Ajker Patrika

ভারতের ভোটার হলেন আন্দামানের আদিম মানবেরা

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭: ৫৯
Thumbnail image
ভারতের আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের জরোয়া জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরা ভোটার হয়েছেন। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ভোটাধিকার পাচ্ছে স্থানীয় জরোয়া সম্প্রদায়। স্থানীয় প্রশাসন জারোয়া সম্প্রদায়ের ১৯ সদস্যকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে তাঁদের মধ্যে ভোটার আইডি বিতরণ করেছে। গতকাল মঙ্গলবার আন্দামান-নিকোবরের এক কর্মকর্তা এই তথ্য জানিয়েছেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, আন্দামান-নিকোবর প্রশাসনের মুখ্য সচিব চন্দ্রভূষণ কুমার নিজেই দক্ষিণ আন্দামান জেলার জিরকাটাংয়ের জরোয়া সম্প্রদায়ের নিজ এলাকায় তাঁদের মধ্যে ভোটার আইডি কার্ড বিতরণ করেন। আন্দামান-নিকোবরের এই সম্প্রদায় এত দিন মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল।

দক্ষিণ আন্দামান জেলার নির্বাচন কর্মকর্তা অর্জুন শর্মা ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেছেন, ‘জারোয়া সম্প্রদায়ের অনন্য পরিচয় রক্ষা ও তাদের গোপনীয়তা বজায় রাখতে আমরা একটি বিস্তৃত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। তাদের দৈনন্দিন জীবনে সামান্যতম হস্তক্ষেপ না করেও ভারতীয় নাগরিক হিসেবে তাদের অধিকার সম্পর্কে সর্বোচ্চ সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই নিবন্ধন প্রক্রিয়া ডিজাইন করা হয়েছে।’

অর্জুন শর্মা আরও বলেন, ‘এটি ভারতের গণতান্ত্রিক বিকাশের এক মাইলফলক। এই বিষয়টি সব নাগরিকের জন্য অন্তর্ভুক্তি ও সমতার প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। অন্তর্ভুক্তি ও সাংস্কৃতিক সংরক্ষণের মধ্যে একটি ভারসাম্য রক্ষায় আমরা নিশ্চিত করেছি, যে প্রক্রিয়ার কোনো অংশ জরোয়া জনগণের মর্যাদাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না।’

এই অর্জনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে আন্দামান আদিম জাতি বিকাশ সমিতি (এএজেভিএস)। এই সংগঠনটি নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পর্কে জারোয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে তাদের ঐতিহ্যগত পদ্ধতিগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও শ্রদ্ধাশীল পন্থায় কাজ করেছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

এএজেভিএস জরোয়া সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যগত পদ্ধতিগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্বাচনের গুরুত্ব এবং শাসনব্যবস্থা গঠনে তাদের ভূমিকা ব্যাখ্যা করেছে। যাতে তাদের স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। জরোয়ারা আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের অন্যতম আদিবাসী সম্প্রদায়। তারা অর্ধযাযাবর জীবন যাপন করে এবং বনজ সম্পদের ওপর নির্ভরশীল। প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে তাদের গভীর সম্পর্ক আছে।

ঐতিহাসিকভাবে, জরোয়ারা বাইরের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল এবং তাদের অনন্য সাংস্কৃতিক প্রথা ও ঐতিহ্য বজায় রেখেছিল। তারা দক্ষিণ ও মধ্য আন্দামানের পশ্চিম উপকূলে বসবাস করে। জরোয়াদের সঙ্গে প্রথম উল্লেখযোগ্য বন্ধুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ঘটে ১৯৯৬ সালের এপ্রিলে। এনমেই নামের ২১ বছর বয়সী এক জারোয়া যুবক তাঁর বাম গোড়ালিতে গুরুতর আঘাত পাওয়ার তারা বাইরের দুনিয়ার সহায়তা নেয়।

অর্জুন শর্মা বলেন, ‘প্রশাসন তাঁকে চিকিৎসাসেবা দিয়ে সুস্থ করে তোলে এবং সুস্থ হওয়ার পর তাঁকে নিরাপদে তাঁর বসতিতে ফিরিয়ে দেয়। এই ঘটনা জারোয়া ও প্রশাসনের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা বৃদ্ধিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত