Ajker Patrika

আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিনের বৈঠকে জেলেনস্কিকে রাখার সম্ভাবনা

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১০ আগস্ট ২০২৫, ১৬: ০৫
ভ্লাদিমির পুতিন, ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভলোদিমির জেলেনস্কি। ছবি: সংগৃহীত
ভ্লাদিমির পুতিন, ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভলোদিমির জেলেনস্কি। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ সপ্তাহের শেষদিকে আলাস্কায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। গত শুক্রবার দেওয়া তাঁর এই ঘোষণাকে ঘিরে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক তৎপরতা। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকেও এই বৈঠকে যুক্ত করার তোড়জোড় শুরু হয়েছে।

মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় নেতারাও দ্রুত এই আলোচনায় যুক্ত হয়ে বৈঠকের শর্তগুলো বোঝার চেষ্টা করছেন এবং নিশ্চিত হতে চাইছেন যে, ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনায় দেশটিকে বাদ দেওয়া হচ্ছে না।

গতকাল শনিবার যুক্তরাজ্যে তড়িঘড়ি করে আয়োজিত এক বৈঠকে ইউরোপীয় কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সের সঙ্গে বসেন। বৈঠকের পর কয়েকজন ইউরোপীয় নেতা জানান, তাঁরা ট্রাম্পের কূটনৈতিক উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও শর্ত রয়েছে—যেকোনো শান্তি আলোচনা অবশ্যই যুদ্ধবিরতির পর শুরু হতে হবে এবং ইউক্রেনকে সক্রিয়ভাবে আলোচনায় যুক্ত রাখতে হবে।

আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উপস্থিতির বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়। এ বিষয়ে অবগত দুটি সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও তা সম্ভবত ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের পর হবে।

হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা বলেন, ট্রাম্প দুই নেতাকে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় সম্মেলনের জন্য আগ্রহী হলেও হোয়াইট হাউস বর্তমানে প্রেসিডেন্ট পুতিনের অনুরোধে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পরিকল্পনা করছে।

গত শুক্রবার সামাজিক মাধ্যমে ট্রাম্প বৈঠকের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের রাজি করানোর জন্য পর্দার আড়ালে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলছে। জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতারা স্পষ্ট জানিয়েছেন, ইউক্রেন ছাড়া শান্তির পথ নির্ধারণ করা যাবে না।

গতকাল শনিবার যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কান্ট্রি হাউসে আয়োজিত বৈঠকে ইউরোপীয় কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে শর্তগুলো স্পষ্ট করেন—ইউক্রেনকে আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করা, যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করা এবং যদি ইউক্রেন ভূখণ্ড ছাড়ে, তবে রাশিয়াকেও কিছু দখল করা এলাকা ফেরত দিতে হবে।

ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি, পোল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ফিনল্যান্ডের নেতারা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, তাঁরা ইউক্রেনে হত্যাযজ্ঞ থামাতে, রুশ আগ্রাসনের অবসান ঘটাতে এবং ইউক্রেনের জন্য ন্যায়সংগত ও টেকসই শান্তি ও নিরাপত্তা অর্জনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাচ্ছেন।

এরপর আজ রোববার জেলেনস্কি এক বিবৃতিতে বলেছেন, তিনি এই যৌথ অবস্থানকে সমর্থন করেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন। তবে এই বিবৃতিতে যে শান্তি পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে, তা পুতিনের প্রস্তাবের সঙ্গে মেলে না। পুতিনের পরিকল্পনায় ইউক্রেনের কাছ থেকে বড়ধরনের ভূখণ্ড ছাড়ের দাবি রয়েছে বলে পশ্চিমা কর্মকর্তারা জানান।

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইউক্রেন তার ভাগ্য নির্ধারণে স্বাধীন। অর্থবহ আলোচনা কেবল যুদ্ধবিরতি বা সংঘর্ষ হ্রাসের প্রেক্ষাপটেই সম্ভব। আমরা নীতিগতভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে আন্তর্জাতিক সীমান্ত বলপ্রয়োগে পরিবর্তন করা যাবে না। বর্তমান যুদ্ধরেখাই আলোচনার সূচনাবিন্দু হবে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যেকোনো সমঝোতায় বিশ্বস্ত ও কার্যকর নিরাপত্তা নিশ্চয়তা থাকতে হবে, যা ইউক্রেনকে তার সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা কার্যকরভাবে রক্ষা করতে সক্ষম করে।

পশ্চিমা কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, ইউরোপীয়দের ধারণা, পুতিন এমন একটি প্রস্তাব দিয়েছেন, যাতে ইউক্রেনকে পুরো পূর্বাঞ্চলীয় দনবাস অঞ্চল ছাড়তে হবে। তবে খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়ার ভবিষ্যৎ এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চয়তার অবস্থান এখনো স্পষ্ট নয়।

এমন পরিস্থিতিতে উদ্বেগ কমাতে ভ্যান্স গতকাল যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি, ইউরোপীয় ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের নিয়ে কয়েক ঘণ্টার বৈঠক করেন। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি ও রাশিয়ার অবস্থান নিয়ে আলোচনা হয়। এক মার্কিন কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেন, উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে, তবে বৈঠকের আগে ইউরোপীয় বা ইউক্রেনীয় সম্মতি পাওয়া যাবে কি না, তা এখনো পরিষ্কার নয়। বৈঠকের পর জেলেনস্কি ভাষণে বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য শোনা হচ্ছে। ঝুঁকিগুলো বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত