Ajker Patrika

‘সিন্ধু পানি চুক্তি’ স্থগিত—পাকিস্তানের পরিণতি কী হবে

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ২১: ৫২
পাকিস্তানের বিষাম অঞ্চল দিয়ে বয়ে যাওয়া সিন্ধু নদী। ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের বিষাম অঞ্চল দিয়ে বয়ে যাওয়া সিন্ধু নদী। ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের সঙ্গে ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে ভারত। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সংঘটিত প্রাণঘাতী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পরপরই এই ঘোষণা আসে। এই ঘোষণার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় হওয়া এই চুক্তি এককভাবে কোনো দেশ স্থগিত করতে পারবে না।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সভাপতিত্বে একটি জরুরি বৈঠকের পর একটি বিবৃতিতে ভারতের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা কঠোরভাবে নাকচ করা হয়। জানিয়ে দেওয়া হয়—এই পানি পাকিস্তানের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যু, যা দেশটির ২৪ কোটি মানুষের জীবন রক্ষা করে। তাই সিন্ধুর পানি চুক্তি স্থগিত করলে বিষয়টিকে যুদ্ধের শামিল বলে বিবেচনা করা হবে এবং সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে তা প্রতিহত করা হবে।

ভারতীয় একাধিক সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, চুক্তিটি সিন্ধু নদীব্যবস্থার পানিবণ্টন নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিনের একমাত্র কার্যকর দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হিসেবে পরিচিত। এর আওতায় পশ্চিমে অবস্থিত পাকিস্তানের সিন্ধু নদের তিনটি শাখা নদীর (ইন্দাস, ঝেলাম ও চেনাব) পানি প্রবাহ মূলত পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ, যেখানে ভারতের কিছু সীমিত ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চুক্তিটি আপাতত অব্যবহৃত অবস্থায় থাকবে’। অর্থাৎ, চুক্তির আওতায় থাকা বিভিন্ন সহযোগিতামূলক ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো—যেমন তথ্য আদান-প্রদান, যৌথ বৈঠক, প্রকল্পসংক্রান্ত নোটিশ দেওয়া—সব বন্ধ থাকবে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত এই নদীগুলোর প্রাকৃতিক প্রবাহ সম্পূর্ণভাবে থামাতে পারবে না। তবে যেসব বাঁধ ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে নিয়ন্ত্রিতভাবে পানি ছাড়া হয়, সেগুলো থেকে পানি আটকে রাখা সম্ভব হতে পারে। যেমন—চেনাব নদীর ওপর নির্মিত বাগলিহার বাঁধে প্রায় ১৫ লাখ একর ফুট পানি সংরক্ষণের সক্ষমতা আছে। এই পরিমাণ পানি আটকে দিলে শুষ্ক মৌসুমে পাকিস্তানের সেচ ব্যবস্থায় প্রভাব পড়তে পারে।

পাকিস্তান প্রতিবছর ১৩ কোটি ৫০ লাখ একর ফুট পানি ওই তিনটি নদী থেকে পায়। এই পানির প্রায় পুরোটাই বরফগলা পানি ও বর্ষার ওপর নির্ভরশীল। দেশটির নিজস্ব পানি সংরক্ষণ কাঠামো অত্যন্ত দুর্বল। মঙ্গলা ও তারবেলা—বৃহৎ এই দুই বাঁধ মিলিয়ে দেশটির পানি ধরে রাখার ক্ষমতা মাত্র ১ কোটি ৪৪ লাখ একর ফুট, যা মোট বার্ষিক পানির ১০ শতাংশেরও কম। সীমিত এই সংরক্ষণ ক্ষমতার কারণে পাকিস্তান ফসল রোপণের মৌসুমে ভারত থেকে আসা নিয়ন্ত্রিত পানির ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল।

বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের এই সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে বড় ধরনের পানি সংকট সৃষ্টি না করলেও দীর্ঘ মেয়াদে এটি একটি কৌশলগত চাপ তৈরির চেষ্টা। ভবিষ্যতে যদি ভারত অনুমোদিত ৩৬ লাখ একর ফুট পর্যন্ত পানির জন্য বড় বাঁধ নির্মাণ সম্পন্ন করে, তাহলে নিয়ন্ত্রিত প্রবাহ বন্ধ করে পাকিস্তানকে মৌসুমভিত্তিক সংকটে ফেলা সম্ভব হবে।

এ ছাড়াও সিন্ধু চুক্তির এই স্থগিতাদেশ পাকিস্তানের জন্য একটি কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারত যদি প্রকল্প নির্মাণ বা পানির প্রবাহে হস্তক্ষেপ সংক্রান্ত তথ্য জানানো বন্ধ করে দেয়, তাহলে চুক্তির ভিত্তিতে বিরোধ নিষ্পত্তি করা কঠিন হয়ে পড়বে।

ভারতের এই সিদ্ধান্ত ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একটি বড় বার্তা। এটি শুধু পানি নিয়ন্ত্রণের কৌশল নয়, বরং রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের একটি উপায় হিসেবেও দেখা হচ্ছে। পাকিস্তানের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে—নিজস্ব পানি সংরক্ষণ কাঠামো শক্তিশালী করা এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কূটনৈতিক জবাব দেওয়া।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চুক্তিটি স্থগিত থাকলেও পানির প্রাকৃতিক প্রবাহ অব্যাহত থাকবে। তবে এই পরিস্থিতি যদি দীর্ঘায়িত হয় তাহলে পাকিস্তানের কৃষি, পানির নিরাপত্তা ও সামগ্রিক অর্থনীতি মারাত্মক হুমকির মুখে পড়তে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঢাবির সিন্ডিকেটে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের চূড়ান্ত অনুমোদন

শ্বশুরকে জামাতার ফোন: ‘আপনার মেয়েকে মাইরা ফেলছি, লাশ নিয়ে যান’

টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ দিতে ব্যর্থ দুদক: আইনজীবী

স্ত্রীকে হত্যার পর লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে গেলেন ইমামতি করতে

ঐতিহাসিক শিমলা চুক্তি বাতিল করল পাকিস্তান, এর প্রভাব কী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত