Ajker Patrika

ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন

টেকসই শান্তির পথে হাঁটছে ইউক্রেন-রাশিয়া, আলোচনা অচিরেই

অনলাইন ডেস্ক    
Thumbnail image
ট্রাম্পের নতুন মেয়াদের শুরুতেই ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি আসতে পারে। ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনের জন্য মনোনীত শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের আগেই কিয়েভের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধের মীমাংসার উপায় নিয়ে দ্বিমত কমানোর চেষ্টা করছেন তারা। যাতে, সাময়িক নয়, একটি স্থায়ী ও টেকসই শান্তি অর্জন করা সম্ভব হয়।

ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা এবং আলোচনার সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক ব্যক্তির মতে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির এক শীর্ষ সহযোগী গত বুধবার ট্রাম্পের রাশিয়া ও ইউক্রেন বিষয়ক বিশেষ দূত কিথ কেলোগ এবং নবনির্বাচিত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আলোচনায় যোগ দেন নবনির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও।

কেলোগ ইঙ্গিত দিয়েছেন, ট্রাম্পের নতুন প্রশাসন বাইডেন প্রশাসনের ইউক্রেনে দ্রুত অস্ত্র সরবরাহের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে, যা মস্কোর সঙ্গে সমঝোতার আলোচনায় ট্রাম্পের জন্য সুবিধা তৈরি করবে। তবে ট্রাম্পের দল ইউক্রেনকে ন্যাটোতে সদস্যপদ দেওয়ার বিষয়ে খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তবে জেলেনস্কি ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য এটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন।

পরিকল্পনার বিষয়ে অবগত কয়েকটি সূত্রের মতে, জেলেনস্কির ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা আন্দ্রে ইয়ারমাক ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ওয়াশিংটন সফরে আছেন। তিনি বুধবার ফ্লোরিডায় নবনির্বাচিত হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ সুজি ওয়াইলসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। প্রায় তিন বছর ধরে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করে ক্লান্ত হয়ে পড়া ইউক্রেন এখন শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতি জানাতে চায়। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘কিন্তু তা অবশ্যই টেকসই শান্তি হতে হবে। অস্থিতিশীল বা অস্থায়ী শান্তি যুক্তরাষ্ট্র বা ইউক্রেনের কোনো স্বার্থ রক্ষা করবে না।’

জেলেনস্কি সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার অনুমতি পেলে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে পারে। তিনি বলেছেন, কূটনৈতিক চাপের মাধ্যমে রাশিয়া দখলকৃত ইউক্রেনের অঞ্চল পুনরুদ্ধার করতে চায় কিয়েভ, সামরিক শক্তির মাধ্যমে নয়। জেলেনস্কি স্কাই নিউজকে দেওয়া সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যুদ্ধের ‘উত্তপ্ত পর্যায়’ শেষ করতে হলে ন্যাটো সদস্যপদ অবশ্যই ইউক্রেনকে দেওয়া উচিত এবং ইউক্রেন পুরো ভূখণ্ডের দাবি অব্যাহত রাখবে। কিয়েভ কূটনৈতিক উপায়ে সেগুলো ফিরে পেতে চাইবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রে সিবিহা গত মঙ্গলবার বলেছেন, ‘ন্যাটো সদস্যপদ ছাড়া অন্য কোনো নিরাপত্তা গ্যারান্টি ইউক্রেন গ্রহণ করবে না। আমরা কোনো বিকল্প বা প্রতিস্থাপন গ্রহণ করব না।’

ট্রাম্পের উপদেষ্টারা এমন শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছেন, যা রাশিয়ার দখল করা প্রায় ২০ শতাংশ ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডকে মস্কোর বলে স্বীকৃতি দেবে এবং আপাতত কিয়েভের ন্যাটোতে যোগদানের প্রচেষ্টা বন্ধ করবে।

থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইউক্রেন বিশ্লেষক লুসিয়ান কিম বলেন, ‘ইউক্রেনীয়রা সম্ভাব্য আলোচনা শুরুর আগে তাদের সর্বোচ্চ দাবি পেশ করছে। তারা হয়তো বুঝতে পেরেছে যে, ন্যাটো সদস্যপদ খুব শিগগিরই পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু আলোচনা শুরুর আগেই কেন তারা সেটা মেনে নেবে?’

কেলোগের নিজের অবস্থানও যুদ্ধ বন্ধে আলোচনার পথ তৈরির ক্ষেত্রে কিছুটা জটিল। তিনি এবং ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম মেয়াদের আরেকজন কর্মকর্তা এ বছরের শুরুর দিকে প্রস্তাব করেছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র যেন ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ সাময়িকভাবে স্থগিত করে, যাতে কিয়েভ শান্তি আলোচনায় বসতে রাজি হয়। আবার এ সপ্তাহে তিনি বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট বাইডেনের অস্ত্র সরবরাহ দ্রুততর করা ট্রাম্পের মস্কোর সঙ্গে আলোচনা করার অবস্থানকে শক্তিশালী করছে।’

কেলোগ ফক্স নিউজকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘বাইডেন প্রশাসন যত বেশি এটা করবে, তত বেশি সুযোগ তৈরি হবে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের জন্য তাঁর ইচ্ছামতো কাজ করার। সবকিছুই নির্ভর করে প্রভাবশালী অবস্থানের ওপর। প্রেসিডেন্ট এটা বোঝেন এবং তিনি এটি তার সুবিধার জন্য ব্যবহার করবেন।’

ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সহায়তা চালিয়ে যাবে কি না। বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহের গতি বাড়িয়েছে, কিন্তু বাইডেনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত বাকি ৬৫০ কোটি ডলার সম্পূর্ণভাবে ব্যয় করার জন্য যথেষ্ট সময় নেই।

এদিকে, রাশিয়া ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে চাপের মুখে ফেলে আক্রমণ জোরদার করেছে। প্রায় ১০ হাজার উত্তর কোরীয় সেনার সহায়তায় রুশ বাহিনী ইউক্রেনের দখলকৃত কুরস্ক অঞ্চলের প্রায় অর্ধেক এলাকা পুনরুদ্ধার করেছে। তবে রাশিয়া এখনো কিয়েভের সামরিক বাহিনীর দখলে থাকা পূর্ব ইউক্রেনে খুব সামান্যই অগ্রগতি অর্জন করে পেরেছে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কিছুদিন আগে ঘোষণা করেছেন যে, ইউক্রেন তাঁর দাবিগুলো মেনে না নিলে তিনি শান্তি আলোচনায় অংশ নেবেন না। রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধ প্রায় তিন বছর ধরে চলছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ডানহাত হিসেবে কাজ করছেন ইয়ারমাক। আলোচনা নিয়ে সংশ্লিষ্ট আলোচনা সম্পর্কে অবগত ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ইয়ারমাক ইউক্রেনকে শান্তির জন্য বাধা নয় বরং গঠনমূলক অংশীদার হিসেবে উপস্থাপন করবেন।

এটি আংশিকভাবে কিয়েভের হতাশার প্রতিফলন, কারণ বাইডেন প্রশাসন সামরিক সহায়তার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এ বিষয়ে লুসিয়ান কিম বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রশাসন নিয়ে কিয়েভের মধ্যে গভীর হতাশা রয়েছে। আগামী ট্রাম্প প্রশাসন কিয়েভে একটি অগ্রগতির আশা জাগিয়েছে। তবে সেটা কী রকম হবে, সেটাই এখন প্রশ্ন। তবে এটা স্পষ্ট যে, স্থিতাবস্থা আর থাকবে না।’

ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল থেকে অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত