Ajker Patrika

আসাম সরকারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে ‘পুশ ইনে’র অভিযোগ করলেন ইউনুস

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০১ জুন ২০২৫, ১৯: ১৯
প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহীত
প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহীত

আসামের পুলিশ ‘অবৈধভাবে’ সেখানকার মানুষকে আটক করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগের মধ্যেই আসামের ২৬ বছর বয়সী এক যুবক তাঁর মাকে বেআইনিভাবে আটক করার অভিযোগ করে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদন করেছেন। আগামীকাল সোমবার (২ জুন) এই অভিযোগের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য উইকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউনুস আলী নামের ওই যুবক তাঁর মা মনোয়ারা বেওয়াকে আদালতে উপস্থাপনের জন্য আবেদন করেছেন। তাঁর দাবি, তাঁর মাকে বেআইনিভাবে আটক করা হয়েছে। আবেদনে বলা হয়েছে, আসামের কর্তৃপক্ষ অভিযোগকারীদের সীমান্ত এলাকায় আটক করে কোনো রকম আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই জোর করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে।

ইউনুস আলীর আবেদনের তথ্য অনুযায়ী, মনোয়ারা বেওয়াকে প্রথমে ধুবড়ি থানায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছিল। এর পর থেকে তাঁর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। সর্বশেষ ২৪ মে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল, যা থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে তাঁকে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’ করা হতে পারে।

প্রসঙ্গত, মনোয়ারা বেওয়াকে এর আগেও আসামের একটি ‘ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল’ বা বিদেশি চিহ্নিতকরণ আদালত ‘অবৈধ অভিবাসী বা বিদেশি’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল। সে সময় তাঁকে দেশ থেকে বের করে দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। এই সিদ্ধান্তের বিপরীতে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন মনোয়ারা বেওয়া। তবে গুয়াহাটি হাইকোর্টও এই সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছিল। এরপর ২০১৭ সালে মনোয়ারা বেওয়া সুপ্রিম কোর্টে একটি ‘স্পেশাল লিভ পিটিশন’ (এএলপি) দায়ের করে এই রায় চ্যালেঞ্জ করেন, যা এখনো বিচারাধীন।

আবেদনকারী ইউনুস আলীর যুক্তি, যেহেতু তাঁর মায়ের ‘স্পেশাল লিভ পিটিশন’ সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন, তাই তাঁকে দেশ থেকে বের করে দেওয়া যাবে না।

মনোয়ারা বেওয়া ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে জামিনে ছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের এক আদেশে তাঁকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। ওই আদেশে বলা হয়েছিল, আসামের অভিবাসী আটককেন্দ্রে যাঁরা তিন বছরের বেশি সময় ধরে আটক আছেন, তাঁদের শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেওয়া যাবে।

ইউনুস আলী তাঁর আবেদনে অভিযোগ করেন, তিনি যখন থানায় গিয়ে কর্মকর্তাদের জানান, তাঁর মায়ের মামলা এখনো সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন, তিনি তখন তাঁর মায়ের সঙ্গে দেখা করতে চান। কিন্তু তাঁকে তাঁর মায়ের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। কর্তৃপক্ষ মনোয়ারা বেওয়াকে মুক্তি দিতেও অস্বীকৃতি জানায়।

আবেদনে আরও বলা হয়েছে, আসাম রাজ্যের কর্তৃপক্ষ ‘বিদেশি’ সন্দেহে ব্যক্তিবিশেষকে আটক ও দেশ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযান শুরু করেছে। তারা ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের ঘোষণা, জাতীয়তা যাচাই বা আইনি প্রক্রিয়া শেষ না করেই এটা করছে। আসাম রাজ্যের এই ‘পুশ ব্যাক নীতি’ সংবিধানের ১৪, ২১ ও ২২ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন।

এ ছাড়া এটি ‘ইন রে—সেকশন ৬এ অব দ্য সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট ১৯৫৫’-এর সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন বলেও যুক্তি দেওয়া হয়েছে। এই অ্যাক্টে আদালত ৪/১ সংখ্যাগরিষ্ঠতার নাগরিকত্ব আইনের সেকশন ৬এ-এর সাংবিধানিক বৈধতা বহাল রেখেছিল, যা আসাম চুক্তিকে স্বীকৃতি দেয়।

সম্প্রতি আসাম সরকার বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করতে ‘পুশ ব্যাক’ নীতি গ্রহণ করেছে। আবেদনকারী ব্যক্তি ইউনুস আলী যে অভিযোগ করেছেন, এমন আরও অনেক খবর পাওয়া যাচ্ছে ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে। বর্তমানে এই নীতি আসামের সীমান্ত জেলাগুলোতে, যেমন—ধুবড়ি, দক্ষিণ সালমারা ও গোয়ালপাড়ায় কার্যকর করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত