Ajker Patrika

মাউন্ট এভারেস্টে নতুন বিপদ—কিং কোবরা!

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১১ জুন ২০২৫, ১৫: ৫১
ছবি: কাঠমান্ডু পোস্ট
ছবি: কাঠমান্ডু পোস্ট

ঠান্ডা মৌসুমে সাধারণত শীতনিদ্রায় যায় বিষধর সাপ। ঋতুবদলের পর যখন আবারও উষ্ণ হয়ে ওঠে প্রকৃতি, তখনই এরা নতুন শিকারের সন্ধানে গর্ত থেকে বেরিয়ে আসে। কিন্তু প্রকৃতির এই চিরাচরিত হিসাবও যেন বদলে যাচ্ছে। এভারেস্টের মতো একটি শীতল অঞ্চলেও এখন সাপের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। তা-ও আবার সাধারণ কোনো সাপ নয়, পৃথিবীর অন্যতম বিষধর সাপ কিং কোবরার দেখা মিলছে সেখানে।

এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণের সময় পদে পদে নানা বিপদকে অতিক্রম করে যেতে হয় পর্বতারোহীদের। তুষারঝড়, তুষারধসের ঝুঁকি যেমন থাকে, তেমনই জলবায়ু পরিবর্তন এবং দূষণও মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। কিন্তু এবার তাঁদের বিপদের খাতায় নতুন যোগ হয়েছে সাপ।

সম্প্রতি কাঠমান্ডু পোস্ট জানিয়েছে, এভারেস্টের কাছে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে গত এক মাসে ১০-১২টি বিষধর সাপ উদ্ধার হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৯টি সাপই ছিল কিং কোবরা, আরেকটি ছিল মোনোক্লেড কোবরা।

সাধারণত জলাভূমিতে বা খাল-বিলের কাছাকাছি এলাকায় এই ধরনের বিষধর সাপ পাওয়া যায়। এ ছাড়া ম্যানগ্রোভ বন, ধানের খেতেও এদের দেখা পাওয়া যায়। তাই মাউন্ট এভারেস্ট-সংলগ্ন ঠান্ডা জায়গায় একের পর এক সাপ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এটি অনেকে ভয়ংকর বিপদের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন। মাউন্ট এভারেস্টের নিকটবর্তী অঞ্চলে কিং কোবরার মতো বিষধর সাপের খোঁজ পাওয়ার সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন, তাদের আশ্রয়স্থল বদলের সংযোগ দেখছেন পরিবেশবিদেরা।

কাঠমান্ডু পোস্টের তথ্য অনুযায়ী—গোপালেশ্বর, সোখোল, ফুলচকের মতো পাহাড়ি এলাকাগুলোতে সাপগুলোর খোঁজ মিলেছে। কোথাও বাড়ির উঠোনে, আবার কোথায় বসতির ভেতরেই ছিল উদ্ধার করা সাপগুলো। বন দপ্তরকে খবর দেওয়া হলে তারা এগুলো উদ্ধার করে আবারও জঙ্গলে ছেড়ে দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, জঙ্গলেও কিং কোবরার ডিম দেখেছেন তাঁরা। সেখানে সাপের বাসা চোখে পড়েছে।

পরিবেশবিদদের একাংশের ধারণা, এটি আকস্মিক কোনো ঘটনা নয়। ঠান্ডা পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে শুরু করেছে কিং কোবরার মতো বিষধর সাপ। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেই এমন ঘটছে। অন্যান্য এলাকায় তাপমাত্রা এত বেড়ে গেছে যে সেখানে এসব সাপ টিকতে পারছে না। আবার ঠান্ডা জায়গায়গুলোও আগের মতো ঠান্ডা থাকছে না। এর ফলে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরে আসছে বিষধর সাপগুলো।

নেপালের পার্বত্য অঞ্চলেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব চোখে পড়ার মতো। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর নেপালের তরাই অঞ্চলে সাপের কামড়ে প্রায় ২ হাজার ৭০০ মানুষের মৃত্যু ঘটে। আর মৃতদের মধ্যে অধিকাংশই থাকেন নারী ও শিশু। বন থেকে কাঠ এবং খড় বোঝাই করে আনার সময় গাড়িতে সাপ উঠে যাচ্ছে বলেও দাবি করেছেন কেউ কেউ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এশিয়ার চার দেশে বন্যা-ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা ১১০০ ছাড়াল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫৯
এশিয়ার চার দেশে বন্যা-ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা ১১০০ ছাড়াল

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বন্যা ও ভূমিধসে প্রাণহানি সোমবার ১ হাজার ১০০ ছড়িয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রীলঙ্কা ও ইন্দোনেশিয়া বন্যাকবলিত এলাকার জীবিত ব্যক্তিদের সহায়তায় সেনা মোতায়েন করেছে। খবর এএফপির

অবিরাম বৃষ্টি গত সপ্তাহে শ্রীলঙ্কা দ্বীপজুড়ে আর ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা, থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চল ও মালয়েশিয়ার উত্তরে তাণ্ডব চালায়। এই অঞ্চলে এখন বর্ষাকাল চলছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টি আরও ঘনীভূত ও ঝড় তীব্র হয়ে উঠছে।

নিঃশেষ না হওয়া বৃষ্টির ধারা অনেককে ছাদে আটকে ফেলে। নৌকা কিংবা হেলিকপ্টারের জন্য তারা অপেক্ষা করেছে দীর্ঘক্ষণ। গ্রামের পর গ্রাম সাহায্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

সোমবার উত্তর সুমাত্রায় পৌঁছে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবো সুবিয়ান্তো বললেন, ‘সবচেয়ে খারাপটা পার হয়ে গেছে, আশা করি।’ তিনি বলেন, সরকারের ‘প্রথম কাজ এখন জরুরি সহায়তা পৌঁছে দেওয়া।’ বিশেষ করে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া কয়েকটি এলাকায় তা জরুরি বলে তিনি জানান।

প্রাবোওর ওপর চাপ বাড়ছে। বন্যা ও ভূমিধসে অন্তত ৫৯৩ জন নিহত হয়েছে, এখনো প্রায় ৪৭০ জন নিখোঁজ। এই প্রেক্ষাপটে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণার দাবি উঠছে। তা সত্ত্বেও প্রাবো এখনো প্রকাশ্যে আন্তর্জাতিক সহায়তা চায়নি।

২০১৮ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্প ও সুনামির পর এটিই ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে প্রাণঘাতী প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সেই সুনামিতে সুলাওয়েসিতে ২ হাজারের বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল। সরকার তিনটি যুদ্ধজাহাজ ও দুটি হাসপাতাল জাহাজ পাঠিয়েছে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে। সেখানে এখনো বহু সড়ক চলাচলের অনুপযোগী।

উত্তর আচেহ অঞ্চলের বাসিন্দা ২৮ বছরের মিসবাহুল মুনির জানালেন, পানিতে গলা পর্যন্ত ডুবে তিনি পরিবারে ফিরেছেন। তার ভাষায়, ‘বাড়ির সবকিছুই নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু পরনের কাপড়টাই আছে। অন্য জায়গায় অনেক মানুষ মারা গেছে। আমরা বেঁচে আছি, এটাই ভাগ্য।’

এদিকে শ্রীলঙ্কায় সরকার আন্তর্জাতিক সাহায্য চেয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘ডিটওয়া’-এর কারণে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে আটকা পড়া মানুষদের উদ্ধার করতে সেনা হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে।

সোমবার সরকারি হিসাবে অন্তত ৩৫৫ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে ৩৬৬ জন। রাজধানী কলম্বোতে রাতভর পানি বেড়েছে। তবে বৃষ্টি থামায় ধীরে ধীরে পানি নামার আশা দেখা গেছে। কিছু দোকান ও অফিস আবার খুলেছে।

কলম্বো উপকণ্ঠের মানুষ এমন বন্যায় হতভম্ব। ডেলিভারি বয় দিনুশা সাঞ্জয়ার ভাষায়, ‘প্রতিবছর সামান্য জলাবদ্ধতা হয়। কিন্তু এবার যা হলো, তা অন্য কিছু। পানির পরিমাণই শুধু নয়, কী দ্রুত সব ডুবে গেল, সেটাই ভয়ংকর।’

কর্তৃপক্ষ জানায়, কেন্দ্রীয় পার্বত্য অঞ্চলে যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুরোপুরি বোঝা যাচ্ছে এখন। কারণ, গাছপালা আর কাদায় বন্ধ হয়ে থাকা সড়কগুলো ধীরে ধীরে পরিষ্কার হচ্ছে।

রাষ্ট্রপতি অনুরা কুমারা দিসানায়েকে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। তিনি বলছেন, এটি ‘দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ও চ্যালেঞ্জিং প্রাকৃতিক দুর্যোগ’।

২০০৪ সালের সুনামির পর এই প্রথম শ্রীলঙ্কায় এত বড় ক্ষতি। তখন প্রায় ৩১ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল, গৃহহীন হয়েছিল ১০ লাখের বেশি।

থাইল্যান্ডে ক্ষোভ রোববার বিকেলে শ্রীলঙ্কায় বৃষ্টি থেমে যায়। তবু রাজধানীর নিচু এলাকাগুলো ডুবে ছিল। বড় ধরনের ত্রাণ অভিযানের প্রস্তুতি চলছিল। আটকা পড়া মানুষকে উদ্ধারে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে। খাবারও পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এক হেলিকপ্টার রোববার কলম্বোর উত্তরে বিধ্বস্ত হয়ে পাইলট নিহত হন।

বর্ষাকাল প্রায় প্রতিবছরই ভূমিধস ও আকস্মিক বন্যা ডেকে আনে। কিন্তু ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় এবার যে বন্যা দেখা গেছে, তা আরও ঘনীভূত করেছে একটি বিরল ক্রান্তীয় ঝড়। ঝড়টি সুমাত্রায় প্রচণ্ড বৃষ্টি নামিয়েছে।

তীব্র বৃষ্টিতে দক্ষিণ থাইল্যান্ডে অন্তত ১৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার কর্তৃপক্ষ জানায়, গত এক দশকে দেশটিতে এটি অন্যতম প্রাণঘাতী বন্যা। সরকার ত্রাণ ব্যবস্থা চালু করেছে। কিন্তু সমালোচনা বাড়ছে। দুই স্থানীয় কর্মকর্তাকে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

পাশের দেশ মালয়েশিয়ায়ও প্রবল বৃষ্টি পেরলিস অঙ্গরাজ্যের বহু এলাকা ডুবিয়ে দিয়েছে। সেখানে দুজন মারা গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতে ‘গরুর মাংস’ সন্দেহে বিয়ে বাড়িতে সংঘর্ষ—ফরেনসিক পরীক্ষায় গেল নমুনা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ২৫
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের আলিগড়ে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে খাবারের কাউন্টারে রাখা ‘বিফ কারি’ লেখা একটি লেবেলকে কেন্দ্র করে রোববার (৩০ নভেম্বর) রাতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। লেবেল দেখে আকাশ ও গৌরব কুমার নামে দুই অতিথি আপত্তি জানিয়ে ভিডিও ধারণের চেষ্টা করেন। এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে বিয়ের আয়োজকদের সঙ্গে তাঁদের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং ধস্তাধস্তি শুরু হয়।

পরিস্থিতি সামাল দিতে ভারতের পুলিশ ও ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে খাবারের নমুনা সংগ্রহ করেন এবং এটিকে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠান।

সার্কেল অফিসার সর্বম সিং ভারতের টেলিগ্রাফ পত্রিকাকে জানান, ঘটনায় ক্যাটারারসহ সংশ্লিষ্ট তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছিল। পরে রাতেই তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘ফরেনসিক রিপোর্টে মাংসের ধরন নিশ্চিত হলে তবেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত কোনো মামলা দায়ের হয়নি।’

এদিকে ক্যাটারারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন আপত্তি জানানো গৌরব কুমার। তিনি দাবি করেছেন—ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার উদ্দেশেই ইচ্ছাকৃতভাবে ওই লেবেল ব্যবহার করা হয়েছিল। অন্যদিকে পুলিশ জানিয়েছে, ‘বিফ’ শব্দটি অনেক সময় মহিষের মাংস (ভারতে খাবার হিসেবে আইনত বৈধ) এবং গরুর মাংস (যা নিষিদ্ধ) উভয় অর্থে ব্যবহৃত হয়। এই বিভ্রান্তি থেকে প্রায়ই ওই অঞ্চলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

ঘটনাটি জানাজানি হলে বিজেপি কর্মীরা স্থানীয় সিভিল লাইন্স থানায় গিয়ে জড়ো হয় এবং কঠোর ব্যবস্থার দাবি জানায়। এ সময় বহুজন সমাজ পার্টির (বিএসপি) নেতা সালমান শহিদও থানায় উপস্থিত হন। তিনি অভিযোগ করেন, বিজেপি কর্মীরা কোনো ব্যাখ্যা না শুনে ‘অতিরিক্ত প্রভাব বিস্তারের’ চেষ্টা করেছে এবং শুরু থেকেই বিষয়টিকে ভুল বোঝাবুঝি হিসেবে ব্যাখ্যা করা সত্ত্বেও তারা উত্তেজনা বাড়িয়েছে।

পুলিশ বলছে, পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে আছে এবং ফরেনসিক রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জর্জিয়ায় বিক্ষোভকারীদের দমনে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের প্রমাণ পেয়েছে বিবিসি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গত বছরের ২৮ নভেম্বর জর্জিয়া সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) যোগদানের প্রক্রিয়া স্থগিত করলে রাজধানী তিবিলিসিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। ছবি: এএফপি
গত বছরের ২৮ নভেম্বর জর্জিয়া সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) যোগদানের প্রক্রিয়া স্থগিত করলে রাজধানী তিবিলিসিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। ছবি: এএফপি

গত বছর সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমনে জর্জিয়ার কর্তৃপক্ষ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ব্যবহৃত একটি রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছিল বলে বিবিসির অনুসন্ধানে প্রমাণ পাওয়া গেছে। রাসায়নিক অস্ত্র বিশেষজ্ঞ ও দাঙ্গা পুলিশের অভ্যন্তরীণ সূত্রের মতে, পদার্থটি ছিল ‘ক্যামাইট’। এর রাসায়নিক নাম ব্রোমোবেনজিল সায়ানাইড।

গত বছরের ২৮ নভেম্বর জর্জিয়া সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) যোগদানের প্রক্রিয়া স্থগিতের ঘোষণা দিলে রাজধানী তিবিলিসির রাস্তায় বিক্ষোভ শুরু হয়। ওই সময় বিক্ষোভকারীদের ওপর জলকামান ব্যবহার করা হলে পরবর্তী সময়ে তারা তীব্র শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হয় বলে জানা গেছে। বিক্ষোভকারীরা জানান, জলকামান থেকে ছিটানো পানি গায়ে পড়ার পর তীব্র জ্বালা শুরু হয়। সাধারণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলার চেষ্টা করলে সেটা আরও বেশি খারাপ হতে থাকে।

বিক্ষোভকারীদের মধ্যে অনেকে কয়েক সপ্তাহ বা ৩০ দিনের বেশি সময় ধরে শ্বাসকষ্ট, কাশি, বমি, মাথাব্যথা, ক্লান্তিসহ নানা দীর্ঘমেয়াদি সমস্যায় ভুগেছে।

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ড. কনস্তানতিন চাকুনাশভিলি নিজেও এই পানির সংস্পর্শে এসেছিলেন। তিনি জানান, তাঁর ত্বক কয়েক দিন ধরে প্রচণ্ড জ্বলেছে। ধোয়ার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে থাকে।

এটি নিয়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি জরিপ চালান। প্রায় ৩৫০ জন সেখানে সাড়া দেয়। তাদের প্রায় অর্ধেকই জানায়, ৩০ দিনের বেশি সময় ধরে তাদের এই সমস্যা ছিল।

বিবিসি তাদের অনুসন্ধানের জন্য দাঙ্গা পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং রাসায়নিক অস্ত্র বিশেষজ্ঞের মতামত নেয়। জর্জিয়ার দাঙ্গা পুলিশের অস্ত্র বিভাগের সাবেক প্রধান লাশা শেরগেলাশভিলি জানান, ২০০৯ সালে তিনি যে রাসায়নিকটি জলকামানে ব্যবহারের জন্য পরীক্ষা করেছিলেন, সেটির প্রভাব ছিল সাধারণ কাঁদানে গ্যাসের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ শক্তিশালী। তিনি এটি ব্যবহার করতে নিষেধ করতে করেছিলেন। কিন্তু কেউ তাঁর কথা শোনেনি।

লাশা শেরগেলাশভিলি বলেন, যদি মেঝেতে এই রাসায়নিক পড়ে, তাহলে জল দিয়ে ধুয়ে ফেললেও পরবর্তী দুই থেকে তিন দিন সেই এলাকায় থাকা যাবে না।

বিখ্যাত টক্সিকোলজি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ক্রিস্টোফার হলস্টেগে এসব প্রমাণ বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত করেন, আক্রান্তদের উপসর্গ গুলি ব্রোমোবেনজিল সায়ানাইড (ক্যামাইট) ব্যবহারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

ক্যামাইট প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্রান্স জার্মানির বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছিল। এর দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে এটি ১৯৩০-এর দশকে বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয় এবং এর পরিবর্তে সিএস গ্যাস (কাঁদানে গ্যাস) ব্যবহার শুরু হয়।

আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, পুলিশের জন্য ব্যবহৃত রাসায়নিকের প্রভাব অস্থায়ী এবং আনুপাতিক হতে হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরও নিরাপদ ও প্রচলিত দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণকারী পদার্থ থাকা সত্ত্বেও একটি অপ্রচলিত এবং আরও শক্তিশালী রাসায়নিকের ব্যবহারকে রাসায়নিক অস্ত্র হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে।

জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক (নির্যাতন-সংক্রান্ত) অ্যালিস এডওয়ার্ডস বলেন, রাসায়নিক ব্যবহার-সংক্রান্ত নিয়মের অভাবেই কেউ কেউ এগুলো ব্যবহার করে। এটি আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। অপরাধ বিবেচনায় এসব ঘটনার তদন্ত করা উচিত।

তবে জর্জিয়ার ক্ষমতাসীন দল ‘জর্জিয়ান ড্রিম’ বিবিসির এই অনুসন্ধানকে অবাস্তব বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশটির সরকার জানিয়েছে, মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন প্রকাশের অভিযোগে তারা বিবিসির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘শিগগির ক্ষমতা ছাড়’—মাদুরোকে ট্রাম্পের আলটিমেটাম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মাদুরোকে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার আলটিমেটাম দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এক্সিওসের সৌজন্যে
মাদুরোকে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার আলটিমেটাম দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এক্সিওসের সৌজন্যে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার কর্তৃত্ববাদী নেতা নিকোলাস মাদুরোকে অবিলম্বে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার আলটিমেটাম দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে মাদুরো তা প্রত্যাখ্যান করে নিজের ও ঘনিষ্ঠ মিত্রদের জন্য ন্যায়বিচার চেয়েছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক এক ফোনালাপে ট্রাম্প এই আলটিমেটাম দেন।

রোববার সাংবাদিকদের কাছে ফোনালাপের বিষয়টি নিশ্চিত করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমাদের ফোনালাপ হয়েছে। আমি বলব না এটি ভালো হয়েছে নাকি খারাপ হয়েছে, এটি শুধুই একটি ফোনকল ছিল।’

তবে গত ২১ নভেম্বর হওয়া এই ফোনালাপের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বা ভেনেজুয়েলার কেউই এখনো বিস্তারিত কিছু জানায়নি।

মায়ামি হেরাল্ড নামে আমেরিকান একটি সংবাদমাধ্যমের সূত্রে জানা গেছে, ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার মাদুরোকে একটি ‘স্পষ্ট বার্তা’ দিয়েছিলেন। মায়ামি হেরাল্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প মাদুরোকে বলেছিলেন, ‘আপনি নিজেকে ও আপনার মিত্রদের রক্ষা করতে পারেন, কিন্তু একটাই শর্ত—আপনাকে এখনই দেশ ছাড়তে হবে।’ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাকি মাদুরোকে প্রস্তাব দেন, অবিলম্বে পদত্যাগ করলে মাদুরো, তাঁর স্ত্রী ও পুত্রের পালানোর জন্য নিরাপদ পথের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।

তবে মাদুরো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। মাদুরো তাঁর পরিবারসহ ঘনিষ্ঠ মিত্রদের জন্য বৈশ্বিক আইনি সুরক্ষার দাবি করেন। তিনি নির্বাচনের কথা বললেও সামরিক বাহিনীর ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার দাবি করেন। অন্যদিকে, ওয়াশিংটন মাদুরোর সব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তাঁকে ‘শিগগির ক্ষমতা ছাড়তে’ বলে।

মায়ামি হেরাল্ড জানিয়েছে, ব্রাজিল, কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় প্রথম ফোনালাপটি হয়েছিল। পরে ট্রাম্প যখন ভেনেজুয়েলার আকাশসীমা ‘সম্পূর্ণরূপে বন্ধ’ বলে ঘোষণা করেন, তখন মাদুরো দ্বিতীয়বার ফোনালাপের অনুরোধ জানালেও তাতে কোনো সাড়া পাননি।

এদিকে ট্রাম্পের এই আলটিমেটামের হুমকি বড় আকারের সামরিক পদক্ষেপের মাধ্যমে বাস্তবে কার্যকর হবে কি না, তা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, মাদুরো ও তাঁর মিত্ররা এখনো মার্কিন সামরিক হুমকিকে ‘ফাঁকা আওয়াজ’ বলে মনে করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত