Ajker Patrika

ভারত বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির স্থলপথ বন্ধ করায় ক্ষতিতে পশ্চিমবঙ্গের খুচরা ব্যবসায়ী-শ্রমিকেরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৪ জুন ২০২৫, ১৫: ০২
পশ্চিমবঙ্গের পেট্রাপোল বন্দর। ছবি: সংগৃহীত
পশ্চিমবঙ্গের পেট্রাপোল বন্দর। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে ভারতের বাণিজ্য নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতে ক্রমবর্ধমান সংকট তৈরি হয়েছে। রাজ্যের সীমান্ত জেলাগুলো সরবরাহ ব্যবস্থা ও জীবিকা সংকটের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

ভারতের স্থলবন্দর হয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) রপ্তানিতে আকস্মিক নিষেধাজ্ঞার কারণে সরবরাহ কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। সীমান্ত শহরগুলো কার্যত জনশূন্য হয়ে গেছে এবং সীমান্ত বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল হাজার হাজার পরিবারের জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে।

কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন নীতি কার্যকর হয়েছে চলতি বছরের মে থেকে। এই নীতি অনুযায়ী, বাংলাদেশের পোশাক ও প্রক্রিয়াজাত পণ্য পেট্রাপোল, হিলি, মাহাদিপুর, চ্যাংড়াবান্ধা ও ফুলবাড়ীর মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে পারবে না। পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত অর্থনীতির জন্য এই বন্দরগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখন থেকে এই ধরনের সব আমদানি কলকাতা ও নব সেবা সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। এর ফলে, পশ্চিমবঙ্গে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ বাণিজ্য পথগুলো বাইপাস হয়ে গেছে।

দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম স্থলবন্দর পেট্রাপোল হয়ে ভারত-বাংলাদেশ স্থলভিত্তিক বাণিজ্যের প্রায় ৭০ শতাংশ পরিবাহিত হয়। এই বন্দর হয়ে দৈনিক ট্রাক চলাচল এক সপ্তাহের মধ্যে ৬০০-৭০০ থেকে কমে ২০০ এর নিচে নেমে এসেছে। এর ফলে অনেক দোকানদারকে গ্রাহকের অভাবে দোকান বন্ধ করতে বাধ্য হতে হয়েছে। আনুমানিক ২০০০-৩০০০ শ্রমিকের জীবিকা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। এসব শ্রমিকের দৈনিক ৩০০-৬০০ রুপি।

পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪-পরগনার পেট্রাপোল স্থলবন্দরে সামির বিশ্বাস দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে পেট্রাপোল বন্দরে পণ্য লোড-আনলোড করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে তাঁর দৈনিক আয় নাটকীয়ভাবে কমে গেছে। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি শিগগির স্বাভাবিক হবে বলে মনে হচ্ছে না। আমরা শুনছি যে, বাংলাদেশে নির্বাচনের পর পরিস্থিতি বদলাতে পারে, কিন্তু এখানে কী হবে কে জানে। আমি এখন অটোরিকশা চালানো শুরু করেছি। আর কত দিন বসে থাকব?’

বনগাঁও উত্তরের বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্তনীয়া মন্তব্য করেছেন, ‘এটা সত্যি যে, স্থলভিত্তিক আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখানকার অনেক গরিব মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সীমান্ত এলাকায় পরিবহন একটি বড় ব্যবসা এবং রাজ্য সরকার স্লট-বুকিং নীতি চালু করে এরই মধ্যে এর ক্ষতি করেছে। তবে আমি মনে করি দেশের স্বার্থে এই কষ্ট মেনে নিতে হবে।’

পশ্চিমবঙ্গের ব্যাপক আন্তসীমান্ত সরবরাহ ব্যবস্থার প্রায় ৭০ শতাংশই ছোট পরিবহন অপারেটরদের মালিকানাধীন এবং এরা সবাই বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত। এই গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দরগুলোতে দৈনিক ট্রাক চলাচল তীব্রভাবে কমে যাওয়ায় আনুমানিক ১২ থেকে ১৫ হাজার শ্রমিক তাদের আয়ের প্রধান উৎস হারানোর দ্বারপ্রান্তে। এর মধ্যে রয়েছে দিনমজুর, ট্রাকচালক, লোডার এবং বিভিন্ন আনুষঙ্গিক পরিষেবা প্রদানকারী।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) অনুসারে, বাংলাদেশের ভারতে রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংশ বেনাপোল স্থলবন্দরের মাধ্যমে যায় এবং এর বেশির ভাগই প্রধানত পোশাক। গত ১০ মাসে স্থলপথে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে। নতুন নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কারণ (স্থলপথের পরিবর্তে সমুদ্রপথে) শিপিংয়ে ৩ দিনের পরিবর্তে দুই সপ্তাহ লাগতে পারে, যা খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে।’

বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ বিশ্বজিৎ হালদার বলেন, ‘বাংলাদেশ বেশি অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকার হবে, তবে তাদের বুনন শিল্পও ভারত থেকে কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীল। চাহিদা কমে যাওয়ায় ভারতীয় উৎপাদকরাও উৎপাদন কমিয়ে দেবে, যার ফলে এর প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। দরিদ্র সীমান্ত কর্মীদের আয় কমে যাওয়ায় স্থানীয় ভোগ হ্রাস পাবে, যা আঞ্চলিক অর্থনীতিকে প্রভাবিত করবে।’

বস্ত্রের ঐতিহ্যবাহী প্রবাহ—যেখানে ভারতীয় তুলা ও সুতা বাংলাদেশে পোশাক তৈরির জন্য পাঠানো হতো এবং তারপর ভারতের বৃহৎ বাজারের জন্য পুনরায় আমদানি করা হতো তৈরি পোশাক—নতুন নিষেধাজ্ঞার কারণে ব্যাহত হয়েছে। দুর্গাপূজা মৌসুম (সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে অক্টোবরের শুরু) ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে, খুচরা বিক্রেতারা আশঙ্কা করছেন যে—চাহিদা সরবরাহের চেয়ে বেশি হবে, যার ফলে গ্রামীণ বাজারে সাশ্রয়ী মূল্যের পোশাকের ঘাটতি দেখা দেবে।

কলকাতার বড় বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী সুরেন্দ্র গুপ্ত খেদ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের বাজারে, এমনকি দিল্লি ও মুম্বাইয়ের মতো বড় শহরগুলোতেও কিছু সাশ্রয়ী মূল্যের পোশাক পাওয়া যেত, যা বাংলাদেশ থেকে আসত। সেই পুরো অংশটি এখন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

হাওড়া হাটের ব্যবসায়ী শেখ সোহেল বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে এমন দামে পণ্য আসত, যা দরিদ্র মানুষ কিনতে পারত। এই পোশাকগুলো নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য একটি লাইফলাইন ছিল। সেগুলো এখনো এখানে পাওয়া যায়, তবে একটু বেশি দামে। বারমুডা শর্টস এবং সস্তা মহিলাদের পোশাকের মতো জিনিস সেখান থেকে আসত।’

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক চালানের জন্য ভারতীয় স্থলপথের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল ছিল। বাংলাদেশ প্রতি বছর ভারতে আনুমানিক ৭০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে, যার প্রায় ৯৩ শতাংশই ঐতিহ্যগতভাবে স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশ করত। পোশাক প্রস্তুতকারকেরাও সম্ভাব্য আর্থিক ক্ষতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং নতুন লজিস্টিকসের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে তিন মাসের বিলম্বের অনুরোধ করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

সুদান: সবুজ স্বর্গে পচে যাচ্ছে খাবার, অন্য পাশে দুর্ভিক্ষে মারা যাচ্ছে শিশু

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পারমাণবিক শক্তিচালিত অপ্রতিরোধ্য ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করল রাশিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৮: ৫৩
রাশিয়ার দাবি, ক্ষেপণাস্ত্রটি বিশ্বের যেকোনো প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
রাশিয়ার দাবি, ক্ষেপণাস্ত্রটি বিশ্বের যেকোনো প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

পারমাণবিক শক্তিচালিত অনির্দিষ্ট পাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ‘বুরেভেস্তনিক’-এর সফল পরীক্ষা চালিয়েছে রাশিয়া। দেশটির দাবি, এটি বিশ্বের যেকোনো প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, খুব শিগগির ক্ষেপণাস্ত্রটি মোতায়েন করা হবে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত এক মহড়ায় এই ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানো হয়। এর মাধ্যমে পশ্চিমা দেশগুলোকে একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে রাশিয়া। আর তা হলো, ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের চাপ সত্ত্বেও রাশিয়া কোনোভাবেই নতি স্বীকার করবে না। বিশেষত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন, ঠিক সে সময় মস্কোর এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা তেমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে।

রাশিয়ার সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভ পুতিনকে জানান, গত মঙ্গলবার পরীক্ষার সময় ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রায় ১৪ হাজার কিলোমিটার (৮ হাজার ৭০০ মাইল) উড়ে প্রায় ১৫ ঘণ্টা আকাশে ছিল। তিনি বলেন, এটি পারমাণবিক শক্তি দ্বারা চালিত এবং এর উড্ডয়নের দূরত্ব কার্যত সীমাহীন।

রাশিয়ার বর্ণনা অনুযায়ী, ৯ এম-৭৩০ বুরেভেস্তনিক (ন্যাটো নাম এসএসসি-এক্স-৯ স্কাইফল) হলো এমন একটি ক্ষেপণাস্ত্র, যাকে বর্তমান কিংবা ভবিষ্যতের কোনো প্রতিরক্ষাব্যবস্থাই আটকাতে পারবে না।

আজ রোববার সামরিক পোশাক পরিহিত অবস্থায় ইউক্রেন যুদ্ধ পরিচালনাকারী সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন পুতিন। এ সময় পুতিন বলেন, এটি এক অনন্য অস্ত্র, যা আর কোনো দেশের কাছে নেই।

পুতিন ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো এই ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির ঘোষণা দেন। তিনি একে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থার প্রতিরোধ হিসেবে বর্ণনা করেন। কারণ, ওয়াশিংটন ২০০১ সালে একতরফাভাবে ১৯৭২ সালের অ্যান্টি ব্যালিস্টিক মিসাইল চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ায় এবং পরে ন্যাটো জোটের সম্প্রসারণ শুরু করে।

পুতিন বলেন, রুশ বিশেষজ্ঞরা একসময় বলেছিলেন, এই অস্ত্র তৈরি সম্ভব নয়। কিন্তু এখন এটার পরীক্ষা শেষ হয়েছে। তিনি গেরাসিমভকে দ্রুত অস্ত্রটির শ্রেণিবিন্যাস ও মোতায়েনের অবকাঠামো তৈরির কাজ শুরু করার নির্দেশ দেন।

পুতিনের এ ঘোষণার সময় ও প্রেক্ষাপটও তাৎপর্যপূর্ণ। ধারণা করা হচ্ছে, ইউক্রেন যুদ্ধ পরিচালনাকারী জেনারেলদের সঙ্গে বৈঠকে সামরিক পোশাক পরে এ ঘোষণা দিয়ে তিনি পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি সরাসরি বার্তা দিয়েছেন—বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উদ্দেশে। তবে হোয়াইট হাউস এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

সম্প্রতি ট্রাম্প রাশিয়াকে ‘কাগুজে বাঘ’ আখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, মস্কো ইউক্রেনকে হারাতে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু পুতিনের আজকের ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রকে মনে করিয়ে দিয়েছে, রাশিয়া এখনো বৈশ্বিক পারমাণবিক শক্তির প্রতিদ্বন্দ্বী। একই সঙ্গে আরও ইঙ্গিত দিয়েছে, মস্কোর সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে নতুন করে আলোচনায় বসা উচিত।

রুশ সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ গেরাসিমভ জানান, বুরেভেস্তনিকের এ পরীক্ষা বিশেষ ছিল। কারণ, এটি পারমাণবিক শক্তির মাধ্যমেই এত দীর্ঘ সময় আকাশে ছিল। তিনি দাবি করেন, এই ক্ষেপণাস্ত্র যেকোনো অ্যান্টি মিসাইল প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে পরাস্ত করতে সক্ষম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

সুদান: সবুজ স্বর্গে পচে যাচ্ছে খাবার, অন্য পাশে দুর্ভিক্ষে মারা যাচ্ছে শিশু

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঘরে অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে চীনা নারীদের ‘এআই প্র্যাঙ্ক’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৯: ০৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

চীনের নারীরা তাঁদের পুরুষ সঙ্গীদের ভালোবাসা পরীক্ষা করতে এক নতুন ট্রেন্ড ‘এআই গৃহহীন ব্যক্তি প্র্যাঙ্ক’ ব্যবহার করছেন বলে জানিয়েছে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।

সম্প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোতে এই প্র্যাঙ্ক ভাইরাল হওয়ার পর তা উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এই ট্রেন্ডে অংশ নিতে ব্যবহারকারীরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে ছবি বা ভিডিও তৈরি করেন। এসব ছবি বা ভিডিওতে অপরিচ্ছন্ন বেশভূষার এক গৃহহীন ব্যক্তিকে ব্যবহারকারীর বাড়ি বা কর্মস্থলে অবস্থান করতে দেখা যায়।

এরপর সেই ছবি বা ভিডিও ওই নারীরা তাঁদের স্বামী বা প্রেমিককে পাঠান। এর মধ্য দিয়ে তাঁরা সঙ্গীদের অনুভূতি ও দায়বদ্ধতা পরখ করে দেখেন।

এ ধরনের ছবি তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে গুগলের জেমিনি বা মাইএডিটের ‘এআই রিপ্লেস’-এর মতো টুল।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, এক আইনজীবীর পরিবার এমন এক ভাইরাল প্র্যাঙ্কের ঘটনায় পুলিশ ডাকার মতো পরিস্থিতিতে পড়েছিল।

আরও এক ঘটনায় চীনের পূর্বাঞ্চলীয় আনহুই প্রদেশে এক নারী তাঁর স্বামীকে ঘরে একজন ‘গৃহহীন ব্যক্তি ঢুকে পড়েছে’—এআই দিয়ে বানানো এমন ছবি পাঠান। সে সময় তাঁর স্বামী বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খাচ্ছিলেন।

ছবি দেখে তিনি সেটিকে সত্যি ভেবে পুলিশে ফোন দেন। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পরে তারা বুঝতে পারে, ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।

পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাটিকে ‘জনসাধারণের সম্পদের অপচয়’ বলে মন্তব্য করেন এবং ওই নারীকে ‘ভয় ছড়ানোর অপরাধে’ অভিযুক্ত করেন।

চীনের জননিরাপত্তা প্রশাসন শাস্তি আইন অনুযায়ী, এমন কাজের জন্য সর্বোচ্চ ১০ দিনের আটকাদেশ ও প্রায় ৭০ ডলার জরিমানার বিধান রয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক চীনা পুরুষ এ ধরনের প্র্যাঙ্ক বা দুষ্টুমির তীব্র সমালোচনা করেছেন।

একজন লিখেছেন, ‘আপনারা কি সেই রাখাল ছেলের গল্প শোনেননি, যে নেকড়ে এসেছে বলে মিথ্যা চিৎকার দিত? যদি আপনারা বারবার মিথ্যা সতর্কবার্তা দেন, তাহলে সত্যি সত্যি বিপদ হলেও কেউ আপনাদের বিশ্বাস করবে না।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরও একজন লিখেছেন, ‘এআই আমাদের জীবনে সুবিধা এনেছে, কিন্তু একই সঙ্গে এটি আস্থার সংকটও তৈরি করেছে। প্ল্যাটফর্মের উচিত, এআই কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নেওয়া।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

সুদান: সবুজ স্বর্গে পচে যাচ্ছে খাবার, অন্য পাশে দুর্ভিক্ষে মারা যাচ্ছে শিশু

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সর্বোচ্চ গতির ট্রেনের পরীক্ষা চালাচ্ছে চীন, ঘণ্টায় পাড়ি দিতে সক্ষম ৪৫০ কিমি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
চীন বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির ট্রেনের পরীক্ষামূলক পরিচালনা শুরু করেছে। ছবি: সিনহুয়া
চীন বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির ট্রেনের পরীক্ষামূলক পরিচালনা শুরু করেছে। ছবি: সিনহুয়া

বিশ্বের দ্রুততম উচ্চগতির ট্রেন সিআর-৪৫০ এর প্রোটোটাইপের পরীক্ষামূলক পরিচালনা শুরু করেছে চীন। বেইজিংয়ের রিং রেলওয়েতে এখনো এই ট্রেনটির পরীক্ষামূলক পরিচালনা চলছে। ট্রেনটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪৫০ কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম। তবে ট্রেনের বাণিজ্যিক চলাচলের সময় এর সর্বোচ্চ গতি নির্ধারিত হবে প্রতি ঘণ্টায় ৪০০ কিলোমিটার।

চীনা সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার খবরে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর বেইজিংয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ট্রেনটিকে ট্র্যাকে নামানো হয়। এটি বর্তমানে চীনের সর্বোচ্চ গতির চলমান সিআর–৪০০ ফুজিং ট্রেনের তুলনায় অনেক বেশি দ্রুত। ফুজিং ট্রেনগুলো প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩৫০ কিলোমিটার গতিতে চলে।

china-2
china-2

ট্রেনটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিআরআরসি করপোরেশন লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াং ফেং জানিয়েছেন, সিআর–৪৫০ উচ্চগতির ট্রেন প্রযুক্তিতে এক বিশাল অগ্রগতি এনেছে। তত্ত্ব, প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি, মানদণ্ড ও পরিচালন ব্যবস্থাপনা—সব ক্ষেত্রেই নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে এই ট্রেন।

৪০০ কিলোমিটার গতির নজিরবিহীন গতি অর্জনের জন্য প্রকৌশলীরা ট্রেনটির ট্র্যাকশন পাওয়ার (ট্রেনে বিদ্যুৎ সরবরাহের সক্ষমতা), ডাইনামিক পারফরম্যান্স বা গতিশীল অবস্থায় ট্রেনটিতে যাবতীয় পরিবর্তন পরিমাপ এবং প্যান্টোগ্রাফ সিস্টেম বা বৈদ্যুতিক লাইন থেকে যে ব্যবস্থার মাধ্যমে একটি ট্রেনে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় তা উন্নত করেছেন।

ওয়াংয়ের ভাষায়, ট্রেনটিতে ব্যবহৃত হয়েছে ওয়াটার-কুলড পারমানেন্ট ম্যাগনেট ট্র্যাকশন সিস্টেম, নতুন প্রজন্মের উচ্চ-স্থিতিশীলতা বগি এবং একাধিক উদ্ভাবনী সিস্টেম। যার ফলে দীর্ঘ সময় উচ্চ গতিতে চলাচলেও এটি স্থিতিশীল থাকে। তিনি জানিয়েছেন, নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও সিআর–৪৫০ এক ধাপ এগিয়ে। এতে রয়েছে মাল্টিলেয়ার ইমারজেন্সি ব্রেক নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি এবং ৪ হাজারেরও বেশি অনবোর্ড মনিটরিং সেন্সর, যা চলমান অবস্থায় ট্রেনের গিয়ার, পুরো ট্রেন, হাই–ভোল্টেজ প্যান্টোগ্রাফ, ট্রেন নিয়ন্ত্রণ ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা—সবকিছুই তাৎক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণ করে। এ ছাড়া, ওভার-দ্য-হরাইজন শনাক্তকরণ ব্যবস্থাও যুক্ত হয়েছে এতে। এই ব্যবস্থা ট্রেনের সামনে ট্র্যাকের জরুরি পরিস্থিতি আগেভাগে শনাক্ত করতে সাহায্য করে।

china-3
china-3

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের ক্ষেত্রেও এসেছে বিপ্লব। বগির ‘স্ট্রিমলাইনড কাওলিং’ ধাঁচের নকশা বাতাসের ঘর্ষণ ও প্রতিরোধ কমিয়েছে, আর নতুন হালকা উপকরণ ও প্রযুক্তি ট্রেনের মোট ওজন ১০ শতাংশ কমিয়েছে এবং চলাচলের ক্ষেত্রে ট্র্যাকের সঙ্গে চাকার এবং সামগ্রিক ঘর্ষণ প্রতিরোধ ২২ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়েছে।

ট্রেনের শব্দ নিয়ন্ত্রণেও এসেছে অগ্রগতি। সাতটি নতুন প্রযুক্তি—যেমন সাউন্ড-অ্যাবসর্বিং উপকরণ ও উন্নত অ্যারোডাইনামিক নকশা ট্রেনের অভ্যন্তরীণ শব্দ ২ ডেসিবল কমিয়েছে। ফলে যাত্রীরা পাচ্ছেন আরও নিঃশব্দ ও আরামদায়ক ভ্রমণ অভিজ্ঞতা।

তা ছাড়া, সিআর–৪৫০ এ যুক্ত হয়েছে একাধিক বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ফিচার, যা ট্রেনের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, চালকের সঙ্গে যোগাযোগ, নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ এবং যাত্রীসেবা—সব দিক থেকেই একে আগের সব মডেলের চেয়ে এগিয়ে রেখেছে বলে জানান ওয়াং।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

সুদান: সবুজ স্বর্গে পচে যাচ্ছে খাবার, অন্য পাশে দুর্ভিক্ষে মারা যাচ্ছে শিশু

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের সর্ববৃহৎ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের এক ইউনিট পরীক্ষামূলকভাবে চালু, সক্ষমতা কত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ১০
সুবিনসিরি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। ছবি: সংগৃহীত
সুবিনসিরি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প সুবনসিরির আটটি ইউনিটের মধ্যে একটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, খুব শিগগিরই প্রকল্পটির পূর্ণাঙ্গ উদ্বোধন হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ভারতের জাতীয় জলবিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ন্যাশনাল হাইড্রোইলেকট্রিক পাওয়ার করপোরেশন লিমিটেড (এনএইচপিসি)।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনএইচপিসি লিমিটেডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন—অরুণাচল প্রদেশ ও আসাম সীমান্তে অবস্থিত সুবনসিরি লোয়ার জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ২৫০ মেগাওয়াট ইউনিটের ‘ওয়েট কমিশনিং’ গত শুক্রবার শুরু হয়েছে। সংস্থাটির এক মুখপাত্র দ্য হিন্দুকে বলেছেন, ‘ওয়েট কমিশনিং মূলত টারবাইনের বিভিন্ন প্রযুক্তিগত বিষয় পরীক্ষা করার একটি প্রক্রিয়া, এ প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় না। পানির প্রবাহের ভিত্তি করে এই পরীক্ষামূলক প্রক্রিয়া চার থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত চলতে পারে।’

২ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সুবনসিরি লোয়ার প্রকল্পে রয়েছে আটটি ইউনিট, প্রতিটির ক্ষমতা ২৫০ মেগাওয়াট।

মুখপাত্র জানান, এই আটটির মধ্যে চারটি ইউনিট পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত। পরবর্তী ধাপে অন্তত দুটি ইউনিট সমন্বয় করা হবে, যাতে প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা যায়।

অরুণাচল প্রদেশ ও আসামের সীমানার গেরুকামুখে অবস্থিত সুবনসিরি লোয়ার প্রকল্পটির নির্মাণকাজ ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু ২০১১ সালে আসামে বাঁধবিরোধী আন্দোলন ও ভাটিতে পরিবেশগত ক্ষতির আশঙ্কায় প্রকল্পের কাজ স্থগিত করা হয়।

এরপর, ২০১৯ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোগে পুনরায় কাজ শুরু হয়। সেই সময় এনএইচপিসি প্রকল্পটিতে বাড়তি নিরাপত্তা ও ক্ষতিপূরণমূলক পরিবেশ–সংরক্ষণ ব্যবস্থা যুক্ত করে। এনএইচপিসি চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভূপেন্দর গুপ্তা পরীক্ষামূলক এই কাজ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘এই অর্জন এনএইচপিসির প্রকৌশল দক্ষতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এটি কেবল একটি প্রকল্প–মাইলফলক নয়, বরং ভারতের পরিবেশবান্ধব ও স্বনির্ভর জ্বালানি ভবিষ্যতের দিকে অগ্রযাত্রার প্রতীক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

সুদান: সবুজ স্বর্গে পচে যাচ্ছে খাবার, অন্য পাশে দুর্ভিক্ষে মারা যাচ্ছে শিশু

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত