Ajker Patrika

৩ বছরে নাগরিকত্ব ছেড়েছেন ৪ লাখ ভারতীয়, অনেকে গেছেন পাকিস্তান

৩ বছরে নাগরিকত্ব ছেড়েছেন ৪ লাখ ভারতীয়, অনেকে গেছেন পাকিস্তান

ভারতের সংসদে কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া তথ্য বলছে, ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রায় ৪ লাখ মানুষ ভারতের নাগরিকত্ব ছেড়েছেন। তাঁরা বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব নিয়েছেন। এর মধ্যে পছন্দের শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া কানাডাও আছে পছন্দের প্রথম সারিতেই। এমনকি পাকিস্তানের নাগরিকত্বও নিয়েছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভারতীয়। 

ভারতের সংবিধান অনুযায়ী, এ দেশে দ্বৈত নাগরিকত্ব নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অর্থাৎ অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব নিতে চাইলে ভারতীয় নাগরিকত্ব ছাড়তে হয়। ফলে কর্মসূত্র, বিয়ে, উন্নত জীবনের হাতছানি এমন নানা কারণেই প্রচুর ভারতীয় নাগরিকত্ব ছাড়ছেন। 

সংসদে কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া তথ্য বলছে, ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রায় ৪ লাখ নাগরিক ভারত ছেড়ে অন্য দেশের নাগরিকত্ব নিয়েছেন। এই তিন বছরে সবচেয়ে বেশি মানুষ দেশ ছেড়েছেন ২০২১ সালে। সরকারি তথ্য মতে, ২০২১ সালে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৩৭০ জন ভারতের নাগরিকত্ব ছেড়েছেন। ২০১৯ ও ২০২০ সালে এই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১ লাখ ৪৪ হাজার ০১৭ ও ৮৫ হাজার ২৫৬ জন। 

তিন বছরে ভারতের নাগরিকত্ব ত্যাগ করা মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব। মোট ১ লাখ ৭০ হাজার ৭৯৫ জন ভারতীয় এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হয়েছেন। এর পরেই রয়েছে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্য। ভারত ছেড়ে এই তিন দেশের নাগরিক হয়েছেন যথাক্রমে ৬৪ হাজার ৭১ জন, ৫৮ হাজার ৩৯১ জন এবং ৩৫ হাজার ৪৩৫ জন। 

তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এতটা বৈরী সম্পর্ক থাকার পরও কিছু মানুষ ভারত ছেড়ে পাকিস্তানের নাগরিকত্বও নিয়েছেন। ২০১৯ সালে কোনো ভারতীয় পাকিস্তানের নাগরিকত্ব নেননি। কিন্তু ২০২০ সালে নিয়েছেন ৭ জন, আর ২০২১ সালে ভারত ছেড়ে পাকিস্তানের নাগরিকত্ব নিয়েছেন ৪১ জন। 

ভারতীয়দের পাকিস্তানের নাগরিকত্ব নেওয়ার পেছনের কারণ অনুসন্ধানে একটি ঘটনাকে নমুনা হিসেবে উল্লেখ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্ট। ২০১৫ সালে রাজস্থানের কানোটার সাবেক রাজপরিবারের সদস্য পদ্মিনী রাঠোর পাকিস্তানের সিন্ধুতে অমরকোট রাজপরিবারের কুনওয়ার কর্নি সিং সোধাকে বিয়ে করেন। সেই ঘটনা ওই সময় দুই দেশের গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয়েছিল। 

বিয়ের পর গত সাত বছরে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পড়ে পদ্মিনীর জীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। পদ্মিনীর গল্পটি ভারতীয়দের পাকিস্তানের নাগরিকত্ব বেছে নেওয়ার পেছনের কারণ বুঝতে কিছুটা সহায়তা করতে পারে। 

পদ্মিনী (৩৪) দ্য প্রিন্টকে জানান, ২০১৫ সালে কুনওয়ার কর্নি সিংকে বিয়ে করেন। তাঁদের পাঁচ বছর বয়সী একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। ছেলের পাকিস্তানি পাসপোর্ট রয়েছে। তার মানে পরিবারে একমাত্র পদ্মীনিরই পাকিস্তানের নাগরিকত্ব নেই। বারবার ভিসা নিয়ে এবং নবায়ন করে পাকিস্তানে যাতায়াত তাঁর জন্য বেশ ঝামেলার। কারণ এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ১৫ থেকে ২০ দিন লেগে যায়। তাছাড়া বছরে মাত্র দুবার পাকিস্তানে প্রবেশের অনুমতি মেলে। অবশ্য ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার আগে চারবার পাকিস্তান যাওয়ার সুযোগ পেতেন তিনি। পাকিস্তানে জমি কেনা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা বা পাকিস্তানের কম্পিউটারাইজড ন্যাশনাল আইডেনটিটি কার্ড (সিএনআইসি) পাওয়া তাঁর জন্য অসম্ভব। তিনি পাকিস্তানের নাগরিকত্ব নেওয়ার চেষ্টা করছেন। 

ভারতের আধার কার্ডের মতোই পাকিস্তানের সিএনআইসি। সেখানে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে মোবাইল সিম কার্ড কেনা পর্যন্ত সবকিছুর জন্য এই কার্ড লাগে। 

জটিল প্রক্রিয়ার মধ্যে যে কজন সৌভাগ্যবান পাকিস্তানের নাগরিকত্ব পেয়েছেন তাঁদের মধ্যে একজন সামিরা ইজলাল (৪৬)। ১৯৯৯ সালের জানুয়ারিতে এক পাকিস্তানিকে বিয়ে করেন তিনি। সে বছরই পাকিস্তানি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন। নাগরিকত্ব পেয়েছেন সে বছরের ডিসেম্বরে। যদিও অন্যদের সাধারণত কয়েক বছর লেগে যায়। 

তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয়দের পাকিস্তানের নাগরিকত্ব গ্রহণের সঠিক ব্যাখ্যা কেউ দিতে পারছেন না। এ ব্যাপারে ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব কানওয়াল সিবাল দ্য প্রিন্টকে বলেন, তাঁর ধারণা, ভিসার প্রক্রিয়া বহুদিন ঝুলে থাকা এবং সাম্প্রতিক সময়ে উপসাগরীয় অঞ্চলে ভারতীয়-পাকিস্তানি দম্পতির সংখ্যা বেড়ে যাওয়াই এর অন্যতম কারণ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত