Ajker Patrika

নাগরিকত্ব নিয়ে ইতালির গণভোটে কী আছে

অনলাইন ডেস্ক
রোববার গণভোটের প্রথম দিনে ভোট প্রদান করছেন এক ইতালিয়ান। ছবি: বিবিসি
রোববার গণভোটের প্রথম দিনে ভোট প্রদান করছেন এক ইতালিয়ান। ছবি: বিবিসি

সনি ওলুমাটি জন্মেছেন ইতালির রোমে। সেখানেই বড় হয়েছেন। কিন্তু আজও তাঁকে ইতালিয়ান নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ৩৯ বছর বয়সী এই নৃত্যশিল্পী ও অধিকারকর্মী পাসপোর্ট অনুযায়ী একজন নাইজেরিয়ান। ইতালিতে তাঁর বসবাসের অধিকার নির্ভর করে বারবার নবায়ন করা রেসিডেন্স পারমিটের ওপর। সনি বলেন, ‘আমি এখানে জন্মেছি, এখানেই মরব—তবু নাগরিকত্ব না থাকাটা এমন, যেন দেশ আমাকে অস্বীকার করছে।’

এই বঞ্চনার অভিজ্ঞতা থেকেই সনি এবং তাঁর মতো অনেকেই ইতালির নাগরিকত্ব পাওয়ার সময়সীমা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে আজ রোববার ও আগামীকাল সোমবার (৮ ও ৯ জুন) হতে যাওয়া জাতীয় গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোটের আহ্বান জানিয়েছেন। প্রস্তাবটি পাস হলে, নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার সময়সীমা ১০ বছর থেকে কমে ৫ বছর হবে। আর ১৮ বছরের নিচে থাকা সন্তানেরা অভিভাবকদের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব পাবে।

এই পরিবর্তনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে ইতালির বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন ও উদার রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু প্রস্তাবটি কার্যকর হতে হলে মোট ভোটারের অন্তত ৫০ শতাংশকে ভোট দিতে হবে। অথচ দেশটির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি নিজেই ভোট বর্জনের ডাক দিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন—নাগরিকত্ব প্রশ্নে বর্তমান আইনই অসাধারণ ও যথেষ্ট উন্মুক্ত।

এদিকে সনি ওলুমাটি গণভোটে ‘হ্যা’ ভোটের আহ্বান জানালেও তিনি নিজে ভোট দিতে পারবেন না। কারণ তাঁর নাগরিকত্ব নেই। অথচ তাঁর পুরো জীবন কেটেছে ইতালিতে। তিনি নাগরিকত্বের আবেদন করেছেন বহু বছর আগে। কিন্তু ২০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো তাঁর আবেদন প্রক্রিয়াধীন। এক সময় তাঁর ফাইলই হারিয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘এটা বর্ণবাদ। সরকারের অনেকেই শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাস করে। তারা কৃষ্ণাঙ্গ অভিবাসন চায় না।’

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—এবারের গণভোটটি মূলত দীর্ঘ মেয়াদে ইতালিতে বৈধভাবে কাজ করতে আসা অভিবাসীদের নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজতর করার লক্ষ্যে। নাগরিকত্ব পেতে ভাষাজ্ঞান, কোনো অপরাধ না থাকা, ধারাবাহিক বসবাসের প্রমাণ—এসব শর্ত এখনো অপরিবর্তিতই থাকবে।

এই প্রসঙ্গে ইতালির ‘মোর ইউরোপ’ পার্টির কারলা তাইবি বলেন, ‘এই মানুষগুলো ইতালিতে কাজ করে, পড়াশোনা করে, অবদান রাখে। এখন সময় এসেছে তাদের বিদেশি না ভেবে ইতালীয় হিসেবে দেখা।’ গবেষণা বলছে, মোট ভোটের ৫০ শতাংশ কাস্ট এবং ‘হ্যা’ ভোট বিজয়ী হওয়ার মধ্য দিয়ে সংস্কারটি কার্যকর হলে প্রায় ১৪ লাখ মানুষ সঙ্গে সঙ্গে নাগরিকত্ব পেতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী মেলোনি ভোট বর্জনের ডাক দিলেও এই গণভোট নিয়ে তাঁর নেতৃত্বাধীন সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো ‘না’ ভোটের প্রচারও দেখা যাচ্ছে না। বরং সরকার যেন ভোটের গুরুত্বকে আড়াল করার কৌশল নিচ্ছে। মেলোনি জানিয়েছেন, তিনি ভোটকেন্দ্রে যাবেন বটে, কিন্তু কোনো ভোট দেবেন না। মূলত ব্যালট বাক্সের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করতেই ভোটকেন্দ্র যাবেন তিনি।

গণভোট বর্জনের পক্ষে মেলোনির যুক্তি হলো—গত বছর ইতালি ২ লাখ ১৭ হাজার বিদেশিকে নাগরিকত্ব দিয়েছে, যা ইউরোপের অনেক দেশের তুলনায় বেশি। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এর মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার মানুষই আর্জেন্টিনার, ইতালিয়ান বংশসূত্র থাকায় তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই নাগরিকত্ব পায়।

অন্যদিকে, গণভোটের বিরোধিতা করে দেশটির ফার-রাইট লীগ পার্টির রবার্তো ভানাচ্চি বলেছেন, ‘এই গণভোটের মাধ্যমে আমাদের নাগরিকত্ব বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে এবং আমাদের পরিচয় মুছে ফেলা হচ্ছে।’

ইতালির বোলোনিয়ায় পিএইচডি করছেন ২৮ বছর বয়সী ইনসাফ দিমাসি। নিজেকে তিনি নাগরিকত্বহীন ইতালিয়ান বলে পরিচয় দেন। ৯ মাস বয়সে ইতালিতে আসা ইনসাফ এখনো নাগরিকত্ব পাননি। তাঁর বাবা-মা নাগরিকত্ব পেলেও ইনসাফকে নতুন করে আবেদন করতে হয়েছে। কিন্তু পড়াশোনার কারণে অর্থ উপার্জনের প্রমাণ দেখাতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘৩৩ বা ৩৪ বছর বয়সে হয়তো নাগরিকত্ব পাবো। কিন্তু তখন আমার জীবনের অর্ধেক কেটে যাবে একজন অদৃশ্য মানুষ হয়ে।’

গণভোটকে সমর্থন জানিয়ে রোমের এক চত্বরে ছাত্ররা বিশাল অক্ষরে লিখেছে—৮ ও ৯ জুন ‘হ্যাঁ’ ভোট দিন। ৫০ শতাংশ ভোট না পড়লে গণভোট ব্যর্থ হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত