Ajker Patrika

ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো এমপিদের বাদ দিয়ে যে বার্তা দিল বিজেপি

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২৪, ২২: ৫৫
Thumbnail image

লোকসভা নির্বাচনের জন্য ১৯৫ জন প্রার্থীর প্রথম তালিকা প্রকাশ করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। সেই তালিকায় বাদ পড়াদের মধ্যে রয়েছে কট্টরপন্থী নেতা প্রজ্ঞা ঠাকুর, দিল্লির বর্তমান সংসদ সদস্য পারভেশ সাহিব সিং ভার্মা ও রমেশ বিধুরি।

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে খবরটি দিয়েছে। বলা হয়েছে যে এই তিন নেতাই সংসদের ভেতরে ও বাইরে তাঁদের বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য খবরের শিরোনাম হয়েছেন। লোকসভা নির্বাচনে তাঁদের বাদ দেওয়ার মাধ্যমে বিজেপি স্পষ্টভাবেই একটি বার্তা দিল যে নির্বাচনে বিরোধী জোটের মুখোমুখি হওয়ার আগে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনার সুযোগও রাখতে চাইছে না তারা।

ভোপালে প্রজ্ঞা ঠাকুরের জায়গায় অলোক শর্মাকে প্রার্থী বানিয়েছে বিজেপি। ২০০৮ সালের মালেগাঁও বোমা হামলা মামলায় অভিযুক্ত কট্টরপন্থী নেতা প্রজ্ঞা ঠাকুরকে গত নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার ঘটনা বিশাল বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। তার পর থেকে পাঁচ বছর বিভিন্ন বিতর্কে পড়েছেন তিনি। স্বাস্থ্যগত কারণে জামিনে বেরিয়ে প্রজ্ঞা ঠাকুরকে কাবাডি খেলতে এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেখা গিয়েছে। তবে যে বিতর্কটি তাঁর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে তা হলো একটি বিবৃতি—যেখানে মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসেকে ‘দেশপ্রেমিক’ বলেছিলেন তিনি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও এই মন্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছিলেন, ‘গান্ধীজি বা নাথুরাম গডসে সম্পর্কে করা মন্তব্য সমাজের জন্য খুবই খারাপ এবং খুবই ভুল। তিনি (প্রজ্ঞা ঠাকুর) ক্ষমা চেয়েছেন, কিন্তু আমি তাকে কখনই পুরোপুরি ক্ষমা করতে পারব না।’ পাঁচ বছর পর প্রজ্ঞা ঠাকুর তাঁর আসন হারিয়েছেন।

২০০৮ সালের সন্ত্রাসী হামলায় মারা যাওয়া মুম্বাইয়ের সাবেক এটিএস প্রধান হেমন্ত কারকারে সম্পর্কে করা মন্তব্যের জন্যও সমালোচিত হন প্রজ্ঞা ঠাকুর। তিনি বলেছিলেন, তার (প্রজ্ঞা ঠাকুর) অভিশাপের কারণেই হেমন্ত কারকারেকে হত্যা করা হয়েছিল। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, কট্টরপন্থী এই নেতা তাঁর নির্বাচনী এলাকায় সক্রিয় ছিলেন না। এ কারণেই তাঁকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

বিজেপির তালিকা থেকে পশ্চিম দিল্লির সংসদ সদস্য পারভেশ সাহিব সিং ভার্মার বাদ পড়া অনেককেই অবাক করেছে। দুবারের সংসদ সদস্য এবং সাবেক মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত সাহিব সিং ভার্মার ছেলে পারভেশের বেশ শক্তিশালী জনসমর্থন রয়েছে। কিন্তু ৪৬ বছর বয়সী এই নেতা তাঁর উসকানিমূলক মন্তব্যের জন্য খবরের শিরোনাম হয়েছেন।

২০২০ সালে দিল্লি নির্বাচনের আগে পারভেশ সাহিব সিং ভার্মা শাহিনবাগ বিক্ষোভের সময়ে করা বিতর্কিত মন্তব্যে বলেছিলেন, রাজধানীতে বিজেপি ক্ষমতায় এলে এক ঘণ্টার মধ্যে বিক্ষোভকারীদের সাফ করা হবে।

২০২২ সালে তিনি আবারও খবরের শিরোনাম হন। এবার তিনি আপাতদৃষ্টিতে মুসলিমদের লক্ষ্য করে বয়কটের ডাক দেন। বিজেপির এই সংসদ সদস্য বলেছিলেন, ‘আপনি তাদের যেখানেই দেখবেন, আপনি যদি তাদের মাথা ঠিক করতে চান, যদি আপনি তাদের সোজা করতে চান, তবে একমাত্র কাজ হলো তাদের সম্পূর্ণভাবে বয়কট করা। আপনারা যদি রাজি হন, তবে হাত ওঠান।’

২০২৪ সালের নির্বাচনে বিজেপির লক্ষ্য স্পষ্ট। দলটি কোনোভাবেই চায় না যে তার নেতারা এমন কোনো বিবৃতি দিক, যা বিরোধীদের পক্ষে যায় এবং শাসক দলকে বিব্রত করে।

বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য বাদ পড়া আরেক সংসদ সদস্য হলেন দক্ষিণ দিল্লির রমেশ বিধুরি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে লোকসভায় একটি আলোচনার সময় আমরোহার সংসদ সদস্য দানিশ আলীর উদ্দেশে ইসলামবিদ্বেষী মন্তব্য করেছিলেন রমেশ বিধুরি। তাঁর এই অপমানজনক মন্তব্য ক্যামেরায় ধরা পড়ে এবং বিশাল বিতর্কের জন্ম দেয়। রমেশ বিধুরি পরে ক্ষমা চাইলেও বিজেপির প্রথম তালিকায় থাকার জন্য তা যথেষ্ট ছিল না।

দিল্লির উল্লেখযোগ্য সংসদ সদস্যদের মধ্যে যাঁরা বাদ পড়েছেন, তাঁদের মধ্যে আছেন মীনাক্ষী লেখি ও হর্ষ বর্ধন। ২০১৯ সালের নির্বাচনে দিল্লির সব আসনেই জিতেছিল বিজেপি। এবার তারা বিরোধী জোটের মুখোমুখি। এএপি লড়ছে চারটি আসনে, তিনটিতে কংগ্রেস। বিজেপির প্রয়াত নেতা সুষমা স্বরাজের মেয়ে ও আইনজীবী বানসুরিকে নয়াদিল্লি থেকে প্রার্থী করা হয়েছে।

বিজেপি সূত্র বলছে, প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করা হয়। দলের একজন নেতা বলেন, ‘জয়ের সম্ভাবনা কতটুকু তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সংসদ সদস্যই তাঁদের নির্বাচনী এলাকায় জনপ্রিয় নন। তবে কোনো সন্দেহ নেই যে—প্রজ্ঞা ঠাকুর, রমেশ বিধুরি ও পারভেশ ভার্মার মতো নেতারা তাঁদের উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে দলকে বিব্রত করেছেন। তাঁদের টিকিট না দেওয়া এই বার্তা দেয় যে জনজীবনে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। বিতর্কিত বিবৃতি না দেওয়ার ব্যাপারে অতীতে প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকবারই দলের নেতাদের সতর্ক করেছিলেন।’

বিজেপির ১৯৫ প্রার্থীর প্রথম তালিকায় জায়গা পাননি বর্তমানের ৩৩ জন সংসদ সদস্য। যে বড় নামগুলো ভোটের ময়দানে জায়গা করে নিয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মধ্যপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান এবং বেসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত