Ajker Patrika

‘মন্দিরের সামনে গরুর মাথা’, আসামে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আশঙ্কায় দেখামাত্র গুলির নির্দেশ

অনলাইন ডেস্ক
মন্দিরের সামনে মাংস পাওয়ার অভিযোগ তুলে আসামের ধুবড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ছবি: সংগৃহীত
মন্দিরের সামনে মাংস পাওয়ার অভিযোগ তুলে আসামের ধুবড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের আসাম রাজ্যের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী জেলা ধুবড়িতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় একটি হনুমান মন্দিরের সামনে গরুর মাথা রাখার ঘটনাকে কেন্দ্র করে জেলাটিতে এই দাঙ্গার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় কেউ দাঙ্গা সৃষ্টি চেষ্টা করলে তাদের দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা গতকাল শুক্রবার বলেছেন, বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ধুবড়ি জেলায় রাতে ‘শুট অ্যাট সাইট’—এর নির্দেশ জারি থাকবে। তিনি জানান, একটি ‘সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী’ গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এটি সরকার বরদাশত করবে না।

এর আগে, ধুবড়ি জেলা সদরের হনুমান মন্দিরের কাছে মাংসের টুকরো পাওয়ার প্রতিবাদে গত সপ্তাহের রোববার ধুবড়ি শহরে বিক্ষোভ হয়। সোমবার শহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়, পরদিন তা তুলে নেওয়া হয়। কিন্তু এরপর পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হতে থাকে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে আসামের মুখ্যমন্ত্রী গতকাল শুক্রবার বলেন, ‘আমি আজ গুয়াহাটিতে পৌঁছানোর পরপরই শুট অ্যাট সাইট—এর নির্দেশ জারি করা হবে। রাতে বাইরে বের হওয়া বা পাথর ছোড়া যে কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে।’ তিনি আরও জানান, ধুবড়ি জেলায় র‍্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (আরএএফ) এবং সিআরপিএফ সদস্য মোতায়েন করা হবে। ধুবড়ির সব অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হবে।

গত এক সপ্তাহ ধরে ধুবড়িতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চ্যালেঞ্জিং ছিল জানিয়ে হিমন্ত বলেন, ‘যারা আইন হাতে তুলে নিয়েছে, তাদের কঠোর হাতে দমন করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘৭ জুন বকরি (কোরবানি) ঈদের পরদিন জেলা সদর দপ্তরে হনুমান মন্দিরের সামনে গরুর মাথা পাওয়া যায়। এর পর হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায় শান্তি ও সম্প্রীতির আবেদন জানায়।’

তিনি জানান, তবে পরদিন আবার মন্দিরের সামনে গরুর মাথা রাখা হয় এবং রাতে পাথর ছোড়া হয়। এরপর, কোরবানি ঈদের একদিন আগে ‘নবীন বাংলা’ নামে একটি সংগঠন ‘উসকানিমূলক পোস্টার’ লাগিয়েছিল। তারা ধুবড়িকে ‘বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত’ করার লক্ষ্য তুলে ধরেছিল বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ধুবড়িতে গোলযোগ সৃষ্টিতে সক্রিয় হয়েছে। এই খবর জানার পর আমি ধুবড়ি এসেছি। জেলায় রাতে শুট অ্যাট সাইট-এর নির্দেশ জারি থাকবে। ধুবড়ির সব অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হবে এবং যারা আইন হাতে তুলে নিয়েছে, তাদের কঠোর হাতে দমন করা হবে।’

শর্মা অভিযোগ করেন, এর আগে কোরবানির ঈদে কিছু লোক গরুর মাংস খেত। তবে এবার পশ্চিমবঙ্গ থেকে হাজার হাজার গরু আনা হয়েছে এবং ধুবড়িতে একটি ‘নতুন গরুর মাংসের মাফিয়া’ তৈরি হয়েছে। উৎসবের ঠিক আগে তারা হাজার হাজার পশু সংগ্রহ করেছে।

আসামের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এটা আমার নজরে এসেছে এবং আমি এর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। আমি কর্তৃপক্ষকে এই পশু ব্যবসায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, আগামী বছর তিনি নিজেই ঈদের দিন ধুবড়িতে আসবেন এবং পরের দিনও থাকবেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা সম্প্রদায়ের একটি অংশকে এমন গোলযোগ সৃষ্টি করতে দিতে পারি না। আমাদের সরকার এটা বরদাশত করবে না এবং ধুবড়িকে আমাদের হাতছাড়া হতে দেবে না।’ তিনি জানান, প্রয়োজন হলে তিনি সারা রাত হনুমান মন্দির পাহারা দেবেন। তিনি যোগ করেন, ‘জেলায় আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে এবং সব সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পরাজিত করতে আমরা পুরোপুরি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত