Ajker Patrika

মোদির নিরাপত্তা ইস্যুতে ভোটারদের দৃষ্টি ঘোরাতে ব্যস্ত বিজেপি: কংগ্রেস

কলকাতা প্রতিনিধি
আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২২, ১৯: ৪৮
Thumbnail image

নাগরিকদের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরাতেই প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় ত্রুটির বিষয়টি বড় করে দেখাতে চাইছে বিজেপি। এমনই অভিযোগ কংগ্রেসের। এমনকি কংগ্রেসশাসিত পাঞ্জাবে সরকার ফেলে দিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলেও মনে করছেন কংগ্রেস নেতারা। 

বিজেপি অবশ্য কংগ্রেসের অভিযোগকে আমল না দিয়ে রাজ্যে রাজ্যে নরেন্দ্র মোদির নিরাপত্তা দিতে কংগ্রেস সরকারের ব্যর্থতাকে তুলে ধরছে। পাঞ্জাবের ঘটনা নিয়ে উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, মণিপুর ও গোয়াতেও ভোটে সহানুভূতির হাওয়া তুলতে চাইছে বিজেপি। ফলে চাপা পড়ে যাচ্ছে ভোটের মুখে অন্য বিষয়গুলো। 

ভারতের রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, মোদি জামানায় ভোট এলেই দেশাত্মবোধ জাগিয়ে তোলার হিড়িক লেগে যায়। জঙ্গি হামলা বা সার্জিকাল স্ট্রাইকের মতো ঘটনা দিয়ে মানুষের দৃষ্টি ঘোরানোর চেষ্টা অতীতেও হয়েছে। তা ছাড়া গত বছরের মে মাসে পশ্চিমবঙ্গে হারের পর বিজেপির কাছে দেশের সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তর প্রদেশসহ পাঁচ রাজ্যে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন জরুরি। কিন্তু কৃষক আন্দোলন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, কোভিড পরিস্থিতিতে বেকারের সংখ্যাবৃদ্ধি, ধর্ম সংসদের নামে ঘৃণার রাজনীতি বিজেপির জনপ্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। 

গত কয়েক বছর ধরেই মোদির ভাবমূর্তিকেই বাজি ধরে বিজেপি নির্বাচনে লড়েছে। কিন্তু সেই ভাবমূর্তি কতটা কার্যকর হবে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে বিজেপির অন্দরমহলে। মেঘালয়ের রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক তো মোদির বুদ্ধি-বিবেচনা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিতর্ক আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। দলের দুই সাংসদ বরুণ গান্ধী এবং সুব্রাহ্মণিয়াম স্বামীর বিতর্কিত মন্তব্যেও দল বেশ বিব্রত। এ ছাড়াও উত্তর প্রদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রর উত্থান বিজেপিকে চিন্তায় ফেলেছে। তাই অনেকেই মনে করছেন, পাঞ্জাবের ভাতিন্ডা থেকে সহানুভূতির হাওয়া তুলতে চাইছে বিজেপি। 

প্রধানমন্ত্রীর কনভয় টানা ২০ মিনিট অবরোধে আটকে থাকার ঘটনাটিকে অত্যন্ত সিরিয়াস বিষয় হিসেবেই দেখছেন ভারতের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, প্রধানমন্ত্রীর সফরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্ব। কিন্তু তারপরও গাফিলতি কীভাবে হলো তা নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি উঠেছে। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এ বিষয়ে মামলা গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রীর সফরের যাবতীয় তথ্য সংরক্ষিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এখন দেখার বিষয়, ভারতের সর্বোচ্চ আদালত সঠিক তথ্য তুলে আনতে পারেন কি না। 

তবে পাঁচ রাজ্যের ভোটের আগে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টায় খামতি রাখতে চান না বিজেপি নেতারা। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার ডাকে সাড়া দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, কর্ণাটক, উত্তর প্রদেশ প্রভৃতি রাজ্য থেকে ‘মোদিকে হত্যাচেষ্টার’ প্রতিবাদে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। দাবি উঠছে রাষ্ট্রপতি শাসনের। 

পাল্টা প্রচার শুরু করেছে কংগ্রেসও। ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা ভূপেশ ভাগলের মতে, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাকে সামনে এনে বিজেপি নোংরা রাজনীতি করছে। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে দেশের নিরাপত্তা নিয়েও রাজনীতি করার অভিযোগ তোলেন তিনি। 

পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী চরণজিত সিং চান্নী বিজেপির সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে পাল্টা দাবি করেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সড়কপথে যাত্রার কথা আগাম জানানো হয়নি। তা ছাড়া মোদির জনসভায় লোক না হওয়াতেই বিজেপি এখন নাটক করছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। 

ঘটনা যাই হোক না কেন দেশের প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে এ ধরনের গাফিলতির অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পক্ষে বিপজ্জনক বলে মনে করেন তৃণমূল সাংসদ সুস্মিতা দেব। তাঁর মতে, সুপ্রিম কোর্ট গোটা ঘটনার তদন্ত করলেই প্রকৃত বিষয় উঠে আসবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত