Ajker Patrika

বিবদমান কাশ্মীরে মোদির পর্যটন-সাফল্য কি তবে ধূলিসাৎ

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ২০: ১৬
পৃথিবীর স্বর্গ খ্যাত কাশ্মীরে আবারও নেমে এসেছে সন্ত্রাসের কালো ছায়া। ছবি: এএফপি
পৃথিবীর স্বর্গ খ্যাত কাশ্মীরে আবারও নেমে এসেছে সন্ত্রাসের কালো ছায়া। ছবি: এএফপি

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শান্তিপূর্ণ পর্যটন খাতের গল্পটি রাতারাতি বদলে গেল এক ভয়াবহ রক্তাক্ত ঘটনায়। এই অঞ্চলের পাহাড়ঘেরা পেহেলগামে বন্দুকের গুলির শব্দ, মাঠে পড়ে থাকা রক্তাক্ত দেহ, আর শুষ্ক নদী খাতে আতঙ্কে পালিয়ে যাওয়া মানুষের ভিডিও ও ছবি দেশজুড়ে আলোড়ন তুলেছে।

গত পাঁচ বছরে তুলনামূলকভাবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ কাশ্মীরকে পর্যটনের নতুন ঠিকানায় পরিণত করেছিল। আর এমন উপচে পড়া পর্যটনকে নিজেদের অন্যতম সাফল্য হিসেবে তুলে ধরেছিল মোদি সরকার।

কিন্তু মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সন্দেহভাজন জঙ্গিদের হামলায় সেখানে অন্তত ২৬ জন পর্যটক নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও অসংখ্য মানুষ। এবার তাই গ্রীষ্মকালীন পর্যটন মৌসুমের শুরুতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পর্যটকেরা হুড়োহুড়ি করে কাশ্মীর ছাড়ার চেষ্টা করছেন।

২০১৯ সালে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপান্তর করেছিল মোদি সরকার। দেশজুড়ে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদও হয়েছিল। তবে এর পর থেকে মোদি সরকার কাশ্মীরে বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প চালু করে বারবার বলে এসেছে—আগের কঠিন সময় পেছনে ফেলে, আমাদের কাশ্মীর এখন আবার ‘পৃথিবীর স্বর্গ’ হয়ে উঠছে।

কাশ্মীর উপত্যকার অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হলো পর্যটন। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে এই অঞ্চলে রেকর্ড ৩০ লাখের বেশি পর্যটক এসেছিল। অথচ পাঁচ বছর আগে ২০১৮ সালে সেখানে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৮ লাখের কিছু বেশি।

তবে কাশ্মীরের অনেক কট্টরপন্থী পর্যটনের এমন ঢলকে ‘সাংস্কৃতিক আগ্রাসন’ বলে দাবি করে আসছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স’ নামে একটি গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করে জানিয়েছে, তারা তথাকথিত বহিরাগতদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে।

এই অবস্থায় কাশ্মীরের পর্যটনচিত্রটি পুরোপুরি বদলে গেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, হামলার ঘটনায় হাজার হাজার ট্যুর বুকিং বাতিল হয়েছে। শীর্ষ পর্যটন সংস্থাগুলোর একজন নাম প্রকাশ না করে জানিয়েছেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে হওয়ার কথা এমন ৯০ শতাংশ বুকিং বাতিল করতে হয়েছে।

পেহেলগামের ট্যুরিস্ট ট্যাক্সি ইউনিয়নের ব্যবস্থাপক শাকির আহমেদ বলেছেন, ‘সব গাড়ি আজ সকাল থেকে দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তা ফাঁকা। গ্রীষ্মকাল আমাদের জন্য উৎসবের মতো। কিন্তু এবার কিছুই রইল না। পর্যটক ছাড়া আমাদের কোনো অস্তিত্ব নেই।’

কাশ্মীর পিপলস কনফারেন্স পার্টির প্রধান সাজ্জাদ লোন বলেন, ‘আমরা আতিথেয়তার জন্য বিখ্যাত। কিন্তু কিছু কাপুরুষ সন্ত্রাসী সেটা ধ্বংস করে দিতে চায়।’

রক্তাক্ত হামলার ঘটনায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও অর্থমন্ত্রী বিদেশ সফর সংক্ষিপ্ত করেই দেশে ফিরেছেন। মোদি বিমানবন্দরেই শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। এক্স মাধ্যমে এক পোস্টে মোদি লিখেছেন, ‘এই বর্বর হামলার পেছনে যারা রয়েছে, তাদের বিচার হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

তারপরও প্রশ্ন উঠছে, নতুন সন্ত্রাসের কালো ছায়া দূর করে স্বপ্নের পর্যটন রাজ্য পারবে কি আবারও পর্যটকদের কাছে টেনে নিতে?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত