Ajker Patrika

প্রতিদিন ১ লাখ নতুন ভোটারকে বার্তা পাঠাচ্ছে বিজেপি

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৮ মে ২০২৪, ২১: ৪৬
Thumbnail image

লোকসভা নির্বাচনে জয়ের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। দলটি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে প্রতিদিন এক লাখ ভোটারকে নানা ধরনের বার্তা পাঠাচ্ছে। ভোটারদের বিজেপি ‘শুভ সকাল’ এবং মিমসও পাঠাচ্ছে। 

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। 

বিজেপির এমনই একজন সোশ্যাল মিডিয়া কর্মী অঙ্কুর রানা। তিনি উত্তর প্রদেশের মিরাট সংসদীয় আসনে বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়া শাখার সমন্বয়কারী। অঙ্কুর রানা শত শত হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বিজেপির নির্বাচনী বার্তা পাঠান। 

গত মাসে ভোটের প্রচারণার ব্যাখ্যা করে অঙ্কুর রানা বলেন, ‘আমার ৪০০-৫০০টি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে। যার প্রতিটিতে প্রায় ২০০-৩০০ জন সদস্য রয়েছে। এর বাইরে, আমার কাছে প্রায় পাঁচ হাজার মোবাইল নম্বর রয়েছে। এভাবে আমি একাই প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ হাজার ভোটারের কাছে বিজেপির বার্তা পৌঁছাই।’ 

তিনি বিজেপির একটি ‘ক্র্যাক টিমের’ সদস্য ছিলেন। ওই টিমের লক্ষ্য ছিল শুধু উত্তর প্রদেশের নির্বাচনী এলাকাতেই লাখ লাখ ভোটারদের কাছে বিজেপির বার্তা পৌঁছে দেওয়া। উদ্বেগজনক হলেও বিজেপি এমনটাই করছে। দলটি এই বছরের লোকসভা নির্বাচনে ৩৭০ আসন জিততে হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য ম্যাসেজিং এবং সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপগুলোর ওপরই নির্ভর করছে। কারণ, বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীরা ভারতীয়। দেশটিতে ৫০ কোটিরও বেশি হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারী রয়েছে, যাঁরা দিনে কয়েক ঘণ্টা ম্যাসেজিং প্ল্যাটফর্মটিতে ব্যয় করেন। 

বিজেপি ভোটারদের ‘শুভ সকাল’ থেকে শুরু করে মিমস এবং বিভিন্ন ভাষায় রাজনৈতিক বক্তব্য পাঠাচ্ছে। অঙ্কুরের মতো স্বেচ্ছাসেবকেরা নির্বাচনী যন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাঁরা বিজেপির বার্তা পাঠাতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। 

হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভোটারদের বার্তা পাঠাতে ব্যস্ত বিজেপির স্বেচ্ছাসেবকেরা। ছবি: সংগৃহীতবিবিসি অঙ্কুরের মতো আরও ১০ জন বিজেপি স্বেচ্ছাসেবকের সঙ্গে কথা বলেছে, যাঁরা উত্তর প্রদেশে নির্বাচনী এলাকা সোশ্যাল মিডিয়া সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করেন। তাঁরা সবাই বলেছেন, তাঁরা শত শত হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ চালান, যার সদস্য সংখ্যা ২০০ থেকে ২ হাজারের মধ্যে। 

মিরাটে বিজেপির স্বেচ্ছাসেবকেরা বলছেন, প্রতিদিন দলের সদর দপ্তর দিল্লি থেকে রাজনৈতিক বার্তা এবং হ্যাশট্যাগ রাজ্যের স্বেচ্ছাসেবকদের কাছে পাঠানো হয়। এসব বার্তায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বিজেপির প্রশংসা ও রাজ্যে বিরোধীদের কড়া সমালোচনা করা হয়। 

কেন্দ্র থেকে শুধু মিরাটেই অঙ্কুরসহ ১৮০ জন নির্বাচনী স্বেচ্ছাসেবকের কাছে এসব বার্তা পৌঁছে। এই স্বেচ্ছাসেবকদের অধীনে আবার আরও বার্তা প্রেরক রয়েছেন। এমনকি প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের প্রচারণা পরিচালনাকারীদের কাছেও পৌঁছায় এসব বার্তা। 

অঙ্কুর বলেছেন, ‘হোয়াটসঅ্যাপ তরুণদের কাছে বার্তা পৌঁছানোর জন্য বিশেষভাবে কার্যকর। আর চল্লিশোর্ধ্বরা ফেসবুকে বেশি সক্রিয়। গড়ে আমাদের লক্ষ্য প্রতিদিন এক থেকে দেড় লাখ নতুন মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছানো।’ 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারণার কথা উঠলে বিজেপি অন্য যেকোনো প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে শত ক্রোশ এগিয়ে। কিন্তু ব্যক্তিগত পর্যায়ের তথ্য ছাড়া এসব করা সম্ভব নয়। দলীয় কর্মীরা বলছেন, বিশেষ করে প্রথমে তাঁদের মানুষের নম্বর পেতে হয়। 

মিরাটের একটি ভোটকেন্দ্রে বিজেপির প্রচারণার দায়িত্বে থাকা ভিপিন ভিপালা বলেন, ‘দলের প্রতিটি সদস্যর ওপর ৬০ জন ভোটারের নম্বর সংগ্রহের দায়িত্ব। এটি দলের নিম্নস্তর থেকে উচ্চস্তরের সভাপতি পর্যন্ত। নির্ধারিত ৬০ জনের সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ করতে হবে এবং তাঁদের বিজেপিকে ভোট দিতে উৎসাহিত করতে হবে। তাঁদের মোবাইল নম্বর নেওয়া এবং ম্যাসেজিং গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত করাও আমাদের দায়িত্ব।’ 

ভোটারদের জন্য ভিপিনের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের নাম ‘হিউম্যানিটি ইজ লাইফ’। এই ক্ষেত্রে প্রকাশ্যভাবে রাজনৈতিক নাম না দেওয়া দলটির বিশেষ আবেদন সৃষ্টির অংশ বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ভোটারদের কাছে পাঠানো বার্তায় আর সেসবের কোনো রাখঢাক থাকছে না। 

মিরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে বিবিসির প্রতিনিধিদল। ছবি: সংগৃহীত বেশ কয়েকটি গ্রুপে বহুবার ফরোয়ার্ড করা একটি ভাইরাল বার্তা যাচাই করেছে বিবিসি। বার্তাটিতে কংগ্রেস দল সংখ্যালঘু মুসলিমদের তুষ্ট করছে বলে অভিযোগ করা হয়। বার্তাটিতে লেখা ছিল, ‘কংগ্রেস এরই মধ্যে ভারতকে একটি ইসলামিক দেশে রূপান্তরিত করেছে। তারা শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে এটি ঘোষণা করেনি।’ 

এই বার্তা কোথা থেকে প্রথমে পাঠানো হয়েছে, তার উৎস বের করা অসম্ভব। তবে এটি সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে নির্বাচনী সমাবেশে বিজেপি নেতাদের বক্তব্যের সারার্থ। এপ্রিলে মোদির বিরুদ্ধে ‘ইসলামবিদ্বেষের’ অভিযোগে ওঠে। তিনি এক সমাবেশে মুসলিমদের ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘বিরোধীরা ক্ষমতায় গেলে “অনুপ্রবেশকারী”দের কাছে জনগণের সম্পদ বিতরণ করবে।’ 

বিজেপির নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলগুলো এই বক্তব্যর ভিডিও অ্যানিমেটেড করে শেয়ার করেছে। দলটির নেতারা দাবি করেছেন, এমনটিই কংগ্রেসের ইশতেহারে লেখা আছে। তবে কংগ্রেসের কোনো নথিতে সম্পদ পুনর্বণ্টন বা মুসলিম শব্দের উল্লেখ নেই। এই ধরনের বার্তা প্রতিনিয়ত কোনো প্ল্যাটফর্মে ছড়াতে থাকলে অনেকেই সত্য বলে বিশ্বাস করে ফেলেন। 

সাম্প্রতিক প্রচারে বিজেপি দাবি করেছে, ভারতীয় ছাত্রদের নিরাপত্তার জন্য মোদি ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ থামিয়েছিলেন। ২০২২ সালের মার্চে প্রথম এই দাবিটি করেছিল দলটির নেতা-কর্মীরা। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই এক্সে এবং কিছু নিউজ চ্যানেলে এই ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছিল। 

সে সময় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে। একজন মুখপাত্র বলেন, ‘কেউ বোমা হামলা বন্ধ করে রেখেছে বলার অর্থ, আমরা যুদ্ধ সমন্বয় করছি। তাই আমি মনে করি, এমন তথ্য একেবারেই ভুল।’ 

দুই বছর পর বিজেপির শীর্ষ নেতারা নির্বাচনী প্রচারে এই দাবি আবারও সামনে এনেছেন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়ানো হয়েছে। বিজেপি কেন এই দাবির পুনরাবৃত্তি করছে—এমন প্রশ্নের জবাব দেয়নি দলটি। 

মিরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে বিবিসি ২০ বছর বয়সী ছাত্রদের সঙ্গে দেখা কথা বলেছে, যাঁরা এই নির্বাচনে প্রথমবারের ভোটার। মোদির ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ থামানোর তথ্য তাঁরা বিশ্বাস করেছে কি না জিজ্ঞেস করলে তাঁদের অধিকাংশই জানান, তাঁরা বিশ্বাস করেছেন। 

বিশাল ভার্মা নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই আমরা বিশ্বাস করি, ভারতের অনুরোধের কারণে যুদ্ধ থামানো হয়েছিল।’ এ সময় তাঁর বন্ধু ও চারপাশে জড়ো হওয়া অন্যরাও সম্মতিতে মাথা নাড়ে। 

মাত্র কয়েকজন ছাত্র দ্বিমত পোষণ করেন। তাঁদের একজন কবির। তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক নয়। আমি নিজেও যুদ্ধকবলিত ছাত্রদের বানানো ভিডিও দেখেছি, যারা বলেছে সরকার তাদের সাহায্য করেনি।’ 

বিবিসি গ্রামের লোকদেরও একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছে, যাঁদের অনেকেই টিভিতে আগেই এই সংবাদ দেখেছেন। তেমনই একজন ৪১ বছর বয়সী কৃষক সঞ্জীব কাশ্যপ, ‘হ্যাঁ, যুদ্ধ বন্ধ করা হয়েছিল কারণ মোদিকে বিশ্বব্যাপী সম্মান করা হয়।’ 

৭৫ বছর বয়সী জগদীশ চৌধুরী বলেন, ‘দেখুন, আমরা শুনেছি যুদ্ধ বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা নিজেরা দেখতে যাইনি। কিন্তু আমার মনে হয়, এতে কিছু সত্যতা আছে।’ গ্রামের আরও চারজন তাঁর সঙ্গে একমত হন। 

মানুষকে ভুল তথ্য বিশ্বাস করানো এক বড় শক্তি। কারণ, ভোটাররা শেষ পর্যন্ত কাকে ভোট দেবে তা নির্ভর করে—সে যা বিশ্বাস করে তার ওপর। এখানে বিজেপি সেই সুযোগটাই নিচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঋণের ১৩০০ কোটির এক টাকাও দেননি হলিডে ইনের মালিক

নারীদের খেলায় আর নাক গলাবে না, দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাইল ভাঙচুরকারীরা

ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় ফরিদপুরের ২ জনকে গুলি করে হত্যা

গণ–সমাবেশে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিলেন বিএনপি নেতা

হেফাজতে যুবদল নেতার মৃত্যু, সেনা ক্যাম্প কমান্ডারকে প্রত্যাহার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত