্টোগ্রাফ, ট্রেন নিয়ন্ত্রণ ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা—সবকিছুই তাৎক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণ করে। এ ছাড়া, ওভার-দ্য-হরাইজন শনাক্তকরণ ব্যবস্থাও যুক্ত হয়েছে এতে। এই ব্যবস্থা ট্রেনের সামনে ট্র্যাকের জরুরি পরিস্থিতি আগেভাগে শনাক্ত করতে সাহায্য করে।

china-3
china-3

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের ক্ষেত্রেও এসেছে বিপ্লব। বগির ‘স্ট্রিমলাইনড কাওলিং’ ধাঁচের নকশা বাতাসের ঘর্ষণ ও প্রতিরোধ কমিয়েছে, আর নতুন হালকা উপকরণ ও প্রযুক্তি ট্রেনের মোট ওজন ১০ শতাংশ কমিয়েছে এবং চলাচলের ক্ষেত্রে ট্র্যাকের সঙ্গে চাকার এবং সামগ্রিক ঘর্ষণ প্রতিরোধ ২২ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়েছে।

ট্রেনের শব্দ নিয়ন্ত্রণেও এসেছে অগ্রগতি। সাতটি নতুন প্রযুক্তি—যেমন সাউন্ড-অ্যাবসর্বিং উপকরণ ও উন্নত অ্যারোডাইনামিক নকশা ট্রেনের অভ্যন্তরীণ শব্দ ২ ডেসিবল কমিয়েছে। ফলে যাত্রীরা পাচ্ছেন আরও নিঃশব্দ ও আরামদায়ক ভ্রমণ অভিজ্ঞতা।

তা ছাড়া, সিআর–৪৫০ এ যুক্ত হয়েছে একাধিক বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ফিচার, যা ট্রেনের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, চালকের সঙ্গে যোগাযোগ, নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ এবং যাত্রীসেবা—সব দিক থেকেই একে আগের সব মডেলের চেয়ে এগিয়ে রেখেছে বলে জানান ওয়াং।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের সর্ববৃহৎ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের এক ইউনিট পরীক্ষামূলকভাবে চালু, সক্ষমতা কত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ১০
সুবিনসিরি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। ছবি: সংগৃহীত
সুবিনসিরি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প সুবনসিরির আটটি ইউনিটের মধ্যে একটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, খুব শিগগিরই প্রকল্পটির পূর্ণাঙ্গ উদ্বোধন হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ভারতের জাতীয় জলবিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ন্যাশনাল হাইড্রোইলেকট্রিক পাওয়ার করপোরেশন লিমিটেড (এনএইচপিসি)।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনএইচপিসি লিমিটেডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন—অরুণাচল প্রদেশ ও আসাম সীমান্তে অবস্থিত সুবনসিরি লোয়ার জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ২৫০ মেগাওয়াট ইউনিটের ‘ওয়েট কমিশনিং’ গত শুক্রবার শুরু হয়েছে। সংস্থাটির এক মুখপাত্র দ্য হিন্দুকে বলেছেন, ‘ওয়েট কমিশনিং মূলত টারবাইনের বিভিন্ন প্রযুক্তিগত বিষয় পরীক্ষা করার একটি প্রক্রিয়া, এ প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় না। পানির প্রবাহের ভিত্তি করে এই পরীক্ষামূলক প্রক্রিয়া চার থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত চলতে পারে।’

২ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সুবনসিরি লোয়ার প্রকল্পে রয়েছে আটটি ইউনিট, প্রতিটির ক্ষমতা ২৫০ মেগাওয়াট।

মুখপাত্র জানান, এই আটটির মধ্যে চারটি ইউনিট পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত। পরবর্তী ধাপে অন্তত দুটি ইউনিট সমন্বয় করা হবে, যাতে প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা যায়।

অরুণাচল প্রদেশ ও আসামের সীমানার গেরুকামুখে অবস্থিত সুবনসিরি লোয়ার প্রকল্পটির নির্মাণকাজ ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু ২০১১ সালে আসামে বাঁধবিরোধী আন্দোলন ও ভাটিতে পরিবেশগত ক্ষতির আশঙ্কায় প্রকল্পের কাজ স্থগিত করা হয়।

এরপর, ২০১৯ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোগে পুনরায় কাজ শুরু হয়। সেই সময় এনএইচপিসি প্রকল্পটিতে বাড়তি নিরাপত্তা ও ক্ষতিপূরণমূলক পরিবেশ–সংরক্ষণ ব্যবস্থা যুক্ত করে। এনএইচপিসি চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভূপেন্দর গুপ্তা পরীক্ষামূলক এই কাজ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘এই অর্জন এনএইচপিসির প্রকৌশল দক্ষতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এটি কেবল একটি প্রকল্প–মাইলফলক নয়, বরং ভারতের পরিবেশবান্ধব ও স্বনির্ভর জ্বালানি ভবিষ্যতের দিকে অগ্রযাত্রার প্রতীক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শাশুড়িকে রাখতে আপত্তি স্ত্রীর, যুবকের আত্মহত্যা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

শাশুড়ির দায়িত্ব নিতে আপত্তি জানিয়েছেন স্ত্রী। এ কারণে এক যুবক আবাসিক ভবনের ১৫ তলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ভারতের বৃহত্তর ফরিদাবাদে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

িহত ব্যক্তির নাম যোগেশ কুমার। মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়রের বাসিন্দা। গুরুগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে রেডিওথেরাপিস্ট হিসাবে কাজ করতেন। ৯ বছর আগে নেহা রাওয়াত নামে এক নারীকে বিয়ে করেন। ছয় বছরের একটি সন্তান রয়েছে এ দম্পতির।

যোগেশের স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন তাঁর চাচা প্রকাশ সিং। তিনি বলেন, যোগেশকে তাঁর স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন হয়রানি করছিলেন। তারা চাইতেন না যোগেশের মা তাদের সঙ্গে থাকুক।

প্রকাশ সিং অভিযোগে বলেন, যোগেশ ও নেহা আগে নয়ডাতে থাকতেন। নেহা সেখানে চাকরি করতেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কর্মরত থাকায় সন্তানের ঠিকমতো যত্ন নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না বলে যোগেশ তাঁর মাকে নিজের কাছে নিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। নেহা এতে রাজি হননি।

ছয় মাস আগে যোগেশ সন্তানকে নিয়ে ফরিদাবাদের সেক্টর ৮৭-এর পার্ল সোসাইটিতে চলে আসেন। নেহা নয়ডাতে থেকে যান। এ সময় যোগেশ সন্তানের দেখভাল করতে তাঁর মাকে নিয়ে আসেন।

যোগেশের চাচা অভিযোগে আরও বলেন, এক মাস আগে ওই বাসায় এসে যোগেশের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন নেহা। সে সময় যোগেশের মায়ের সেখানে থাকা নিয়ে আপত্তি তোলেন তিনি।

পরে নেহার দুই ভাই আশীষ রাওয়াত ও অমিত রাওয়াত এসে যোগেশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এসব নিয়ে যোগেশ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন বলে তাঁর চাচা প্রকাশ সিং অভিযোগে বলেন।

চাচার অভিযোগ অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার যোগেশ নেহাকে নিয়ে গোয়ালিয়রে যান। ফেরার পথে নেহাকে নয়ডায় নামিয়ে দিয়ে একাই পার্ল সোসাইটির ফ্ল্যাটে ফিরে আসেন। পরদিন শুক্রবার রাতে পার্ল সোসাইটির ১৫ তলা থেকে লাফ দেন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর।

এ ঘটনায় ভুপানি থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে যোগেশের স্ত্রী নেহা রাওয়াত, তাঁর বাবা-মা বীর সিং রাওয়াত ও শান্তি রাওয়াত এবং দুই ভাই আশীষ ও অমিত রাওয়াতের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

ভুপানি থানার এসএইচও ইন্সপেক্টর সংগ্রাম দাহিয়া বলেন, ‘আমরা অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের জন্য তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সেনাবাহিনীর বেতন দিতে ট্রাম্পকে ১৩০ মিলিয়ন ডলার অনুদান, রহস্যময় দাতাটি কে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর এক বন্ধু তাঁকে ১৩০ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছেন যাতে, মার্কিন সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের বেতন দেওয়া যায়। কারণ, মার্কিন সরকারে শাটডাউন তথা অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। ফলে, সরকার রাষ্ট্রীয় কোনো কাজের ব্যয় নির্বাহের জন্য অর্থ বরাদ্দ করতে পারছে না। তবে কে এই অর্থ দিয়েছেন তাঁর পরিচয় প্রকাশিত হয়নি।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবর বলা হয়েছে, মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা দানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, এই অর্থ ১৩ লাখ ২০ হাজার সেনাসদস্যের বেতন প্রদানে ঘাটতি পূরণে সহায়ক হবে। তবে প্রতিরক্ষা দপ্তর দাতার পরিচয় প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তবে এ নিয়ে উঠেছে নৈতিকতার প্রশ্ন।

শনিবার ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ওই দাতা ‘আমার বড় সমর্থক’ এবং ‘মার্কিন নাগরিক।’ তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে সরকার কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে, কারণ কংগ্রেস এখনো বাজেট অনুমোদনে ব্যর্থ। গত সপ্তাহে প্রশাসন সাময়িকভাবে সেনাদের বেতন দিয়েছে, সামরিক গবেষণার বাজেট থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার সরিয়ে এনে। তবে মাসের শেষের বেতন দিবসে কী হবে, তা এখনো অনিশ্চিত।

রোববার অচলাবস্থার ২৫ তম দিন পার হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দীর্ঘতম অচলাবস্থাগুলোর একটি হতে যাচ্ছে। প্রতিরক্ষা দপ্তরের মুখপাত্র শন পারনেল শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই দান এমন শর্তে দেওয়া হয়েছে যে তা সেনাসদস্যদের বেতন ও ভাতার খরচ মেটাতে ব্যবহার করা হবে।’ তিনি জানান, দপ্তরের ‘সাধারণ উপহার গ্রহণের নীতিমালা’ অনুযায়ী এই অর্থ গ্রহণ করা হয়েছে।

ট্রাম্প গত বৃহস্পতিবারই দানের বিষয়টি আভাস দিয়েছিলেন, তবে তখনো দাতার নাম গোপন রেখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘তিনি স্বীকৃতি চান না।’ শনিবার এশিয়া সফরে রওনা হওয়ার আগে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিনি এক অসাধারণ ভদ্রলোক, এক দেশপ্রেমিক, এক মহান পৃষ্ঠপোষক। তিনি প্রচারবিমুখ।’

ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি চান না তাঁর নাম বলা হোক—যা আমার পরিচিত রাজনীতির জগতে বেশ অস্বাভাবিক। সেখানে তো সবাই চায় তাদের নাম উচ্চারিত হোক।’ তিনি আরও বলেন, ‘তিনি ১৩০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছেন যেন সেনারা বেতন পায়। এটা বিশাল অঙ্কের অর্থ। তিনি আমার বড় সমর্থকও বটে।’

এই অর্থ সেনাপ্রতি প্রায় ১০০ ডলারের সমান। গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউস প্রতিরক্ষা বাজেট পুনর্বিন্যাস করে বেতন দিতে পেরেছিল, কিন্তু ৩১ অক্টোবরের পরবর্তী বেতন দিবসে কী হবে, তা অনিশ্চিত রয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত কংগ্রেস এমন কোনো বিল পাস করতে পারেনি যা সেনাদের বেতন নিশ্চিত রাখবে।

অচলাবস্থার কারণে অধিকাংশ সরকারি কর্মী ছুটিতে আছেন বা বেতন ছাড়াই কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রতিরক্ষা দপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী, ১০ হাজার ডলারের বেশি দান নৈতিকতা পর্যালোচনার আওতায় আসে, যাতে নিশ্চিত করা যায় দাতার কোনো ব্যবসায়িক দাবি, মামলা, বা প্রতিরক্ষা দপ্তরের সঙ্গে কোনো স্বার্থ সংঘাত নেই।

বিদেশি নাগরিকের দান হলে তা আরও কঠোর যাচাইয়ের প্রয়োজন হয়। যদিও পেন্টাগন মাঝে মাঝে দান গ্রহণ করে, সাধারণত সেই অর্থ স্কুল, হাসপাতাল, লাইব্রেরি, জাদুঘর বা সমাধিক্ষেত্রের মতো নির্দিষ্ট প্রকল্পে ব্যয় হয়। তবে এবার সেনাবাহিনীকে বেতন দিতে নাম-গোপন দান গ্রহণে সমালোচনা উঠেছে।

সিনেটের প্রতিরক্ষা বরাদ্দ উপকমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সদস্য, ডেলাওয়্যারের সিনেটর ক্রিস কুনস বলেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনীকে নাম-গোপন দানের অর্থে চালানো এক ভয়াবহ নজির। এতে আশঙ্কা তৈরি হয় যে আমাদের সৈন্যরা বিদেশি শক্তির হাতে ‘কেনা সৈন্যে’ পরিণত হচ্ছে কি না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত