Ajker Patrika

রাশিয়া থেকে কী পরিমাণ তেল কেনে ভারত

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৬ আগস্ট ২০২৫, ১৯: ০৮
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ না করলে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানোর হুমকি দিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে নয়াদিল্লি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তারা জাতীয় স্বার্থ ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা রক্ষায় রুশ তেল কেনা চালিয়ে যাবে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযোগ করেন, ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণে তেল ছাড়ে কিনছে এবং সেই তেলের একটি বড় অংশ আবার বিশ্ববাজারে বিক্রি করে মুনাফাও অর্জন করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, ‘তারা একেবারে উদাসীনভাবে রাশিয়ার যুদ্ধযন্ত্রের হাতে ইউক্রেনীয়দের মৃত্যু দেখছে। এ কারণে আমি ভারতের ওপর মার্কিন শুল্ক বড় আকারে বাড়াব।’

জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, ‘ভারতকে লক্ষ্য করে এমন হুমকি অন্যায্য ও অযৌক্তিক।’ তিনি আরও বলেন, ‘যেসব দেশ ভারতের সমালোচনা করছে, তারাই এখনো রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে রুশ তেল কেনা একটি জাতীয় প্রয়োজনীয়তা, যা বিশ্ববাজারের বাস্তবতা থেকেই তৈরি হয়েছে।’

ভারতীয় দুই সরকারি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের হুমকি সত্ত্বেও ভারত রুশ তেল কেনা বন্ধ করবে না।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন ব্যর্থ হওয়ার পর ট্রাম্প প্রশাসন ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এই প্রেক্ষাপটেই রুশ তেল নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।

রয়টার্সের তথ্যমতে, ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত অর্থবছরে (এপ্রিল ২০২৪ থেকে মার্চ ২০২৫) ভারত রাশিয়া থেকে প্রায় ৩৮ বিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের তেল আমদানি করেছে। আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত রাশিয়া থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৭ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল তেল আমদানি করে ভারত, যা আগের বছরের তুলনায় ১ শতাংশ বেশি।

বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ ভারত তাদের মোট চাহিদার ৩৫ শতাংশই পূরণ করে রাশিয়ার তেল দিয়ে। ২০২২ সালে ইউক্রেনে রুশ হামলার পর ইউরোপ রুশ জ্বালানি বর্জন করলে ভারত সেই সুযোগে রুশ তেলের বড় আমদানিকারকে পরিণত হয়। প্রথম বছরেই দেশটি দিনে প্রায় ২০ লাখ ব্যারেল রুশ তেল আমদানি করে, যা বৈশ্বিক সরবরাহের ২ শতাংশের কাছাকাছি। চীন ও তুরস্কও রুশ তেলের বড় ক্রেতা।

২০২৩ সালে ভারতের রুশ তেল আমদানি দ্বিগুণ হয়ে যায়। পাশাপাশি তারা ইউরোপে পরিশোধিত তেলের রপ্তানিও রেকর্ড পরিমাণে বাড়িয়েছে।

গত এপ্রিলে ‘ক্লেপলার’ ডেটা বলছে, বর্তমানে ভারতের রুশ তেল আমদানি বেড়ে গড়ে প্রতিদিন ২১ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল ছুঁয়েছে, যা ২০২৩ সালের মে মাসের পর সর্বোচ্চ। আর চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত অর্থবছরে রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশ থেকে ভারত গড়ে প্রতিদিন মোট ৪৮ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল তেল আমদানি করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ভারতে বর্তমানে রুশ তেলের অংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশে। এই সময়ে রাশিয়া, ইরাক ও সৌদি আরবের পর যুক্তরাষ্ট্র ভারতের চতুর্থ বৃহত্তম তেল সরবরাহকারী দেশ হিসেবে ছিল।

ওয়াশিংটনভিত্তিক ‘সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ’-এর ভারত কর্মসূচির প্রধান রিচার্ড রসো মনে করেন, ট্রাম্প প্রশাসনের অনিশ্চয়তাপূর্ণ অবস্থান ভারতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে ভারতীয় বিশ্লেষকেরা বলছেন, রাশিয়ার সঙ্গে জ্বালানি সম্পর্ক শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং কৌশলগতও, যা ভারতের দীর্ঘমেয়াদি জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জাপায় নতুন মোড়: আনিসুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, বহিষ্কৃতদের পুনর্বহাল

বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদল পুনর্বিন্যাস আনছে ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলে

গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে কক্সবাজার ভ্রমণ: ৫ নেতাকে শোকজ করল এনসিপি

আফগানিস্তানে তালেবানের শাসন: বাস্তবতা বনাম প্রচারণা

১৪৬ যাত্রী নিয়ে ব্যাংককের পথে এক ঘণ্টা উড়ে মিয়ানমার থেকে ফিরে এল বিমানের সেই ফ্লাইট

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত